Ajker Patrika

পীরগঞ্জে ভোটকেন্দ্রে বিজিবির গুলিতে নিহত ৩, ৭০০ আসামি করে মামলা

ঠাকুরগাঁও ও পীরগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২১, ২০: ৩২
পীরগঞ্জে ভোটকেন্দ্রে বিজিবির গুলিতে নিহত ৩, ৭০০ আসামি করে মামলা

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাঁও ইউনিয়নের ঘিডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট গণনার পরে কারচুপির অভিযোগে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে ৩ জন নিহত ও পৃথক ঘটনায় কমপক্ষে ৯ জন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। 

গতকাল রোববার রাতে পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাঁও ইউনিয়নের ঘিডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। 

গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ব্যক্তিরা হলেন ঘিডোব গ্রামের সাহাবলি হোসেন (৩৫), মোজাহারুল ইসলাম (৪০) ও অবিনাশ চন্দ্রের ছেলে আদিত্য রায় (২০)। ঘটনাস্থলেই দুজন এবং রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে একজনের মৃত্যু হয়। 

চলমান ইউপি নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী ও পীরগঞ্জ উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ শেষ হলেও গণনা নিয়ে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠে। 

ঘিডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সরকারি বণিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. জামাল উদ্দিন জানান, ভোট গ্রহণ ও গণনা শেষে কিছু মানুষ ভোটে কারচুপির অভিযোগ তোলেন। বিষয়টি মুহূর্তের মধ্যে চাউর হয়ে গেলে এলাকার বিক্ষুব্ধ লোকজন ভোটকেন্দ্র ঘেরাও করে স্লোগান দিতে থাকেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের জানানো হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ স্ট্রাইকিং ফোর্সের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। 

এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় ভোটের মালামাল নিয়ে প্রিসাইডিং অফিসার ও অন্যরা কেন্দ্র থেকে উপজেলা শহরে চলে যান।

স্থানীয়রা জানান, পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাঁও ইউনিয়নরে ঘিডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে রাত ৮টার দিকে চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুজ্জামানের সর্মথকেরা প্রিসাইডিং অফিসারসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওপর হামলা, ভাঙচুর শুরু করেন। খবর পেয়ে পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তাঁদের লক্ষ্য করে উত্তেজিত জনতা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা প্রশাসনের গাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং প্রশাসনের গাড়ি থামানোর চেষ্টা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি চালায়। গুলিতে ঘটনাস্থলে মারা যান হাবিবপুর গ্রামের সাহাবলি ওরফে হুসনে (৩৫) ও মাজাহারুল ইসলাম (৪০)। আজ সোমবার সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ কলেজছাত্র আদিত্যর (১৮) মৃত্যু হয়। 

আহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার ঘিডোব গ্রামের অবিলাশের ছেলে অমিত রায়, জহুরুলের ছেলে সবুজ আলী, তমিউদ্দীনের ছেলে সুজা আহম্মেদ, আব্দুল বাকির স্ত্রী রহিমা বেগম ও খনগাঁও গ্রামের তৈয়বুর রহমানের ছেলে রাব্বানী। তাঁরা ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম চয়ন বলেন, গুলিবিদ্ধ চারজনের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 

গ্রামপুলিশ সদস্য সগেন্দ্রনাথ জানান, উপজেলার বৈরচুনা ইউনিয়নের ইন্দ্রোইল (শিববাড়ি) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে রাত ৯টার দিকে মোরগ মার্কার সদস্য প্রার্থীর সমর্থকেরা প্রিসাইডিং অফিসারসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রায় দেড় ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে এলে তাঁদের ওপরও আক্রমণ করে। উত্তেজিত জনতার ছোড়া ইটপাটকেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচনে দায়িত্বরত কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান। 

এ ব্যাপারে কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা হরিপুর থানার এসআই আবু হানিফ মণ্ডল বাদী হয়ে এলাকার ৭০০ জনের বিরুদ্ধে আজ সোমবার পীরগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন। তবে মামলায় কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। 

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, স্ট্রাইকিং ফোর্সের মাইক্রোবাস ভাঙচুর করে উত্তেজিত জনতা। পরিস্থিতি ক্রমে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। নিজেদের জানমাল ও সরকারি সম্পদ রক্ষার স্বার্থে কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে নায়েক সুবেদার আজাহার আলীসহ ১৪ জন বিজিবি সদস্য ৪৭টি গুলি করেন। বিজিবির গুলিতে এলাকার শাহাবুদ্দিন ওরফে সাহাবুলি (৩২), মো. মুজা (৩৮) ও পরাগ আলী (২২) ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। এ ছাড়া আরও ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ নিয়ে এলাকায় এখনো জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। 

পীরগঞ্জ থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম জানান, বিজিবি কর্তৃপক্ষ জানমাল ও সরকারি সম্পদ রক্ষার্থে গুলি করেছে। অপরাধীদের শনাক্ত করার জন্য নিরপেক্ষ তদন্ত চলছে। নির্বাচনী সহিংস ঘটনায় পৃথক পৃথক মামলার প্রস্তুতি চলছে। গুলিতে নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এদিকে পুলিশি হয়রানির ভয়ে পুরুষেরা গ্রামছাড়া বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 

গুলিতে তিনজন নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার (এসপি) জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সদস্যরা কোনোভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিলেন না। তাঁদের ওপরে হামলা করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাধ্য হয়ে বিজিবি গুলি ছুড়েছে। এতে ঘটনাস্থলে একজন নিহত হয়েছেন। 

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রেজাউল করিম জানান, ‘পীরগঞ্জ একটি শান্ত এবং শান্তিপ্রিয় এলাকা এবং এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’

উল্লেখ্য, খনগাঁও ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী সহিদ হোসেন ৬ হাজার ৫৮২ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা নুরুজ্জামান হক চশমা মার্কায় পেয়েছেন ৩ হাজার ৪৫ ভোট। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মুন্সিগঞ্জে তরুণকে গুলি করে হত্যা, বিএনপির দুই গ্রুপে উত্তেজনা

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ৩৫
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

মুন্সিগঞ্জের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের বেহেরকান্দি গ্রামে প্রতিপক্ষের গুলিতে তুহিন দেওয়ান (২২) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। রোববার রাত ১০টার দিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত তুহিন দেওয়ান মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের দক্ষিণ বেহেরকান্দি এলাকার ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি সেলিম দেওয়ানের ছেলে।মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির বিবদমান দুই গ্রুপের পূর্ববিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে।

এ ঘটনার পর থেকে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের বেহেরকান্দি ও মুন্সিকান্দি গ্রামের বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। এতে স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহত তুহিন মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ওয়াহিদ মোল্লা ও বিএনপি নেতা আতিক মল্লিকের অনুসারী।

নিহতের চাচাতো ভাই আকাশ দেওয়ান জানান, রোববার রাতে তুহিন হাঁটার জন্য বাসা থেকে বের হয়। এ সময় মুন্সিকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির নেতা ওজির আলী ও আওলাদ গ্রুপের অনুসারী লিটন ব্যাপারীর নেতৃত্বে পেছন থেকে তুহিনকে লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ও গুলি করে। এ সময় তুহিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। স্থানীয় রাজনৈতিক আধিপত্য নিয়ে তাদের মধ্যে পূর্বের বিরোধ ছিল বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক প্রান্ত সর্দার জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর পিঠে ও ঘাড়ে একাধিক গুলির চিহ্ন রয়েছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির জানান, কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তদন্ত করলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাজশাহীতে মৌসুমের প্রথম কুয়াশা: তাপমাত্রা কমে ২০-এর নিচে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
শিশিরভেজা ঘাসে খেলায় মত্ত শিশুরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিশিরভেজা ঘাসে খেলায় মত্ত শিশুরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীতে নেমে এসেছে এ বছরের প্রথম কুয়াশা। সোমবার (৩ নভেম্বর) ভোর থেকেই রাজশাহী শহর ও আশপাশের উপজেলার গ্রামগুলোর চারপাশ মোড়ানো ছিল ঘন কুয়াশার চাদরে। এই কুয়াশাময় সকাল যেন জানিয়ে দিয়েছে, আসছে শীত, আসছে স্নিগ্ধতার মৌসুম।

শীতের এমন আগমনী ছোঁয়ায় বদলে গেছে প্রকৃতির রূপ। কুয়াশাঢাকা সকাল জানিয়ে দিচ্ছে, শীত আর বেশি দূরে নয়। এদিন ভোরের আলো ফুটলেও মহাসড়কে যানবাহনগুলোকে চলতে দেখা যায় হেডলাইট জ্বালিয়ে। কুয়াশা ভেদ করে গন্তব্যের পথে ছুটে যায় মানুষ।

এদিকে গ্রামের মাঠে শিশিরভেজা ঘাসে খেলায় মত্ত শিশুরা যেন প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে ওঠে। মাকড়সার জালে ঝুলে থাকা শিশিরবিন্দু আর ধূসর আকাশে সূর্যের মিটিমিটি আলো মিলেমিশে সৃষ্টি করে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।

মাকড়সার জালে ঝুলে থাকা শিশিরবিন্দু আর ধূসর আকাশে সূর্যের মিটিমিটি আলো। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাকড়সার জালে ঝুলে থাকা শিশিরবিন্দু আর ধূসর আকাশে সূর্যের মিটিমিটি আলো। ছবি: আজকের পত্রিকা

শহরের রেলগেট এলাকায় কাজের সন্ধানে আসা শ্রমিক আবদুল জব্বার বলেন, ‘আজকের সকালেই এবার প্রথমবার শীত টের পেলাম। এখন থেকে হয়তো শীত বাড়বে।’

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানান, সোমবার ভোরে রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন রোববার ভোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ২৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এখন থেকে তাপমাত্রা কমবে বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২ বছরেই ফাটল বিদ্যালয়ের ২ কোটি টাকার ভবনে, নিম্নমানের কাজের অভিযোগ

চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) সংবাদদাতা
চিরিরবন্দরের বানিয়াখাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন বিল্ডিংয়ের বারান্দা, মেঝে ও দেয়ালে ফাটল। ছবি: আজকের পত্রিকা
চিরিরবন্দরের বানিয়াখাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন বিল্ডিংয়ের বারান্দা, মেঝে ও দেয়ালে ফাটল। ছবি: আজকের পত্রিকা

দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের বানিয়াখাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনে ক্লাস চালুর দুই বছর পার হতে না হতেই ফাটল দেখা দিয়েছে। প্রায় দুই কোটি দুই লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ভবনের বারান্দা, সিঁড়ি, মেঝে ও দেয়ালে ফাটল ধরায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন অভিভাবকেরা।

চিরিরবন্দর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানায়, উপজেলার ভিয়াইল ইউনিয়নের বানিয়াখাড়ী সরকারি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণে ২০২১-২২ অর্থবছরে দুই কোটি দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়।

নিম্নমানের কাজের অভিযোগ এনে স্থানীয় অভিভাবক মোস্তাফিজুর রহমান এবং বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় দুই বছরের মধ্যেই বিল্ডিংয়ের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। নির্মাণকাজের সময় আমরা মৌখিকভাবে ইঞ্জিনিয়ারকে অভিযোগ করেছিলাম, কিন্তু তিনি আমাদের কথায় কোনো গুরুত্ব দেননি।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুফিয়া খাতুন বলেন, ‘নতুন ভবনে ক্লাস চালুর দুই বছর ঘুরতে না ঘুরতেই নিচতলার সিঁড়ির বারান্দায় বড় ফাটল ধরেছে। এ ছাড়া শ্রেণিকক্ষের মেঝে ও পিলারের সঙ্গে দেয়ালেও ফাটল দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানোর পর তিনি এসে ছবি তুলে নিয়ে গেছেন।’

চিরিরবন্দরের বানিয়াখাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন বিল্ডিংয়ের বারান্দা, মেঝে ও দেয়ালে ফাটল। ছবি: আজকের পত্রিকা
চিরিরবন্দরের বানিয়াখাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন বিল্ডিংয়ের বারান্দা, মেঝে ও দেয়ালে ফাটল। ছবি: আজকের পত্রিকা

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মিনারা খাতুন বলেন, ‘নতুন বিল্ডিংয়ের দুই বছর এখনো হয়নি, তাতেই মেঝেসহ অনেক জায়গায় ফাটল ধরেছে। আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং তারা দ্রুত মেরামত করার জন্য আশ্বাস দিয়েছে।’

এ বিষয়ে ঠিকাদার আবেদ আলী মাস্টার বলেন, ‘বিল্ডিং হস্তান্তর করার প্রায় দুই বছর হয়েছে। মেঝেতে শুধু পলেস্তারায় “চিড়” ধরেছে, তেমন কোনো সমস্যা নেই। আমি আমার ম্যানেজারকে পাঠিয়ে দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করব।’

এলজিইডির চিরিরবন্দর উপজেলা প্রকৌশলী মাসুদার রহমান একই সুরে বলেন, ‘বিল্ডিংয়ের মেঝে ও সিঁড়ির কিছু অংশে কেবল পলেস্তারার ওপরে ফাটল বা চিড় ধরেছে। আমি ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত মেরামতের জন্য বলব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নেত্রকোনার সীমান্ত গ্রাম ভবানীপুর: পাকা রাস্তা-সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগ

দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি 
ঝুঁকিপূর্ণ কাঠ-বাঁশের সাঁকোই ভবানীপুরের বাসিন্দাদের ভরসা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঝুঁকিপূর্ণ কাঠ-বাঁশের সাঁকোই ভবানীপুরের বাসিন্দাদের ভরসা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় ভারত সীমান্তঘেঁষা গ্রাম ভবানীপুর। স্বাধীনতার অর্ধশতক পেরিয়ে আজও এই জনপদ পিছিয়ে আছে অন্ধকারে। এখানকার কয়েক হাজার মানুষের জীবন যেন দুর্গম যাতায়াতে আটকা—নেই কোনো পাকা সড়ক, নেই স্থায়ী সেতু। ভাঙা মাটির রাস্তা আর ঝুঁকিপূর্ণ কাঠ-বাঁশের সাঁকোই তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। দুই চাকার বাইসাইকেল বা মোটরসাইকেল ছাড়া এই গ্রামে অন্য কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে পারে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী আনা থেকে শুরু করে গর্ভবতী নারী বা রোগীকে জরুরি মুহূর্তে হাসপাতালে নিতেও চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়।

গ্রামের একমাত্র সেতুটি ২০১৪ সালের দিকে ভেঙে যাওয়ার পর কাঠ-বাঁশের সেতুই এখন একমাত্র ভরসা। উন্নয়ন যেন এখানকার মানুষের কাছে সোনার হরিণ। কবে মিলবে স্থায়ী সেতু ও পাকা রাস্তা জানেন না কেউই।

স্থানীয় বাসিন্দা সজীব মিয়া বলেন, ‘যুগের পর যুগ কেটে গেলেও আমরা উন্নয়নবঞ্চিত। স্বাধীনতার পর থেকে এ গ্রামে কোনো দিন পাকা রাস্তা বা স্থায়ী সেতু হয়নি। গ্রামের দুটি সেতুর মধ্যে একটি কাঠ-বাঁশের আর অন্যটি পাকা হলেও সেটিও সড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে। নিজেদের স্বেচ্ছাশ্রমেই পথ মেরামত করে যাতায়াত করছি।’

দুই চাকার বাইসাইকেল বা মোটরসাইকেল ছাড়া এই গ্রামে অন্য কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে পারে না। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুই চাকার বাইসাইকেল বা মোটরসাইকেল ছাড়া এই গ্রামে অন্য কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে পারে না। ছবি: আজকের পত্রিকা

আরেক বাসিন্দা সামছু মিয়া জানান, গর্ভবতী নারী বা রোগীকে জরুরি মুহূর্তে হাসপাতালে নিতে নদীপথই ভরসা। কৃষিজাত পণ্যও বাজারে নেওয়া কষ্টসাধ্য।

স্কুলশিক্ষার্থী মুর্শিদা আক্তার বলে, ‘প্রতিদিন কাঁচা রাস্তায় কয়েক কিলোমিটার হাঁটতে হয় স্কুলে যেতে। বর্ষায় কাদা-জলে ভিজে স্কুলে পৌঁছানোই দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। ফলে পড়ালেখায় মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়। আমাদের দাবি পাকা রাস্তা ও সেতু নির্মাণ করা হোক।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা আফসানা বলেন, ‘গ্রামটি দেখেছি। মানুষ সত্যিই কষ্টে আছে। ভবানীপুরের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হবে। শিগগিরই যাতে গ্রামের মানুষ যাতায়াত সুবিধা ভোগ করতে পারে, সে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত