Ajker Patrika

‘মেশিনোত নোগুল ঘষাঘষি করিয়াও টিভিত ছবি আসিল না, ভোট দিবার পাও নাই’

শিপুল ইসলাম, রংপুর থেকে
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, ১৫: ১৬
‘মেশিনোত নোগুল ঘষাঘষি করিয়াও টিভিত ছবি আসিল না, ভোট দিবার পাও নাই’

‘দেড় ঘণ্টা নাইনোত দাঁড়ে ভেতরোত গেনু। মেশিনোত অনেকক্ষণ হাত ঘষনু, আরেকটা মেশিনোত টিপ দিয়া বেরানু। হাত ঘষনু, টিপ দিনু, বুঝনু না, মোর ভোট হইল কিনা।’ কাইদাওহারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে এভাবেই ইভিএমে প্রথম ভোট দিয়ে অভিজ্ঞতার কথা বললেন ষাটোর্ধ্ব মনিবালা। 

উত্তম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর বুথে প্রবেশ করে আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট দিতে পারেননি উত্তম বণিকপাড়ার আমজাদ হোসেন (৭০)। বাইরে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বহুক্ষণ থাকি লাইনোত আছনু। ঠেলাঠেলিতে দম বন্ধ হয়া যাবার নাগছিল। কষ্ট করি ভেতরোত গেনু। মেশিনোত নোগুল ঘষাঘষি করিয়াও টিভিত ছবি আসিল না, ভোট দিবার পাও নাই। মোক বিকেলে যাবার কইছে। কন তো, ফির কষ্ট করি কাঁই লাইনোত দাঁড়াইবে। হামার সিল মারাই ভালো আছলো।’ 

শুধু মনিবালা ও আমজাদ হোসেনই নয়, তাঁদের মতো অনেক ভোটার ইভিএমে ভোট দিতে এসে ভোগান্তি ও ভোট দিতে না পেরে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। 

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট গ্রহণ চলছে আজ। সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অন্তত ১৫টি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, দীর্ঘ সারিতে মানুষের জটলা। সারিতে থাকা ভোটার ও ভোট প্রদান করা অন্তত ২০ জনের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, ইভিএম সম্পর্কে অনেকের স্পষ্ট ধারণা না থাকা, হাতের আঙুলের ছাপ না মেলা এবং ভোট প্রদানে সময় লাগায় দীর্ঘক্ষণ সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। 

ভোটারদের এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উত্তম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং অফিসার সৌরভ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুপুর হতেই ভোটার অনেক বেড়েছে। অনেক ভোটার ইভিএমে ভোট দিতে জানেন না। তাঁদের শেখাতে শেখাতে সময় লেগে যাচ্ছে। অনেক ভোটারকে বুঝিয়ে দিলেও বুঝছেন না।’ 

এদিকে ভোটকে ঘিরে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে জন্য রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিটি সাধারণ ভোটকেন্দ্রে একজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ দুজন কনস্টেবল, দুজন অস্ত্রধারী আনসার, ১০ জন আনসার-ভিডিপির সদস্যসহ মোট ১৫ জনকে মোতায়েন করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ৮৬টি ভোটকেন্দ্রে একজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৩ জন কনস্টেবল,২ জন অস্ত্রধারী আনসার ও ১০ জন আনসার-ভিডিপির সদস্যসহ মোট ১৬ জনকে মোতায়েন করা হয়েছে। নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে ১১ প্লাটুন বিজিবি, ১৭টি র‍্যাবের টিম, পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে মোবাইল ফোর্স, ১১টি স্ট্রাইকিং ফোর্স ও ৬টি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স কাজ করছে। এ ছাড়া নির্বাচনে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডের জন্য ৩৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১৬ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। এর পাশাপাশি ২২৯টি কেন্দ্রের সবগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার সঙ্গে সঙ্গে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করা হচ্ছে। 

দুপুর ১টায় উত্তম বারোঘড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে কথা হয় ৩ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তম মাস্টার এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ লুৎফা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আগোত বাইরোত শিখছি। ভেতরোত ঢুকি ভুলি গেছনু। কম্পিউটারের লোক ফির ফটো দেখে বুঝি দিল। মেশিনোত সাদা সবুজ বাটন চাপি ভোট দিনু। অ্যানা সময় বেশি নাগছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

রাখাইনে মানবিক করিডর কি প্রক্সি যুদ্ধের ফাঁদ হবে, ভারত-চীন কীভাবে দেখবে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত