ঠাকুরগাঁওয়ে ধর্ষণের শিকার কিশোরী: বাবা–ভাই জেলে, কষ্টে দিনযাপন পরিবারের

ধর্ষণের শিকার হয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার স্কুল পড়ুয়া এক কিশোরী হাসপাতালের বেডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। অন্য মামলায় কিশোরীর বাবা ও ভাই কারাগারে বন্দী। পরিবারে আছে কেবল বৃদ্ধ মা ও দাদি। উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় নিদারুণ কষ্টে দিনযাপন করছে অসহায় পরিবারটি। 

সোমবার সরেজমিনে ভুক্তভোগী ওই কিশোরীর বাড়িতে গেলে দেখা যায়, উঠোনের এক কোণে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন আনুমানিক ৭৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা। বিড়বিড় করে কী যেন বলছেন। কাছে যাওয়ার পর জিজ্ঞেস করলেন, ‘কে বা তোমরা! ক্যানে হামার বাড়ি আসিছেন।’ ভয়ে কেঁদে দেন তিনি। কপাল ঠুকে বলেন, ‘কী ছিল এই কপালে। বেটাও জেলে-নাতিও জেলে।’ এই বলে মূর্ছা যান তিনি।

ওই কিশোরীর গ্রামের মকবুল হোসেন (ছদ্মনাম) বলেন, ‘বৃদ্ধার একমাত্র ছেলে ও নাতিরা পৃথক ঘটনায় কারাগারে বন্দী জীবন কাটাচ্ছে। আরেকজন পালিয়ে বেড়াচ্ছে পুলিশের ভয়ে। একমাত্র নাতনিও ধর্ষণের শিকার হয়ে চিকিৎসাধীন। উপার্জনক্ষম কোনো ব্যক্তি বাড়িতে না থাকায় খুব কষ্টে আছে পরিবারটি।’ 

• হাত-মুখ বাঁধা অবস্থায় কিশোরী উদ্ধার, পালাক্রমে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ

ঠাকুরগাঁও থানার ওসি কামাল হোসেন বলেন, ‘গত শুক্রবার দিবাগত রাতে ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের অদূরের গোবিন্দনগর এলাকা থেকে হাত–মুখ বাঁধা অচেতন অবস্থায় ওই স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। তিনি আরও বলেন, ‘ট্রিপল নাইনে ফোন পেয়ে পুলিশ ওই কিশোরীকে হাত ও মুখ বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে। বর্তমানে সে চিকিৎসাধীন। ডাক্তারি পরীক্ষার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

এদিকে, ভুক্তভোগী ওই কিশোরী জানিয়েছে, ওই দিন একটি ভটভটিতে (থ্রি হুইলার) করে ঠাকুরগাঁও যাচ্ছিল সে। পথে পাঁচ-ছয়জন দুর্বৃত্ত গাড়িটির গতিরোধ করে উঠে পড়ে। এ সময় তাঁরা অস্ত্র দেখিয়ে (ছুরি) হত্যার হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক তাকে অজ্ঞাত একটি স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তার ওপর পালাক্রমে যৌন নিপীড়ন চালায় দুর্বৃত্তরা। একপর্যায়ে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। 

কিশোরীর দাবি, দুর্বৃত্ত ৬ জনের মধ্যে তিনজনই তার এলাকার এবং আত্মীয়। ওই তিন ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিবারের জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ চলছে। অপর তিনজন মাস্ক পরা থাকায় তাদের চিনতে পারেনি সে।

নির্যাতনের শিকার ওই কিশোরীর মা বলেন, ‘সবাই জোট বেঁধেছে আমাদের বিরুদ্ধে। এ যেন দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার।’ এই বলে হাউ মাউ করে কেঁদে ফেলে তিনি। 

তবে ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত বাবুল বলেন, ‘মেয়েটি আমার ফুপাতো ভাইয়ের মেয়ে। তার বাবার সঙ্গে জমির বিষয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তার রেশ ধরে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’ 

বড় পলাশবাড়ী ইউপির চেয়ারম্যান মো. শাহাব উদ্দিন মিয়া বলেন, ‘জমি নিয়ে তাদের বিরোধ চলছে। পরিবারগুলোর এক রোখা মনোভাবের কারণে স্থানীয় ভাবে তা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে না।’ 

বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি খায়রুল আনাম বলেন, ‘এ মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’ তবে কৌশলগত কারণে এই বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।