Ajker Patrika

‘আগাম বর্ষা ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৩ জুন ২০২৫, ১৬: ৫৯
জুম মিটিংয়ে আলোচনা সভায় বক্তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা।
জুম মিটিংয়ে আলোচনা সভায় বক্তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা।

জলবায়ু পরিবর্তনে আগাম বর্ষা ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে ঢাকা মহানগরসহ দেশের অন্যান্য নগরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনাবিদেরা। ‘নগরায়ণ ও উন্নয়নবিষয়ক পর্যালোচনা: আগাম বর্ষায় নগর এলাকায় জলাবদ্ধতা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন।

ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) আয়োজনে আজ মঙ্গলবার (৩ জুন) বেলা ১১টায় অনলাইনে জুম মিটিংয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে যথাযথ উদ্যোগ নিয়ে বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন বক্তারা।

আলোচনায় বক্তারা বলেন, আগে দেখেছি জলাবদ্ধতা নিরসনে বড় বড় পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হতো, কিন্তু কোনো সুফল বয়ে আনত না। বর্তমানেও নেওয়া হচ্ছে, তবে সেটি আগের মতোই আছে। পানি নিষ্কাশনের অব্যবস্থাপনা, অবৈধ দখল, টেন্ডারবাজি, নালা-নর্দমার অকার্যকারিতা, কার্যকারী খনন না করাসহ বেশ কিছু কারণে জলাবদ্ধতাকে আরও জটিল করে তুলছে।

তাঁরা বলেন, ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহসহ এবার বেশ কিছু নগরে জলাবদ্ধতা অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। মানুষ দুর্বিষহ জীবন অতিবাহিত করছে। স্বাস্থ্যঝুঁকি, জীবনের ঝুঁকিসহ নানান সমস্যায় রয়েছেন নগরবাসী। খাল ও জলাধারগুলোর দখল, ড্রেনেজ ব্যবস্থার প্রশস্ততা না থাকা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জলাবদ্ধতা মারাত্মক বেড়েই চলেছে।

তাঁরা বলেন, অনেক সরকারি পরিকল্পনায় দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, দখলদারি ও মাফিয়াদের উৎপাত লক্ষ করা যাচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পরে জনগণ ভেবেছিল এগুলো থেকে মুক্তি পাবে, অথচ কমেনি। মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তাও কেউ করে না। দুর্নীতি যেন এ দেশের নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহজালাল মিশুক, জুরাইনের পরিবেশ ও সামাজিক আন্দোলনের নেতা মিজানুর রহমান মিজান, পরিকল্পনাবিদ শেখ আদনান ইসলাম (খুলনা), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফরহাদুর রেজা, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ আসিফ ইকবাল, ময়মনসিংহ থেকে পরিকল্পনাবিদ ফাহিম আহম্মেদ মণ্ডল, কুমিল্লা থেকে পরিকল্পনাবিদ ইবতেছাম রাশেদিন নাজলা, বরিশাল থেকে পরিকল্পনাবিদ আব্দুল আহাদ নাফিস ও রংপুর থেকে পরিকল্পনাবিদ মো. রেদওয়ানুর রহমান।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞ আসিফ ইকবাল বলেন, জমি দখল হওয়া, অপরিকল্পনা ও সমন্বয়হীনতার কারণে জলাবদ্ধতা বেড়েই চলেছে। রাজধানীর বসুন্ধরা থেকে জমি অধিগ্রহণ করতে করতে পূর্বাচল পর্যন্ত চলে গেছে। এদিকে খাল, রাস্তা ও ড্রেনের প্রশস্ততা না থাকার কারণেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। আগের থেকে ঢাকায় এখন জলাবদ্ধতা বেশি। পানি নামার জায়গা তো নেই।

আসিফ ইকবাল বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে নগরের খাল ও ড্রেন পুনরুদ্ধার করে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। পরিকল্পনাগুলো কোথায় কী হচ্ছে, তা তত্ত্বাবধান করতে হবে। একক সমন্বিত কর্তৃপক্ষ গঠন করে শহরের পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা ও পলিসি তৈরিতে প্রান্তিক জনগণ অংশগ্রহণ করলেই জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব। এ ছাড়া নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধি ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত