Ajker Patrika

কোথাও ঘুরতে ইচ্ছা করলে আমাকে জানাবে—ছাত্রীকে খুবি অধ্যাপক

খুবি প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২৫, ২২: ২১
অধ্যাপক ড. রুবেল আনসার। ছবি: সংগৃহীত
অধ্যাপক ড. রুবেল আনসার। ছবি: সংগৃহীত

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) বাংলা ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. রুবেল আনসারের বিরুদ্ধে অশালীন প্রস্তাব ও যৌন সম্পর্কের ইঙ্গিতের অভিযোগ করেছেন এক ছাত্রী। এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্রের সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রী।

তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে খুবির যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক মোছা. তাসলিমা খাতুন বলেন, ‘আমাদের কাছে এমন একটি অভিযোগ জমা দিয়েছে ভুক্তভোগী। ইতিমধ্যে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে; যার প্রধান হিসেবে আমাকে রাখা হয়েছে।’

অভিযোগপত্রে ওই ছাত্রী উল্লেখ করেন, ‘অ্যাকসিডেন্ট করায় সঠিক সময়ে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে পারিনি, সে জন্য স্যারের সঙ্গে কথা বলতে যাই। তিনি আমার সঙ্গে ৪০-৪৫ মিনিট বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। পরে একপর্যায়ে বেশ উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, তোমার হাত যদি পরীক্ষার আগে ঠিক না হয়, তাহলে আমি ফুঁ দিয়ে ঠিক করে দেব।’

‘তিনি আরও বলেন, যেহেতু তুমি খুলনায় নতুন, তোমার যদি কোথাও ঘুরতে যেতে ইচ্ছা করে অথবা অসুস্থ বোধ করলে হাসপাতালে যাওয়া লাগে, আমাকে নির্দ্বিধায় জানাবে।’ তাঁর এসব কথা আমার কাছে একটু অস্বস্তিকর লাগলেও আমি বলা শেষ হলে সালাম দিয়ে চলে আসি।’

ওই ছাত্রী আরও উল্লেখ করেন, ‘স্যারের চেম্বার থেকে কথা বলে আসার পর থেকে তিনি আমাকে ঘন ঘন মেসেজ দেওয়া শুরু করেন। আমি ফ্রি আছি কি না, তাঁর সঙ্গে ঘুরতে যাব কি না টাইপের মেসেজ দেওয়া শুরু করেন। আমি প্রতিবার ব্যস্ত আছি বলে তাঁকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি।’

অভিযোগপত্রে ছাত্রী বলেন, ‘আমাদের বাড়ি হয়ে স্যারের বাসায় যেতে হয়। সে জন্য আব্বু তাঁর পরিবারসহ আমাদের বাসায় ঘুরে যাওয়ার দাওয়াত দেন। ঈদুল ফিতরের ছুটিতে বাড়ি গিয়ে আমি এ সম্পর্কে জানতে পারি। তিনি মেসেজে আব্বু দাওয়াত দিয়েছে বলায় আমিও সম্মান রক্ষার্থে আমাদের বাসায় ঘুরে যেতে বলি। স্যার বলেন, আমি পরিবারসহ আসব, বিনিময়ে আমি যা চাইব, তোমাকে তা-ই দিতে হবে। আমি তাঁর কথার অর্থ ঠিকমতো বুঝতে পারিনি, তবে আমার সাধ্যের মধ্যে কিছু চাইলে দেব বলে রিপ্লাই দিই। স্যার ঈদের ছুটি কাটিয়ে খুলনায় ফেরার সময় স্ত্রী-কন্যাসহ আমাদের বাসায় আসেন।’

এ ঘটনার পর থেকে তাঁকে (স্যার) এড়িয়ে চলার পাঁচ-ছয় দিন পরের ঘটনা উল্লেখ করে ওই ছাত্রী বলেন, ‘হঠাৎ তিনি একদিন কল দেন এবং তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য অনুরোধ করেন। আমি নিরালা মোড়ে গেলে তিনি কিছু কথা বলার অনুরোধ করে গাড়িতে উঠতে বলেন। প্রথমে আমি গাড়িতে উঠতে চাইনি, কিন্তু তিনি বারবার অনুরোধ করার পর আমি গাড়ির সামনের সিটে উঠি। আমাদের বাসা থেকে ঘুরে আসায় শুরুতে তিনি সবার খুব প্রশংসা করেন। কিছুক্ষণ পরই তিনি পুরোনো প্রসঙ্গ তুলে বলেন, আমি তোমাদের বাসায় গিয়ে আমার কথা রেখেছি, এবার তোমাকে আমার কথা রাখতে হবে। আমি তখনো তাঁর কথার উদ্দেশ্য বুঝতেছিলাম না।’

ওই ছাত্রী আরও উল্লেখ করেন, ‘আমি বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করি, আপনি আমার থেকে কী চান, আমি বুঝতেছি না। তিনি খুবই স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলেন, আমি তোমাকে চাই। আমি স্যারের কথা শুনে পুরোপুরি অবাক হয়ে যাই। আমি জিজ্ঞেস করি, কী বললেন? আমাকে চান মানে? কীভাবে চান? তখন তিনি বিরক্ত হয়ে বলেন, তুমি বুঝতে পারো না?’

‘একজন পুরুষ একজন নারীকে যেভাবে চায়, আমিও ঠিক তোমাকে সেভাবে চাই।’ একটু থেমে তিনি আবার বলেন, তুমি ভয় পেয়ো না, তোমাকে একা একটি পরিচিত বাসায় নিয়ে যাব, যেখানে কেউ থাকবে না। বাসাটা আমার এক বন্ধুর। আমি কবে যাব, আগে থেকে বলে দিলে সে তার বউকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেবে এবং চাবি রেখে নিজেও বাইরে চলে যাবে। তাঁর এসব কথা শুনে এবার ভয়ে আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। আমাকে চুপ থাকতে দেখে তিনি বলেন, আমি বুঝতে পারছি, তুমি হয়তো ভয় পাচ্ছ।’

অভিযোগপত্রে ওই ছাত্রী উল্লেখ করেন, ‘আমি কথাগুলো শুনে আপত্তি করি এবং রেগে গাড়ি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করি। তিনি তখন ড্রাইভ করা অবস্থায় আমার হাত চেপে ধরেন এবং বলেন, জেদ কোরো না; আমি যা চাই, তা-ই আমার করে নিই। আজ না হোক কাল আমার ভালোবাসার চিহ্ন এঁকে দেবই।’

‘জোর করে তাঁর হাত ছাড়ানোর পর তিনি আবার বলেন, আমি কখনো এত দিন কারও পেছনে ঘুরিনি, কারও জন্য অপেক্ষা করিনি, তোমার জন্যই এত দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। আমি তোমার রেজাল্টও বাড়িয়ে দেব, তোমার রেজাল্ট ৩ দশমিক ৫০ হয়ে যাবে। এসব শোনার পরে আমি দ্রুত তাঁর গাড়ি থেকে নেমে কোনোরকমে আত্মরক্ষা করি।’

অভিযোগ সম্পর্কে ভুক্তভোগী ছাত্রী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ ঘটনার পর আমি গভীর ট্রমায় ভুগেছি, একা একা কাঁদতাম ও ভয় পেতাম। নতুন পরিবেশে কাউকে বলতেও পারিনি। কষ্ট করে ক্লাস করেছি। শুনেছি, তিনি আগেও এ ধরনের যৌন হয়রানিতে জড়িত ছিলেন এবং এখনো তা চালিয়ে যাচ্ছেন। ৫ আগস্টে ভিসি স্যারের কমিশন গঠনের ঘোষণায় সাহস পাই এবং অভিযোগ করার সিদ্ধান্ত নিই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক ড. নাজমুস সাদাত বলেন, ‘এ বিষয়ে ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের দপ্তরের মাধ্যম হয়ে অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে এবং তদন্ত কমিটির সাত সদস্যের মধ্যে আমিও একজন। সে জন্য এর বেশি মন্তব্য করতে পারছি না।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যাপক ড. রুবেল আনসার বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। তবে ওই ছাত্রী অসুস্থ থাকায় তার বাবা আমাকে একবার কল দিয়েছিলেন। সব শিক্ষার্থীই আমার কাছে সমান।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফেল করায় বকা খেয়ে বাড়ি ছাড়ে বাংলাদেশি কিশোরী, ভারতে ৩ মাসে ২০০ লোকের ধর্ষণ

রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আটক

আগামী সপ্তাহের মধ্যে ৫ ইসলামী ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু: গভর্নর

‘বিচারপতি খায়রুলকে হাতকড়া পরানো মানে পুরো বিচার বিভাগকে হাতকড়া পরানো’

মৌচাকে হাসপাতালের পার্কিংয়ে প্রাইভেট কার থেকে উদ্ধার দুই মরদেহের পরিচয় মিলেছে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত