Ajker Patrika

লিবিয়ায় মানব পাচার: স্বজনের পথ চেয়ে আদালত চত্বরে আছাড়ি-পিছাড়ি

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে অবৈধভাবে ইতালিতে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে লিবিয়ায় গিয়ে এক বছর যাবৎ নিখোঁজ শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলার ২৪ জন। গতকাল তাঁদের স্বজনদের অনেকে শরীয়তপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে কান্নাকাটি করে। ছবি: আজকের পত্রিকা
দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে অবৈধভাবে ইতালিতে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে লিবিয়ায় গিয়ে এক বছর যাবৎ নিখোঁজ শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলার ২৪ জন। গতকাল তাঁদের স্বজনদের অনেকে শরীয়তপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে কান্নাকাটি করে। ছবি: আজকের পত্রিকা

দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে অবৈধভাবে ইতালিতে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে লিবিয়ায় গিয়ে এক বছর যাবৎ নিখোঁজ শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলার ২৪ তরুণ-যুবক। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তাঁদের স্বজনেরা। নিরুপায় হয়ে তাঁরা এখন আছাড়ি-পিছাড়ি খাচ্ছেন আদালত চত্বরে।

দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান পেতে আমরণ অনশনে বসেছেন নিখোঁজ ২৪ পরিবারের স্বজনেরা। গত শনিবার সকাল থেকে শরীয়তপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে শুরু হয়েছে এ অনশন। গতকাল রোববার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায় মাটিতে গড়াগড়ি করে কান্নাকাটি করছেন তাঁদের কেউ কেউ।

খোঁজ নিয়ে ও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২২ ও ২০২৩ সালে শরীয়তপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ মধ্যপাড়া, দক্ষিণ ভাষানচর, নতুন হাট, চর নেয়ামতপুর, চর ভাষানচর, চাপাতলী, চরচাটাং মাদারীপুর সদরের জাগীর, জাফরাবাদ, ত্রিভাগাদি, কালকিনির সূর্যমণি এলাকার ২৪ যুবক ও তরুণকে অবৈধ পথে লিবিয়া থেকে ইতালি পাঠানোর জন্য বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের প্রথমে সংযুক্ত আরব আমিরাত, তারপর মিসর হয়ে লিবিয়া পাঠানো হয়। এর পর থেকে তাঁরা নিখোঁজ আছেন। ওই ২৪ তরুণ-যুবকের পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে ২০ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দালাল চক্রটি।

গত বছরের ২২ মার্চ থেকে ওই ২৪ জনের পরিবারের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করছে না বলে দাবি করেছেন স্বজনেরা। এখন তাঁরা কোথায়, কী অবস্থায় আছেন, তাও জানেন না পরিবারের লোকজন।

পুলিশ ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা জানান, শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারীয়া ইউনিয়নের চর যাদবপুর গ্রামের রাশেদ খান ও তাঁর ভাইয়েরা বিভিন্ন দেশে জনশক্তি পাঠানোর কাজ করেন।

রাশেদ খান ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে শরীয়তপুরের আদালত ও সদরের পালং মডেল থানায় ১১টি মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের স্বজনেরা। এসব মামলা করার পর পুলিশ রাশেদ খান ও তাঁর সহযোগীদের গ্রেপ্তারের জন্য তৎপর হয়। গত শুক্রবার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাশেদ খানকে গ্রেপ্তার করে। শনিবার দুপুরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

রাশেদের গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে নিখোঁজ ২৪ তরুণ-যুবকের স্বজনেরা শরীয়তপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে ব্যানার টানিয়ে অনশনে বসেন। বৃদ্ধ মা-বাবা, স্ত্রী ও তাঁদের শিশুসন্তানদের অনশনে দেখা যায়। এ সময় স্বজন হারানোর শঙ্কায় আদালত চত্বরে বুকফাটা আর্তচিৎকার ও গড়াগড়ি খেতে দেখা গেছে স্বজনদের।

অনশনে যোগ দিয়ে আদালত চত্বরে মাটিতে গড়াগড়ি করে কান্না করছিলেন রিয়াজ আকন। তাঁর ছোট ভাই দিদার হোসেন ইতালি যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়েছেন। রিয়াজ বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। পরিবারের অভাব দূর করার জন্য জমি ও গরু বিক্রি করে ছোট ভাইকে ইতালি পাঠানোর জন্য দালাল রাশেদকে ২০ লাখ টাকা দিই। কিন্তু দালাল আমার ভাইকে লিবিয়া নিয়ে অবৈধ পথে সমুদ্র দিয়ে ইতালি পাঠানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু এক বছর ধরে ভাইয়ের সন্ধান পাচ্ছি না। সে বেঁচে আছে, না মরে গেছে, কিছুই বলতে পারছি না। আমরা স্বজনদের সন্ধান চাই। আর রাশেদসহ দালাল চক্রের সবার শাস্তি চাই।’

এ সময় আদালত চত্বরে নিখোঁজ শাহীন শিকদারের মা রুমা বেগম, ফারুক হোসেনের মা মাহফুজা বেগম, সরদার সাকেবুলের মা শিয়িয়া বেগম, শামীম কাজীর মা সাথী বেগম, আতিকুর রহমানের বোন আফরোজা আক্তার, রফিক মোড়লের মা রহিমা বেগম, আমিনুল ইসলামের মা কমলা বেগম, দিপু শিকদারের বাবা ইউনুস শিকদারসহ অনেকের বুকফাটা কান্না ও গড়াগড়িতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।

জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মানব পাচারের ৫৩টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৩টি মামলা তদন্ত করছে জেলা পুলিশ, সিআইডিতে তদন্তাধীন রয়েছে ২০টি মামলা। এজাহারে আসামির সংখ্যা ২৬০ জন। এর মধ্যে ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুটি মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে এবং দুটি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।

শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রাশেদ খান নামে মানব পাচারকারী চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করে জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লক্ষ্মীপুরে আগুনে পুড়ল ২০ দোকান

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
আজ ভোরে রামগতির আলেকজান্ডার বাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ ভোরে রামগতির আলেকজান্ডার বাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ছবি: আজকের পত্রিকা

লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়ে গেছে। এতে কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা। শুক্রবার ভোরের দিকে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, শুক্রবার ভোরে বাজারের ব্যবসায়ী রাসেল হোসেনের মুদিদোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত। মুহূর্তের মধ্যে আগুন আশপাশের দোকানগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এতে মুদি, গার্মেন্টস, মোবাইল, ক্রোকারিজ, কসমেটিকসের দোকানসহ অন্তত ২০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়ে যায়। এই অগ্নিকাণ্ডে কোটি টাকার ক্ষতি হয় বলে দাবি করেন ক্ষতিগ্রস্ত দোকানের মালিকেরা।

রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ২০টি দোকান পুড়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকার বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রামগতি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার খোকন মজুমদার জানান, শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। দুটি ইউনিট দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে।

রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, অগ্নিকাণ্ডে বেশ কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এরপর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পড়াশোনার পাশাপাশি কোয়েল পাখির খামার গড়ে কলেজছাত্রের মাসিক আয় ৬০ হাজার টাকা

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
কোয়েলের বাচ্চা ফোটার পর বাচ্চা বের করছেন সাগর ও তাঁর বন্ধু্। ছবি: আজকের পত্রিকা
কোয়েলের বাচ্চা ফোটার পর বাচ্চা বের করছেন সাগর ও তাঁর বন্ধু্। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইচ্ছাশক্তি, শ্রম ও মনোবলকে পুঁজি করে নিজের ভাগ্য বদলেছেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোড়াদাইড় গ্রামের কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী বি এম সাগর ভূঁইয়া। মাত্র ৫০০ কোয়েল পাখি নিয়ে ব্যবসা শুরু করে দুই বছরের মধ্যে তিনি এখন প্রতি মাসে প্রায় ১৫ হাজার পাখি বিক্রি করছেন।

খামারে কোয়েল পাখি। ছবি: আজকের পত্রিকা
খামারে কোয়েল পাখি। ছবি: আজকের পত্রিকা

কর্মচারী ও অন্যান্য খরচ বাদে তাঁর ফার্ম থেকে মাসে আয় হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। সাগরের এই সাফল্য দেখে এলাকার অনেক যুবক এখন কোয়েল পালনে আগ্রহী হচ্ছেন।

উদ্যোক্তা বি এম সাগর ভূঁইয়া জানান, তিনি কখনো চাকরির বাঁধাধরা নিয়মের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে চাননি। নিজে কিছু করার স্বপ্ন দেখতেন। পরিবারের সদস্যরা অনেকেই চাকরি বা বিদেশে থেকে ভালো আয় করেন। তাঁর বাবা বেলায়েত ভূঁইয়া যখন তাঁকে উন্নত জীবনের জন্য বিদেশে পাঠাতে চাইলেন, তখন তিনি রাজি হননি। পরিবারের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তিনি নিজ গ্রামে থেকে যান। পড়াশোনার পাশাপাশি শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং।

ফ্রিল্যান্সিং করে জমানো ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে দুই বছর আগে নিজেদের একটি পরিত্যক্ত টিনের ঘরে মাত্র ৫০০ মুরগির বাচ্চা কিনে খামার ব্যবসা শুরু করেন সাগর। কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের অভাবে প্রথম উদ্যোগেই তাঁর প্রায় অর্ধেক টাকা লোকসান হয়।

তবে অদম্য এই যুবক হাল ছাড়েননি। লোকসানের কথা পরিবারকে না জানিয়ে নতুন উদ্যমে শুরু করেন কোয়েল পাখির খামার, যার নাম দেন ‘ভূঁইয়া অ্যাগ্রো ফার্ম’।

সাগর ভূঁইয়া জানান, শুরুতে ৫০০ কোয়েল পাখি নিয়ে খামার শুরু করলেও এখন তাঁর খামারে প্রায় দেড় হাজার কোয়েল পাখি রয়েছে। প্রতিদিন এসব পাখি থেকে প্রায় ৯০০ ডিম সংগ্রহ করা হয়। এই ডিম ফোটানোর জন্য তিনি একটি ইনকিউবেটর মেশিন কিনেছেন, যা দিয়ে প্রতি মাসে ২০ হাজার বাচ্চা ফোটানো হয়।

বর্তমানে সাগর প্রতি মাসে প্রায় ১৫ হাজার কোয়েল পাখি বিক্রি করেন। প্রতিটি পাখিতে খরচ বাদে তাঁর ৭ থেকে ১০ টাকা লাভ থাকে। তিনি জেলাসহ বিভিন্ন স্থানে পাখি বিক্রি করেন।

সাগরের সহপাঠী আহম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘সাগর ছোটবেলা থেকেই সৃজনশীল মনের ছিল। সে সব সময় বলত, নিজে কিছু করবে। আমিও পড়াশোনার পাশাপাশি তাকে খামারের বিভিন্ন কাজে সহায়তা করি। সাগরের সফলতা দেখে আমি কোয়েল পালন শিখে নিজেই একটি খামার করার ইচ্ছা পোষণ করেছি।’

একই গ্রামের নূর আলম কোয়েল পাখির খামার করার জন্য সাগরের কাছ থেকে ২০০ স্ত্রী কোয়েল পাখির বাচ্চা কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘ভূঁইয়া অ্যাগ্রো ফার্মের কোয়েলের মান অনেক ভালো। শীতের দিনে কোয়েলের ডিম বেশি বিক্রি হয় এবং লাভও ভালো হয়। কোনো সমস্যা হলে সাগরের কাছ থেকে পরামর্শ নিই।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোবিন্দ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘কোয়েল পাখি পালন একটি লাভজনক ব্যবসা। একটি কোয়েল পাখি জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে ডিম দিতে শুরু করে এবং বছরে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০টি ডিম দেয়। কোয়েলের মাংস ও ডিম অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ।’

গোবিন্দ চন্দ্র সরকার জানান, এই কোয়েল পাখির খামারিকে খামার সম্পর্কে কোনো পরামর্শের প্রয়োজন হলে গোপালগঞ্জ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সব সময় সহযোগিতা করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুষ্টিয়ায় আর্থিক সংকটে অসুস্থ শিশুকে হত্যা করে মায়ের আত্মহত্যা

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ইনসাফনগর গ্রামে রেশমা খাতুন (২৫) নামের এক গৃহবধূ নিজের আড়াই বছরের অসুস্থ সন্তান লামিয়া খাতুনকে শ্বাসরোধে হত্যার পর গলায় ফাঁস দিয়ে নিজেও আত্মহত্যা করেছেন। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে নিজ বাড়িতে এই ঘটনা ঘটান। নিহত রেশমা খাতুন সৌদিপ্রবাসী রহিদুল ইসলামের স্ত্রী। লামিয়া ছিল তাঁদের একমাত্র সন্তান। খবর পেয়ে দৌলতপুর থানা-পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মা-মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করে।

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শিশু লামিয়া শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিল। অর্থাভাবে তার সঠিক চিকিৎসা করাতে পারেননি মা রেশমা। প্রবাসী স্বামী রহিদুল ইসলাম নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন না বলে অভিযোগ রয়েছে এবং সংসারের খরচ দিতেন না বলে পারিবারিক কলহ চলছিল। ধারণা করা হচ্ছে, আর্থিক সংকট ও অশান্তিতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে রেশমা এই ভয়াবহ সিদ্ধান্ত নেন।

রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল বলেন, শিশুসন্তানকে হত্যার পর মা আত্মহত্যা করেছেন, এটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। সন্ধ্যায় বিষয়টি জানার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করেছে।

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলাইমান শেখ বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আর্থিক সংকট, শিশুর অসুস্থতা ও পারিবারিক অশান্তি থেকে হতাশ হয়ে রেশমা খাতুন তাঁর শিশুকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেছেন। মরদেহ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। শুক্রবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিএইচসিপি কারাগারে: ৫ দিন ধরে কমিউনিটি ক্লিনিক তালাবদ্ধ, স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী

মো. বেল্লাল হোসেন, দশমিনা (পটুয়াখালী)
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪০
তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে আউলিয়াপুর কমিউনিটি ক্লিনিক। গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে আউলিয়াপুর কমিউনিটি ক্লিনিক। গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার রনগোপালদী ইউনিয়নের আউলিয়াপুর কমিউনিটি ক্লিনিকটি গত রোববার থেকে তালাবদ্ধ থাকায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকাবাসী। কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারের (সিএইচসিপি) অনুপস্থিতির কারণে এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) হিসেবে দায়িত্বে আছেন বাহাউদ্দিন লাবু। তিনি আওয়ামী লীগের দশমিনা উপজেলা শাখার সদস্য। গত রোববার মধ্যরাতে দশমিনা থানা পুলিশ ‘ডেভিল হান্ট’ অভিযানে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে তিনি জেলহাজতে আছেন। তাঁর অনুপস্থিতির কারণে ক্লিনিকের সেবাদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

সরেজমিনে গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) দেখা যায়, সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ক্লিনিকটি তালাবদ্ধ। সেবা নিতে আসা রোগীরা দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা পাঁচ দিন ক্লিনিকটি এভাবেই বন্ধ রয়েছে।

আউলিয়াপুর ইউপি সদস্য অসি সমাদ্দার বলেন, ‘ক্লিনিকটি বন্ধ থাকায় মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লোকজন এসে তালাবদ্ধ দেখে ফিরে যাচ্ছে। আমি লোকমুখে শুনেছি, কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্বে যিনি আছেন, তিনি জেলে। আমি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের কাছে দ্রুত সময়ের মধ্যে এলাকার লোকজনের স্বাস্থ্যসেবার জন্য ক্লিনিকটি চালু করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

আউলিয়াপুর গ্রামের সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্যসেবার প্রধান ভরসা এই কমিউনিটি ক্লিনিক। কিন্তু পাঁচ দিন ধরে এটি বন্ধ থাকায় এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমার কয়েক দিন ধরে ঠান্ডা-জ্বর ও মাথাব্যথা। দুই দিন (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) ক্লিনিকে এসে তালা পেয়েছি, তাই চলে যেতে হচ্ছে।’

অপর সেবাগ্রহীতা গাজী হাসান বলেন, ‘এর আগে এভাবে ক্লিনিক কখনো বন্ধ ছিল না। আমার কয়েক দিন ধরে জ্বর, গলাব্যথা ও মাথা ঘোরায়। এখানে এসে ক্লিনিক তালাবদ্ধ পেলাম। আমার মতো অনেকেই প্রতিদিন এসে সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে।’

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্লিনিক বন্ধ থাকার বিষয়টি দেখেছি। ক্লিনিকের দায়িত্বে যিনি আছেন, তিনি জেলে আছেন, এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য দশমিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর চিঠি দিয়েছি।’

মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সেটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে, আমি সেটা বাস্তবায়ন করব। আমার একার কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত