Ajker Patrika

বাংলাদেশে হিমালয়ের শকুন

আরিফুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮: ৪৫
বাংলাদেশে হিমালয়ের শকুন

তীক্ষ্ণদৃষ্টিসম্পন্ন শিকারি পাখিদের নাম নিলে প্রথমেই আসে শকুনের নাম। অনেকে পাখিটিকে শত্রু বা অশুভের প্রতীক মনে করলেও এটি আসলে আমাদের মিত্র। মৃত পশুপাখির মাংসসহ উচ্ছিষ্ট খায় বলে এদের ‘প্রকৃতির পরিচ্ছন্নতাকর্মীও’ বলা হয়। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার কারণে গত দুই যুগে বাংলাদেশ থেকে উপকারী এই পাখি বিলুপ্তির পথে। শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বে এটি বিপন্নপ্রায়।

হিমালয়ের এই শকুনের ইংরেজি নাম হিমালয়ান গ্রিফন বা হিমালয়ের গৃধিনী। তবে বাংলাদেশে এটি হিমালয়ের শকুন নামেই পরিচিত। সম্প্রতি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় এই প্রজাতির একটি শকুন ধরা পড়ে। এরপর তা বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেন স্থানীয়রা।

রংপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মতলুবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, হিমালয় পর্বতমালার বিচরণস্থল থেকে দল বেঁধে বাংলাদেশে উড়ে আসার সময় কিছু শকুন দুর্বল হয়ে পড়ে। স্থানীয়রা সেগুলো ধরে ফেলে। আগে অনেকে শকুন মেরে ফেললেও প্রচার-প্রচারণার কারণে এখন সচেতনতা বেড়েছে। তাই স্থানীয় লোকজন শকুনগুলো বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছে। গত বছর রংপুর অঞ্চলে এই প্রজাতির ১৮টি শকুন উদ্ধার করা হয়। তিনি আরও বলেন, উদ্ধার হওয়া এসব শকুন দিনাজপুরের সিংড়া ফরেস্টে অবস্থিত শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যাকেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। পরে শীতের শেষে মার্চ-এপ্রিল মাসে এগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়। তখন এসব পাখি আগের বাসস্থানের দিকে যাত্রা করে।

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, ‘শকুন মূলত মৃত গরু-ছাগলসহ মৃত পশু খায়। উঁচু গাছ এদের প্রধান আবাসস্থল। আমাদের দেশে উন্মুক্ত পরিবেশে এখন মৃত পশুপাখি ফেলে রাখা হয় না। আর দেশে বড় উঁচু বৃক্ষেরও সংকট। ফলে খাদ্য ও বাসস্থানের অভাবে দেশে শকুন এখন বিলুপ্তির পথে।’

জানতে চাইলে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘দেশের সিলেট ও সুন্দরবন অঞ্চলে কিছু বাংলা শকুনের বিচরণ থাকলেও বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে শকুনের স্থায়ী কোনো আবাসস্থল নেই। সাধারণত শীতকালে হিমালয় অঞ্চল থেকে কিছু হিমালয়ান শকুন টিকে থাকার তাগিদে বাংলাদেশের এই অঞ্চলে আসে। এরা পুরোপুরি পরিযায়ী। হিমালয়ান শকুনের গলা এবং শরীরের নিচের অংশে সাদা কোমল পালক থাকে, যা বাংলা শকুনের নেই।’

শকুনকে মানুষের বন্ধু ও প্রকৃতির পরিচ্ছন্নতাকর্মী উল্লেখ করে বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা বলেন, মৃত গবাদি পশুপাখির শরীরে কলেরা, অ্যানথ্রাক্সসহ যে সংক্রামক রোগের জীবাণু থাকে, তা শকুন ছাড়া অন্য কোনো পশুপাখির পেটে হজম হয় না। শকুনের পেটে একধরনের বিশেষ জারক রস থাকায় ওই সংক্রামক রোগের জীবাণু ধ্বংস হয়। ফলে এসব রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। উপকৃত হয় মানুষ। কাজেই শকুন সংরক্ষণ করা জরুরি। তিনি আরও বলেন, ‘গবাদিপশুর শরীরে ব্যথানাশক ডাইক্লোফেনাক ও কিটোপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ ব্যবহারের কারণে শকুন বিপন্নের পথে। সরকার এসব ওষুধ নিষিদ্ধ করেছে। এগুলোর পরিবর্তে মেলোক্সিক্যাম জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা নিরাপদ। শকুন সংরক্ষণে সরকার জাতীয় শকুন সংরক্ষণ কমিটি করেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...