Ajker Patrika

টর্চার সেলে নির্যাতন, ময়মনসিংহে ছাত্রদল নেতাসহ গ্রেপ্তার ৩

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২৫, ১২: ৫৩
গ্রেপ্তার ছাত্রদল নেতা হিজবুল আলম জিয়েস ও তাঁর দুই সহযোগী। ছবি: সংগৃহীত
গ্রেপ্তার ছাত্রদল নেতা হিজবুল আলম জিয়েস ও তাঁর দুই সহযোগী। ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের তারাকান্দায় ছাত্রদলের নেতা হিজবুল আলম জিয়েসের একটি টর্চার সেলের সন্ধান মিলেছে। সেখানে সাধারণ মানুষকে ধরে এনে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক মামুন সরকার হামলার শিকার হন এবং থানায় মামলা করেন। পুলিশ জিয়েস ও তাঁর দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের পর থেকে চাঁদাবাজিসহ নানা কর্মকাণ্ডে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তারাকান্দা উপজেলার বানিহালা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হিজবুল আলম জিয়েস (২৬)। তিনি মাঝিয়ালি গ্রামের মঞ্জুরুল ইসলামের ছেলে। গত শনিবার বিকেলে মাঝিয়ালি বাজারের সেলুনে চুল কেটে মজুরি না দিয়ে উল্টো সেলুনের মালিক হক মিয়ার কাছে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন জিয়েস। টাকা না দেওয়ায় সেলুন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে মারধর করেন এবং তালা লাগিয়ে দেন। এ সময় হক মিয়ার বড় ভাই লাক মিয়াকেও তাঁর দোকানে গিয়ে মারধর করা হয়।

মামলার এজাহার অনুযায়ী, ৯ আগস্ট মামুন সরকারের আশ্বাসে সেলুন খোলেন হক মিয়া। সেদিন সন্ধ্যায় আবারও হামলা চালিয়ে তাঁকে মারধর করেন জিয়েস। বিষয়টি মামুনকে জানালে ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনিও রক্তাক্ত হন। পরে ১১ আগস্ট দুপুরে মামুন সরকার থানায় মামলা করেন।

মামুন সরকারের অভিযোগ, ৫ আগস্টের পর থেকে জিয়েস চাঁদাবাজি, টর্চার সেলে নির্যাতন, মাদক সেবনসহ নানা অপরাধে জড়িত। ‘চুল কেটে নাপিতকে টাকা না দিয়ে উল্টো চাঁদা দাবি’—এ ধরনের কাজ ছাত্রদলের আদর্শবিরোধী। প্রতিবাদ করায় তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর আহত করা হয়েছে।

ব্যবসায়ী হক মিয়া বলেন, চুল কাটার পর ৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন জিয়েস। টাকা না দিলে তাঁকে মারধর করে দোকান বন্ধ করে দেন। পরে দোকান খোলার পর আবারও হামলা চালিয়ে মামুন সরকারকেও আঘাত করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জিয়েস নিজের পুকুরপাড়ে একটি টিনশেড ঘরে টর্চার সেল গড়ে তুলেছিলেন। সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক যুবককে তাঁর সহযোগী রাফি ও আবদুল্লাহ মারধর করছেন এবং ভিডিও কলে জিয়েসকে রেখে গলায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ৪০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করছেন। পরে টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিলে ওই যুবককে ছেড়ে দেওয়া হয়।

জিয়েসের নির্যাতনের শিকার জুয়েল ও রাসেল বলেন, প্রভাব খাঁটিয়ে টাকা পাওনা দাবি করে তাঁদের কাছ থেকে ভিডিও স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। প্রাণনাশের ভয়ে তাঁরা স্বীকারোক্তি দেন। সমালোচনার মধ্যে ১০ আগস্ট রাতে রাফি ও আবদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলার পর ১১ আগস্ট রাত ৯টার দিকে গ্রেপ্তার হন জিয়েস। বানিহালা ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্য আবু তাহের বলেন, জিয়েস প্রায়ই নেশার মধ্যে থাকত এবং বিভিন্ন সময় তাঁকেও হুমকি দিয়েছে। তাঁর টর্চার সেল রয়েছে, যা বন্ধ করে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া উচিত।

তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ টিপু সুলতান বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা নেওয়া হয়েছে। ঘটনায় সম্পৃক্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। সোমবার রাতে গ্রেপ্তার হওয়া জিয়েসকে মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে হাজির করা হবে। আরও কেউ জড়িত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে বানিহালা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন জিয়েস। গ্রেপ্তারের পর সোমবার রাতে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন তালুকদার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তাঁকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত