Ajker Patrika

গঙ্গাচড়ায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ, ব্যবসায়ী-সাংবাদিক ও ওসিসহ আহত অর্ধশতাধিক

গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি
গঙ্গাচড়ায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ, ব্যবসায়ী-সাংবাদিক ও ওসিসহ আহত অর্ধশতাধিক

গঙ্গাচড়া উপজেলায় বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ বাধা দেওয়ায় পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল হোসেনও রয়েছেন।

গুম, খুন, জ্বালানি তেল ও পরিবহন ভাড়াসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় গঙ্গাচড়া পুরাতন সোনালী ব্যাংকের মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিএনপি।

বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আসা বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে এগোতে থাকলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এতে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে বিএনপি নেতাকর্মী, পথচারী, ব্যবসায়ী, গণমাধ্যমকর্মীসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়। গঙ্গাচড়া মডেল থানার ওসি দুলাল হোসেনও আহত হয়েছেন।

এর কিছুক্ষণ পর বিএনপি নেতাকর্মীরা গঙ্গাচড়া দলীয় কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বিএনপি নেতাকর্মীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এ সময় পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এতে গঙ্গাচড়া উপজেলা মানবজমিন পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুল বারি স্বপন রাবার বুলেটে আহত হন। আর বিএনপি নেতাকর্মীদের ইট পাটকেলের আঘাতে আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন সাংবাদিক।

সংঘর্ষে বিএনপির নেতাকর্মী, পুলিশ, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীসহ অর্ধশতাধিক আহত। পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। এতে গঙ্গাচড়া বাজারের ফুটপাতের ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী ও পথচারীসহ ৫০ জন আহত হন। এ সময় বিএনপি নেতা কর্মী সন্দেহে ছয়জনকে আটক করে পুলিশ।

এরপর বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গঙ্গাচড়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রতিবাদ মিছিল বের করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

মানবজমিন পত্রিকার সাংবাদিক আব্দুল বারী স্বপন বলেন, ‘আমি বিএনপি নেতাকর্মীদের ইটপাটকেল নিক্ষেপের ছবি তুলছিলাম। এমন সময় পুলিশের গুলির শব্দ, এমন স্পিডে আমার কপালে এসে পুলিশের রাবার বুলেট লেগেছে যে আমি তাৎক্ষণিক মাটিতে পড়ে যাই। পরে কয়েকজন আমাকে নিয়ে এসে গঙ্গাচড়া হাসপাতালে ভর্তি করেন।’ 

গঙ্গাচড়া বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী মাসুম বলেন, ‘আমাদের কী দোষ। পুলিশ আমাদের দোকানে এসে অযথা মারপিট করেছে। আমরা গরিব মানুষ। আমরা ব্যবসা করে খাই। দলের লোকদের সঙ্গে পুলিশের ঝামেলা, পুলিশ বুঝবে আর দলের লোকজন বুঝবে, আমার দোকানে এসে আমার দোকান ভাঙচুর করে পুলিশ সদস্যরা এবং আমাকে বেদম মারপিট করে। পুলিশের মাইরে আমার পিঠ পুরো ফেটে গেছে।’

গঙ্গাচড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক রুকাইয়া আক্তার বলেন, ‘হঠাৎ করে এত রোগী জরুরি বিভাগে এসেছে যে আমরা চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছি।’ 

সংঘর্ষস্থল থেকে সন্দেহজনকভাবে ছয়জনকে আটক করে পুলিশ। রংপুর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মোকাররম হোসেন সুজন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরাতো পুলিশদের কিছু বলিনি। আমরা চেয়েছিলাম শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল ও সমাবেশ করতে। অযথা পুলিশ সদস্যরা আমাদের মিছিলে এসে বাধা দেয় এবং তারাই আগে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালায়। এতে আমার গঙ্গাচড়া উপজেলা বিএনপি অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়।’

তবে বিএনপিই অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে অভিযোগ করে গঙ্গাচড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বুলবুল আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বিএনপির নেতাকর্মীরা গঙ্গাচড়ার শান্তিপ্রিয় মানুষকে অশান্ত করে তুলেছে। তাদের দীর্ঘদিনের যে চরিত্র—সন্ত্রাসবাদী, সেই চরিত্রের তারা আজকে বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। মসজিদের ভেতরে পুলিশেরা আশ্রয় নিয়েছিল, সেখানে গিয়েও তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে সেই সন্ত্রাসবাদী দলের নেতারা। তারা শান্তিপ্রিয় মিছিল করতে চেয়েছিল, তাই আজ আওয়ামী লীগ কোনো প্রোগ্রাম রাখেনি। আওয়ামী লীগ কোনো প্রশাসনকে বলেনি তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিন। আজকে তারা শান্তিপূর্ণ মিছিলের নামে পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। পুলিশ উপজেলা মসজিদে আশ্রয় নিলে সেখানে তারা পুলিশের ওপর সাধারণ মানুষসহ সাংবাদিক ভাইদের ওপর হামলা চালায়।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) হোসাইন মুহাম্মদ রায়হান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যে দলই আসুক না কেন, রুটের মধ্যে মিছিল করতে গেলে প্রশাসনের কাছ থেকে পারমিশন নিতে হয়। তারাও আজকে মিছিল ও সমাবেশ করার জন্য কয়েক দিন আগে রুট পারমিশন নিয়েছিল। কিন্তু তারা যে রুটের জন্য পারমিশন নিয়েছে সে রুট ব্যবহার না করে অন্য রুটে জোরপূর্বক মিছিল করতে চায়। সে সময়ে আমাদের পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করে। এ সময় পেছন থেকে কিছু নেতাকর্মী উসকানিমূলক ভাবে গুজব ছড়ায়। তারা বলে, পুলিশ আমাদের নেতাদের গ্রেপ্তার করেছে। এ নিয়ে তারা তাৎক্ষণিকভাবেই পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ নিজেকে হেফাজত করার জন্য মসজিদের ভেতরে ঢুকল। তারা কিন্তু আমাদের পুলিশ সদস্যদের মসজিদের ভেতরে মারধর করে। এতে আমাদের প্রায় ২০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। গঙ্গাচড়া থানার ওসি তাঁর পায়ে ইট পাটকেলের আঘাত লাগার কারণে তিনি এখন পর্যন্ত উঠে দাঁড়াতে পারছেন না।’

সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমরা সন্দেহভাজন ছয়জনকে আটক করেছি। তদন্ত সাপেক্ষে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘বিচারপতি খায়রুলকে হাতকড়া পরানো মানে পুরো বিচার বিভাগকে হাতকড়া পরানো’

মোবাইলে সর্বত্র ইন্টারনেট সংযোগ দেবে স্টারলিংকের ডাইরেক্ট-টু-সেল

কোথাও ঘুরতে ইচ্ছা করলে আমাকে জানাবে—ছাত্রীকে খুবি অধ্যাপক

আগামী সপ্তাহের মধ্যে ৫ ইসলামী ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু: গভর্নর

মৌচাকে হাসপাতালের পার্কিংয়ে প্রাইভেট কার থেকে উদ্ধার দুই মরদেহের পরিচয় মিলেছে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত