Ajker Patrika

উৎপাদন মৌসুম শুরু: লবণচাষিরা মাঠে নেই, দাম কম

  • প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ২৩৫-২৪০ টাকা।
  • উৎপাদনে খরচ পড়েছে অন্তত ৪০০ টাকা।
মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
লবণ উৎপাদনের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন চাষিরা। কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধূরুন ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
লবণ উৎপাদনের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন চাষিরা। কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধূরুন ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাঠে লবণের নোনতা গন্ধ ভেসে আসে, কিন্তু চাষিদের মুখে হাসি নেই। গত বছর থেকে লবণের বাজারমূল্য স্থির না থাকার কারণে উৎপাদনে আগ্রহ কমেছে। মাঠপর্যায়ে এখনো প্রতি মণ লবণ ২৩৫-২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, অথচ উৎপাদনে খরচ পড়েছে অন্তত ৪০০ টাকা। দামের এই ফারাক চাষিদের মধ্যে হতাশার ছাপ রেখেছে। ফলে নতুন মৌসুম শুরু হলেও অধিকাংশ চাষি এখনো মাঠে নামতে সাহস পাচ্ছেন না।

দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদনকেন্দ্র কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী সমুদ্র উপকূল। প্রতিবছর নভেম্বর থেকে মে পর্যন্ত চলে লবণ চাষের মৌসুম। এই সময়ে সাগরের লোনাপানি শুকিয়ে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, সদর ও টেকনাফের পাশাপাশি চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও পটিয়ার উপকূলে হয় লবণ চাষ, যা থেকে দেশের সার্বিক চাহিদা পূরণ হয়।

বিসিকের আওতাধীন কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর কুতুবদিয়া উপজেলার লেমশীখালী ইউনিয়নে মৌসুমের প্রথম লবণ উৎপাদন হয়। তখন ৬ হাজার ৭৫৮ একর জমির মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ জমি উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত ছিল। প্রথম সপ্তাহে উৎপাদন হয়েছিল মাত্র ৫৫ টন। পেকুয়া, টেকনাফ ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীর ক্ষেত্রেও চাষিরা মাঠে নেমেছিলেন, তবে মাত্র ৪০-৫০ শতাংশ জমিতে।

এ বছর আরও খারাপ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মৌসুম শুরু হলেও কুতুবদিয়া ছাড়া অন্য এলাকায় চাষিরা এখনো মাঠে নামেননি। বিসিক কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া জানিয়েছেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে উৎপাদনে অন্তত ২০-২২ দিনের বিলম্ব হতে পারে। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, লবণের দাম কম থাকায় চাষিদের মধ্যে হতাশা গভীর।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত মৌসুমে বেশির ভাগ চাষিই লবণ উৎপাদনে লোকসান দিয়েছেন এবং এ বছরও পরিস্থিতি বদলায়নি। লাভ তো দূরের কথা, মাঠে তাঁদের কষ্টার্জিত বিনিয়োগ ফিরবে কি না সেই অনিশ্চয়তায় চাষিরা রয়েছেন। কুতুবদিয়ার লেমশীখালীর চাষি আবদুল গফুর জানিয়েছেন, কানিপ্রতি জমিতে গত মৌসুমে তাঁর ৩৫ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে, যা এবারও তাঁর মাথায় ভর করছে।

পেকুয়ার বড় চাষি সিরাজুল মোস্তফা জানান, প্রতি একর জমিতে উৎপাদন খরচ আড়াই লাখ টাকার বেশি, উৎপাদন হয় ৬০০-৬৫০ মণ। বর্তমান বাজারদরে প্রতি একরে লোকসান প্রায় ১ লাখ টাকা এবং গত মৌসুমে ২৫০ একর জমিতে তাঁর ক্ষতি হয়েছে ৪০ লাখ টাকা।

এভাবে শুধু গফুর বা সিরাজুল নয়, এলাকার সংখ্যাগরিষ্ঠ চাষিই দাম না থাকার কারণে এবার মাঠে নামার আগ্রহ হারিয়েছেন। জমির মালিকেরা কানিপ্রতি ১৫-২৫ হাজার টাকা ছাড় দিলেও, তা চাষিদের মাঠে নামাতে খুব বেশি ভূমিকা রাখেনি।

বিসিকের তথ্য অনুযায়ী, গত মৌসুমে দেশে ২৬ লাখ ১০ হাজার টনের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছিল ২২ লাখ ৫১ হাজার ৬৫১ টন। এর আগের বছর উৎপাদন হয়েছিল ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯০ টন। চলতি মাসের ১ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে মজুত আছে ৪ লাখ ২০৩ টন লবণ। মাঠে লবণের গড় মূল্য ২৪০ টাকা। কক্সবাজারের সাত উপজেলায় ৫৯ হাজার ৯৯৯ একর এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও পটিয়ায় ১০ হাজার ৮৯ একর জমিতে লবণ চাষ হয়, যেখানে ৪১ হাজার ৩৫৫ জন চাষি সরাসরি জড়িত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘তোর সময় শেষ, যা খাওয়ার খেয়ে নে’—হুমকির ৩ দিন পরেই বাবলাকে হত্যা

২০২৬ সালের সরকারি ছুটির তালিকা অনুমোদন

‘চিটাংঅর মইদ্যে সরোয়াইজ্জা মরিব’— ফোনে চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের চেলা রায়হানের হুমকি

সরকারি ছুটি ২৮ দিন, ১১ দিনই শুক্র-শনিবার

পাকিস্তান থেকে এল নিষিদ্ধ পণ্য, বার্ড ফুডের নামে পপিবীজের চালান

এলাকার খবর
Loading...