মাসুদ রানা।

বিশ্বেন্দু নন্দ পশ্চিম বাংলার উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, লেখক, গবেষক ও অনুবাদক। ‘পরম’ পত্রিকার সম্পাদক। হকার, কারিগর সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন প্রায় তিন দশক। দুটি মৌলিক গ্রন্থসহ কয়েকটি অনুবাদগ্রন্থ রয়েছে তাঁর। সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের আমন্ত্রণে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। উপনিবেশবিরোধী আন্দোলন নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
আজকের পত্রিকা: কোন উপলব্ধি থেকে আপনারা উপনিবেশবিরোধী আন্দোলন শুরু করলেন?
বিশ্বেন্দু নন্দ: আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে উপনিবেশবাদ বিষয়টি স্পষ্ট করা দরকার। এ শব্দটি ইংরেজি ‘কলোনিয়ালিজম’ শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ। আবার উপনিবেশবাদ কথাটি এসেছে লাতিন ‘কলোনিয়া’ শব্দ থেকে, যার অর্থ বিশাল সম্পত্তি বা এস্টেট। সাধারণভাবে বলা যায়, কোনো দেশ যদি অন্য দেশের ভূখণ্ড বা অঞ্চলকে নিজের অধীন করে নেয়, তাহলে সেই অঞ্চলের নাম হয় উপনিবেশ। উপনিবেশবাদ হলো অন্য দেশের ভৌগোলিক অঞ্চলের ওপর শাসন প্রতিষ্ঠা ও সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ। আমরা মনে করি, আজকের উপনিবেশ করপোরেট উপনিবেশ। আমাদের স্বাধীনতা, নিজস্ব চিন্তা তারাই হরণ করছে, নামমাত্র স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের নামে।
ইংরেজরা প্রায় ২০০ বছর শাসন করার পর ভারতবর্ষ থেকে চলে গেলেও, তাদের শাসনের রেশ পুরো মাত্রায় সচল আছে আমাদের রাষ্ট্রকাঠামোয়। তাই প্রকাশ্য বা লুকোনো উপনিবেশ যত দিন থাকবে, উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের রাশ উপনিবেশিত মানুষের হাত থেকে কেড়ে নেওয়া যাবে না। দুর্ভাগ্যের কথা, তথাকথিত উপনিবেশবিরোধী চর্চার একটা অংশ মূলত ভদ্রবিত্তরা নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং করছে। করপোরেটের তৈরি জাতিরাষ্ট্রের পরিচালক ভদ্রবিত্তের স্বার্থপূরণই উপনিবেশবিরোধী চর্চা হিসেবে গণ্য হয়েছে। ভদ্রবিত্তীয় উপনিবেশবিরোধী চর্চা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়ে ভদ্রবিত্তের হাতের পুতুল হয়েছে চিরকাল। দেশের পর দেশ ‘স্বাধীন’ হয়েছে, উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের ভাগীদার ভদ্রবিত্তরা ক্ষমতায় গিয়ে স্বাধীন দেশে ইউরোপীয়দের ছেড়ে যাওয়া ঔপনিবেশিক কাঠামো যেমন বজায় রেখেছে, তেমনি যেনতেন প্রকারে ইউরোপীয়দের স্বার্থপূরণেও পিছপা হয়নি।
এশিয়া ছেড়ে ইংল্যান্ড, ডাচ, আফ্রিকা ছেড়ে ডাচ ফরাসি, বেলজিয়াম ও জার্মানির সাদা শাসকেরা ইউরোপে ফিরে গেলেও সেই সব দেশ-মহাদেশ থেকে উপনিবেশকাঠামো মুছে যায়নি। উপনিবেশে ভদ্রবিত্তরা চাকরি করেছে, ইউরোপ ক্ষমতা ছেড়ে চলে যাওয়ার পরেও ভদ্রবিত্তের চাকরি, দালালিতে ঝামেলা হয়নি। এই দীর্ঘ সময়ে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ঔপনিবেশিক ভদ্রবিত্ত সমাজ, বিপুল-বিশাল গ্রামনির্ভর উৎপাদনব্যবস্থাকে ঘেন্না করেছে। তাকে করপোরেট পুঁজির পায়ে বলি দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এসব ঘটেছে উপনিবেশবিরোধী আন্দোলন করা ভদ্রবিত্তের সহায়তায়। উপনিবেশের আগে বাংলাকে সোনার বাংলা বানানো হকার, কারিগর, চাষি বা অন্য পেশাদারের স্বার্থ, অধিকার, ভদ্রবিত্তপ্রণোদিত উপনিবেশবিরোধী চর্চা এত দিন অগ্রাহ্য করে তার স্বার্থ এবং ইউরোপের স্বার্থ পূরণ করেছে।
আমি এক দশকের বেশি সময় ধরে হকার আন্দোলনে জড়িয়ে ছিলাম। গত দেড় দশকের বেশি সময় কারিগর আন্দোলনের সার্বক্ষণিক কর্মী। একসময় বিক্রেতাদের সঙ্গে জড়িয়েছিলাম। আজ উৎপাদকদের স্বার্থে তাঁদের সংগঠনে যুক্ত হয়েছি। কারিগর, হকারা মনে করেন, এত দিনের উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনে শহরের গরিব আর কারিগর চাষির স্বার্থ রক্ষা হয়নি। আজ তাঁরা বুঝে নিতে চাইছেন কোনটা বৃহত্তর সমাজের উন্নয়ন আর কোনটা ভদ্রবিত্তচালিত করপোরেটের স্বার্থবাহী আন্দোলন। হকার, চাষি ও কারিগরেরা আজ
এই আন্দোলনের অন্যতম প্রতিভূ। আমরা তাঁদের দাবির সঙ্গে সহমত হয়ে এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।
আজকের পত্রিকা: একসময় এই ভারতবর্ষে ভাগ্য অন্বেষণে বহিরাগতরা আসত। সবকিছুতে আমরা সমৃদ্ধ ছিলাম। ব্রিটিশদের প্রায় ২০০ বছর শাসনে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম। আমরা আবার সেই অতীতে ফিরে যেতে পারব কি?
বিশ্বেন্দু নন্দ: যে অতীতের কথা বলছেন আপনি, সেই অতীতে বাংলার জিডিপি ছিল ৬ থেকে ৭ শতাংশ। তো সেই পলাশীর সময়ে ফিরে যাওয়ার কথা বললে ঔপনিবেশিক ভদ্রবিত্তের গায়ে-মনে তীব্র ছ্যাঁকা লাগে। অমিয় বাগচী, উতসা পট্টনায়েক, নরেন্দ্র কৃষ্ণ সিংহ, সুশীল চৌধুরী, ওম প্রকাশ, কীর্তি নারায়ণ চৌধুরীরা পলাশী-পূর্ব সময়ের সোনার বাংলায় চাষি, কারিগর ও হকার পরিচালিত অর্থনীতির কথা বলেছেন। অথচ পলাশীর পরে ইউরোপীয় উপনিবেশের উদ্যমে আর বর্তমানে পরামর্শে করপোরেট অর্থনীতি আর রাষ্ট্রব্যবস্থা চাঁদে মানুষ পাঠালেও জাতিরাষ্ট্র প্রত্যেক মানুষের মুখে দুবেলা দুগ্রাস খাবার তুলে দিতে ব্যর্থ। মাথায় রাখতে হবে ভদ্রবিত্তকে চাকরি দেয় করপোরেটপ্রণোদিত রাষ্ট্র আর করপোরেটরা স্বয়ং। কারিগর, চাষি বা হকার ভদ্রবিত্তকে চাকরি দেয় না। তাই ভদ্রবিত্ত মোটের ওপরে করপোটের স্বার্থের সঙ্গে মিলিয়ে নিজের স্বার্থ সুরক্ষায় ব্যস্ত।
দুর্ভাগ্য যে আমাদের শাসক ও ভদ্রবিত্তরা আজও ইউরোপীয়দের তৈরি করা ঔপনিবেশিক বিশ্বব্যবস্থাতেই নিজেদের দেশের উন্নয়নের নিদান খুঁজছে। ‘স্বাধীন’ সাবেক ঔপনিবেশিক দেশগুলোকে বুঝতে হবে। ইউরোপের এশিয়া, আফ্রিকার মতো প্রাকৃতিক ধনসম্বল, জনবল না থাকা সত্ত্বেও করপোরেটদের মাধ্যমে তারা আজও শোষণ চালাচ্ছে। আমাদের সংগঠনের অন্যতম কর্মী বহ্নিহোত্রী হাজরা, কোবাড গান্ধীর গবেষণা থেকে দেখিয়েছেন, গত বছর ভারতের জিডিপির ১৭ শতাংশ লুট হয়ে দেশের বাইরে চলে গেছে। আমাদের উন্নয়ন আমাদের মতো করে হতে হবে। তবেই আমরা বাংলার ৬-৭ শতাংশ জিডিপিতে পৌঁছাতে পারব।
আজকের পত্রিকা: সেটা কী করে সম্ভব?
বিশ্বেন্দু নন্দ: সেই দিশা দেখাতে পারে অতীত ইতিহাস। করপোরেট অর্থনীতি রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হলে কী ঘটতে পারে? সেই উদাহরণের জন্য পলাশীর পরের বাংলাই যথেষ্ট। তাই অতীতের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে বাংলাকে সোনার বাংলা বানাতে করপোরেটদের খাঁচায় পোরা একান্তই প্রাথমিক শর্ত—তারপর অন্য কিছু।
আজকের পত্রিকা: পশ্চিম বাংলার ইতিহাসচর্চায় উপনিবেশবিরোধী চর্চাটা কেমন?
বিশ্বেন্দু নন্দ: ভদ্রবিত্তের চরিত্র সারা বিশ্বে এক। সে ঢাকা, কলকাতা, নিউইয়র্ক বা কঙ্গোর রাজধানী ব্রাজাভিল—যেকোনো অঞ্চল হোক না কেন। কলকাতা ভোলে না সে ছিল দ্বিতীয় সাম্রাজ্যকেন্দ্র। তার প্রৌঢ়, বৃদ্ধ, জরাগ্রস্ত ঔপনিবেশিক ভদ্রবিত্ত সমাজ যেকোনো ছুতোয় করপোরেটের দাস। বাংলার নতুন প্রজন্ম ক্রমেই জাগছে, অপ্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা সংগঠনের সব গবেষকই তরুণ। তাঁরাও প্রভাব ছড়াচ্ছেন। আমাদের সংগঠনের কর্মী অত্রি ভট্টাচার্য হিন্দুত্বকে নতুন চোখে এবং নতুন সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে দেখছেন, বহ্নিহোত্রী হাজরা সম্পদ লুটতত্ত্বে নতুন চরিত্র খুঁজে বেড়াচ্ছেন, দেবত্র দে আজকের কাঠামোগত সংস্কার নিয়ে কাজ করছেন এবং অমিয় চক্রবর্তী কাজ করছেন কথিত পলাশীর পরের সময়ের কাঠামোগত সংস্কারের ধারণা নিয়ে, সুদীঘ্ন দাস কাজ করছেন লুপ্ত হতে চলা জনপরিসর নিয়ে, ইমরাজ শেখ মির্জা কাজ করছেন হাটে করপোরেট দখলদারি বুঝতে, শাজাহান আলী কাজ করছেন মোগল আমলের জেন্ডার ফ্লুইডিটি নিয়ে।
শুধু কলকাতা নয়, আপনাদের বাংলাদেশের পঞ্চগড়ের নয়ন তানবীরুল বারী কাজ করছেন তাঁর অঞ্চল নিয়ে এবং চট্টগ্রামের সৈয়দ মোহাম্মদ মিনহাজ সুফি বাংলার শেষ হয়ে যাওয়া তুলো চাষ ফিরিয়ে আনতে উদ্যমী হয়েছেন। আমরা প্রতি মাসে একটা করে ছোট পুস্তক প্রকাশ করছি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিল্টন বিশ্বাস আর নবজাগরণের উদ্দেশ্য ও বিধেয় নিয়ে জরুরি প্রশ্ন তোলা দেবোত্তম চক্রবর্তী যৌথভাবে সম্পাদনা করছেন ১৭৭০ সালের গণহত্যা বুঝতে একটি বই।
কলকাতা, বাংলাদেশে প্রচুর প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উপনিবেশবিরোধী চর্চা করার গবেষক চাই। আমরা নতুন প্রজন্মের প্রতি একটু বেশিই আস্থাশীল। তাদের হাতেই মুক্তির লাগাম। এ কাজে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
আজকের পত্রিকা: উপনিবেশবিরোধী চর্চায় আপনার গুরু কারা?
বিশ্বেন্দু নন্দ: প্রথমত, চাষি, হকার ও কারিগর। তাঁরা শিখিয়েছেন ভদ্রবিত্ত সমাজ, পরজীবী রাষ্ট্র আর শহরব্যবস্থার বাইরে বিশাল বঙ্গভূমির উৎপাদনশীল মানুষদের দিকে চোখ ফেরাতে। বঙ্গভূমির কারিগরেরা উৎপাদনব্যবস্থার করপোরেট এবং কেন্দ্রীকরণবিরোধী। উপনিবেশবিরোধী লড়াইয়ে করপোরেটবিরোধী লড়াই প্রাণ দিয়ে লড়ে চলেছেন হাটুরেরা হাটের দোকানে, চাষিরা শস্য-শ্যামলা মাঠে আর বাড়ির ছোট্ট কারখানায় কামার, তাঁতি ও শঙ্খ কারিগরেরা স্লোগান-মিছিল ছাড়াই। কারণ তাঁদের তৈরি কারিগরব্যবস্থার চরিত্রটা তা-ই বলে।
১৭৬৩ সালে ফকির, সন্ন্যাসী, চাষি আর অন্য পেশাদার উপনিবেশের চরিত্র বুঝেছিলেন কয়েক বছরেই। তাঁরা অস্ত্র হাতে যে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন, সেই যুদ্ধ চলেছিল ১৮৫৮ সালের পরেও গ্রামেগঞ্জে। তখন ভদ্রবিত্তরা উপনিবেশের শর্তে তাদের হয়ে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র গড়তে ব্যস্ত। জয়া মিত্র, ধরম পাল, সুশীল চৌধুরী, অনুপম মিশ্র নতুন ভাবনার পথ দেখিয়েছেন। মোগল আমল নিয়ে মরহুম আবদুল করিম আজও আমার শিক্ষক। তিনিই মোগল বাংলা দেখতে শেখালেন। তাঁরাই আমার গুরু। তরুণদের কাছে নিত্য শিখি। আমি তাঁদের বিনীত অনুগামী।
আজকের পত্রিকা: আমরা কীভাবে উপনিবেশ থেকে মুক্ত হতে পারি?
বিশ্বেন্দু নন্দ: উপনিবেশ থেকে মুক্তির সহজ পথ নেই। স্পষ্ট মনে করি, দেশকে উপনিবেশমুক্ত করার আগে নিজেদের মনকে উপনিবেশমুক্ত করতে হবে। উপনিবেশ-পূর্ব সময়কে দেখতে হবে জাতিরাষ্ট্রের তৈরি করা চশমা খুলেই। তবেই আমরা নতুন বাংলায় শ্বাস নিতে পারব।

বিশ্বেন্দু নন্দ পশ্চিম বাংলার উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, লেখক, গবেষক ও অনুবাদক। ‘পরম’ পত্রিকার সম্পাদক। হকার, কারিগর সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন প্রায় তিন দশক। দুটি মৌলিক গ্রন্থসহ কয়েকটি অনুবাদগ্রন্থ রয়েছে তাঁর। সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের আমন্ত্রণে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। উপনিবেশবিরোধী আন্দোলন নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
আজকের পত্রিকা: কোন উপলব্ধি থেকে আপনারা উপনিবেশবিরোধী আন্দোলন শুরু করলেন?
বিশ্বেন্দু নন্দ: আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে উপনিবেশবাদ বিষয়টি স্পষ্ট করা দরকার। এ শব্দটি ইংরেজি ‘কলোনিয়ালিজম’ শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ। আবার উপনিবেশবাদ কথাটি এসেছে লাতিন ‘কলোনিয়া’ শব্দ থেকে, যার অর্থ বিশাল সম্পত্তি বা এস্টেট। সাধারণভাবে বলা যায়, কোনো দেশ যদি অন্য দেশের ভূখণ্ড বা অঞ্চলকে নিজের অধীন করে নেয়, তাহলে সেই অঞ্চলের নাম হয় উপনিবেশ। উপনিবেশবাদ হলো অন্য দেশের ভৌগোলিক অঞ্চলের ওপর শাসন প্রতিষ্ঠা ও সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ। আমরা মনে করি, আজকের উপনিবেশ করপোরেট উপনিবেশ। আমাদের স্বাধীনতা, নিজস্ব চিন্তা তারাই হরণ করছে, নামমাত্র স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের নামে।
ইংরেজরা প্রায় ২০০ বছর শাসন করার পর ভারতবর্ষ থেকে চলে গেলেও, তাদের শাসনের রেশ পুরো মাত্রায় সচল আছে আমাদের রাষ্ট্রকাঠামোয়। তাই প্রকাশ্য বা লুকোনো উপনিবেশ যত দিন থাকবে, উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের রাশ উপনিবেশিত মানুষের হাত থেকে কেড়ে নেওয়া যাবে না। দুর্ভাগ্যের কথা, তথাকথিত উপনিবেশবিরোধী চর্চার একটা অংশ মূলত ভদ্রবিত্তরা নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং করছে। করপোরেটের তৈরি জাতিরাষ্ট্রের পরিচালক ভদ্রবিত্তের স্বার্থপূরণই উপনিবেশবিরোধী চর্চা হিসেবে গণ্য হয়েছে। ভদ্রবিত্তীয় উপনিবেশবিরোধী চর্চা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়ে ভদ্রবিত্তের হাতের পুতুল হয়েছে চিরকাল। দেশের পর দেশ ‘স্বাধীন’ হয়েছে, উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের ভাগীদার ভদ্রবিত্তরা ক্ষমতায় গিয়ে স্বাধীন দেশে ইউরোপীয়দের ছেড়ে যাওয়া ঔপনিবেশিক কাঠামো যেমন বজায় রেখেছে, তেমনি যেনতেন প্রকারে ইউরোপীয়দের স্বার্থপূরণেও পিছপা হয়নি।
এশিয়া ছেড়ে ইংল্যান্ড, ডাচ, আফ্রিকা ছেড়ে ডাচ ফরাসি, বেলজিয়াম ও জার্মানির সাদা শাসকেরা ইউরোপে ফিরে গেলেও সেই সব দেশ-মহাদেশ থেকে উপনিবেশকাঠামো মুছে যায়নি। উপনিবেশে ভদ্রবিত্তরা চাকরি করেছে, ইউরোপ ক্ষমতা ছেড়ে চলে যাওয়ার পরেও ভদ্রবিত্তের চাকরি, দালালিতে ঝামেলা হয়নি। এই দীর্ঘ সময়ে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ঔপনিবেশিক ভদ্রবিত্ত সমাজ, বিপুল-বিশাল গ্রামনির্ভর উৎপাদনব্যবস্থাকে ঘেন্না করেছে। তাকে করপোরেট পুঁজির পায়ে বলি দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এসব ঘটেছে উপনিবেশবিরোধী আন্দোলন করা ভদ্রবিত্তের সহায়তায়। উপনিবেশের আগে বাংলাকে সোনার বাংলা বানানো হকার, কারিগর, চাষি বা অন্য পেশাদারের স্বার্থ, অধিকার, ভদ্রবিত্তপ্রণোদিত উপনিবেশবিরোধী চর্চা এত দিন অগ্রাহ্য করে তার স্বার্থ এবং ইউরোপের স্বার্থ পূরণ করেছে।
আমি এক দশকের বেশি সময় ধরে হকার আন্দোলনে জড়িয়ে ছিলাম। গত দেড় দশকের বেশি সময় কারিগর আন্দোলনের সার্বক্ষণিক কর্মী। একসময় বিক্রেতাদের সঙ্গে জড়িয়েছিলাম। আজ উৎপাদকদের স্বার্থে তাঁদের সংগঠনে যুক্ত হয়েছি। কারিগর, হকারা মনে করেন, এত দিনের উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনে শহরের গরিব আর কারিগর চাষির স্বার্থ রক্ষা হয়নি। আজ তাঁরা বুঝে নিতে চাইছেন কোনটা বৃহত্তর সমাজের উন্নয়ন আর কোনটা ভদ্রবিত্তচালিত করপোরেটের স্বার্থবাহী আন্দোলন। হকার, চাষি ও কারিগরেরা আজ
এই আন্দোলনের অন্যতম প্রতিভূ। আমরা তাঁদের দাবির সঙ্গে সহমত হয়ে এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।
আজকের পত্রিকা: একসময় এই ভারতবর্ষে ভাগ্য অন্বেষণে বহিরাগতরা আসত। সবকিছুতে আমরা সমৃদ্ধ ছিলাম। ব্রিটিশদের প্রায় ২০০ বছর শাসনে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম। আমরা আবার সেই অতীতে ফিরে যেতে পারব কি?
বিশ্বেন্দু নন্দ: যে অতীতের কথা বলছেন আপনি, সেই অতীতে বাংলার জিডিপি ছিল ৬ থেকে ৭ শতাংশ। তো সেই পলাশীর সময়ে ফিরে যাওয়ার কথা বললে ঔপনিবেশিক ভদ্রবিত্তের গায়ে-মনে তীব্র ছ্যাঁকা লাগে। অমিয় বাগচী, উতসা পট্টনায়েক, নরেন্দ্র কৃষ্ণ সিংহ, সুশীল চৌধুরী, ওম প্রকাশ, কীর্তি নারায়ণ চৌধুরীরা পলাশী-পূর্ব সময়ের সোনার বাংলায় চাষি, কারিগর ও হকার পরিচালিত অর্থনীতির কথা বলেছেন। অথচ পলাশীর পরে ইউরোপীয় উপনিবেশের উদ্যমে আর বর্তমানে পরামর্শে করপোরেট অর্থনীতি আর রাষ্ট্রব্যবস্থা চাঁদে মানুষ পাঠালেও জাতিরাষ্ট্র প্রত্যেক মানুষের মুখে দুবেলা দুগ্রাস খাবার তুলে দিতে ব্যর্থ। মাথায় রাখতে হবে ভদ্রবিত্তকে চাকরি দেয় করপোরেটপ্রণোদিত রাষ্ট্র আর করপোরেটরা স্বয়ং। কারিগর, চাষি বা হকার ভদ্রবিত্তকে চাকরি দেয় না। তাই ভদ্রবিত্ত মোটের ওপরে করপোটের স্বার্থের সঙ্গে মিলিয়ে নিজের স্বার্থ সুরক্ষায় ব্যস্ত।
দুর্ভাগ্য যে আমাদের শাসক ও ভদ্রবিত্তরা আজও ইউরোপীয়দের তৈরি করা ঔপনিবেশিক বিশ্বব্যবস্থাতেই নিজেদের দেশের উন্নয়নের নিদান খুঁজছে। ‘স্বাধীন’ সাবেক ঔপনিবেশিক দেশগুলোকে বুঝতে হবে। ইউরোপের এশিয়া, আফ্রিকার মতো প্রাকৃতিক ধনসম্বল, জনবল না থাকা সত্ত্বেও করপোরেটদের মাধ্যমে তারা আজও শোষণ চালাচ্ছে। আমাদের সংগঠনের অন্যতম কর্মী বহ্নিহোত্রী হাজরা, কোবাড গান্ধীর গবেষণা থেকে দেখিয়েছেন, গত বছর ভারতের জিডিপির ১৭ শতাংশ লুট হয়ে দেশের বাইরে চলে গেছে। আমাদের উন্নয়ন আমাদের মতো করে হতে হবে। তবেই আমরা বাংলার ৬-৭ শতাংশ জিডিপিতে পৌঁছাতে পারব।
আজকের পত্রিকা: সেটা কী করে সম্ভব?
বিশ্বেন্দু নন্দ: সেই দিশা দেখাতে পারে অতীত ইতিহাস। করপোরেট অর্থনীতি রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হলে কী ঘটতে পারে? সেই উদাহরণের জন্য পলাশীর পরের বাংলাই যথেষ্ট। তাই অতীতের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে বাংলাকে সোনার বাংলা বানাতে করপোরেটদের খাঁচায় পোরা একান্তই প্রাথমিক শর্ত—তারপর অন্য কিছু।
আজকের পত্রিকা: পশ্চিম বাংলার ইতিহাসচর্চায় উপনিবেশবিরোধী চর্চাটা কেমন?
বিশ্বেন্দু নন্দ: ভদ্রবিত্তের চরিত্র সারা বিশ্বে এক। সে ঢাকা, কলকাতা, নিউইয়র্ক বা কঙ্গোর রাজধানী ব্রাজাভিল—যেকোনো অঞ্চল হোক না কেন। কলকাতা ভোলে না সে ছিল দ্বিতীয় সাম্রাজ্যকেন্দ্র। তার প্রৌঢ়, বৃদ্ধ, জরাগ্রস্ত ঔপনিবেশিক ভদ্রবিত্ত সমাজ যেকোনো ছুতোয় করপোরেটের দাস। বাংলার নতুন প্রজন্ম ক্রমেই জাগছে, অপ্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা সংগঠনের সব গবেষকই তরুণ। তাঁরাও প্রভাব ছড়াচ্ছেন। আমাদের সংগঠনের কর্মী অত্রি ভট্টাচার্য হিন্দুত্বকে নতুন চোখে এবং নতুন সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে দেখছেন, বহ্নিহোত্রী হাজরা সম্পদ লুটতত্ত্বে নতুন চরিত্র খুঁজে বেড়াচ্ছেন, দেবত্র দে আজকের কাঠামোগত সংস্কার নিয়ে কাজ করছেন এবং অমিয় চক্রবর্তী কাজ করছেন কথিত পলাশীর পরের সময়ের কাঠামোগত সংস্কারের ধারণা নিয়ে, সুদীঘ্ন দাস কাজ করছেন লুপ্ত হতে চলা জনপরিসর নিয়ে, ইমরাজ শেখ মির্জা কাজ করছেন হাটে করপোরেট দখলদারি বুঝতে, শাজাহান আলী কাজ করছেন মোগল আমলের জেন্ডার ফ্লুইডিটি নিয়ে।
শুধু কলকাতা নয়, আপনাদের বাংলাদেশের পঞ্চগড়ের নয়ন তানবীরুল বারী কাজ করছেন তাঁর অঞ্চল নিয়ে এবং চট্টগ্রামের সৈয়দ মোহাম্মদ মিনহাজ সুফি বাংলার শেষ হয়ে যাওয়া তুলো চাষ ফিরিয়ে আনতে উদ্যমী হয়েছেন। আমরা প্রতি মাসে একটা করে ছোট পুস্তক প্রকাশ করছি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিল্টন বিশ্বাস আর নবজাগরণের উদ্দেশ্য ও বিধেয় নিয়ে জরুরি প্রশ্ন তোলা দেবোত্তম চক্রবর্তী যৌথভাবে সম্পাদনা করছেন ১৭৭০ সালের গণহত্যা বুঝতে একটি বই।
কলকাতা, বাংলাদেশে প্রচুর প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উপনিবেশবিরোধী চর্চা করার গবেষক চাই। আমরা নতুন প্রজন্মের প্রতি একটু বেশিই আস্থাশীল। তাদের হাতেই মুক্তির লাগাম। এ কাজে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
আজকের পত্রিকা: উপনিবেশবিরোধী চর্চায় আপনার গুরু কারা?
বিশ্বেন্দু নন্দ: প্রথমত, চাষি, হকার ও কারিগর। তাঁরা শিখিয়েছেন ভদ্রবিত্ত সমাজ, পরজীবী রাষ্ট্র আর শহরব্যবস্থার বাইরে বিশাল বঙ্গভূমির উৎপাদনশীল মানুষদের দিকে চোখ ফেরাতে। বঙ্গভূমির কারিগরেরা উৎপাদনব্যবস্থার করপোরেট এবং কেন্দ্রীকরণবিরোধী। উপনিবেশবিরোধী লড়াইয়ে করপোরেটবিরোধী লড়াই প্রাণ দিয়ে লড়ে চলেছেন হাটুরেরা হাটের দোকানে, চাষিরা শস্য-শ্যামলা মাঠে আর বাড়ির ছোট্ট কারখানায় কামার, তাঁতি ও শঙ্খ কারিগরেরা স্লোগান-মিছিল ছাড়াই। কারণ তাঁদের তৈরি কারিগরব্যবস্থার চরিত্রটা তা-ই বলে।
১৭৬৩ সালে ফকির, সন্ন্যাসী, চাষি আর অন্য পেশাদার উপনিবেশের চরিত্র বুঝেছিলেন কয়েক বছরেই। তাঁরা অস্ত্র হাতে যে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন, সেই যুদ্ধ চলেছিল ১৮৫৮ সালের পরেও গ্রামেগঞ্জে। তখন ভদ্রবিত্তরা উপনিবেশের শর্তে তাদের হয়ে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র গড়তে ব্যস্ত। জয়া মিত্র, ধরম পাল, সুশীল চৌধুরী, অনুপম মিশ্র নতুন ভাবনার পথ দেখিয়েছেন। মোগল আমল নিয়ে মরহুম আবদুল করিম আজও আমার শিক্ষক। তিনিই মোগল বাংলা দেখতে শেখালেন। তাঁরাই আমার গুরু। তরুণদের কাছে নিত্য শিখি। আমি তাঁদের বিনীত অনুগামী।
আজকের পত্রিকা: আমরা কীভাবে উপনিবেশ থেকে মুক্ত হতে পারি?
বিশ্বেন্দু নন্দ: উপনিবেশ থেকে মুক্তির সহজ পথ নেই। স্পষ্ট মনে করি, দেশকে উপনিবেশমুক্ত করার আগে নিজেদের মনকে উপনিবেশমুক্ত করতে হবে। উপনিবেশ-পূর্ব সময়কে দেখতে হবে জাতিরাষ্ট্রের তৈরি করা চশমা খুলেই। তবেই আমরা নতুন বাংলায় শ্বাস নিতে পারব।
মাসুদ রানা।

বিশ্বেন্দু নন্দ পশ্চিম বাংলার উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, লেখক, গবেষক ও অনুবাদক। ‘পরম’ পত্রিকার সম্পাদক। হকার, কারিগর সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন প্রায় তিন দশক। দুটি মৌলিক গ্রন্থসহ কয়েকটি অনুবাদগ্রন্থ রয়েছে তাঁর। সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের আমন্ত্রণে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। উপনিবেশবিরোধী আন্দোলন নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
আজকের পত্রিকা: কোন উপলব্ধি থেকে আপনারা উপনিবেশবিরোধী আন্দোলন শুরু করলেন?
বিশ্বেন্দু নন্দ: আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে উপনিবেশবাদ বিষয়টি স্পষ্ট করা দরকার। এ শব্দটি ইংরেজি ‘কলোনিয়ালিজম’ শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ। আবার উপনিবেশবাদ কথাটি এসেছে লাতিন ‘কলোনিয়া’ শব্দ থেকে, যার অর্থ বিশাল সম্পত্তি বা এস্টেট। সাধারণভাবে বলা যায়, কোনো দেশ যদি অন্য দেশের ভূখণ্ড বা অঞ্চলকে নিজের অধীন করে নেয়, তাহলে সেই অঞ্চলের নাম হয় উপনিবেশ। উপনিবেশবাদ হলো অন্য দেশের ভৌগোলিক অঞ্চলের ওপর শাসন প্রতিষ্ঠা ও সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ। আমরা মনে করি, আজকের উপনিবেশ করপোরেট উপনিবেশ। আমাদের স্বাধীনতা, নিজস্ব চিন্তা তারাই হরণ করছে, নামমাত্র স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের নামে।
ইংরেজরা প্রায় ২০০ বছর শাসন করার পর ভারতবর্ষ থেকে চলে গেলেও, তাদের শাসনের রেশ পুরো মাত্রায় সচল আছে আমাদের রাষ্ট্রকাঠামোয়। তাই প্রকাশ্য বা লুকোনো উপনিবেশ যত দিন থাকবে, উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের রাশ উপনিবেশিত মানুষের হাত থেকে কেড়ে নেওয়া যাবে না। দুর্ভাগ্যের কথা, তথাকথিত উপনিবেশবিরোধী চর্চার একটা অংশ মূলত ভদ্রবিত্তরা নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং করছে। করপোরেটের তৈরি জাতিরাষ্ট্রের পরিচালক ভদ্রবিত্তের স্বার্থপূরণই উপনিবেশবিরোধী চর্চা হিসেবে গণ্য হয়েছে। ভদ্রবিত্তীয় উপনিবেশবিরোধী চর্চা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়ে ভদ্রবিত্তের হাতের পুতুল হয়েছে চিরকাল। দেশের পর দেশ ‘স্বাধীন’ হয়েছে, উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের ভাগীদার ভদ্রবিত্তরা ক্ষমতায় গিয়ে স্বাধীন দেশে ইউরোপীয়দের ছেড়ে যাওয়া ঔপনিবেশিক কাঠামো যেমন বজায় রেখেছে, তেমনি যেনতেন প্রকারে ইউরোপীয়দের স্বার্থপূরণেও পিছপা হয়নি।
এশিয়া ছেড়ে ইংল্যান্ড, ডাচ, আফ্রিকা ছেড়ে ডাচ ফরাসি, বেলজিয়াম ও জার্মানির সাদা শাসকেরা ইউরোপে ফিরে গেলেও সেই সব দেশ-মহাদেশ থেকে উপনিবেশকাঠামো মুছে যায়নি। উপনিবেশে ভদ্রবিত্তরা চাকরি করেছে, ইউরোপ ক্ষমতা ছেড়ে চলে যাওয়ার পরেও ভদ্রবিত্তের চাকরি, দালালিতে ঝামেলা হয়নি। এই দীর্ঘ সময়ে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ঔপনিবেশিক ভদ্রবিত্ত সমাজ, বিপুল-বিশাল গ্রামনির্ভর উৎপাদনব্যবস্থাকে ঘেন্না করেছে। তাকে করপোরেট পুঁজির পায়ে বলি দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এসব ঘটেছে উপনিবেশবিরোধী আন্দোলন করা ভদ্রবিত্তের সহায়তায়। উপনিবেশের আগে বাংলাকে সোনার বাংলা বানানো হকার, কারিগর, চাষি বা অন্য পেশাদারের স্বার্থ, অধিকার, ভদ্রবিত্তপ্রণোদিত উপনিবেশবিরোধী চর্চা এত দিন অগ্রাহ্য করে তার স্বার্থ এবং ইউরোপের স্বার্থ পূরণ করেছে।
আমি এক দশকের বেশি সময় ধরে হকার আন্দোলনে জড়িয়ে ছিলাম। গত দেড় দশকের বেশি সময় কারিগর আন্দোলনের সার্বক্ষণিক কর্মী। একসময় বিক্রেতাদের সঙ্গে জড়িয়েছিলাম। আজ উৎপাদকদের স্বার্থে তাঁদের সংগঠনে যুক্ত হয়েছি। কারিগর, হকারা মনে করেন, এত দিনের উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনে শহরের গরিব আর কারিগর চাষির স্বার্থ রক্ষা হয়নি। আজ তাঁরা বুঝে নিতে চাইছেন কোনটা বৃহত্তর সমাজের উন্নয়ন আর কোনটা ভদ্রবিত্তচালিত করপোরেটের স্বার্থবাহী আন্দোলন। হকার, চাষি ও কারিগরেরা আজ
এই আন্দোলনের অন্যতম প্রতিভূ। আমরা তাঁদের দাবির সঙ্গে সহমত হয়ে এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।
আজকের পত্রিকা: একসময় এই ভারতবর্ষে ভাগ্য অন্বেষণে বহিরাগতরা আসত। সবকিছুতে আমরা সমৃদ্ধ ছিলাম। ব্রিটিশদের প্রায় ২০০ বছর শাসনে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম। আমরা আবার সেই অতীতে ফিরে যেতে পারব কি?
বিশ্বেন্দু নন্দ: যে অতীতের কথা বলছেন আপনি, সেই অতীতে বাংলার জিডিপি ছিল ৬ থেকে ৭ শতাংশ। তো সেই পলাশীর সময়ে ফিরে যাওয়ার কথা বললে ঔপনিবেশিক ভদ্রবিত্তের গায়ে-মনে তীব্র ছ্যাঁকা লাগে। অমিয় বাগচী, উতসা পট্টনায়েক, নরেন্দ্র কৃষ্ণ সিংহ, সুশীল চৌধুরী, ওম প্রকাশ, কীর্তি নারায়ণ চৌধুরীরা পলাশী-পূর্ব সময়ের সোনার বাংলায় চাষি, কারিগর ও হকার পরিচালিত অর্থনীতির কথা বলেছেন। অথচ পলাশীর পরে ইউরোপীয় উপনিবেশের উদ্যমে আর বর্তমানে পরামর্শে করপোরেট অর্থনীতি আর রাষ্ট্রব্যবস্থা চাঁদে মানুষ পাঠালেও জাতিরাষ্ট্র প্রত্যেক মানুষের মুখে দুবেলা দুগ্রাস খাবার তুলে দিতে ব্যর্থ। মাথায় রাখতে হবে ভদ্রবিত্তকে চাকরি দেয় করপোরেটপ্রণোদিত রাষ্ট্র আর করপোরেটরা স্বয়ং। কারিগর, চাষি বা হকার ভদ্রবিত্তকে চাকরি দেয় না। তাই ভদ্রবিত্ত মোটের ওপরে করপোটের স্বার্থের সঙ্গে মিলিয়ে নিজের স্বার্থ সুরক্ষায় ব্যস্ত।
দুর্ভাগ্য যে আমাদের শাসক ও ভদ্রবিত্তরা আজও ইউরোপীয়দের তৈরি করা ঔপনিবেশিক বিশ্বব্যবস্থাতেই নিজেদের দেশের উন্নয়নের নিদান খুঁজছে। ‘স্বাধীন’ সাবেক ঔপনিবেশিক দেশগুলোকে বুঝতে হবে। ইউরোপের এশিয়া, আফ্রিকার মতো প্রাকৃতিক ধনসম্বল, জনবল না থাকা সত্ত্বেও করপোরেটদের মাধ্যমে তারা আজও শোষণ চালাচ্ছে। আমাদের সংগঠনের অন্যতম কর্মী বহ্নিহোত্রী হাজরা, কোবাড গান্ধীর গবেষণা থেকে দেখিয়েছেন, গত বছর ভারতের জিডিপির ১৭ শতাংশ লুট হয়ে দেশের বাইরে চলে গেছে। আমাদের উন্নয়ন আমাদের মতো করে হতে হবে। তবেই আমরা বাংলার ৬-৭ শতাংশ জিডিপিতে পৌঁছাতে পারব।
আজকের পত্রিকা: সেটা কী করে সম্ভব?
বিশ্বেন্দু নন্দ: সেই দিশা দেখাতে পারে অতীত ইতিহাস। করপোরেট অর্থনীতি রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হলে কী ঘটতে পারে? সেই উদাহরণের জন্য পলাশীর পরের বাংলাই যথেষ্ট। তাই অতীতের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে বাংলাকে সোনার বাংলা বানাতে করপোরেটদের খাঁচায় পোরা একান্তই প্রাথমিক শর্ত—তারপর অন্য কিছু।
আজকের পত্রিকা: পশ্চিম বাংলার ইতিহাসচর্চায় উপনিবেশবিরোধী চর্চাটা কেমন?
বিশ্বেন্দু নন্দ: ভদ্রবিত্তের চরিত্র সারা বিশ্বে এক। সে ঢাকা, কলকাতা, নিউইয়র্ক বা কঙ্গোর রাজধানী ব্রাজাভিল—যেকোনো অঞ্চল হোক না কেন। কলকাতা ভোলে না সে ছিল দ্বিতীয় সাম্রাজ্যকেন্দ্র। তার প্রৌঢ়, বৃদ্ধ, জরাগ্রস্ত ঔপনিবেশিক ভদ্রবিত্ত সমাজ যেকোনো ছুতোয় করপোরেটের দাস। বাংলার নতুন প্রজন্ম ক্রমেই জাগছে, অপ্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা সংগঠনের সব গবেষকই তরুণ। তাঁরাও প্রভাব ছড়াচ্ছেন। আমাদের সংগঠনের কর্মী অত্রি ভট্টাচার্য হিন্দুত্বকে নতুন চোখে এবং নতুন সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে দেখছেন, বহ্নিহোত্রী হাজরা সম্পদ লুটতত্ত্বে নতুন চরিত্র খুঁজে বেড়াচ্ছেন, দেবত্র দে আজকের কাঠামোগত সংস্কার নিয়ে কাজ করছেন এবং অমিয় চক্রবর্তী কাজ করছেন কথিত পলাশীর পরের সময়ের কাঠামোগত সংস্কারের ধারণা নিয়ে, সুদীঘ্ন দাস কাজ করছেন লুপ্ত হতে চলা জনপরিসর নিয়ে, ইমরাজ শেখ মির্জা কাজ করছেন হাটে করপোরেট দখলদারি বুঝতে, শাজাহান আলী কাজ করছেন মোগল আমলের জেন্ডার ফ্লুইডিটি নিয়ে।
শুধু কলকাতা নয়, আপনাদের বাংলাদেশের পঞ্চগড়ের নয়ন তানবীরুল বারী কাজ করছেন তাঁর অঞ্চল নিয়ে এবং চট্টগ্রামের সৈয়দ মোহাম্মদ মিনহাজ সুফি বাংলার শেষ হয়ে যাওয়া তুলো চাষ ফিরিয়ে আনতে উদ্যমী হয়েছেন। আমরা প্রতি মাসে একটা করে ছোট পুস্তক প্রকাশ করছি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিল্টন বিশ্বাস আর নবজাগরণের উদ্দেশ্য ও বিধেয় নিয়ে জরুরি প্রশ্ন তোলা দেবোত্তম চক্রবর্তী যৌথভাবে সম্পাদনা করছেন ১৭৭০ সালের গণহত্যা বুঝতে একটি বই।
কলকাতা, বাংলাদেশে প্রচুর প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উপনিবেশবিরোধী চর্চা করার গবেষক চাই। আমরা নতুন প্রজন্মের প্রতি একটু বেশিই আস্থাশীল। তাদের হাতেই মুক্তির লাগাম। এ কাজে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
আজকের পত্রিকা: উপনিবেশবিরোধী চর্চায় আপনার গুরু কারা?
বিশ্বেন্দু নন্দ: প্রথমত, চাষি, হকার ও কারিগর। তাঁরা শিখিয়েছেন ভদ্রবিত্ত সমাজ, পরজীবী রাষ্ট্র আর শহরব্যবস্থার বাইরে বিশাল বঙ্গভূমির উৎপাদনশীল মানুষদের দিকে চোখ ফেরাতে। বঙ্গভূমির কারিগরেরা উৎপাদনব্যবস্থার করপোরেট এবং কেন্দ্রীকরণবিরোধী। উপনিবেশবিরোধী লড়াইয়ে করপোরেটবিরোধী লড়াই প্রাণ দিয়ে লড়ে চলেছেন হাটুরেরা হাটের দোকানে, চাষিরা শস্য-শ্যামলা মাঠে আর বাড়ির ছোট্ট কারখানায় কামার, তাঁতি ও শঙ্খ কারিগরেরা স্লোগান-মিছিল ছাড়াই। কারণ তাঁদের তৈরি কারিগরব্যবস্থার চরিত্রটা তা-ই বলে।
১৭৬৩ সালে ফকির, সন্ন্যাসী, চাষি আর অন্য পেশাদার উপনিবেশের চরিত্র বুঝেছিলেন কয়েক বছরেই। তাঁরা অস্ত্র হাতে যে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন, সেই যুদ্ধ চলেছিল ১৮৫৮ সালের পরেও গ্রামেগঞ্জে। তখন ভদ্রবিত্তরা উপনিবেশের শর্তে তাদের হয়ে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র গড়তে ব্যস্ত। জয়া মিত্র, ধরম পাল, সুশীল চৌধুরী, অনুপম মিশ্র নতুন ভাবনার পথ দেখিয়েছেন। মোগল আমল নিয়ে মরহুম আবদুল করিম আজও আমার শিক্ষক। তিনিই মোগল বাংলা দেখতে শেখালেন। তাঁরাই আমার গুরু। তরুণদের কাছে নিত্য শিখি। আমি তাঁদের বিনীত অনুগামী।
আজকের পত্রিকা: আমরা কীভাবে উপনিবেশ থেকে মুক্ত হতে পারি?
বিশ্বেন্দু নন্দ: উপনিবেশ থেকে মুক্তির সহজ পথ নেই। স্পষ্ট মনে করি, দেশকে উপনিবেশমুক্ত করার আগে নিজেদের মনকে উপনিবেশমুক্ত করতে হবে। উপনিবেশ-পূর্ব সময়কে দেখতে হবে জাতিরাষ্ট্রের তৈরি করা চশমা খুলেই। তবেই আমরা নতুন বাংলায় শ্বাস নিতে পারব।

বিশ্বেন্দু নন্দ পশ্চিম বাংলার উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, লেখক, গবেষক ও অনুবাদক। ‘পরম’ পত্রিকার সম্পাদক। হকার, কারিগর সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন প্রায় তিন দশক। দুটি মৌলিক গ্রন্থসহ কয়েকটি অনুবাদগ্রন্থ রয়েছে তাঁর। সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের আমন্ত্রণে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। উপনিবেশবিরোধী আন্দোলন নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
আজকের পত্রিকা: কোন উপলব্ধি থেকে আপনারা উপনিবেশবিরোধী আন্দোলন শুরু করলেন?
বিশ্বেন্দু নন্দ: আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে উপনিবেশবাদ বিষয়টি স্পষ্ট করা দরকার। এ শব্দটি ইংরেজি ‘কলোনিয়ালিজম’ শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ। আবার উপনিবেশবাদ কথাটি এসেছে লাতিন ‘কলোনিয়া’ শব্দ থেকে, যার অর্থ বিশাল সম্পত্তি বা এস্টেট। সাধারণভাবে বলা যায়, কোনো দেশ যদি অন্য দেশের ভূখণ্ড বা অঞ্চলকে নিজের অধীন করে নেয়, তাহলে সেই অঞ্চলের নাম হয় উপনিবেশ। উপনিবেশবাদ হলো অন্য দেশের ভৌগোলিক অঞ্চলের ওপর শাসন প্রতিষ্ঠা ও সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ। আমরা মনে করি, আজকের উপনিবেশ করপোরেট উপনিবেশ। আমাদের স্বাধীনতা, নিজস্ব চিন্তা তারাই হরণ করছে, নামমাত্র স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের নামে।
ইংরেজরা প্রায় ২০০ বছর শাসন করার পর ভারতবর্ষ থেকে চলে গেলেও, তাদের শাসনের রেশ পুরো মাত্রায় সচল আছে আমাদের রাষ্ট্রকাঠামোয়। তাই প্রকাশ্য বা লুকোনো উপনিবেশ যত দিন থাকবে, উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের রাশ উপনিবেশিত মানুষের হাত থেকে কেড়ে নেওয়া যাবে না। দুর্ভাগ্যের কথা, তথাকথিত উপনিবেশবিরোধী চর্চার একটা অংশ মূলত ভদ্রবিত্তরা নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং করছে। করপোরেটের তৈরি জাতিরাষ্ট্রের পরিচালক ভদ্রবিত্তের স্বার্থপূরণই উপনিবেশবিরোধী চর্চা হিসেবে গণ্য হয়েছে। ভদ্রবিত্তীয় উপনিবেশবিরোধী চর্চা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়ে ভদ্রবিত্তের হাতের পুতুল হয়েছে চিরকাল। দেশের পর দেশ ‘স্বাধীন’ হয়েছে, উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের ভাগীদার ভদ্রবিত্তরা ক্ষমতায় গিয়ে স্বাধীন দেশে ইউরোপীয়দের ছেড়ে যাওয়া ঔপনিবেশিক কাঠামো যেমন বজায় রেখেছে, তেমনি যেনতেন প্রকারে ইউরোপীয়দের স্বার্থপূরণেও পিছপা হয়নি।
এশিয়া ছেড়ে ইংল্যান্ড, ডাচ, আফ্রিকা ছেড়ে ডাচ ফরাসি, বেলজিয়াম ও জার্মানির সাদা শাসকেরা ইউরোপে ফিরে গেলেও সেই সব দেশ-মহাদেশ থেকে উপনিবেশকাঠামো মুছে যায়নি। উপনিবেশে ভদ্রবিত্তরা চাকরি করেছে, ইউরোপ ক্ষমতা ছেড়ে চলে যাওয়ার পরেও ভদ্রবিত্তের চাকরি, দালালিতে ঝামেলা হয়নি। এই দীর্ঘ সময়ে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ঔপনিবেশিক ভদ্রবিত্ত সমাজ, বিপুল-বিশাল গ্রামনির্ভর উৎপাদনব্যবস্থাকে ঘেন্না করেছে। তাকে করপোরেট পুঁজির পায়ে বলি দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এসব ঘটেছে উপনিবেশবিরোধী আন্দোলন করা ভদ্রবিত্তের সহায়তায়। উপনিবেশের আগে বাংলাকে সোনার বাংলা বানানো হকার, কারিগর, চাষি বা অন্য পেশাদারের স্বার্থ, অধিকার, ভদ্রবিত্তপ্রণোদিত উপনিবেশবিরোধী চর্চা এত দিন অগ্রাহ্য করে তার স্বার্থ এবং ইউরোপের স্বার্থ পূরণ করেছে।
আমি এক দশকের বেশি সময় ধরে হকার আন্দোলনে জড়িয়ে ছিলাম। গত দেড় দশকের বেশি সময় কারিগর আন্দোলনের সার্বক্ষণিক কর্মী। একসময় বিক্রেতাদের সঙ্গে জড়িয়েছিলাম। আজ উৎপাদকদের স্বার্থে তাঁদের সংগঠনে যুক্ত হয়েছি। কারিগর, হকারা মনে করেন, এত দিনের উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনে শহরের গরিব আর কারিগর চাষির স্বার্থ রক্ষা হয়নি। আজ তাঁরা বুঝে নিতে চাইছেন কোনটা বৃহত্তর সমাজের উন্নয়ন আর কোনটা ভদ্রবিত্তচালিত করপোরেটের স্বার্থবাহী আন্দোলন। হকার, চাষি ও কারিগরেরা আজ
এই আন্দোলনের অন্যতম প্রতিভূ। আমরা তাঁদের দাবির সঙ্গে সহমত হয়ে এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।
আজকের পত্রিকা: একসময় এই ভারতবর্ষে ভাগ্য অন্বেষণে বহিরাগতরা আসত। সবকিছুতে আমরা সমৃদ্ধ ছিলাম। ব্রিটিশদের প্রায় ২০০ বছর শাসনে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম। আমরা আবার সেই অতীতে ফিরে যেতে পারব কি?
বিশ্বেন্দু নন্দ: যে অতীতের কথা বলছেন আপনি, সেই অতীতে বাংলার জিডিপি ছিল ৬ থেকে ৭ শতাংশ। তো সেই পলাশীর সময়ে ফিরে যাওয়ার কথা বললে ঔপনিবেশিক ভদ্রবিত্তের গায়ে-মনে তীব্র ছ্যাঁকা লাগে। অমিয় বাগচী, উতসা পট্টনায়েক, নরেন্দ্র কৃষ্ণ সিংহ, সুশীল চৌধুরী, ওম প্রকাশ, কীর্তি নারায়ণ চৌধুরীরা পলাশী-পূর্ব সময়ের সোনার বাংলায় চাষি, কারিগর ও হকার পরিচালিত অর্থনীতির কথা বলেছেন। অথচ পলাশীর পরে ইউরোপীয় উপনিবেশের উদ্যমে আর বর্তমানে পরামর্শে করপোরেট অর্থনীতি আর রাষ্ট্রব্যবস্থা চাঁদে মানুষ পাঠালেও জাতিরাষ্ট্র প্রত্যেক মানুষের মুখে দুবেলা দুগ্রাস খাবার তুলে দিতে ব্যর্থ। মাথায় রাখতে হবে ভদ্রবিত্তকে চাকরি দেয় করপোরেটপ্রণোদিত রাষ্ট্র আর করপোরেটরা স্বয়ং। কারিগর, চাষি বা হকার ভদ্রবিত্তকে চাকরি দেয় না। তাই ভদ্রবিত্ত মোটের ওপরে করপোটের স্বার্থের সঙ্গে মিলিয়ে নিজের স্বার্থ সুরক্ষায় ব্যস্ত।
দুর্ভাগ্য যে আমাদের শাসক ও ভদ্রবিত্তরা আজও ইউরোপীয়দের তৈরি করা ঔপনিবেশিক বিশ্বব্যবস্থাতেই নিজেদের দেশের উন্নয়নের নিদান খুঁজছে। ‘স্বাধীন’ সাবেক ঔপনিবেশিক দেশগুলোকে বুঝতে হবে। ইউরোপের এশিয়া, আফ্রিকার মতো প্রাকৃতিক ধনসম্বল, জনবল না থাকা সত্ত্বেও করপোরেটদের মাধ্যমে তারা আজও শোষণ চালাচ্ছে। আমাদের সংগঠনের অন্যতম কর্মী বহ্নিহোত্রী হাজরা, কোবাড গান্ধীর গবেষণা থেকে দেখিয়েছেন, গত বছর ভারতের জিডিপির ১৭ শতাংশ লুট হয়ে দেশের বাইরে চলে গেছে। আমাদের উন্নয়ন আমাদের মতো করে হতে হবে। তবেই আমরা বাংলার ৬-৭ শতাংশ জিডিপিতে পৌঁছাতে পারব।
আজকের পত্রিকা: সেটা কী করে সম্ভব?
বিশ্বেন্দু নন্দ: সেই দিশা দেখাতে পারে অতীত ইতিহাস। করপোরেট অর্থনীতি রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হলে কী ঘটতে পারে? সেই উদাহরণের জন্য পলাশীর পরের বাংলাই যথেষ্ট। তাই অতীতের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে বাংলাকে সোনার বাংলা বানাতে করপোরেটদের খাঁচায় পোরা একান্তই প্রাথমিক শর্ত—তারপর অন্য কিছু।
আজকের পত্রিকা: পশ্চিম বাংলার ইতিহাসচর্চায় উপনিবেশবিরোধী চর্চাটা কেমন?
বিশ্বেন্দু নন্দ: ভদ্রবিত্তের চরিত্র সারা বিশ্বে এক। সে ঢাকা, কলকাতা, নিউইয়র্ক বা কঙ্গোর রাজধানী ব্রাজাভিল—যেকোনো অঞ্চল হোক না কেন। কলকাতা ভোলে না সে ছিল দ্বিতীয় সাম্রাজ্যকেন্দ্র। তার প্রৌঢ়, বৃদ্ধ, জরাগ্রস্ত ঔপনিবেশিক ভদ্রবিত্ত সমাজ যেকোনো ছুতোয় করপোরেটের দাস। বাংলার নতুন প্রজন্ম ক্রমেই জাগছে, অপ্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা সংগঠনের সব গবেষকই তরুণ। তাঁরাও প্রভাব ছড়াচ্ছেন। আমাদের সংগঠনের কর্মী অত্রি ভট্টাচার্য হিন্দুত্বকে নতুন চোখে এবং নতুন সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে দেখছেন, বহ্নিহোত্রী হাজরা সম্পদ লুটতত্ত্বে নতুন চরিত্র খুঁজে বেড়াচ্ছেন, দেবত্র দে আজকের কাঠামোগত সংস্কার নিয়ে কাজ করছেন এবং অমিয় চক্রবর্তী কাজ করছেন কথিত পলাশীর পরের সময়ের কাঠামোগত সংস্কারের ধারণা নিয়ে, সুদীঘ্ন দাস কাজ করছেন লুপ্ত হতে চলা জনপরিসর নিয়ে, ইমরাজ শেখ মির্জা কাজ করছেন হাটে করপোরেট দখলদারি বুঝতে, শাজাহান আলী কাজ করছেন মোগল আমলের জেন্ডার ফ্লুইডিটি নিয়ে।
শুধু কলকাতা নয়, আপনাদের বাংলাদেশের পঞ্চগড়ের নয়ন তানবীরুল বারী কাজ করছেন তাঁর অঞ্চল নিয়ে এবং চট্টগ্রামের সৈয়দ মোহাম্মদ মিনহাজ সুফি বাংলার শেষ হয়ে যাওয়া তুলো চাষ ফিরিয়ে আনতে উদ্যমী হয়েছেন। আমরা প্রতি মাসে একটা করে ছোট পুস্তক প্রকাশ করছি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিল্টন বিশ্বাস আর নবজাগরণের উদ্দেশ্য ও বিধেয় নিয়ে জরুরি প্রশ্ন তোলা দেবোত্তম চক্রবর্তী যৌথভাবে সম্পাদনা করছেন ১৭৭০ সালের গণহত্যা বুঝতে একটি বই।
কলকাতা, বাংলাদেশে প্রচুর প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উপনিবেশবিরোধী চর্চা করার গবেষক চাই। আমরা নতুন প্রজন্মের প্রতি একটু বেশিই আস্থাশীল। তাদের হাতেই মুক্তির লাগাম। এ কাজে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
আজকের পত্রিকা: উপনিবেশবিরোধী চর্চায় আপনার গুরু কারা?
বিশ্বেন্দু নন্দ: প্রথমত, চাষি, হকার ও কারিগর। তাঁরা শিখিয়েছেন ভদ্রবিত্ত সমাজ, পরজীবী রাষ্ট্র আর শহরব্যবস্থার বাইরে বিশাল বঙ্গভূমির উৎপাদনশীল মানুষদের দিকে চোখ ফেরাতে। বঙ্গভূমির কারিগরেরা উৎপাদনব্যবস্থার করপোরেট এবং কেন্দ্রীকরণবিরোধী। উপনিবেশবিরোধী লড়াইয়ে করপোরেটবিরোধী লড়াই প্রাণ দিয়ে লড়ে চলেছেন হাটুরেরা হাটের দোকানে, চাষিরা শস্য-শ্যামলা মাঠে আর বাড়ির ছোট্ট কারখানায় কামার, তাঁতি ও শঙ্খ কারিগরেরা স্লোগান-মিছিল ছাড়াই। কারণ তাঁদের তৈরি কারিগরব্যবস্থার চরিত্রটা তা-ই বলে।
১৭৬৩ সালে ফকির, সন্ন্যাসী, চাষি আর অন্য পেশাদার উপনিবেশের চরিত্র বুঝেছিলেন কয়েক বছরেই। তাঁরা অস্ত্র হাতে যে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন, সেই যুদ্ধ চলেছিল ১৮৫৮ সালের পরেও গ্রামেগঞ্জে। তখন ভদ্রবিত্তরা উপনিবেশের শর্তে তাদের হয়ে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র গড়তে ব্যস্ত। জয়া মিত্র, ধরম পাল, সুশীল চৌধুরী, অনুপম মিশ্র নতুন ভাবনার পথ দেখিয়েছেন। মোগল আমল নিয়ে মরহুম আবদুল করিম আজও আমার শিক্ষক। তিনিই মোগল বাংলা দেখতে শেখালেন। তাঁরাই আমার গুরু। তরুণদের কাছে নিত্য শিখি। আমি তাঁদের বিনীত অনুগামী।
আজকের পত্রিকা: আমরা কীভাবে উপনিবেশ থেকে মুক্ত হতে পারি?
বিশ্বেন্দু নন্দ: উপনিবেশ থেকে মুক্তির সহজ পথ নেই। স্পষ্ট মনে করি, দেশকে উপনিবেশমুক্ত করার আগে নিজেদের মনকে উপনিবেশমুক্ত করতে হবে। উপনিবেশ-পূর্ব সময়কে দেখতে হবে জাতিরাষ্ট্রের তৈরি করা চশমা খুলেই। তবেই আমরা নতুন বাংলায় শ্বাস নিতে পারব।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

বিশ্বেন্দু নন্দ পশ্চিম বাংলার উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, লেখক, গবেষক ও অনুবাদক। ‘পরম’ পত্রিকার সম্পাদক। হকার, কারিগর সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন প্রায় তিন দশক। দুটি মৌলিক গ্রন্থসহ কয়েকটি অনুবাদগ্রন্থ রয়েছে তাঁর। সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের আমন্ত্রণে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

বিশ্বেন্দু নন্দ পশ্চিম বাংলার উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, লেখক, গবেষক ও অনুবাদক। ‘পরম’ পত্রিকার সম্পাদক। হকার, কারিগর সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন প্রায় তিন দশক। দুটি মৌলিক গ্রন্থসহ কয়েকটি অনুবাদগ্রন্থ রয়েছে তাঁর। সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের আমন্ত্রণে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

বিশ্বেন্দু নন্দ পশ্চিম বাংলার উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, লেখক, গবেষক ও অনুবাদক। ‘পরম’ পত্রিকার সম্পাদক। হকার, কারিগর সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন প্রায় তিন দশক। দুটি মৌলিক গ্রন্থসহ কয়েকটি অনুবাদগ্রন্থ রয়েছে তাঁর। সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের আমন্ত্রণে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

বিশ্বেন্দু নন্দ পশ্চিম বাংলার উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, লেখক, গবেষক ও অনুবাদক। ‘পরম’ পত্রিকার সম্পাদক। হকার, কারিগর সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন প্রায় তিন দশক। দুটি মৌলিক গ্রন্থসহ কয়েকটি অনুবাদগ্রন্থ রয়েছে তাঁর। সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের আমন্ত্রণে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫