Ajker Patrika

যেভাবে সিজিপিএ ধরে রেখেছি

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো ফল সবাই চান। সে অনুযায়ী পড়াশোনাও করেন। কিন্তু তৃতীয় কিংবা চতুর্থ বর্ষে গিয়ে দেখা যায়, খুব অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ফলের অধিকারী হন। তাঁদের এই অর্জনের নেপথ্যের কৌশল নিয়ে জানার আগ্রহ থাকে বাকি শিক্ষার্থীদের। তাঁদের আগ্রহকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা খুঁজেছি ভালো ফলধারী শিক্ষার্থীদের। আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশের তিন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তাঁদের সিজিপিএ ধরে রাখার নেপথ্যের কৌশলের কথা। লিখেছেন মাহবুব এলিন খান

মাহাবুব খান এলিন
নাবিল আহমেদ নোমান। ছবি: সংগৃহীত
নাবিল আহমেদ নোমান। ছবি: সংগৃহীত

চাপ নয়, নিয়মিত চর্চাতেই সাফল্য ( শিক্ষার্থী, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ; তৃতীয় বর্ষ-সিজিপিএ ৩.৮৩)

সবকিছুই নির্ভর করে সময় ব্যবস্থাপনার ওপর। চেষ্টা করি পড়াশোনা, সহশিক্ষা কার্যক্রম আর ব্যক্তিগত সময়ের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে। আমি কখনো একসঙ্গে অনেক কিছু করার চেষ্টা করি না; বরং ছোট ছোট লক্ষ্য নিয়ে এগিয়েছি।

আসলে শুধু ইইই বিভাগ নয়, সব বিভাগের পড়াশোনাই অনেক চ্যালেঞ্জিং। ল্যাব, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রজেক্ট, ভাইভা—সব মিলিয়ে ব্যস্ততা থাকে প্রচুর। আমি চেষ্টা করি কয়েকটি বিষয় নিয়মিত মেনে চলতে:

■ টাইম ম্যানেজমেন্ট

■ কনসেপ্ট বোঝা

■ রেগুলারিটি

■ গ্রুপ স্টাডি ও ডিসকাশন

■ এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটি

■ স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট

পড়াশোনার ক্ষেত্রে আমি একটি অভ্যাস মেনে চলি। প্রতিটি ক্লাস শেষে অল্প সময় হলেও লেকচার রিভিউ করি। এতে পরীক্ষার আগে আলাদা করে অতিরিক্ত চাপ নিতে হয় না। গুরুত্বপূর্ণ ফর্মুলা বা থিওরি ছোট নোট আকারে লিখে রাখি, যা শেষ মুহূর্তে অনেক কাজে আসে। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, মুখস্থ করার চেষ্টা করি না; বরং বুঝে পড়ার চেষ্টা করি। কারণ, বোঝার মাধ্যমে পড়লে সেটা অনেক দিন মনে থাকে। তবে হ্যাঁ, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনায় অনেক সময় শুধু মুখস্থ করেও কাজ চালাতে হয়েছে।

এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিজের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম মেনে চলি। সবকিছুতে জড়াই না; যেগুলোতে আগ্রহ আছে, শুধু সেগুলোতেই অংশ নিই। যেমন ক্লাব অ্যাকটিভিটি, প্রতিযোগিতা কিংবা সেমিনার। এগুলো শুধু আমার অভিজ্ঞতা বাড়ায়নি, নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিতও করেছে।

ছোটদের জন্য কিছু পরামর্শ

■ প্রথম দিন থেকেই কনসিসটেন্ট হও, সেমিস্টার শেষে গিয়ে চাপ নিয়ো না।

■ ক্লাসে মনোযোগ দাও; কারণ, অনেক সময় শিক্ষক ক্লাসে হিন্ট দিয়ে দেন।

■ ল্যাব রিপোর্ট শেষ মুহূর্তে না রেখে রেগুলারলি করো।

■ সিনিয়রদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখো, তাদের অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছু শেখা যায়।

■ নিজেকে শুধু পড়াশোনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে এক্সট্রা কারিকুলারে অংশ নাও। এটা তোমাকে ব্যালান্সড করবে।

■ আত্মবিশ্বাসী হও।

ইয়ামিম ইসলাম মৃধা। ছবি: সংগৃহীত
ইয়ামিম ইসলাম মৃধা। ছবি: সংগৃহীত

দলগত শিক্ষা আমাকে সাহায্য করছে (শিক্ষার্থী, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ; দ্বিতীয় বর্ষ-সিজিপিএ ৩.৮৫)

সিজিপিএ ধরে রাখা প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্যই অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। আমার ক্ষেত্রেও বিষয়টি ব্যতিক্রম নয়। শুরুতে কিছুটা কষ্ট হতো; কারণ, পড়াশোনার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত আছি। কিন্তু ধীরে ধীরে কিছু কৌশল মেনে চলার কারণে এখন পর্যন্ত আমি পড়াশোনা এবং সিজিপিএ দুটিই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি।

প্রথমত, আমি ক্লাসে অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করি। কিছু না বোঝার ক্ষেত্রে শিক্ষককে আবার জিজ্ঞেস করি এবং সেগুলো নোট করে রাখি। পরে বাসায় গিয়ে আবার নিজে নিজে বোঝার চেষ্টা করি। আমি মুখস্থ করার পরিবর্তে বোঝার ওপর জোর দিই। এতে পরীক্ষার আগে অতিরিক্ত চাপ পড়ে না এবং কয়েকবার চোখ বোলালেই বিষয়গুলো আয়ত্তে চলে আসে। যখন ক্লাব ইভেন্টের চাপ থাকে, সে সময় আমি ক্লাসের ব্রেক টাইমগুলোতে অল্প অল্প করে পড়াশোনা করি, টপিকগুলো বুঝি এবং বাসায় ফিরে একটু বিশ্রাম নিয়ে পড়াশোনা চালাই।

দ্বিতীয়ত, নিয়মিত গ্রুপ স্টাডি আমাকে অনেক সাহায্য করছে। বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে যেসব দুর্বলতা থাকে, সেগুলো সহজেই ধরা পড়ে। আবার অন্যকে বোঝানোর সময় নিজের জ্ঞান আরও দৃঢ় হয়। আমি সব সময় পড়াশোনার সঙ্গে স্বাস্থ্যকর অভ্যাসকেও গুরুত্ব দিই। পর্যাপ্ত ঘুম, সুষম খাবার এবং অল্প সময় হলেও নিয়মিত হাঁটাহাঁটি মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে।

সব শেষে বলব, প্রাত্যহিক জীবনের পাশাপাশি পড়াশোনা ও সিজিপিএ ধরে রাখা অত্যন্ত কঠিন কিছু নয়। সঠিক অধ্যবসায়, আত্মবিশ্বাস, নিয়মানুবর্তিতা এবং সব বিষয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখাই আসল শক্তি।

মো. তাসরীফুল ইসলাম তাজিম। ছবি: সংগৃহীত
মো. তাসরীফুল ইসলাম তাজিম। ছবি: সংগৃহীত

ধারাবাহিকতায় সর্বোচ্চ সাফল্য (শিক্ষার্থী, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ; তৃতীয় বর্ষ-সিজিপিএ ৪)

বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ সিজিপিএ ধরে রাখা অনেক চ্যালেঞ্জিং। তবে সঠিক অভ্যাস ও কৌশলের মাধ্যমে অসম্ভব নয়। সিজিপিএ ধরে রাখার পরামর্শ ও কৌশল:

■ সিজিপিএ ধরে রাখার প্রথম শর্ত হলো, নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকা এবং মনোযোগী হওয়া। এ ছাড়া ক্লাসে নোট রাখা, কোনো বিষয় না বুঝলে প্রশ্ন করা এবং প্রশ্নের উত্তর বুঝে নেওয়া জরুরি।

■ চর্চা ছাড়া ভালো ফল সম্ভব নয়। বিশেষ করে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ম্যাথমেটিক্যাল সমস্যার নিয়মিত অনুশীলন প্রয়োজন। ক্লাসের বিষয়ের পাশাপাশি রেফারেন্স বই পড়লে প্রবলেম সলভিং ও ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিংয়ে দক্ষতা বাড়ে, যা কুইজ ও যেকোনো পরীক্ষায় ভালো ফল অর্জনে সাহায্য করে।

■ ল্যাব ক্লাসে মনোযোগী হওয়া অপরিহার্য। ল্যাব ক্লাস ভালোভাবে বুঝতে পারলে তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি প্রায়োগিক জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি তাত্ত্বিক জ্ঞান মস্তিষ্কে গেঁথে থাকে।

■ ইউটিউবে শিক্ষামূলক অনেক টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়। বিনা মূল্যে এসব শিক্ষামূলক ভিডিও থেকে জটিল বিষয়গুলো আরও সহজভাবে বুঝে নিতে পারেন।

■ কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর পড়ানো শেষ হলে সংশ্লিষ্ট কোর্স শিক্ষক এ টপিক থেকে কেমন প্রশ্ন করতে পারেন এবং সেগুলোর উত্তরই বা কেমন হবে, এসব বুঝতে পারলে ভালো ফল করা সম্ভব।

■ বড়দের অভিজ্ঞতা থেকে পরামর্শ নেওয়া উচিত। কিছু ক্ষেত্রে দলগত শিক্ষা ফলপ্রসূ হতে পারে, তবে সময় নষ্ট হওয়া এড়াতে সতর্ক থাকা জরুরি।

■ হঠাৎ অসুস্থতা বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারদর্শী হতে হবে। সময়মতো পড়াশোনা শেষ করে রাখা থাকলে পিছিয়ে পড়ার চাপ কম হয়।

এ ছাড়া, পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা ও মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।

এই অভ্যাসগুলো মেনে চললে সিজিপিএ ধরে রাখা সহজ হয় এবং ধারাবাহিকভাবে ভালো ফলাফল অর্জন সম্ভব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

২০৫০ সাল নাগাদ ইনফ্লুয়েন্সারদের চেহারা কেমন হবে, ধারণা দিলেন গবেষকেরা

প্রিজন ভ্যান থামিয়ে ছাগল-কাণ্ডের মতিউরকে অনৈতিক সুবিধা, ১১ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত

দেশে প্রথমবারের মতো চালু হলো ভয়েস ওভার ওয়াই-ফাই, সুবিধা কী

মেডিকেল কলেজ: মানের ঘাটতিতে হবে বন্ধ

জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যাচ্ছেন না মোদি, কী বার্তা দিচ্ছে দিল্লি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত