Ajker Patrika

রেকর্ড দ্রুততায় শুকাচ্ছে গঙ্গা, গুরুতর হুমকির মুখে ভারত–বাংলাদেশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১: ৪৮
দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে গঙ্গা/পদ্মা। ছবি: এএফপি
দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে গঙ্গা/পদ্মা। ছবি: এএফপি

গঙ্গা (যা বাংলাদেশে পদ্মা নামেও পরিচিত) দক্ষিণ এশিয়ার কোটি মানুষের জীবনের অবলম্বন। কিন্তু এই অবলম্বনই ব্যাপকভাবে দ্রুত শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ইতিহাসে এত দ্রুত কখনোই গঙ্গাকে শুকিয়ে যেতে দেখা যায়নি। তাঁরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, বদলে যাওয়া মৌসুমি বৃষ্টি, লাগাতার পানি উত্তোলন ও বাঁধ নির্মাণ—সব মিলিয়ে মহাশক্তিশালী এই নদী ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এর প্রভাব পড়ছে খাদ্য, পানির জোগান আর কোটি মানুষের জীবিকার ওপর।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের এক গবেষণা থেকে এ তথ্য জানা গেছে। গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেই। এর শিরোনাম ‘The Ganges River is drying faster than ever–here’s what it means for the region and the world. ’ অর্থাৎ, ‘অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় দ্রুত শুকাচ্ছে গঙ্গা, এর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রভাব কী।’

শতাব্দীর পর শতাব্দী গঙ্গা ও এর উপনদীগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলের জীবনধারণের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত এই নদী অববাহিকা সাড়ে ৬০০ কোটি মানুষের জীবনের ভরসা। এই নদী ভারতের এক-চতুর্থাংশ মিঠা পানি এবং দেশটির বিশাল খাদ্য ও অর্থনীতির লাইফ লাইন। কিন্তু নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, নদীটির অবক্ষয় এখন রেকর্ডকৃত ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে।

সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বিশ্বের বড় বড় অনেক নদীর রূপান্তর নিয়ে উদ্বেগজনক তথ্য নথিবদ্ধ করেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু গঙ্গার ক্ষেত্রে এই পরিবর্তনের গতি ও ব্যাপকতা আলাদা মাত্রা নিয়েছে। এক নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা ১ হাজার ৩০০ বছরের প্রবাহের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। সেখানে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক কয়েক দশকেই অববাহিকাটি ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ খরার মুখোমুখি হয়েছে। আর এই খরাগুলো প্রাকৃতিক জলবায়ু পরিবর্তনের সীমার বাইরে।

যে নদীপথে একসময় সারা বছর নৌযান চলাচল হতো, তা এখন গ্রীষ্মে অচল হয়ে পড়ছে। বড় নৌকা যেগুলো আগে বাংলার নদী থেকে বিহার হয়ে বারাণসী ও এলাহাবাদ পর্যন্ত গঙ্গায় চলত, সেগুলো এখন বালুচরে আটকে যাচ্ছে। যেসব খাল আগে সপ্তাহের পর সপ্তাহ জমিতে পানি বয়ে নিয়ে যেত গঙ্গা থেকে, সেগুলো এখন আগেভাগেই শুকিয়ে যাচ্ছে। এমনকি যেসব কূপ একেক পরিবারকে কয়েক দশক ধরে বাঁচিয়ে রেখেছিল, সেগুলো এখন কেবল ফোঁটা ফোঁটা পানি দিচ্ছে।

বৈশ্বিক জলবায়ু মডেলও গঙ্গার শুকিয়ে যাওয়ার ভয়াবহতা অনুমানে ব্যর্থ হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর মানে মানবিক ও পরিবেশগত চাপ এমনভাবে একে অপরের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে, যা আমরা এখনো পুরোপুরি বুঝতে পারিনি। সেচখালগুলোতে অতিরিক্ত পানি সরানো হচ্ছে, কৃষির জন্য ভূগর্ভস্থ পানি পাম্প করা হচ্ছে, নদীর তীরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিল্পকারখানা। এক হাজারের বেশি বাঁধ ও ব্যারাজ নদীর স্বাভাবিক গতিপথই পাল্টে দিয়েছে। এর সঙ্গে বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে মৌসুমি বৃষ্টিও ক্রমেই অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। ফলাফল হচ্ছে—একটি নদীব্যবস্থা যা নিজেকে আর টিকিয়ে রাখতে পারছে না।

হিমালয়ের উচ্চভূমিতে নদীর উৎস গঙ্গোত্রী হিমবাহ মাত্র দুই দশকে হ্রাস পেয়ে আগের তুলনায় প্রায় এক কিলোমিটার পিছিয়ে গেছে। পুরো হিমালয়ে একই চিত্র দেখা যাচ্ছে—উষ্ণায়নে দ্রুত হিমবাহ গলে যাচ্ছে। প্রথম দিকে এতে হিমবাহ হ্রদ থেকে হঠাৎ বন্যা নামত। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এর মানে হচ্ছে শুষ্ক মৌসুমে নদীতে অনেক কম পানি প্রবাহিত হবে।

এসব হিমবাহকে বলা হয় ‘এশিয়ার পানির টাওয়ার’। কিন্তু সেই টাওয়ারগুলো ছোট হয়ে আসায় গ্রীষ্মকালে গঙ্গা ও এর উপনদীগুলোর পানির প্রবাহও ভয়াবহভাবে কমে যাচ্ছে।

ভূগর্ভস্থ পানির লাগামহীন উত্তোলন পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করছে। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা এখন বিশ্বের দ্রুততম হারে নিঃশেষ হতে থাকা ভূগর্ভস্থ জলাধারগুলোর একটি। প্রতিবছর পানির স্তর ১৫ থেকে ২০ মিলিমিটার পর্যন্ত নেমে যাচ্ছে। এর মধ্যে অনেক ভূগর্ভস্থ পানিই আবার আর্সেনিক ও ফ্লোরাইডে দূষিত। এতে মানবস্বাস্থ্য ও কৃষি উভয়ই হুমকির মুখে।

মানুষের প্রকৌশলগত হস্তক্ষেপও বড় ভূমিকা রাখছে। ভারতের ফারাক্কা ব্যারাজের মতো প্রকল্পগুলো শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে পানির প্রবাহ কমিয়ে দিয়েছে। এতে মাটি আরও লবণাক্ত হচ্ছে আর হুমকির মুখে পড়ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। স্বল্পমেয়াদি অর্থনৈতিক লাভকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্তগুলো নদীর পরিবেশগত ভারসাম্য ভেঙে দিয়েছে।

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল আর পশ্চিমবঙ্গে অনেক ছোট নদী গ্রীষ্মেই শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে গ্রামাঞ্চলে মানুষ ফসল ও গবাদিপশুর জন্য পানি পাচ্ছে না। এই উপনদীগুলোর অদৃশ্য হয়ে যাওয়া বড় সতর্কবার্তা, যা জানিয়ে দিচ্ছে গঙ্গার ক্ষেত্রেও একই পরিণতি ঘটতে পারে। বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা, এখনই কিছু না বদলালে কয়েক দশকের মধ্যে অববাহিকার কোটি মানুষ ভয়াবহ খাদ্য সংকটের মুখে পড়বে।

এখন আর টুকরো টুকরো সমাধানে কাজ হবে না। জরুরি ভিত্তিতে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া ছাড়া গঙ্গাকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। এর মানে হচ্ছে, ভূগর্ভস্থ পানির অতি ব্যবহার কমানো, যাতে স্বাভাবিকভাবে পুনরায় মজুত হতে পারে। এর মানে নদীতে পর্যাপ্ত প্রবাহ বজায় রাখা, যাতে মানুষ ও পরিবেশ দুটিই টিকে থাকে। এর মানে উন্নত জলবায়ু মডেল তৈরি করা, যেখানে সেচ, বাঁধ ও মৌসুমি বৃষ্টির অনিশ্চয়তা একসঙ্গে বিবেচনায় রাখা হবে।

একই সঙ্গে সীমান্তপারের সহযোগিতা অপরিহার্য। ভারত, বাংলাদেশ ও নেপালকে আরও বেশি করে তথ্য ভাগাভাগি করতে হবে, বাঁধ পরিচালনায় সমন্বয় করতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় যৌথ পরিকল্পনা নিতে হবে। আন্তর্জাতিক তহবিল আর রাজনৈতিক অঙ্গীকারেও গঙ্গার মতো নদীগুলোকে বৈশ্বিক অগ্রাধিকার হিসেবে নিতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে শাসনব্যবস্থা যেন অংশগ্রহণমূলক হয়—স্থানীয় মানুষের কণ্ঠস্বর, বিজ্ঞানী আর নীতিনির্ধারকদের পাশাপাশি নদী পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় সমানভাবে গুরুত্ব পায়।

গঙ্গা শুধু একটি নদী নয়। এটি জীবনরেখা, এটি পবিত্র প্রতীক, এটি দক্ষিণ এশীয় সভ্যতার ভিত্তি। কিন্তু এই নদী এখন ইতিহাসে যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে। নিষ্ক্রিয়তার পরিণতি অকল্পনীয়। সতর্কবার্তার সময় শেষ হয়ে গেছে। এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে গঙ্গা বয়ে চলে—শুধু আমাদের জন্য নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সারা দেশেই শীত বাড়ছে, ১৬ ডিগ্রিতে নামল তাপমাত্রা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সারা দেশেই শীত বাড়ছে, ১৬ ডিগ্রিতে নামল তাপমাত্রা

উত্তরাঞ্চলসহ সারা দেশেই শীত পড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগ ছাড়া দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেছে। রাজশাহীতে আজ সোমবার সকাল ৯টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিন ঘণ্টা আগে ভোর ৬টায় যা ছিল ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ সকাল ৯টার পূর্বাভাসে জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে দিন ও রাতে তাপমাত্রা আর কমতে পারে। এর মধ্যে দিনের বেলা তাপমাত্রা সামান্য কমলেও রাতের বেলা কমতে পারে ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানায়, মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এ অবস্থায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।

আবহাওয়াবিদ ড. ওমর ফারুক আজ সকালে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলে শীত পড়তে শুরু করেছে। ক্রমান্বয়ে সারা দেশেই শীত বাড়বে। তবে আপাতত আরও দুই-তিন তাপমাত্রা কমবে। এর পর তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকায় বায়ুদূষণ বেড়েছে, দিল্লির অবস্থা দুর্যোগপূর্ণ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের দূষিত শহর তালিকায় দশের মধ্যে অবস্থান করছে ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহরগুলো। এর মধ্যে আজ সোমবার তালিকার প্রথম তিন স্থান দখল করে আছে দিল্লি, লাহোর ও ঢাকা।

রাজধানী শহর ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণের সংকটে ভুগছে। আজ বায়ুদূষণে বিশ্বের তৃতীয় দূষিত শহর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। শহরটির বাতাসের গুণগত মান (একিউআই) নিয়মিতভাবে ‘অস্বাস্থ্যকর’ থেকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ শ্রেণিতে থাকছে।

আইকিউএয়ারসহ বৈশ্বিক বায়ু পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, শহরের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) প্রায়ই ১৮০ (যা ‘অস্বাস্থ্যকর’ মাত্রা নির্দেশ করে) বা তার চেয়ে বেশি রেকর্ড করা হচ্ছে। দৈনিক গড় মান প্রায়ই ১৫০-এর ওপরে থাকছে, যা ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে চিহ্নিত। এই উদ্বেগজনক সংখ্যাগুলো বাসিন্দাদের জন্য একটি তাৎক্ষণিক এবং গুরুতর জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি তুলে ধরেছে।

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের আজ সকাল ৯টার রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার গড় বায়ুমান ২৬২। যা খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।

বায়ুদূষণের শীর্ষে থাকা ভারতের দিল্লির বায়ুমান আজ ৪৯০, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক। শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো পাকিস্তানের লাহোর (৩৯৪), ভারতের কলকাতা (১৯৯) ও বসনিয়া হার্জেগোভিনার সারাজেভো (১৭৭)।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

এদিকে রাজধানী ঢাকার যে কয়টি এলাকায় আজ সকাল ৯টার দিকে ভয়াবহ মাত্রার বায়ুদূষণ রেকর্ড করা হয়েছে, সেগুলো হলো— আইসিডিডিআরবি ৩০৬, দক্ষিণ পল্লবী ২৭৪, ইস্টার্ন হাউজিং ২৭১, বেচারাম দেউড়ি ২৬৩, বেজ এজওয়াটার আউটডোর ২৬২, কল্যাণপুর ২৫৫, গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ২৩৫ ও গোড়ান ২৩২।

শীতকালীন আবহাওয়ার ধরন, যানবাহন ও শিল্প থেকে অনিয়ন্ত্রিত নির্গমন, চলমান নির্মাণকাজ থেকে সৃষ্ট ধুলো এবং আশপাশের ইটভাটাগুলো এই দূষণ সংকটের জন্য দায়ী।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সারা দেশে বাড়ছে শীতের অনুভূতি, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রাজশাহী ও তেঁতুলিয়ায়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সারা দেশের প্রায় সব অঞ্চলে শীতের অনুভূতি বাড়ছে। আজ সোমবার সকাল ৬টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল রাজশাহী ও পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ায় ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় রাজধানী ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

সারা দেশে আজকের আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। একই সঙ্গে সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

এদিকে সোমবার সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টার জন্য ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। তবে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। এ সময় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমে যেতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানায়, আজ সকাল ৬টায় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৭৯ শতাংশ। আজ সূর্যাস্ত হবে সন্ধ্যা ৫টা ১৪ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ভোর ৬টা ১১ মিনিটে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত সারা দেশের সম্ভাব্য পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। একই সঙ্গে সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

আবহাওয়াবিদ ড. ওমর ফারুক আজ সকালে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলে শীত পড়তে শুরু করেছে। ক্রমান্বয়ে সারা দেশেই শীত বাড়বে। তবে আপাতত আরও দুই-তিন তাপমাত্রা কমবে। এর পর তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শ্বাসরুদ্ধকর হয়ে উঠছে ঢাকার বাতাস, মহানগরীর ৮ এলাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩৬
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানী ঢাকা দীর্ঘস্থায়ী এবং বিপজ্জনক বায়ুদূষণের সংকটে ভুগছে। বাতাসের গুণগত মান (একিউআই) নিয়মিতভাবে ‘অস্বাস্থ্যকর’ থেকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ শ্রেণিতে থাকছে।

আইকিউএয়ারসহ বৈশ্বিক বায়ু পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, শহরের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) প্রায়ই ১৮০ (যা ‘অস্বাস্থ্যকর’ মাত্রা নির্দেশ করে) বা তার চেয়ে বেশি রেকর্ড করা হচ্ছে। দৈনিক গড় মান প্রায়ই ১৫০-এর ওপরে থাকছে, যা ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে চিহ্নিত। এই উদ্বেগজনক সংখ্যাগুলো বাসিন্দাদের জন্য একটি তাৎক্ষণিক এবং গুরুতর জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি তুলে ধরেছে।

অবশ্য শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলো বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শুরুর দশের মধ্যে অবস্থান করছে। এর মধ্যে আজ রোববার এই তালিকায় শীর্ষে আছে ভারতের দিল্লি। শহরটির অবস্থা আজ দুর্যোগপূর্ণ। আজ ঢাকার বাতাসেও দূষণ বেড়েছে। ঢাকার বাতাস আজ সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর।

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের আজ সকাল ৯টার রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার গড় বায়ুমান ২১৩। বায়ুদূষণের শীর্ষ শহরগুলোর তালিকায় আজ চতুর্থ স্থানে আছে ঢাকা।

বায়ুদূষণের শীর্ষে থাকা ভারতের দিল্লির বায়ুমান আজ ৬৮৬, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক। শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো পাকিস্তানের লাহোর (৩৫৪), কুয়েতের কুয়েত সিটি (২৮৬), ভারতের কলকাতা (১৯৬), পাকিস্তানের করাচি (১৬১) এবং ইরাকের বাগদাদ (১৫৬)।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

এদিকে রাজধানী ঢাকার যে কয়টি এলাকায় আজ সকাল ৯টার দিকে ভয়াবহ মাত্রার বায়ুদূষণ রেকর্ড করা হয়েছে, সেগুলো হলো ইস্টার্ন হাউজিং ২২৬, দক্ষিণ পল্লবী ২২৭, কল্যাণপুর ২১৩, বেজ এজওয়াটার ২২৭, আইসিডিডিআরবি ২৫০, গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ১৯৬, গোরান ১৯৪ এবং বেচারাম দেউড়ি ২২৯।

শীতকালীন আবহাওয়ার ধরন, যানবাহন ও শিল্প থেকে অনিয়ন্ত্রিত নির্গমন, চলমান নির্মাণকাজ থেকে সৃষ্ট ধুলো এবং আশপাশের ইটভাটাগুলো এই দূষণ সংকটের জন্য দায়ী।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত