Ajker Patrika

ব্যবসায়ীর কাছে কোটি টাকা চাঁদা দাবি, তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে সাতক্ষীরার সাবেক তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। আজ বুধবার জেলার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিলাস মণ্ডলের আদালতে মামলাটি করেন ব্যবসায়ী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আল ফেরদাউস আলফা। আদালত মামলা আমলে নিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীর আইনজীবী খায়রুল বদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এ মামলার পরবর্তী দিন নির্ধারিত হয়েছে ২০২৬ সালের ২০ এপ্রিল। এ ছাড়া বিচারিক হাকিম মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার আসামিরা হলেন সদর সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর্জা সালাউদ্দীন, সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান, গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক ওসি মহিদুল ইসলাম, সাবেক পিপি আব্দুল লতিফ ও তাঁর ছেলে মো. রাসেল।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর দুপুরে সদর উপজেলার বাঁকাল চেকপোস্টে বাদীর দেড় কোটি টাকার ভারতীয় সামুদ্রিক মাছ জব্দ করে বিজিবি। পরে বাদীর বৈধ কাগজপত্র বিজিবির কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু বিজিবি কাগজপত্র যথাযথ বুঝতে না পেরে সেই মাছ সাতক্ষীরা সদর থানায় পাঠায়।

বৈধ কাগজ পাঠালেও মাছ ছাড়া হবে না—এমন হুমকি দিয়ে সদর থানার তৎকালীন ওসি মোস্তাফিজুর রহমান ফোনে বাদীর কাছে দেড় কোটি টাকা দাবি করেন। একপর্যায়ে বাদী ফোন অফ করতে বাধ্য হন।

পরে মধ্যরাতে সদর সার্কেলের তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর্জা সালাউদ্দীন ও ডিবির ওসি মহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে ১০-১২ জন সাদা পোশাকধারী পুলিশ বাদীর পলাশপোলস্থ বাড়িতে গিয়ে ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন।

সে সময় বাড়িতে থাকা ১৫ লাখ টাকা দিয়েও রক্ষা পাননি বাদী। তাঁর ভাই আব্দুল আলিম ও তাঁকে ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে তুলে নিয়ে ব্যাপক নির্যাতন করে পুলিশ। চাঁদা না দেওয়ায় সদর থানায় মাছ আটকের ঘটনায় করা মামলায় তাঁদের অজ্ঞাতনামা আসামি দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। অপর দিকে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জব্দ করা দেড় কোটি টাকার মাছ মাত্র ১ লাখ ৯৬ হাজার টাকায় বিক্রি দেখিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন।

মামলার বিবরণীতে আরও বলা হয়, মামলার জামিন করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বাদীর কাছ থেকে ৩৫ লাখ টাকা চাঁদা দিতে বাধ্য করেন সাতক্ষীরা জজ আদালতের তৎকালীন পিপি আব্দুল লতিফ ও তাঁর ছেলে মো. রাসেল।

আসামিদের শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারে বাদী তাঁর দৃষ্টিশক্তি প্রায় হারিয়ে ফেলেন, আর্থিক ও সামাজিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করা হয়েছে আরজিতে। তৎকালীন সময়ে অনুকূল পরিবেশ না থাকায় মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে বলে আরজিতে উল্লেখ করা হয়।

জানতে চাইলে মামলার বাদী আল ফেরদাউস আলফা বলেন, ‘সাতক্ষীরার সাবেক এই তিন পুলিশ কর্মকর্তা ও সরকারি কৌঁসুলির কারণে আমি আর্থিক, শারীরিক ও মানসিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমি আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

অপর দিকে জেলার সাবেক তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন বর্তমান সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুকিত খান। তিনি বলেন, ‘মীর্জা সালাউদ্দীনসহ তিন কর্মকর্তার বর্তমান অবস্থা বা অবস্থান সম্পর্কে আমার কোনো কিছু জানা নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...