Ajker Patrika

আমার কাছে ৭টা কাঁচি আছে—তিন শিক্ষার্থীর চুল কেটে অন্যদের সতর্ক করলেন প্রধান শিক্ষক!

বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০২২, ১৭: ২৭
আমার কাছে ৭টা কাঁচি আছে—তিন শিক্ষার্থীর চুল কেটে অন্যদের সতর্ক করলেন প্রধান শিক্ষক!

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে শাস্তিস্বরূপ ৫ম শ্রেণির তিন ছাত্রের মাথার চুল এলোমেলোভাবে কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক মসলিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, চুল কাটার পর বিকেল ৪টা পর্যন্ত এক ছাত্রকে তালাবদ্ধ করে রেখেছিলেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গতকাল রোববার দুপুরে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের ভানোর গান্ডিকারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার পর অনেক শিক্ষার্থী আতঙ্কে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। অভিভাবক ও এলাকার লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এমন কর্মকাণ্ডের জন্য ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

আজ সোমবার দুপুরে এ নিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিষ্ণু দেবের বাবা বিনোদ দেব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন। আগামীকাল মঙ্গলবার অভিযোগের তদন্তের জন্য প্রধান শিক্ষক, নির্যাতনের শিকার স্কুলছাত্র ও অভিভাবকদের ইউএনওর কার্যালয়ে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে।

ভুক্তভোগী বিষ্ণু দেবের বাবা বিনোদ দেব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিদ্যালয় ছুটি হওয়ার পরও বিষ্ণু বাড়িতে না ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু করি। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, তার মাথার চুল কেটে দিয়ে প্রধান শিক্ষক ক্লাসে আটকে রেখেছেন। আমি ছেলেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। আজ সকালে আমি বিদ্যালয়ে গিয়ে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক তার লোকজন দিয়ে আমাকে হুমকি দেয়। পরে আমি ছেলেকে নিয়ে ইউএনওর কাছে আসি। তিনি ন্যায়বিচার করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’

৫ম শ্রেণির আরেক ছাত্র মোমিন আজকের পত্রিকাকে বলে, ‘আমি ও জাহিদ হাসানের চুল আঁকাবাঁকা করে কেটে দিয়ে প্রধান শিক্ষক সব ছাত্রকে বলেছেন, আমার কাছে ৭টি কাঁচি আছে, কেউ যদি একটু চুল বড় রাখ তাহলে এমন ভাবে কেটে দিব। আমরা কয়েকজন ভয়ে মাথা ন্যাড়া করে নিয়েছি!’

কাঁদতে কাঁদতে বিষ্ণুর মা বলেন, ‘ছেলেটা বাড়ি ফেরার পর থেকে ঘর থেকে বের হয়নি। কী হয়েছে জিজ্ঞাসা করতেই হাউ মাউ করে কেঁদে ফেলেছে। একটিমাত্র ছেলে আমার। আমি প্রধান শিক্ষককে মোবাইলে জিজ্ঞাসা করলে তিনি শুধু ক্ষমা চাচ্ছেন।’

আজ দুপুরে বক্তব্য নেওয়ার জন্য বিদ্যালয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক মসলিম উদ্দীন দ্রুত বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। অন্য সহকারী শিক্ষকেরা ‘গতকাল ছিলাম না’ বলেই এড়িয়ে যান। পরে প্রধান শিক্ষকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কলা করা হলেও তিনি জবাব দেননি।

এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অতুল চন্দ্র সিনহা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীর মাথার চুল বিকৃত ভাবে কেটে দেওয়া এক ধরনের অপরাধ। শিক্ষকতা চাকরির নীতিমালা পরিপন্থী। বিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা ওই শিক্ষককে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসব।’

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) যোবায়ের হোসেন বলেন, ‘একজন অভিভাবক ৫ম শ্রেণিতে পড়ুয়া স্কুলছাত্রের চুল বিকৃত ভাবে কেটে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। আগামীকাল বিষয়টি তদন্ত করতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে ওই প্রধান শিক্ষককে আমার কার্যালয়ে উপস্থিত করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। প্রধান শিক্ষকের দোষ প্রমাণিত হলে শাস্তির আওতায় আনা হবে।’

তিন বছর আগে প্রধান শিক্ষক মসলিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে ছেঁড়া পতাকা ওড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পর তদন্ত কমিটি গঠন করে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফেল করায় বকা খেয়ে বাড়ি ছাড়ে বাংলাদেশি কিশোরী, ভারতে ৩ মাসে ২০০ লোকের ধর্ষণ

‘বিচারপতি খায়রুলকে হাতকড়া পরানো মানে পুরো বিচার বিভাগকে হাতকড়া পরানো’

রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আটক

কোথাও ঘুরতে ইচ্ছা করলে আমাকে জানাবে—ছাত্রীকে খুবি অধ্যাপক

আগামী সপ্তাহের মধ্যে ৫ ইসলামী ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু: গভর্নর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত