Ajker Patrika

আবাসিক এলাকায় সিসার কারখানা, ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সিরাজদিখান (মুন্সিগঞ্জ)
আপডেট : ২৬ মে ২০২২, ০৮: ৪৫
আবাসিক এলাকায় সিসার কারখানা, ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বালুচর ইউনিয়নের আবাসিক প্রকল্প ডিসি প্রজেক্টের ভেতরে গড়ে তোলা হয়েছে দুটি অবৈধ সিসার কারখানা। আশপাশে ও প্রকল্পে বসবাস করছে কয়েক শ পরিবার। কারখানা থেকে নির্গত ক্ষতিকর ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

জানা যায়, এ ধরনের পদার্থ মানুষের শ্বাসকষ্ট, হৃদ্‌রোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। আর কোনো পশু কারখানার আশপাশের ঘাস খেলে অসুস্থ কিংবা মারাও যেতে পারে। তাই এই সিসা কারখানা বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, ডিসি প্রজেক্টের প্রধান ফটক থেকে পাকা রাস্তা ধরে ২০০ গজের মধ্যে রাস্তার দুই পাশে দুটি সিসা গালানো কারখানা। সেখানে থাকা কয়েকজন শ্রমিক পরিত্যক্ত ব্যাটারির খোলস আলাদা করছেন। তাঁরা হাতে গ্লাভস পরে থাকলেও মুখ-পায়ে কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা নেই। অ্যাসিডমিশ্রিত বর্জ্যের ছোট বেশ কয়েকটি স্তূপ রয়েছে। কারখানার মাটির গর্ত করে সিমেন্টের ঢালাই দিয়ে দুটি করে চুল্লি বানানো হয়েছে। চুল্লির পাশে ছোট ছোট সিসার টুকরা। কারখানার ভেতরে হাজারো পরিত্যক্ত ছোট-বড় ব্যাটারি। ওই ব্যাটারির কোষগুলো সিমেন্টের মতো জমাট বেঁধে যায়। চুল্লির মধ্যে কাঠ ও কয়লা দিয়ে অ্যাসিডমিশ্রিত জমাটবাঁধা বর্জ্য সাজানো হয়। এরপর আগুন ধরিয়ে দিয়ে একটি পাম্পের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক পাখা দিয়ে প্রচণ্ড বেগে বাতাস দেওয়া হয়। কাঠ ও কয়লা পুড়ে একটি আগুনের কুণ্ডলীর সৃষ্টি হয়। সিসা পুড়ে তরল হয়। এরপর একটি লম্বা চামচ দিয়ে বর্জ্য সরিয়ে সিসা লোহার তৈরি কড়াইয়ে রাখা হয়। ঘন ধূসর ধোঁয়া চিমনি দিয়ে বের হয়ে যায়।

জানা যায়, রাত থেকে ভোর পর্যন্ত সিসা তৈরির কাজ করা হয় কারখানা দুটিতে। এ সময় ধূসর ও কালো ধোঁয়ায় গ্রাম আচ্ছন্ন হয়ে যায়। আশপাশের গাছপালা বিবর্ণ হয়ে গেছে। ধোঁয়া ও বর্জ্যে পরিবেশ দূষণের কবলে এখন আবাসিক প্রকল্প ও পাশের গ্রামগুলো। অ্যাসিডের ঝাঁজালো গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে এলাকাবাসী। অসুস্থ হয়ে পড়ছে আশপাশের বাড়ির মানুষ।

আবাসিক প্রকল্পের বাসিন্দা গৃহিণী ফৌজিয়া আক্তার বলেন, ‘প্রতি রাতে সিসা পড়ানোর ধোঁয়ার গন্ধে থাকা যায় না। খুব বাজে গন্ধ। নিশ্বাস নেওয়া যায় না। খুব দুর্ভোগের মধ্যে বসবাস করছি। এই সিসা কারখানা দুটি বন্ধ করা দরকার। তা না হলে আমরা কেউ বাঁচব না।’

আবাসিক প্রকল্পের বাসিন্দারা জানান, এখানে প্রতি রাতে ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা বের করা হয়। ব্যাটারি পোড়ানোর সময় গোটা এলাকায় ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে যায়। গ্রামের মানুষের কাশি ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাচ্ছে। গাছপালা, ফলমূল সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন যেন দ্রুত এই অবৈধ সিসা কারখানা দুটি বন্ধ করে দেয়।

সিসা কারখানার শ্রমিক মো. আবুল বলেন, বাস ও ট্রাকের একটি পরিত্যক্ত ব্যাটারি থেকে গড়ে ২২-২৩ কেজি এবং ইজিবাইকের পরিত্যক্ত ব্যাটারি থেকে ৬-২৩ কেজি পর্যন্ত সিসা পাওয়া যায়।

কারখানার দুটির শ্রমিকেরা মালিকের নাম ও মোবাইল নম্বর দিতে রাজি হননি। তাই মালিকের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বালুচর ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমি বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানিয়েছি, কর্মকর্তারা এসে জব্বারের সিসা কারখানা অনেক দিন আগে বন্ধ করে দিয়েছিলেন। শুনেছি তিনি গোপনে আবার সিসা পোড়াচ্ছেন। এ ছাড়া আরেকটি কারখানায় সব সময়ই সিসা গলানো হয়। আমরা এটির বিষয়েও জানিয়েছি। কর্মকর্তারা এসে ব্যবস্থা নেবে বলে আমাদের জানিয়েছেন।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শরীফুল আলম তানভীর বলেন, ‘এ ধরনের অবৈধ ব্যবসা কেউ পরিচালনা করলে অবিলম্বে কারখানা বন্ধের ব্যবস্থা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

রাখাইনে মানবিক করিডর কি প্রক্সি যুদ্ধের ফাঁদ হবে, ভারত-চীন কীভাবে দেখবে

পিটুনিতে নিহত সেই শামীম মোল্লাকে বহিষ্কার করল জাবি প্রশাসন, সমালোচনার ঝড়

চিন্ময় দাসের জামিন স্থগিতের আবেদন, শুনানি রোববার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত