Ajker Patrika

সাত কলেজ /মেয়াদের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় চালুর পরিকল্পনা সরকারের

ইলিয়াস শান্ত, ঢাকা
আপডেট : ১৮ জুন ২০২৫, ১৬: ০৪
২০১৭ সালে রাজধানীর সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়।
২০১৭ সালে রাজধানীর সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়।

রাজধানীর সরকারি সাতটি কলেজের সমন্বয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড এস এম এ ফায়েজের নেতৃত্বাধীন উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে নেওয়া এই উদ্যোগ বর্তমান সরকারই কার্যকর করতে চায়। সেই লক্ষ্যে কমিটি কাজ করে যাচ্ছে। কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, তাঁরা ধাপে ধাপে কাজগুলো সম্পন্ন করছেন।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাত কলেজের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্থগিত থাকা ভর্তি কার্যক্রম শেষ করাই এখন তাদের প্রথম অগ্রাধিকার। চলতি মাসের মধ্যেই এই কার্যক্রম শুরু হবে। এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বাকি কাজও চলমান থাকবে। ভর্তি কার্যক্রম শেষে অবশিষ্ট কাজগুলোও শেষ করা হবে। কমিটির কাজ সম্পন্ন হলে এই সরকারের আমলেই যাত্রা শুরু করতে পারে প্রস্তাবিত ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকেবি)।

সাত কলেজ-সংক্রান্ত বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফায়েজের নেতৃত্বে যে বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে, তাদের চার মাসের সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে সেই মেয়াদ ২৯ এপ্রিল শেষ হলেও এখনো কাজ শেষ হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধি এবং আরও শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে, যাতে নির্ভুলভাবে অবশিষ্ট কাজ দ্রুত সময়ে শেষ করা যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের পর সরকার এই কলেজগুলো পরিচালনায় ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াসকে অন্তর্বর্তী প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আজকের পত্রিকা'কে বলেন, ‘সাত কলেজের বিষয়টি জটিল হলেও এর একটি ন্যায্য সমাধানের জন্য শুরু থেকেই আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। কলেজগুলোর সমন্বয়ে একটি পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগপর্যন্ত একটি আইনানুগ অন্তর্বর্তী প্রশাসন ইতিমধ্যেই গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে সেই প্রশাসনের অধীনেই সাত কলেজের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাত কলেজের সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো ও আইন তৈরির জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি কাজ করছে। প্রয়োজনে কমিটির কাজে আরও বিশেষজ্ঞ পরামর্শক যুক্ত করা যেতে পারে এবং কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধিতেও কোনো অসুবিধা নেই। এ কাজ শেষ হলে বর্তমান সরকারের আমলেই একটি অধ্যাদেশ জারি করা সম্ভব হবে। অধ্যাদেশ জারি হলে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। আমার ধারণা, পরবর্তী সরকারও এটি অনুমোদন করবে।’

সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা বলছেন, চার মাসের মধ্যে ইউজিসির কমিটি কাজ শেষ করতে না পারায় তাঁরা হতাশ। তাই গত ১৭ মে এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা সরকারকে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারি করতে এক মাসের সময়সীমা বেঁধে দেন, যা শেষ হয়েছে সোমবার (১৬ জুন)। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো অধ্যাদেশসংক্রান্ত কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা আবার মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফায়েজকে সভাপতি করে চার সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক তানজিমউদ্দিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খালেদা আক্তার। গত ২৯ এপ্রিল এই কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও কাজ এখনো শেষ হয়নি।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মো. নাঈম হাওলাদার বলেন, ‘শুরু থেকেই সরকার ও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে শিক্ষার্থীরা সহায়তা করে আসছে। কিন্তু আমরা কর্তৃপক্ষের কাজে গড়িমসি লক্ষ করছি। ইউজিসিকে চার মাসের সময় দেওয়া হয়েছিল, যা এক-দুই মাস আগে শেষ হয়ে গেছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ এখনো শেষ হয়নি। আমরা এক মাসের আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম, কিন্তু তা আমলে নেওয়া হয়নি। এখন আমরা আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’

শিক্ষার্থীদের উদ্বেগের বিষয়টি ইউজিসিকে জানানো হয়েছে। কমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, তারা ধাপে ধাপে কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। ইউজিসির পক্ষ থেকে আগেই প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নাম ও লোগো নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে একটি মডেল খসড়াও তৈরি করা হয়েছে, যা বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার এই খসড়ায় মতামত দেবেন। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে এটি চূড়ান্ত হবে।

রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজ হলো: ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এই কলেজগুলোতে বর্তমানে প্রায় ২ লাখ শিক্ষার্থী ও এক হাজারের বেশি শিক্ষক রয়েছেন।

অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলেজগুলোকে পৃথক করার উদ্দেশ্য শুধু প্রশাসনিক নয়, বরং শিক্ষার মানোন্নয়ন, সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং কলেজগুলোর স্বতন্ত্র সত্ত্বা বজায় রেখে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে উন্নয়নই মূল লক্ষ্য। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাও এই কাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ উদ্যোগ সফল হলে দেশের অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজগুলোর মানেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’

সাত কলেজের দায়িত্ব নিয়েই নতুন প্রশাসক অধ্যাপক ইলিয়াস দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন তৈরির তাগিদ দিয়েছেন। অধ্যাপক ইলিয়াস আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাত কলেজের এখন দুটি প্রধান কাজ রয়েছে। একটি হলো বিদ্যমান কাঠামোকে কার্যকরভাবে চালিয়ে যাওয়া, অন্যটি হলো নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের জন্য আইনগত কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা। দুটি কাজই সমন্বিতভাবে করতে হবে, যাতে একটির জন্য অন্যটি বাধাগ্রস্ত না হয়।’

ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফায়েজ বলেন, ‘নতুন প্রশাসক দায়িত্ব নিয়েছেন। এখন ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে হবে। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আইনি কার্যক্রমও এগিয়ে চলছে। ভর্তি কার্যক্রম শেষে আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আবার বসবো এবং আলোচনা করব।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গাজায় শিগগির ২০ হাজার সদস্যের আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন, থাকছে কোন কোন দেশ

‘জাহানারা মুখ খুলেছে, জুনিয়ররা অ্যাবিউজ হলে কি মুখ খুলতে পারবে’

চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে গুলিতে বাবলা নিহতের ঘটনায় দুজন গ্রেপ্তার

পোড়া কার্গো ভিলেজ থেকে মোবাইল ফোন চুরি, আনসার সদস্য বরখাস্ত

উচ্চতা ‘কম’ বলে ডেটিং অ্যাপে মামদানিকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, এখন আফসোস হচ্ছে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বুটেক্স ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, আবেদন শুরু ১১ নভেম্বর

রাতুল সাহা, বুটেক্স
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৫: ০৬
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে

২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুটেক্স) চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের অধীনে মোট ১১টি বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। আগামী ১১ নভেম্বর থেকে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে।

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. রাশেদা বেগম দিনা স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে।

ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ১১ নভেম্বর সকাল ১০টা থেকে এবং চলবে ১১ ডিসেম্বর রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত। আবেদনকারীকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় সর্বমোট জিপিএ ২০-এর মধ্যে ন্যূনতম ১৭.৫০ থাকতে হবে। গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও ইংরেজি প্রতিটি বিষয়ে অন্তত ৩.৫০ জিপিএ থাকতে হবে। আবেদন ফি ৩০০ টাকা, যা অনলাইনে পরিশোধ করতে হবে।

লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্য ১৪ হাজার প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হবে ২১ ডিসেম্বর। যোগ্য প্রার্থীকে এক হাজার দুইশ টাকা পরিশোধ করে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে হবে, যা ডাউনলোড করা যাবে ২৩ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

আবেদন প্রক্রিয়া শেষে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৯ জানুয়ারি (শুক্রবার) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। লিখিত পরীক্ষার ভিত্তিতে মেধাতালিকা প্রকাশের সম্ভাব্য তারিখ ২৫ জানুয়ারি। মোট ২০০ নম্বরের পরীক্ষায় গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নে ৬০ নম্বর করে এবং ইংরেজিতে ২০ নম্বর থাকবে।

মেধাতালিকার ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ৩ হাজার শিক্ষার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হবে। লিখিত পরীক্ষায় ৪০ শতাংশের কম নম্বরপ্রাপ্তদের মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।

এবারের ভর্তি প্রক্রিয়ায় মোট ৬৩০টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। এর মধ্যে ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং, ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ৮০টি করে আসন রয়েছে।

অন্যদিকে টেক্সটাইল ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং, টেক্সটাইল মেশিনারি ডিজাইন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স, ডাইং অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৪০টি করে এবং টেক্সটাইল ম্যাটেরিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৩০টি আসন রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গাজায় শিগগির ২০ হাজার সদস্যের আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন, থাকছে কোন কোন দেশ

‘জাহানারা মুখ খুলেছে, জুনিয়ররা অ্যাবিউজ হলে কি মুখ খুলতে পারবে’

চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে গুলিতে বাবলা নিহতের ঘটনায় দুজন গ্রেপ্তার

পোড়া কার্গো ভিলেজ থেকে মোবাইল ফোন চুরি, আনসার সদস্য বরখাস্ত

উচ্চতা ‘কম’ বলে ডেটিং অ্যাপে মামদানিকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, এখন আফসোস হচ্ছে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আগামীকাল থেকে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা প্রাথমিকের শিক্ষকদের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ২২
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা তিন দফা দাবিতে শনিবার থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘লাগাতার’ অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা তিন দফা দাবিতে শনিবার থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘লাগাতার’ অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা এবার দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে ফের আন্দোলনে নামছেন। আগামীকাল শনিবার থেকে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘লাগাতার’ অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন তাঁরা।

‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামে চারটি শিক্ষক সংগঠনের মোর্চার ব্যানারে এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে। নবীন শিক্ষকেরাও এতে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

দশম গ্রেডে বেতন ছাড়াও শিক্ষকদের অন্য দুটি দাবি হলো, চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড পাওয়া নিয়ে জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা।

এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন), বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি), সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে নিয়োগ পাওয়া সহকারী শিক্ষকেরাও।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি আজ শুক্রবার দুপুরে বলেন, আগামীকাল শনিবার শহীদ মিনারে ২০ হাজার শিক্ষক দশম গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেড ও পদোন্নতির অধিকার আদায়ে অবস্থান নেবেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে কর্মকর্তারা আলোচনা করতে চাচ্ছেন, বিভিন্ন দিক বোঝাচ্ছেন। কিন্তু আমরা চাই না। আমাদের কথা তো বহুবার তাঁদের বলেছি, কাজ তো হয়নি। এবার রাজপথেই দাবি আদায় করে আমরা ফিরব।’

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭ টি। এসব বিদ্যালয়ে ৩ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষক কর্মরত আছেন।

গত ২৪ এপ্রিল ১১তম গ্রেডে বেতন পাওয়া প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০তম গ্রেডে এবং ১৩তম গ্রেডে বেতন পাওয়া শিক্ষকদের বেতন ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এ উদ্যোগে সন্তুষ্ট নন সহকারী শিক্ষকেরা।

খায়রুন নাহার লিপির ভাষ্য, ‘বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা স্নাতক ও সমমান ডিগ্রি নিয়ে দশম গ্রেড পান। নার্সরা এইচএসসি ও নার্সিং ডিপ্লোমা ডিগ্রি নিয়ে দশম গ্রেড পাচ্ছেন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা এসএসসি ও কৃষি ডিপ্লোমা ডিগ্রি নিয়ে দশম গ্রেড পাচ্ছেন। পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর ও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষকেরাও স্নাতক ও সমমান ডিগ্রি নিয়ে দশম গ্রেড পান। আর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা স্নাতক ও সমমান ডিগ্রি এবং সিএনএড বিপিএড বা বিটিপিটি কোর্স করে ১৩তম গ্রেড পান। পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও দশম গ্রেডে বেতন পান। তাই আমরা দশম গ্রেডে বেতন দেওয়ার দাবি আদায়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করছি।’

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা তিন দফা দাবিতে শনিবার থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘লাগাতার’ অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা তিন দফা দাবিতে শনিবার থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘লাগাতার’ অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে নিয়োগ পাওয়া সহকারী শিক্ষকদের নেতা তালুকদার পিয়াস বলেন, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকেরা দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। শিক্ষার মূলভিত্তি প্রাথমিক স্তর। প্রাথমিক শিক্ষকেরা দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক গঠনের প্রথম স্তরে কাজ করেন। এই স্তরে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত না হলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার মানও দুর্বল হয়। তাই শিক্ষার মূলভিত্তি যাঁরা গড়ে দিচ্ছেন, তাঁদের প্রাপ্য মর্যাদা ও বেতনকাঠামো পাওয়া উচিত। সময়ের প্রেক্ষাপটে সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেড যৌক্তিক ও ন্যায্য দাবি।

তালুকদার পিয়াস আরও বলেন, ‘তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে নিয়োগ পাওয়া সহকারী শিক্ষকেরাও শনিবার প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের অবস্থান কর্মসূচিতে শামিল হবেন। আমরা প্রাপ্য মর্যাদা ও বেতন আদায় করে আনাব।’

এদিকে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের আরেকাংশ ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেড নিয়ে জটিলতা নিরসন ও শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিত করতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

এই তিন দাবি মানা না হলে ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দাবি আদায়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি বা ঘোষণা না এলে পরীক্ষা বর্জন এবং ১১ ডিসেম্বর থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালনের ঘোষণাও দিয়েছেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গাজায় শিগগির ২০ হাজার সদস্যের আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন, থাকছে কোন কোন দেশ

‘জাহানারা মুখ খুলেছে, জুনিয়ররা অ্যাবিউজ হলে কি মুখ খুলতে পারবে’

চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে গুলিতে বাবলা নিহতের ঘটনায় দুজন গ্রেপ্তার

পোড়া কার্গো ভিলেজ থেকে মোবাইল ফোন চুরি, আনসার সদস্য বরখাস্ত

উচ্চতা ‘কম’ বলে ডেটিং অ্যাপে মামদানিকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, এখন আফসোস হচ্ছে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্যাডেট কলেজে ভর্তির আবেদন শুরু

শিক্ষা ডেস্ক
ক্যাডেট কলেজে ভর্তির আবেদন শুরু

২০২৬ সালের জন্য ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষার আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত শনিবার (১ নভেম্বর) ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিতরণ শুরু হয়েছে। এবার ক্যাডেট কলেজগুলোর ভর্তি পরীক্ষা ষষ্ঠ শ্রেণির সিলেবাসের আলোকে অনুষ্ঠিত হবে।

বর্তমানে বাংলাদেশে ১২টি ক্যাডেট কলেজ রয়েছে। ছেলেদের জন্য ৯টি ও মেয়েদের জন্য ৩টি ক্যাডেট কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে ছাত্রছাত্রী ভর্তি নেওয়া হবে।

ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের ষষ্ঠ শ্রেণি অথবা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। বয়স সর্বোচ্চ ১৩ বছর ৬ মাস হতে হবে। প্রার্থীর ন্যূনতম উচ্চতা ৪ ফুট ৮ ইঞ্চি হতে হবে। আগামী ১০ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন। প্রবেশপত্র সংগ্রহ করা যাবে ১১ ডিসেম্বর থেকে পরীক্ষার আগের দিন পর্যন্ত।

আগ্রহী শিক্ষার্থীরা এই (www.cadetcollege.army.mil.bd) লিংক অথবা এই (https://www.cadetcollegeadmission.army.mil.bd) লিংকে গিয়ে আবেদন করতে পারবেন। আবেদনপ্রক্রিয়া শেষে ২৭ ডিসেম্বর (শনিবার) সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা (লিখিত) অনুষ্ঠিত হবে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ষষ্ঠ শ্রেণির সিলেবাসের আলোকে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি পরীক্ষায় মোট নম্বর ৩০০। ইংরেজিতে ১০০, গণিতে ১০০, বাংলায় ৬০ ও সাধারণ জ্ঞানে ৪০ নম্বর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গাজায় শিগগির ২০ হাজার সদস্যের আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন, থাকছে কোন কোন দেশ

‘জাহানারা মুখ খুলেছে, জুনিয়ররা অ্যাবিউজ হলে কি মুখ খুলতে পারবে’

চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে গুলিতে বাবলা নিহতের ঘটনায় দুজন গ্রেপ্তার

পোড়া কার্গো ভিলেজ থেকে মোবাইল ফোন চুরি, আনসার সদস্য বরখাস্ত

উচ্চতা ‘কম’ বলে ডেটিং অ্যাপে মামদানিকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, এখন আফসোস হচ্ছে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রাথমিকে ১০ হাজার ২১৯ পদে শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন শুরু ৮ নভেম্বর

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রাথমিকে ১০ হাজার ২১৯ পদে শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন শুরু ৮ নভেম্বর

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে প্রথম ধাপে ছয় বিভাগের আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হবে ৮ নভেম্বর; যা চলবে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত। আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রথম ধাপে ছয় বিভাগের ১০ হাজার ২১৯টি পদে শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।

এ বিভাগগুলো হলো রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুর। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র বলছে, দ্বিতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। এ দুই বিভাগে শূন্য পদ রয়েছে ৪ হাজার ১৬৬টি।

আজ বুধবার বিকেলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রথম ধাপে ছয় বিভাগের ১০ হাজার ২১৯টি শূন্য পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আগামীকাল দেশের তিনটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হবে।

এর আগে চলতি বছরের ২৮ আগস্ট রাতে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৫’ প্রজ্ঞাপন জারি করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তিন দিন পর ৩১ আগস্ট গঠিত হয় আট সদস্যের ‘কেন্দ্রীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ কমিটি’। এ কমিটির চেয়ারম্যান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও সদস্যসচিব অধিদপ্তরের (পলিসি ও অপারেশন) পরিচালক। এ ছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো ও সরকারি কর্ম কমিশনের প্রতিনিধিরা রয়েছেন কমিটিতে।

পরে ২ নভেম্বর সংশোধিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৫ প্রকাশ করা হয়। এতে নতুন সৃষ্টি করা সংগীত ও শরীরচর্চা শিক্ষক পদ বাদ দেওয়া হয়। এ দুটি পদ বাদ দেওয়ার পাশাপাশি বিধিমালায় কিছু ‘শব্দগত পরিবর্তন’ আনা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গাজায় শিগগির ২০ হাজার সদস্যের আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন, থাকছে কোন কোন দেশ

‘জাহানারা মুখ খুলেছে, জুনিয়ররা অ্যাবিউজ হলে কি মুখ খুলতে পারবে’

চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে গুলিতে বাবলা নিহতের ঘটনায় দুজন গ্রেপ্তার

পোড়া কার্গো ভিলেজ থেকে মোবাইল ফোন চুরি, আনসার সদস্য বরখাস্ত

উচ্চতা ‘কম’ বলে ডেটিং অ্যাপে মামদানিকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, এখন আফসোস হচ্ছে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত