Ajker Patrika

কানসাট আমবাজার: দিনে ১৫-২০ কোটি টাকা বেচাকেনা

আব্দুল বাশির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে মুখর দেশের বৃহত্তম চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট আমবাজার। ছবি: আজকের পত্রিকা
ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে মুখর দেশের বৃহত্তম চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট আমবাজার। ছবি: আজকের পত্রিকা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কানসাট আমবাজারে চলছে জমজমাট বেচাকেনা। দেশের বৃহৎতম এই মৌসুমি বাজারটি এখন হাঁকডাকে মুখর, নানা জাতের আমে ভরে উঠেছে প্রতিটি আড়ত। ঈদুল আজহার ছুটি, অতিবৃষ্টি ও প্রচণ্ড খরায় সাময়িক ধাক্কা খেলেও গত কয়েকদিনে পরিস্থিতি অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংক লেনদেন চালু হওয়া, আবহাওয়ার উন্নতি এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকারদের আগমনে আবারও চাঙা হয়ে উঠেছে কানসাট বাজার। প্রতিদিন এখানে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার আম বেচাকেনা হচ্ছে, আর জেলাজুড়ে বেচাকেনার পরিমাণ ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকার কাছাকাছি।

গত শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকাররা ঝুড়ি ও ক্যারেটভর্তি আম কিনছেন। বাজারজুড়ে হাঁকডাকে মুখর চারপাশ। মোকামগুলোতেও আমের চাহিদা বেড়েছে। ফলে প্রতিদিন মণপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, ক্ষীরশাপাতি সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার ৪০০, ল্যাংড়া ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৮৫০, আম্রপালি ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৮০০, লক্ষ্মণভোগ ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০, গুটি ৮০০ থেকে ২ হাজার আর ব্যানানা ফ্রুট ব্যাগিংয়ের সাড়ে ৪ হাজার ও ফজলি ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে।

চাষিরা অভিযোগ করেছেন, আড়তদারেরা জোর করে প্রতি মণে ৫২ থেকে ৫৪ কেজি পর্যন্ত আম নিচ্ছেন। এতে তাঁরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাঁদের মতে, এভাবে বাড়তি ওজন চাপিয়ে দেওয়া ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’।

আম ব্যবসায়ী নাসিরুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির কারণে কিছুদিন বাজার খারাপ ছিল। এখন দাম বেড়েছে, দেশের সব জায়গায় আমের চাহিদাও বেড়েছে। আর চাহিদা বাড়ার কারণে আমের দামও বাড়তি। আজকে মণে ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেশি।

২০ বছর ধরে আমের মৌসুমে আম কিনে ঢাকার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন ফরিদপুরের ব্যবসায়ী নূর ইসলাম সিকদার। তিনি বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট বাজারের আমের চাহিদা বেশি। পাঁচ টাকা বেশি দাম হলেও ক্রেতার চাহিদা আছে। তাই এখানকার আম কিনে নিয়ে যায়। প্রতিদিন একটি ট্রাকে ৪০০ ক্যারেট আমি মোকামে পাঠাই। নিরাপত্তার দিক থেকে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে ৪৫ থেকে ৫২ কেজি মণ করে কিনে নিচ্ছি।’

আমচাষি ও উদ্যোক্তা ইসমাইল খান শামীম বলেন, খরা, ছুটি, ব্যাংক বন্ধ ও অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে বাজারে ধস নেমেছিল। এখন পরিস্থিতি ভালো। দামও কিছুটা স্থিতিশীল। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে, তবে চাষিরা ভালো দাম পাবেন।

কানসাট আম আড়তদার সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপু আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিছুদিন থেকেই আমের বাজার খারাপ ছিল। বৃষ্টিতে চাষিরা আম ভাঙতে পারেননি। চাষিরা এবং ব্যবসায়ীরা কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। সব মিলিয়ে দুদিন থেকে কানসাট আমবাজারে কেনাবেচা ভালো হচ্ছে। চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন। বর্তমানে কানসাট আমবাজারে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। পুরো জেলায় ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকার আম বেচাকেনা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত