Ajker Patrika

জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যাচ্ছেন না মোদি, কী বার্তা দিচ্ছে দিল্লি

কলকাতা প্রতিনিধি  
আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩: ৪৯
২০২৪ সালে জাতিসংঘে নরেন্দ্র মোদি। ছবি: জাতিসংঘ
২০২৪ সালে জাতিসংঘে নরেন্দ্র মোদি। ছবি: জাতিসংঘ

আগামী ২৩ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য এই বৈশ্বিক কূটনৈতিক মঞ্চে সাধারণত বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানেরা উপস্থিত থেকে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন। তবে এ বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেখানে যাচ্ছেন না। তাঁর পরিবর্তে প্রতিনিধি হয়ে অংশ নিচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। প্রধানমন্ত্রীর হয়ে ভাষণও দেবেন তিনি।

এই সিদ্ধান্তে প্রশ্ন উঠছে, মোদির এই অনুপস্থিতির পেছনে আসল কারণ কী? ভারত কি কূটনৈতিক অগ্রাধিকারের জায়গায় পরিবর্তন আনছে? নাকি এটি শুধুই ক্যালেন্ডারের ব্যস্ততা ও বাস্তবতার কারণে গৃহীত একটি সিদ্ধান্ত?

বরাবরই ভারত নিজের ভূমিকা তুলে ধরার জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের মঞ্চ ব্যবহার করে এসেছে। শান্তিরক্ষী মিশনে ভারতের সক্রিয় ভূমিকা, উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষে কণ্ঠস্বর, জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন এবং বহুপাক্ষিকতার পক্ষে বক্তব্য—সব সময়ই ভারতের প্রতিনিধিরা এজেন্ডায় রেখেছেন। তাই মোদির মতো একজন নেতা, যিনি আন্তর্জাতিক রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে নিজেকে স্থাপন করতে অভ্যস্ত, তিনি যদি না যান, তাহলে এর কূটনৈতিক বার্তাই আলাদা হবে।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, দিল্লি হয়তো এখন বৈশ্বিক ফোরামে নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। ভারতের পররাষ্ট্রনীতি এখন অনেকাংশে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক কূটনীতিতে বেশি মনোযোগী। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, রাশিয়া, জাপান—সব জায়গায় ভারতের আলাদা কূটনৈতিক উদ্যোগ আছে। তাই সাধারণ পরিষদের মতো বহুপাক্ষিক ফোরামকে হয়তো আপাতত তুলনামূলক গৌণ মনে করছে দিল্লি।

তবে এটাও সত্য যে, জাতিসংঘের মঞ্চ এখনো অনেক দেশের জন্য প্রতীকী। এখানে উপস্থিত থেকে নেতা যতটা না নীতি ঘোষণা করেন, তার চেয়েও বেশি দেন রাজনৈতিক বার্তা। যেমন—যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, চীনের রাষ্ট্রপতি বা রাশিয়ার প্রতিনিধি যখন ভাষণ দেন, তখন গোটা বিশ্ব মনোযোগ দিয়ে শোনে। মোদি গত বছর পর্যন্ত এই মঞ্চ ব্যবহার করেছেন নিজের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরতে। তাঁর অনুপস্থিতি এ বছর কূটনৈতিক মহলে নানা ব্যাখ্যার জন্ম দিয়েছে।

কিছু পর্যবেক্ষক মনে করছেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যস্ততা এবং ঘরোয়া রাজনীতির চাপ এর কারণ হতে পারে। অর্থনীতি, কৃষি, শিল্প এবং আসন্ন রাজ্য নির্বাচনগুলোর জন্য মোদির সময়সূচি অত্যন্ত ব্যস্ততায় ভরা। তা ছাড়া, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর দীর্ঘদিনের কূটনীতিক, যিনি জাতিসংঘের ভেতর-বাহির ভালোভাবেই জানেন। তাই তাঁর ওপর মোদির আস্থা অটুট।

অন্যদিকে কেউ কেউ বলছেন, মোদির এই সিদ্ধান্ত ভারত যে এখন বৈশ্বিক রাজনীতিতে আত্মবিশ্বাসী অবস্থানে আছে, সেটারই প্রকাশ। ভারত হয়তো বোঝাতে চাইছে যে তাঁর কণ্ঠ এখন শুধু জাতিসংঘের মঞ্চেই সীমাবদ্ধ নয় বরং জি২০, ব্রিকস, কোয়াড এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে অনেক বেশি প্রভাবশালী।

তবে কূটনৈতিক দৃষ্টিতে ভারতের অনুপস্থিতি কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি করবে। পাকিস্তান সব সময় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদকে ব্যবহার করে কাশ্মীর ইস্যু তুলে ধরতে। মোদির অনুপস্থিতিতে পাকিস্তানের বক্তব্যের জবাব কূটনীতিক স্তরে দেওয়াটা কঠিন হতে পারে। জয়শঙ্কর অভিজ্ঞ হলেও প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদার সঙ্গে তুলনা করা যায় না।

তাই মোদির এই সিদ্ধান্তকে শুধু একটি সফর বাতিল হিসেবে দেখা হচ্ছে না, বরং ভারতের কূটনৈতিক অগ্রাধিকার এবং আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলনই মনে করা হচ্ছে। বিশ্বরাজনীতির অঙ্গনে ভারতের বার্তা এখন স্পষ্ট। ভারত জানান দিচ্ছে, দিল্লি এখন আর শুধু বহুপাক্ষিক মঞ্চের ওপর নির্ভরশীল নয়, বরং সমান্তরালে নিজের দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক জোটের মাধ্যমে শক্ত অবস্থান তৈরি করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

২০৫০ সাল নাগাদ ইনফ্লুয়েন্সারদের চেহারা কেমন হবে, ধারণা দিলেন গবেষকেরা

দেশে প্রথমবারের মতো চালু হলো ভয়েস ওভার ওয়াই-ফাই, সুবিধা কী

জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যাচ্ছেন না মোদি, কী বার্তা দিচ্ছে দিল্লি

মেডিকেল কলেজ: মানের ঘাটতিতে হবে বন্ধ

রূপপুরের বালিশ-কাণ্ডে এক প্রকৌশলীকে বাধ্যতামূলক অবসর, অন্যজনের নিম্ন গ্রেডে অবনমন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত