Ajker Patrika

‘ওমরা তো বোঝে না, বাদাম কয়টা বেচা না হইলে না খায়া থাকা লাগে’

কে এম হিমেল আহমেদ, বেরোবি
‘ওমরা তো বোঝে না, বাদাম কয়টা বেচা না হইলে না খায়া থাকা লাগে’

‘প্রায় ৩০ বছর হইল বাদাম বেচি। সারা দিনে দুই কেজি বাদামও শ্যাষ হয় না। ছাত্র-ছাত্রীগুলাক জোর করি দিতে চাইলেও নেয় না। ওমরা (ওরা) তো বোঝে না এই বাদাম কয়টা বেচা না হইলে না খায়া থাকা লাগে!’ 

এই কথাগুলো বলছিলেন মহুবার আলী নামের সত্তোরোর্ধ্ব বয়সের একজন বাদাম বিক্রেতা। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করছিলেন বাদাম কেনার জন্য। এ সময় আজকের পত্রিকার কথা হয় তাঁর সঙ্গে। 

ঘড়ির কাটায় তখন দুপুর ২ টা। প্রখর রোদে চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ মহুবার আলীর। তিনি জানালেন, দুই কেজি বাদাম নিয়ে বের হয়েছেন আজ। অর্ধেকেরও কম বিক্রি হয়েছে। এখান থেকে তাঁর লাভের অঙ্ক দাঁড়াবে দেড় থেকে দুই শ’ টাকা। পরিবার পরিজন এখন শুধু তাঁর স্ত্রী। ছেলে নেই বলে সংসারের হালটা তাকেই সামলাতে হয়। 

মহুবার আলী রংপুর নগরীর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন উত্তর মমিনপুর চানকুটি গ্রামে। তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে বাদামের ঝুড়ি কাঁধে টানছেন। প্রথমে রংপুর কাচারি এলাকায়, পরে গত পনেরো বছর ধরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কারমাইকেল কলেজ এলাকায় বাদাম, ছোলা, বুট বিক্রি করে সংসার চালান। 

মহুবার আলী জানালেন, চার কন্যা সন্তানের বাবা তিনি। মেয়েদের সবার বিয়ে দিয়েছেন। সারা দিনে যে আয় হয় এর মধ্যে প্রতিদিন তাঁর এবং স্ত্রীর জন্য ৫০ থেকে ৬০ টাকার ওষুধ কিনতে হয়। একদিকে বয়সের ভার অন্য দিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি। তাই ক্ষুদ্র আয়ের সংসারে কোনো দিন খেয়ে আবার কোনো দিন না খেয়ে কেটে যায় তাদের। আজ সকালে আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়ে বেরিয়ে পড়েছেন বাদামের ঝুড়ি নিয়ে। গত দুদিনেও তাই ঘটেছে, তবে সঙ্গে গতকাল খাবারে শাকও ছিল। 

মহুবার আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আগে যা বেচাবিক্রি হইতো সেটা দিয়া কোনো চইলতো। এখন জিনিসপাতির যে দাম, বাজারত যায়া মাথাত হাত দেওয়া লাগে। এখন যে ট্যাকা লাভ হয়, তাতে খুব হিস্যাব করি খাবার খাওয়া লাগে।’ 

তিনি বলেন, ‘শুক্রবারে শ্যাষ দিকে বাজার করি, কম দামে শাক-সবজি কেনা যায়। শাক-ভর্তাই সম্বল।’ 

বয়সের কারণে আর চলাফেরা স্বাভাবিক নেই মহুবার আলীর। অল্পেই হাঁপিয়ে যান। তিনি জানালেন, বয়স বাড়লেও দরিদ্রদের জন্য সরকারি কোনো সুবিধা বা ভাতা তিনি পান না। তবে ভিক্ষাবৃত্তি করবেন না বলেই, কষ্ট করে এই কাজ করেন তিনি। 

মহুবার আলী বলেন, ‘বয়স বাড়ছে, ঠিকঠাক মতো আর চলাফেরাও করবার পারি না। প্রতিদিনও ক্যাম্পাসে আসা হয় না। একটা যদি বয়স্ক ভাতার কার্ড হইল হয়, তাহাইলে মাঝে মাঝে শরীলটাক একটি ছুটি দিবার পারতাম। মানুষের কাছে হাত পাততে পারি না, লজ্জা করে। সে জন্য কষ্ট হলেও নিজে কামাই করে খাই।’ 

এ সময় কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তারা জানান, ক্যাম্পাসে তারা মহুবার আলীকে প্রায়ই দেখেন বাদাম বিক্রি করতে। বাদাম কেনার জন্য এক রকম বায়না ধরেন। বৃদ্ধ বয়সেও এমন পরিশ্রম করতে দেখলে খারাপ লাগে তাদেরও।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত