Ajker Patrika

লবণাক্ততা মোকাবিলায় জৈব কৃষি, সুন্দরবনের নারীদের অনন্য লড়াই

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৬ মে ২০২৫, ১৯: ০৯
ধানের দেশীয় জাত সংরক্ষণের মধ্যে লবণাক্ততার সঙ্গে লড়াই করছেন সুন্দরবনের নারীরা। ছবি: সংগৃহীত
ধানের দেশীয় জাত সংরক্ষণের মধ্যে লবণাক্ততার সঙ্গে লড়াই করছেন সুন্দরবনের নারীরা। ছবি: সংগৃহীত

বছর পঞ্চাশের বর্ণালি ধারা যখন তাঁর স্বামীর রাসায়নিক সারের দোকানে পা রাখেন, তখন কেবল স্বামীকে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। তাঁর স্বামী তত দিনে স্কুলশিক্ষকের চাকরি পেয়েছেন। ভারতীয় সুন্দরবনের এক প্রান্তে ছোট্ট জনপদ নিচিন্তাপুর এখন জৈব কৃষিতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। বর্ণালির গ্রাম এটি।

বর্ণালিদের এলাকায় রাসায়নিক সারের দোকানগুলো একসময় কৃষকদের মিলনস্থল হয়ে উঠেছিল। আজ এসব স্থানেই তাঁরা আলোচনা করেন, কখনো একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নেন কোন বীজ কিনবেন, কোন সার ব্যবহার করবেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সুন্দরবনে প্রধান ফসল ধান। জমিতে পুরুষদের মতোই, বরং তার চেয়ে বেশি কাজ করেন নারীরা। কিন্তু হাইব্রিড, উচ্চ ফলনশীল ধানের বীজ ও রাসায়নিক সার কেনার সিদ্ধান্ত মূলত পুরুষেরাই নিয়ে থাকেন।

উত্তীর্ণ ধরা বর্ণালির মতোই আরেক নারী। ২০০৫ সালে যখন দোকানটির দায়িত্ব নেন, তখন তিনি এই সমস্যাগুলো জানতেন। উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ ধরা বলেন, ‘আমি সুন্দরবনের কৃষক পরিবার থেকে এসেছি।’

তবে ধরা যা জানতেন না, তা হলো, দোকানে ১২ বছর কাটানোর পর তাঁর জীবন এক অপ্রত্যাশিত মোড় নেবে। তিনি বলেন, পুরুষেরা এসে খুব হতাশা নিয়ে অভিযোগ করতেন। নিচিন্তাপুর পশ্চিমবঙ্গের কুলপি প্রশাসনিক ব্লকে কৃষকেরা অভিযোগ করতেন, রাসায়নিক সার মাটির উর্বরতা কমিয়ে দিচ্ছে। এ কারণে পরের মৌসুমে আরও বেশি সার কিনতে হবে। সুন্দরবনে এটি কৃষকের অনিশ্চিত পরিস্থিতিকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

ভারত ও বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী এই বদ্বীপ অঞ্চল বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু পরিবর্তনপ্রবণ স্থানগুলোর মধ্যে একটি। এখানে প্রতিবছর প্রায় ৮ মিলিমিটার সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। যেখানে এর বৈশ্বিক গড় প্রায় ৩ দশমিক ১ মিলিমিটার। এর পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় প্রায় নিয়মিত দুর্যোগে পরিণত হয়েছে।

এই অঞ্চলে মে হলো এক আতঙ্কের মাস। ২০২০ সালের মে মাসে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান, ২০২১ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এবং ২০২৪ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। ২০১৯ সালের এপ্রিলের শেষ দিকে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ফণী এবং ২০১৯ সালের নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। ঘূর্ণিঝড় ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে লবণাক্ত পানি ঢুকে মাটিকেও লবণাক্ত করে তুলছে। এর ফলে কৃষিজমি বছরের পর বছর চাষের অনুপযোগী থাকছে।

২০০৯ সালের মে মাসে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আইলার পর কিছু জায়গায় চার থেকে পাঁচ বছর কৃষিকাজ বন্ধ ছিল। ধরা বলেন, ‘নিচিন্তাপুরে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পাঁচ বছর পরেও কারও কারও জমি এখনো লবণাক্ত।’

কিন্তু লবণাক্ত মাটিতে যা বাড়তে বাধা পায়, তা হলো আধুনিক, বিজ্ঞানসম্মতভাবে উদ্ভাবিত হাইব্রিড ধানের জাত, যার জন্য রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয়। যা টিকে থাকে, তা হলো সুন্দরবনের দেশীয় বা ঐতিহ্যবাহী ধান, ঘূর্ণিঝড় আইলার পরে এই সত্য ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছিল।

তবু কৃষকেরা হাইব্রিড ধান চাষের জন্য সার কিনতে থাকেন। ধরা বলেন, কৃষকদের হতাশা ও অভিযোগ দিন দিন বাড়ছে।

২০১৭ সালে ধরা নিচিন্তাপুর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে নিমপীঠে অবস্থিত রামকৃষ্ণ আশ্রম কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রে জৈব কৃষির ওপর এক বছরের কোর্সে ভর্তি হন। আজ তিনি তাঁর কোম্পানি, অ্যাগ্রি ফার্মার্স প্রোডিউসার কো-লিমিটেডের চেয়ারপারসন। কোম্পানিটি জৈব কৃষিকে উৎসাহিত করে এবং নিচিন্তাপুর ও সংলগ্ন এলাকার প্রায় ২ হাজার কৃষক এর সঙ্গে যুক্ত। ধরা বলেন, ‘২ হাজার মানুষের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ নারী। কারণ, সুন্দরবনে প্রায় সব নারীই কৃষক।’ ২০২৩ সালে এই কোম্পানি গঠন করেন তিনি।

প্রশিক্ষণের পর এলাকার অশ্বত্থাতলা গ্রামের বাসিন্দা ধরা নিচিন্তাপুর ও নিকটবর্তী গ্রামগুলোর নারীদের একটি সমিতির কাছে যান। সমিতিটি তিনিই তৈরি করেছিলেন। প্রথমে স্বনির্ভর সমিতি গঠনের নজর ছিল। তবে ২০১৬ সালে বড় পরিসরে অশ্বত্থাতলা জনকল্যাণ মহিলা সমিতি গঠিত হয়। ধরা বলেন, জৈব কৃষিতে নারীরা উৎসাহের সঙ্গে সাড়া দিয়েছেন।

২০১৮ সাল থেকে ধরা এলাকার নারী কৃষকদের নিমপীঠ ইনস্টিটিউটে জৈব কৃষি কোর্সে যোগদানের জন্য সংগঠিত করতে শুরু করেন। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ৩০ জন মহিলা কৃষকের ১৫ থেকে ২০টি দল ইনস্টিটিউটে গিয়েছেন। এটি অব্যাহত থাকবে।

প্রশিক্ষণ নারী কৃষকদের জীবন বদলে দিয়েছে। বেশির ভাগ ছোট ও প্রান্তিক কৃষক। কেউ কেউ ভূমিহীন। তাঁদের মধ্যে অনেকে পরে জৈব কৃষিতে ঝুঁকেছেন। এ ছাড়া নারীদের ক্ষমতায়নেও বেশ ভূমিকা রেখেছে এই উদ্যোগ।

ধরার কোম্পানি কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে সাহায্য করে। ধরা বলেন, ‘কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত ২ হাজার কৃষকের মধ্যে প্রায় ৫৮০ জন শেয়ারহোল্ডার এবং বাকিদের আমাদের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। বাকি কৃষকদের কোম্পানি থেকে প্রশিক্ষণ ও উৎপাদিত পণ্যের বিপণনের জন্য জৈব উপকরণ দিয়ে সহায়তা করা হয়।’

এই উদ্যোগের জন্য চলতি বছর রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন ধরা।

ধরাকে অনুসরণ করে সুন্দরবনের অরুণনগর গ্রামে আরও অনেক নারী জৈব কৃষিতে যুক্ত হয়েছেন। তাঁরা এখন আর রাসায়নিক সার ও কীটনাশক স্পর্শ করেন না। তাঁরা ধান ও সবজি চাষে ব্যবহার করেন গোবর সার এবং নিমভিত্তিক কীটনাশক। এ ছাড়া কম্পোস্ট ও ভার্মিকম্পোস্ট, কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ও ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করতে শিখেছেন তাঁরা।

এর পাশাপাশি সুন্দরবনের নারীরা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন—তাঁরা দেশীয় জাত সংরক্ষণে উদ্যোগ নিয়েছেন।

২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। কারণ, তখন লবণাক্ততার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পুরুষ কৃষকেরা ব্যাপক হারে অন্যত্র চলে যান। মনে করা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশ থেকে বিশেষ করে পুরুষ ও ছেলেদের এটিই বৃহত্তম অভিবাসন। ফলে পরিবারে নারীরা সংসারের কাজের পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ কৃষিকাজের দায়িত্ব নেন এবং অন্যান্য সামাজিক ও পারিবারিক দায়িত্বও পালন করতে হয়।

প্রায় একই সময়ে দেশীয় ধানের জলবায়ু-সহিষ্ণু বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সচেতনভাবে এর চাষ শুরু হয়। তবে আধুনিক জাতের প্রবর্তনের পর কয়েক দশক ধরে বেশির ভাগ দেশীয় জাত বিস্মৃত হয়ে গিয়েছিল।

সাবেক কৃষি কর্মকর্তা অনুপম পাল বলেন, ‘একসময় পশ্চিমবঙ্গে ৫ হাজারের বেশি দেশীয় ধানের জাত ছিল, কিন্তু এখন আমরা ১৫০টির মতো জাত খুঁজে পাই, যা চাষ করা হচ্ছে।’ তিনি তাঁর কর্মজীবনের ২০ বছর কাটিয়েছেন। এ পর্যন্ত ৪০০টির বেশি দেশীয় ধানের জাত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেছেন।

অনুপম বলেন, সবুজ বিপ্লব ঐতিহ্যবাহী ফসলের পরিবর্তে রাসায়নিক সার-সহিষ্ণু আধুনিক ধান ও গমকে উৎসাহিত করেছিল। কৃষির এই ধারণা কেবল উৎপাদনশীলতার ওপর ভিত্তি করে ছিল। এই প্রকল্প একফসলি চাষকেও উৎসাহিত করেছিল, মাটি ও ফসলের জন্য খারাপ এবং দেশীয় ফসলের পুষ্টি ও স্বল্প খরচের সুবিধাগুলোকে উপেক্ষা করা হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, কালাভাত একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ধানের জাত।

অনুপম বলেন, রাসায়নিক সার, বিশেষ করে নাইট্রোজেনযুক্ত সার প্রয়োগের ফলে ফসল কীটপতঙ্গের প্রতি আরও সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। যার ফলে কীটনাশকের ব্যবহার বেড়ে যায়। ১৯৮০ সাল থেকে সুন্দরবনে এই প্রভাব বোঝা যেতে শুরু করে বলে জানান তিনি।

ভারতীয় প্রাণিবিদ্যা সর্বেক্ষণের অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী অমলেশ মিশ্রও সুন্দরবনের দেশীয় ধান সংরক্ষণে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন।

সুন্দরবনের সাগর ব্লকের বাসিন্দা মিশ্র সাগরে অমলগ্রাম পিপা নামের একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর প্রাঙ্গণে তিনি দেশীয় ধানের জাতের একটি বীজ ভান্ডার তৈরি করছেন, যার জন্য তিনি এ পর্যন্ত ১৫০টির বেশি জাতের ধান সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে ১২০টির বেশি সুন্দরবনের।

মিশ্র বলেন, দাদসাল, দুধের সর, ট্যাংরাসাল, খেজুরছড়ি ও হ্যাংরা সুন্দরবনের কয়েকটি লবণ-সহিষ্ণু দেশীয় জাত। অন্যান্য দেশীয় ধান অন্যান্য ধরনের সহিষ্ণুতা দেখায়। ২০১৯ সালের নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর ধানের খেতে পানির স্তর দুই ফুটের বেশি উঠে গিয়েছিল, কিন্তু কয়েকটি জাত তখনো সোজা দাঁড়িয়ে ছিল। মিশ্র জানান, এর মধ্যে ছিল বিন্নি, ডোকরাপাটনাই, কালাভাত, মালাবতী, পাটনাই ও তালমুগুর।

যে জাতগুলো উচ্চগতির বাতাস সহ্য করতে পারে, তার মধ্যে রয়েছে—ট্যাংরাসাল, হোগলা, সাদামোটা, পাটনাই ও ডোকরা।

সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন দেশীয় ধানের জাত রয়েছে। এর মধ্যে গুলিগতি নামে দক্ষিণবঙ্গের একটি ঐতিহ্যবাহী জাত, ২৫-৩০ দিন এক ফুট বা তার বেশি স্থির পানি সহ্য করতে পারে। জাতটি চিরতরে হারিয়ে গেছে।

কলকাতা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের (স্বায়ত্তশাসিত) জৈবপ্রযুক্তিবিদ্যা স্নাতকোত্তর ও গবেষণা বিভাগ অমলগ্রাম পিপার সহযোগিতায় সুন্দরবনের জলবায়ু-সহিষ্ণু দেশীয় ধানের জাত চিহ্নিত করার জন্য গবেষণা চালাচ্ছে।

বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সায়ক গাঙ্গুলি বলেন, এ পর্যন্ত ১১টি জাত সংগ্রহ ও চিহ্নিত করা হয়েছে—ভুটমুড়ি, ট্যাংরাসাল, তালমুগুর, হ্যাংরা, হোগলা, কালাভাত, নোনা বোখরা, আমন বাঁশকথা, আমন দেরাদুন গন্ধেশ্বরী, তালাদি নোনা ও সাটিয়া। তিনি ব্যাখ্যা করেন, কোনো ফসলের জাতকে দেশীয় হিসেবে বিবেচনা করা হয় যদি এটি ঐতিহ্যবাহী চাষপদ্ধতি ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট বাস্তু অঞ্চলে কমপক্ষে ৩০ বছর ধরে জন্মে থাকে। এর মানে হলো, এটি সেখানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

অনুপম পালের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনের কয়েকটি লবণ-সহিষ্ণু জাতের মধ্যে রয়েছে—নোনা বোখরা, তালমুগুর বা কেরালার আল্টাপাতি।

মাঠপর্যায়ে এই জ্ঞান নারীরাই লালন করেন। তাঁরা বীজ সংরক্ষণ ও অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে কাজটি করেন।

রূপান্তর ফাউন্ডেশন নামে একটি এনজিও ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর থেকে সুন্দরবনের শিশু ও যুবকদের নিয়ে কাজ করছে। ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর থেকে সুন্দরবনের নারী কৃষকদের দেশীয় ধান চাষে সাহায্য করছে। তারা ব্যাপকভাবে দুধের সর ধানের বীজ বিতরণ করে। এই বীজ আবার নারীদের থেকেই সংগ্রহ করা হয়।

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর সুন্দরবনে ত্রাণকাজ কলকাতাভিত্তিক সংস্থাটির জন্য একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছিল। রূপান্তরের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক স্মিতা সেন বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছিলাম, ত্রাণের লাইনে খুব কম পুরুষ দাঁড়িয়েছেন। পুরুষেরা সাহায্য চাইতে গেলে তাঁদের আত্মমর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে বলে মনে করতেন।’

স্মিতা বলেন, ‘আমরা নারীদের জিজ্ঞাসা করতে শুরু করি, কিসে তাঁদের মর্যাদা বাড়বে। নারীরা সাধারণ ত্রাণসামগ্রী, বেশি খাবার বা পোশাক চাননি। তাঁরা তাঁদের কৃষিজমির লবণাক্ততা কমাতে চুন (চুনের গুঁড়ো) ও সরিষার খৈল চেয়েছিলেন। তাঁরা সবাই জমিতে কাজ করতেন। যদিও তাঁরা নিজেদের কৃষক বলতে দ্বিধা করতেন!’

রূপান্তর নারীদের দিকেই মনোযোগ নিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। মাঝেমধ্যে পুরুষদের ঔদাসীন্য তাদের কাজে বরং সাহায্য করে। স্মিতা বলেন, একটি গ্রামে সংস্থার একটি গোষ্ঠীর সদস্য জৈব কৃষি চেষ্টা করার কথা বলার সময় হাসেন। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর মাটি এতটাই লবণাক্ত ছিল যে তাঁর স্বামীর মনে হয়েছিল আর চাষ করা সম্ভব হবে না। কিন্তু ২০২১ সালে দেশীয় বীজে ভালোভাবে সবজি ফললে এবং ২০২২ সালে দুধের সর ধান সফল হলে পরিবারটি জৈব কৃষি শুরু করে।

বর্তমানে রূপান্তরের সদস্য প্রায় ১৩ হাজার নারী কৃষক। তাঁদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আমন ফসল হিসেবে দুধের সর চাষ করেন।

এই নারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন হলেন ৬১ বছর বয়সী মীরা খাটুয়া। এপ্রিলের এক গরম দিনে বেলা ১১টায় তাঁর দেড় বিঘা জমিতে কাজ করছিলেন। তিনি এনজিও লোকদের তাঁর মাটির কুঁড়েঘরে নিয়ে যান এবং বিভিন্ন জাতের বীজ দেখান। তিনি ধান, আলু, পেঁয়াজ, বেগুন, শিম ও শাকসবজি চাষ করেন। তাঁর কুঁড়েঘর ও দরজার ওপর গৃহসজ্জার মতো পেঁয়াজ ঝুলছিল। নিজেই সেগুলো ফলিয়েছেন। আর এভাবেই পেঁয়াজগুলো দীর্ঘদিন সতেজ থাকবে বলে জানান। ৫০ বছর বয়সী ফিরোজা বিবির বাড়িতেও একইভাবে কাণ্ডসহ টমেটো ঝুলতে দেখা যায়।

এভাবেই সুন্দরবনের নারীরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিচ্ছেন। তাঁদের চমৎকার অভিযোজন কৌশল উপকূলীয় এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া এখন সময়ের দাবি।

দ্য অয়্যারের সৌজন্যে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় কমেছে দূষণ, আবারও দূষণে শীর্ষে লাহোর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা আজ কিছুটা কমেছে। তবে দূষিত শহর তালিকায় টানা শীর্ষে থাকা শহর লাহোরে দূষণ বেড়েই চলেছে। বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের আজ সোমবার সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান ৮০, যা গতকাল ছিল ৯৭।

বায়ুদূষণের শীর্ষ শহরগুলোর তালিকায় আজ ২২তম স্থানে আছে ঢাকা, গতকাল ছিল ১৩তম স্থানে।

বায়ুদূষণের শীর্ষে থাকা পাকিস্তানের লাহোর শহরটির বায়ুমান আজ ৪৪১, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক।

শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— ভারতের দিল্লি, উজবেকিস্তানের তাসখন্দ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও পাকিস্তানের করাচি। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২৪৪, ১৭৬, ১৫৯ ও ১৪২।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্‌রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, বৃষ্টি হবে কি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ১৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দুই দিন আগে শনিবার ১ নভেম্বর বেশ ভারী বৃষ্টি হয়েছিল রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বৃষ্টির এই রেশ গতকাল রোববারও ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ দেশের মধ্যাঞ্চলে ছিল।

আজও সকাল থেকে ঢাকার আকাশ রয়েছে মেঘাচ্ছন্ন। আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ সকাল ৭টার পূর্বাভাসে জানিয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আকাশ দুপুর পর্যন্ত আংশিক মেঘলা থাকবে। তবে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় চার থেকে আট কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

আজ সকাল ৬টায় ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ২৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৮৭ শতাংশ। আজকে ঢাকায় সূর্যাস্ত বিকেল ৫টা ১৮ মিনিটে। আগামীকাল সূর্যোদয় সকাল ৬টা ৬ মিনিটে।

এদিকে সারা দেশের আজকের পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং বরিশাল ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চল আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

তবে সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আজ সকালে আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঢাকা ও আশপাশে আজ ভারী বৃষ্টির তেমন সম্ভাবনা নেই। তবে কোথাও কোথাও সামান্য বৃষ্টি হতে পারে।

কার্তিক মাসের এই সময় মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের পশ্চিমাংশে অবস্থানরত লঘুচাপটি দুর্বল এবং গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। এর প্রভাবে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। তবে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন মিয়ানমার উপকূলীয় এলাকায় আরও একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম বরাবর মিয়ানমার-বাংলাদেশ উপকূলের দিকে অগ্রসর হতে পারে। এ কারণে আজ ও আগামীকাল ৪ নভেম্বর চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘূর্ণিঝড় মোন্থার প্রভাব: ‘আমরা এবার মাঠেই মাডার’

  • তলিয়ে গেছে ফসলি জমি ও খামার, ভেসে গেছে পুকুর।
  • নুয়ে পড়েছে বেশির ভাগ জমির ধান।
  • চরম ক্ষতির মুখে কৃষকেরা।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৭: ৪৫
মাঠ তলিয়ে সড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বৃষ্টির পানি। গতকাল সকালে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার খড়িয়াকান্দি এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাঠ তলিয়ে সড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বৃষ্টির পানি। গতকাল সকালে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার খড়িয়াকান্দি এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঘূর্ণিঝড় মোন্থার প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় টানা বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসে চরম ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি ও খামার, ভেসে গেছে পুকুর। নুয়ে পড়েছে বেশির ভাগ জমির ধান। সব মিলিয়ে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকেরা। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।

নুয়ে পড়েছে ৮০ ভাগ ধান

গতকাল সকালে রাজশাহীর কাঁকনহাট পৌরসভার দরগাপাড়া গ্রামে কথা হয় কৃষক জহিরুল ইসলামের সঙ্গে। নিজের জমির পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘এত বর্ষণ জীবনেও দেখিনি। কান্দরে ধানের ভুঁইয়ের ভেতর দিয়্যা পানির সুত বহিছে। মাঠের ৮০ ভাগ ধান শুয়ে পড়েছে। এই ধান তুইলতে লোকও পাওয়া যাবে না। কারণ, সবাইকেই তো ধান তুইলতে হবে। একসাথে এত লোক পাওয়া যাবে কুণ্ঠে। আমরা এবার মাঠেই মাডার।’

সরেজমিনে রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কৃষক জহিরুল ইসলামের কথার সত্যতা পাওয়া গেছে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) তথ্যমতে, গত শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সারা দিন গোদাগাড়ীতে ২৩৬ ও তানোরে ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।

বরেন্দ্র অঞ্চলের ফসলি মাঠ উঁচুনিচু সিঁড়ির মতো। দুপাশ উঁচু, মাঝের কিছু অংশ তুলনামূলক নিচু হলে সেই অংশটিকে ‘কান্দর’ বলে থাকেন লোকজন। বরেন্দ্র অঞ্চলের এসব কান্দরগুলো তলিয়ে গিয়ে বিলের মতো হয়ে গেছে। এসব জমিতে আছে আমন ধান। কখনো কখনো বিলের ধান ডুবলেও সাধারণত কান্দর কখনো ডোবে না। কিন্তু এবার শুক্রবার রাতের বৃষ্টিতে সবই তলিয়েছে।

এ বৃষ্টির ফলে বিভিন্ন বিলে অপরিকল্পিতভাবে খনন করা পুকুরগুলো তলিয়ে গেছে। পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। তাই বিল ও খাড়িগুলোতে মানুষ দল বেঁধে মাছ ধরতে নেমেছে। গতকাল রোববার সকালে পবা উপজেলার শুলিতলা ভিমারডাইং এলাকায় জোয়াখালি নদীর স্রোত দক্ষিণে যাচ্ছে দেখিয়ে মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এই নদীর স্রোত সব সময় উত্তর দিকে যায়। কিন্তু উত্তরেই এত বেশি বৃষ্টি হয়েছে যে পানি যাচ্ছে দক্ষিণে। এটাকে বলা হয় উত্তরা পেলি। এই উত্তরা পেলি আমি আমার জীবনে এবার দ্বিতীয়বার দেখছি।’

বৃষ্টির পানিতে বিলের ভেতর থাকা পুকুরগুলো ভেসে গেছে। এতে মৎস্যচাষিদের লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এদিকে বৃষ্টিতে পার্শ্ববর্তী মোহনপুর ও বাগমারায় পানবরজেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

জানতে চাইলে গোদাগাড়ীর ইউএনও ফয়সাল আহমেদ জানান, মোট ৪৬৩ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রিশিকুল ইউনিয়নের ৭১টি মাটির বাড়ি ধসে গেছে। পাকড়ি ইউনিয়নে আরও কয়েকটি বাড়ি ভেঙে গেছে। তবে বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি বলেই দাবি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনের। তিনি বলেন, ‘আমরা সামগ্রিকভাবে ৫০০ হেক্টর ধানের ক্ষতির একটা প্রতিবেদন দিচ্ছি। শুয়ে পড়লেই কিন্তু ক্ষতি হবে না। আমি মাঠেই আছি, দেখছি।’

মৎস্যচাষিদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও জানাতে পারেননি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু উপজেলা থেকে পুকুর ভেসে যাওয়ার খবর পেয়েছি। এটা হয়েছে অপরিকল্পিত পুকুর খননের কারণে। একই কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলের মতো উঁচু জমিও এই সময়ে তলিয়ে গেছে। মাছচাষিদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের একটা প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আমি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের বলেছি।’

ঋণের দুশ্চিন্তায় দুটি পরিবার

এসএসসি পাস করে সংসারের অভাব-অনটনে লেখাপড়া বাদ দেন রাজশাহীর দুর্গাপুরের কালীগঞ্জ গ্রামের রাব্বি হাসান (২০)। পরে বাড়ির পাশেই শুরু করেন পোলট্রি মুরগির খামার। দুই বছর লাভ-লোকসান হলেও এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে একেবারে পথে বসে গেছেন তিনি। শুক্রবার রাতে ভারী বৃষ্টিপাতে হঠাৎ করে হাঁটুপানি জমে খামারে। এতে মারা যায় প্রায় তাঁর ১ হাজার ৫০০ মুরগি। যার একেকটির ওজন ৭০০-৮০০ গ্রাম।

অপরদিকে একই দিনে উপজেলার আলীপুর গ্রামে সজল আহম্মেদের খামারের একই অবস্থা। রাতে তাঁর খামার তলিয়ে মারা ১ হাজার মুরগি। ফলে দুই পরিবারে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা। এই অবস্থায় এনজিওর টাকা পরিশোধ করা নিয়ে বিপাকে পড়েছে দুই পরিবার। খবর পেয়ে গতকাল দুপুরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস তাঁর কার্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দুটি খামার পরিদর্শন করেছেন।

ধানগাছ পচে নষ্টের শঙ্কা

লালমনিরহাট ও দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে পাকা-আধা পাকা আমন ধান মাটিতে নুয়ে পড়ায় ফসলহানির শঙ্কা করছেন কৃষকেরা। কৃষকেরা জানান, নুয়ে পড়া পাকা ধান কেটে নিলেও আধা পাকা ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে না। আগাম জাতের আমন ধান কাটা শুরু হলেও পুরোদমে ধান মাড়াই শুরু হতে আরও ২০-২৫ দিন লাগবে। এ সময় বৃষ্টি আর বাতাসে নষ্ট হলো উঠতি আমন ধান। এমন গবাদিপশুর খাদ্য ধানগাছ তথা খড় পচে নষ্টের আশঙ্কা করছেন তাঁরা। ফলে ঋণ পরিশোধ আর উৎপাদন খরচ তো দূরের কথা, পরিবারের খাবার জোগান নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ক্ষুদ্র চাষিরা।

৫৫ হেক্টর আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত

শেরপুরে গত তিন দিনের বৃষ্টিপাত ও বৈরী আবহাওয়ায় উঠতি আমন ধান ও শীতকালীন সবজি খেতের চরম ক্ষতি হয়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে, আমন ধান, সবজি ও গোল আলু মিলে মোট ৫৫ হেক্টর জমির আবাদ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমে যাবে। তবে কৃষকদের দাবি, প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।

রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষতি

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে আগাম জাতের ধান ও রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষকেরা বলেন, অনেকে পাকা ধান কেটে জমিতে শুকানোর জন্য রেখেছিলেন, সেগুলো পানিতে নষ্ট হচ্ছে। ধুরাইল ইউনিয়নের কৃষক হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘শেষ সময়ে আইসা বৃষ্টি অইবো ভাববার পারি নাই। যেইদিন ধান কাইট্টা খেতে রাখছি, হেইদিন থাইকা বৃষ্টি শুরু অইছে। বৃষ্টি না কমায় খেত থাইকা ধান উঠাইবার পারছি না। সব আল্লাহর ইচ্ছা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পরিবেশবান্ধব ভবন নির্মাণ এখন সময়ের দাবি: পরিবেশ উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
পরিবেশ অধিদপ্তর আয়োজিত ‘গ্রিন বিল্ডিং বিষয়ক কর্মশালা’য় বক্তব্য রাখছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ছবি: আজকের পত্রিকা
পরিবেশ অধিদপ্তর আয়োজিত ‘গ্রিন বিল্ডিং বিষয়ক কর্মশালা’য় বক্তব্য রাখছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ছবি: আজকের পত্রিকা

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, সর্বক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব ভবন নির্মাণ এখন সময়ের দাবি। শুধু রং বা সার্টিফিকেশন দিয়ে ‘গ্রিন বিল্ডিং’ হবে না; পরিকল্পনা, নকশা, নির্মাণ, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ—সব ধাপে পরিবেশবান্ধব ধারণা ও প্রযুক্তির প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর আয়োজিত ‘গ্রিন বিল্ডিং বিষয়ক কর্মশালা’য় তিনি এ কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, টেকসই ও বাসযোগ্য নগর গড়তে সরকারি ভবনগুলোতে গ্রিন বিল্ডিং বাধ্যতামূলক করা জরুরি। সরকারি স্থাপনায় মানদণ্ড নিশ্চিত করতে পারলে বেসরকারি খাতও তা অনুসরণ করবে।

পরিবেশ উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, ঢাকার খাল ও নদী রক্ষা, বর্জ্য ও শব্দ-দূষণ কমানো, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণসহ নগর পরিবেশের উন্নয়নে সাসটেইনেবল বিল্ডিং অপরিহার্য। তিনি ছাদে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক আলো ও বায়ুপ্রবাহ ব্যবহারের মতো নীতিমালা স্থাপনায় যুক্ত করার আহ্বান জানান।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর, হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এইচবিআরআই), স্থানীয় সরকার বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি ‘গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল’ গঠনের প্রস্তাব করেন। এই কাউন্সিল গ্রীন বিল্ডিংয়ের মানদণ্ড নির্ধারণ, আইন হালনাগাদ এবং বাস্তবায়ন তদারকিতে ভূমিকা রাখবে।

কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. খালেকুজ্জামান চৌধুরী, পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. জিয়াউল হক, পরিচালক একেএম রফিকুল ইসলাম, বিশ্বব্যাংকের পরিবেশ বিশেষজ্ঞ বুশরা নিশাত, এইচবিআরআই’র প্রিন্সিপাল রিসার্চ অফিসার মো. নাফিজুর রহমান, স্থপতি রফিক আজমসহ প্রকৌশলী, স্থপতি, গবেষক ও নীতিনির্ধারকেরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত