Ajker Patrika

টিআরএমের ক্ষতিপূরণ: ৪৮ কোটি টাকা পাননি কৃষকেরা

  • ২০১১-১২ অর্থবছরে তালার পাখিমারা বিলে টিআরএম কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়।
  • টানা ছয় বছর ১ হাজার ৫৬২ একর জমিতে জোয়ার-ভাটা চালু ছিল।
  • মাত্র দুই বছরের অর্থ দেওয়া হয়েছে; বাকি রয়েছে চার বছরের ৪৮ কোটি টাকা।
সেলিম হায়দার, তালা (সাতক্ষীরা) 
তালার পাখিমারা বিল। ছবি: সংগৃহীত
তালার পাখিমারা বিল। ছবি: সংগৃহীত

কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্পের আওতায় সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাখিমারা বিলে বাস্তবায়িত জোয়ার-ভাটা তথা টিআরএম কার্যক্রমের বকেয়া ক্ষতিপূরণ এখনো পরিশোধ করা হয়নি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকেরা চরম হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

জানা গেছে, কপোতাক্ষ অববাহিকার দীর্ঘদিনের ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দূরীকরণের লক্ষ্যে ২০১১-১২ অর্থবছরে তৎকালীন সরকার তালার পাখিমারা বিলে টিআরএম কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে। এ সময় পেরিফেরিয়াল বাঁধ নির্মাণ ও সংযোগ খাল খনন করা হয়। পরবর্তীকালে ২০১৫ সাল থেকে দুই বছরের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৬ বছর ১ হাজার ৫৬২ একর জমিতে জোয়ার-ভাটা চালু ছিল। সরকার ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের ফসলের পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও এ পর্যন্ত মাত্র দুই বছরের অর্থ দিয়েছে। বাকি থাকা ৪ বছরের ৪৮ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকেরা দাবি করে আসছেন।

উত্তরণ ও পানি কমিটির এক জরিপে জানা যায়, টিআরএম চালুর ফলে কপোতাক্ষ অববাহিকার প্রায় ১৫ লাখ মানুষ সরাসরি এবং ৪০ লাখ মানুষ পরোক্ষভাবে উপকৃত হয়েছেন। নদীর নাব্যতা ফিরে আসে, জীববৈচিত্র্যের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয় এবং বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু পাখিমারা বিলের জমির মালিকেরা দীর্ঘ ৬ বছর কোনো ফসল ফলাতে না পেরে চরম ক্ষতির শিকার হয়েছেন। ফলে কর্মসংস্থানের সংকট, ঋণগ্রস্ততা ও দারিদ্র্যের মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তাঁরা।

শ্রীমন্তকাটি গ্রামের বাসিন্দা টিআরএম বিল কমিটির সভাপতি গোলদার আশরাফুল হক বলেন, ‘আমরা কপোতাক্ষের বৃহত্তর স্বার্থে জমি দিয়েছি। কিন্তু প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ না পেয়ে এখন অভাব-অনটনে দিন কাটাচ্ছি।’ টিআরএম বিল কমিটির সদস্য আব্দুল আলীম, রাশেদ সানা ও ছফেদ আলী সরদার বলেন, ‘আমাদের পাওনা ৪৮ কোটি টাকা। এই অর্থ না পেলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা আর কখনো টিআরএম প্রকল্পে জমি দিতে আগ্রহী হবে না।’

তালা উপজেলা পানি কমিটির সাধারণ সম্পাদক মীর জিল্লুর রহমান বলেন, টিআরএম ছাড়া নদ-নদীর জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব নয়। তাই ক্ষতিপূরণ প্রদানের পাশাপাশি নতুন টিআরএম চালু করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলা সাতক্ষীরা। এখানে নাগরিক অধিকার হিসেবে জমির মালিকেরা তাঁদের প্রাপ্য অর্থ পাওয়ার অধিকার রাখেন। তিনি আরও বলেন, পাখিমারা বিলে টিআরএম কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কপোতাক্ষ নদ আবারও পলিতে ভরাট হয়ে পড়ছে এবং জলাবদ্ধতার কবলে পড়ছে বিস্তীর্ণ এলাকা। অর্থ না দেওয়া হলে শুধু তালা নয়, আশপাশের বহু অঞ্চলে জলাবদ্ধতার সমস্যা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

এই নিয়ে পাখিমারা টিআরএম বিলের ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন, জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নিকট স্মারকলিপি দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।

এ ছাড়া কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্পের আওতায় সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাখিমারা বিলে বাস্তবায়িত জোয়ার-ভাটা তথা টিআরএম কার্যক্রমের বকেয়া ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে। গত সোমবার সকালে পাখিমারা টিআরএম বিলের ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের পক্ষে এ স্মারকলিপি দেওয়া হয়। একই দিনে তাঁরা সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, বিলে ৬ বছর টিআরএম বাস্তবায়িত হয়েছে, কিন্তু জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে মাত্র দুই বছরের।

অনুমোদিত অর্থ এবং চার বছর বরাদ্দ না পাওয়া টাকা সব মিলিয়ে সরকারের কাছে জনগণের পাওনার পরিমাণ প্রায় ৪৮ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় (ডিসি অফিস) থেকে তালিকা দিলে আমরা সেই অনুযায়ী অর্থ ছাড় করি। টাকা ছাড় করার পর দায়িত্ব থাকে না আমাদের। ডিসি অফিসে খোঁজ নিলে ভালো হবে।’

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যে টাকার বরাদ্দ এসেছিল তা কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। বাকি টাকার জন্য কৃষকেরা আমার কাছে আবেদন দিয়েছেন। আবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠাব।’ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা যেন দ্রুত তাঁদের পাওনা বুঝে পান, সে বিষয়ে প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবকে জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটি থেকে বাদ

ঘরে সদ্য বিবাহিত বিক্রয় প্রতিনিধির লাশ, চিরকুটে লেখা ‘জীবন খুবই কঠিন’

বঙ্গবন্ধু জেন–জিদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা, হাসিনা সবচেয়ে অজনপ্রিয়: জরিপ

নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করেও মুখে দুর্গন্ধের কারণ, পরিত্রাণের উপায়

২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর হাইস্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নয়: শিক্ষা মন্ত্রণালয়

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত