রংপুর প্রতিনিধি
রংপুরের তারাগঞ্জে দুজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। হত্যার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ, নিহত রুপলাল দাস ও প্রদীপ লালের পরিবারের সদস্যরা অপরাধীদের শনাক্ত করেছেন।
বটতলা এলাকায় আটকের সময় ছড়িয়ে পড়া ১ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, আটকের পর রুপলাল ও প্রদীপ লালকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রদীপ সিটের কাছে ও রুপলাল ভ্যানের পেছনে বসা ছিলেন। একপর্যায়ে এক যুবক ‘পিটাও রুবেল ভাই পিটাও’ বলে চিৎকার করেন। এরপর সিটের কাছে বসে থাকা প্রদীপ লালের পেছন থেকে সাদা শার্ট পরা বালাপুর গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে খায়রুল ইসলাম প্রদীপের কলার টেনে ধরে ঘুষি মারেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য খায়রুল ইসলামের বাড়িতে গেলে দরজায় তালা ঝুলতে দেখা যায়। তাঁর স্ত্রী আরজু বেগম বাড়ির পাশে গাছতলায় বসা। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেই দিন আমার স্বামী দীঘলটারীর কৃষিকাজ করছে। বাড়ি আসার সময় গোলযোগ শুনি গেছল। সে সামনে দাঁড়াই ছিল লোকগুলাক বাঁচপার জন্যে। তাতে ভিডিওর ছবি উঠছে।’
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ভ্যানের ওপর উঠে, সেখান থেকে নেমে প্রদীপ লালের সামনে আসেন শেফালি কালার গেঞ্জি পরা বুড়িরহাট পাইকারপাড়া গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে রুবেল পাইকার। সে প্রদীপ লালকে আঘাত করতে থাকেন।
কথা বলার জন্য রুবেল পাইকারের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, বাড়ির সামনে বসে আছে একদল লোক। এই প্রতিবেদককে দেখে সটকে পড়েন সবাই। অনেক অনুনয়-বিনয়ের পর রুবেলের মা আনোয়ারা বেগম পাশের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে বলেন, ‘একজন লোক ফোন দিয়া আমার ছেলেক ডাকে নিছে। ওয় তো লোক দুইটাক বাঁচপার জন্য ভ্যানোত উঠি চল্লাচিল্লি করছে। তাক তো ভিডিওতে দেখা যাওছে।’
রুবেল পাইকারের মারধর শেষ না হতেই দৌড়ে গিয়ে প্রদীপের মাথা ও কানে ঘুষি মারতে থাকেন সাদা প্রিন্টের শার্ট পরা ওই গ্রামের আশরাফুল ইসলামের ছেলে সোহাগ হোসেন।
কথা বলার জন্য অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও সোহাগ হোসেনকেও বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তাঁর বাবা আশরাফুলও বাড়িতে ছিলেন না। তবে সোহাগের মা লাভলী বেগম বলেন, ‘গ্রামের সবাই ভয়ে পালাইছে। রংপুর থাকি মোর ছেলে বাড়ি আসার পথে ওই লোক দুইটাক মাইরডাং করা দেখছে। ওই সময় ছবি, ভিডিও উঠছে, কিন্তু সে তো কাকও মারে নাই।’
ওই ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ভ্যানের ওপর পড়ে যাওয়া রুপলালকে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন সবুজ রঙের গেঞ্জি পরা বালাপুর গ্রামের ছলি মামুদের ছেলে নজরুল ইসলামকে।
নজরুলের স্ত্রীর ওজিদা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী মারে নাই। আমার স্বামী দেখপার গেইছে, তাতে ভিডিওত উঠছে। সবাই ভয়ে পালাইছে। ওই জন্যে ওয়ও বাড়িত নাই।’
রুপলালের ছেলে জয়দাস অভিযোগ করে বলেন, ‘ভিডিও দেখে প্রতিবেশীদের কাছে খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি, বুড়িরহাট এলাকার মিজানুর রহমান, এবাদত হোসেন, আশরাফুল ইসলাম, মেহেদী হাসান, মোহাম্মদ আলী, সোহাগ হোসেন, রুবেল পাইকার, নজরুল ইসলাম, খাইরুল ইসলাম, শরীফুল ইসলাম, আলামিন হোসেন, রফিকুল ইসলাম, আখতারুল ইসলামসহ ২৫-৩০ জন লোক আমার বাবাকে ৯ আগস্ট রাত ৯টায় এলোপাতাড়ি মারধর করেছে। শত শত লোক তা চেয়ে দেখেছে, ভিডিও করেছে, কেউ রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি।’
তবে শনাক্ত হওয়া ওই ব্যক্তিদের স্বজনেরা দাবি করেছেন, কেউ ঘটনা দেখতে, কেউ বাঁচাতে, কেউ ভিডিও করতে গিয়েছিল। রুপলাল ও প্রদীপকে তাঁরা মারেনি।
মিজানুর রহমানের মা মরিয়ম বেগম ও এবাদত হোসেনের স্ত্রী রেশমা বেগম বলেন, ‘মিজানুর ও এবাদত নির্দোষ। চোর ধরা পড়েছে শুনে তাঁরা দেখতে গিয়েছিল।’
আশরাফুল ইসলামের ভাবি শারমিন বেগম বলেন, ‘আশরাফুল অন্যায় কোনো কাজ করেন না। চিল্লাপাল্লা শুনে সেদিন দেখতে গেছিল। অন্য মানুষ ভিডিও করবার সময় রুপলালের মাথা ভাসে ধরবার কছলো, যাতে রুপলালকে মানুষ ভিডিওতে দেখে চিনতে পারে। ওই জন্য রুপলালের মাথা দুই হাত দিয়ে ভাসে ধরছিল। ওয় তো রুপলালকে মারে নাই।’
মেহেদী হাসানের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর বাব ঈশা মামুদও বাড়িতে নেই, ঘরে তালা ঝুলছে। তবে মেহেদীর খালা রশিদা বেগম বলেন, ‘ভিডিও তো আছে। ওটে ভালো করি দেখ। লোক দুইটাক মেহেদী বাঁচার চেষ্টা করোছে। কিন্তু ওয় এখন পুলিশের ভয়ে বাড়িছাড়া।’
ঘরের ভেতরে বসে আছেন মোহাম্মাদ আলীর মা মাহমুদা বেগম। চোখেমুখে চিন্তার ভাঁজ। এই প্রতিবেদককে দেখে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বলেন, ‘মোর বেটা ভাঙড়ির ব্যবসা করে। সৈয়দপুরোত ভাঙড়ি বেচে বাড়ি আইসার সময় গন্ডগোল শুনে ওটে গেইছে। লোক দুইটাক মারাডাংগা করে নাই। হামার দুষমোনেরা মোর ছেলেটার দোষ দেওছে।’
শরীফুল ইসলামকেও বাড়িতে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর তিনি পালিয়েছেন। তাঁর খালা সালমা বেগম বলেন, ‘শরীফুলের বাবা মোফাজ্জল হোসেন অনেক দিন আগোত মারা গেইছে। তখন থাকি বুড়িরহাট স্কুলের পেছনে থাকে। খুব ভালো ছেলে ওয়। অন্য মানুষ ওক ফাঁসার চেষ্টা করোছে।’ আলামিন হোসেন ও রফিকুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘরে তালা ঝুলছে। আখতারুলের ছেলে ওমর সানি বলেন, ‘আমার বাবা নির্দোষ। ঘটনা সময় বাড়িতে ছিল। পুলিশ কী কারণে বাবাকে ধরে নিয়ে গেছে, বুঝতে পারছি না।’
রুপলালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, অনেক লোকের জটলা। উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে রুপলালের পরিবারকে সাহায্য করতে নেতা-কর্মীরা এসেছেন। এ সময় কথা হয় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান শিপুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মব সৃষ্টি করে চোর আখ্যায়িত দিয়ে রুপলাল ও প্রদীপকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীর পরিচয় এখন পানির মতো পরিষ্কার। আমরা হত্যাকারীদের বিচার চাই।’
মেঝেতে বসে আছেন রূপলালের স্ত্রী ভারতী দাস। এখনো চোখ লাল, গলা ভাঙা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘বুড়িরহাটের মানুষ আমার নির্দোষ স্বামীক মারি ফেলাল। মেয়েটার বিয়ে পিছাইলো। স্বামী ছাড়া সংসার চালানোর কেউ ছিল না। আমি স্বপ্নেও ভাবি নাই আমার এই রকম হবে। কখনো ভাবি নাই ছেলেমেয়েকে নিয়া এই পর্যায় আসতে হবে।’
রুপলালের মা লালিচা দাস বলেন, ‘বাবা আমার ছেলেটা এনা পানি খাবার চাইলো, তাও দেয় নাই। সবাই মিলি মারি ডাঙ্গে চাওয়াটাক মারি ফেলাইছে। বুড়িরহাটের মানুষ আমার ব্যাটাটাক মারি ফেলাইছে। ভিডিওতে তো তাক স্পষ্ট দেখা যাওছে। তাও পুলিশ ধরোছে না।’
তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ ফারুক বলেন, ‘আসামিদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান করা হচ্ছে। যাদের শনাক্ত করা হয়েছে, তারা এলাকার বাইরে পালিয়ে যাওয়ায় গ্রেপ্তার করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, ৯ আগস্ট রাত ৯টার দিকে সায়ার ইউনিয়নের বটতলা বুড়িরহাট এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত হন উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর গ্রামের রূপলাল দাস (৪০) একই ঘটনায় নিহত হন তাঁর ভাগনি জামাই মিঠাপুকুরের ছড়ান বালুয়া গ্রামের প্রদীপ লাল (৩৫)। রূপলাল স্থানীয় বাজারে জুতা সেলাই করতেন ও প্রদীপ লাল ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ছোট্ট একটি টিনের ঘরে রুপলাল, মা, স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে থাকতেন।
রংপুরের তারাগঞ্জে দুজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। হত্যার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ, নিহত রুপলাল দাস ও প্রদীপ লালের পরিবারের সদস্যরা অপরাধীদের শনাক্ত করেছেন।
বটতলা এলাকায় আটকের সময় ছড়িয়ে পড়া ১ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, আটকের পর রুপলাল ও প্রদীপ লালকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রদীপ সিটের কাছে ও রুপলাল ভ্যানের পেছনে বসা ছিলেন। একপর্যায়ে এক যুবক ‘পিটাও রুবেল ভাই পিটাও’ বলে চিৎকার করেন। এরপর সিটের কাছে বসে থাকা প্রদীপ লালের পেছন থেকে সাদা শার্ট পরা বালাপুর গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে খায়রুল ইসলাম প্রদীপের কলার টেনে ধরে ঘুষি মারেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য খায়রুল ইসলামের বাড়িতে গেলে দরজায় তালা ঝুলতে দেখা যায়। তাঁর স্ত্রী আরজু বেগম বাড়ির পাশে গাছতলায় বসা। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেই দিন আমার স্বামী দীঘলটারীর কৃষিকাজ করছে। বাড়ি আসার সময় গোলযোগ শুনি গেছল। সে সামনে দাঁড়াই ছিল লোকগুলাক বাঁচপার জন্যে। তাতে ভিডিওর ছবি উঠছে।’
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ভ্যানের ওপর উঠে, সেখান থেকে নেমে প্রদীপ লালের সামনে আসেন শেফালি কালার গেঞ্জি পরা বুড়িরহাট পাইকারপাড়া গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে রুবেল পাইকার। সে প্রদীপ লালকে আঘাত করতে থাকেন।
কথা বলার জন্য রুবেল পাইকারের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, বাড়ির সামনে বসে আছে একদল লোক। এই প্রতিবেদককে দেখে সটকে পড়েন সবাই। অনেক অনুনয়-বিনয়ের পর রুবেলের মা আনোয়ারা বেগম পাশের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে বলেন, ‘একজন লোক ফোন দিয়া আমার ছেলেক ডাকে নিছে। ওয় তো লোক দুইটাক বাঁচপার জন্য ভ্যানোত উঠি চল্লাচিল্লি করছে। তাক তো ভিডিওতে দেখা যাওছে।’
রুবেল পাইকারের মারধর শেষ না হতেই দৌড়ে গিয়ে প্রদীপের মাথা ও কানে ঘুষি মারতে থাকেন সাদা প্রিন্টের শার্ট পরা ওই গ্রামের আশরাফুল ইসলামের ছেলে সোহাগ হোসেন।
কথা বলার জন্য অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও সোহাগ হোসেনকেও বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তাঁর বাবা আশরাফুলও বাড়িতে ছিলেন না। তবে সোহাগের মা লাভলী বেগম বলেন, ‘গ্রামের সবাই ভয়ে পালাইছে। রংপুর থাকি মোর ছেলে বাড়ি আসার পথে ওই লোক দুইটাক মাইরডাং করা দেখছে। ওই সময় ছবি, ভিডিও উঠছে, কিন্তু সে তো কাকও মারে নাই।’
ওই ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ভ্যানের ওপর পড়ে যাওয়া রুপলালকে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন সবুজ রঙের গেঞ্জি পরা বালাপুর গ্রামের ছলি মামুদের ছেলে নজরুল ইসলামকে।
নজরুলের স্ত্রীর ওজিদা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী মারে নাই। আমার স্বামী দেখপার গেইছে, তাতে ভিডিওত উঠছে। সবাই ভয়ে পালাইছে। ওই জন্যে ওয়ও বাড়িত নাই।’
রুপলালের ছেলে জয়দাস অভিযোগ করে বলেন, ‘ভিডিও দেখে প্রতিবেশীদের কাছে খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি, বুড়িরহাট এলাকার মিজানুর রহমান, এবাদত হোসেন, আশরাফুল ইসলাম, মেহেদী হাসান, মোহাম্মদ আলী, সোহাগ হোসেন, রুবেল পাইকার, নজরুল ইসলাম, খাইরুল ইসলাম, শরীফুল ইসলাম, আলামিন হোসেন, রফিকুল ইসলাম, আখতারুল ইসলামসহ ২৫-৩০ জন লোক আমার বাবাকে ৯ আগস্ট রাত ৯টায় এলোপাতাড়ি মারধর করেছে। শত শত লোক তা চেয়ে দেখেছে, ভিডিও করেছে, কেউ রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি।’
তবে শনাক্ত হওয়া ওই ব্যক্তিদের স্বজনেরা দাবি করেছেন, কেউ ঘটনা দেখতে, কেউ বাঁচাতে, কেউ ভিডিও করতে গিয়েছিল। রুপলাল ও প্রদীপকে তাঁরা মারেনি।
মিজানুর রহমানের মা মরিয়ম বেগম ও এবাদত হোসেনের স্ত্রী রেশমা বেগম বলেন, ‘মিজানুর ও এবাদত নির্দোষ। চোর ধরা পড়েছে শুনে তাঁরা দেখতে গিয়েছিল।’
আশরাফুল ইসলামের ভাবি শারমিন বেগম বলেন, ‘আশরাফুল অন্যায় কোনো কাজ করেন না। চিল্লাপাল্লা শুনে সেদিন দেখতে গেছিল। অন্য মানুষ ভিডিও করবার সময় রুপলালের মাথা ভাসে ধরবার কছলো, যাতে রুপলালকে মানুষ ভিডিওতে দেখে চিনতে পারে। ওই জন্য রুপলালের মাথা দুই হাত দিয়ে ভাসে ধরছিল। ওয় তো রুপলালকে মারে নাই।’
মেহেদী হাসানের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর বাব ঈশা মামুদও বাড়িতে নেই, ঘরে তালা ঝুলছে। তবে মেহেদীর খালা রশিদা বেগম বলেন, ‘ভিডিও তো আছে। ওটে ভালো করি দেখ। লোক দুইটাক মেহেদী বাঁচার চেষ্টা করোছে। কিন্তু ওয় এখন পুলিশের ভয়ে বাড়িছাড়া।’
ঘরের ভেতরে বসে আছেন মোহাম্মাদ আলীর মা মাহমুদা বেগম। চোখেমুখে চিন্তার ভাঁজ। এই প্রতিবেদককে দেখে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বলেন, ‘মোর বেটা ভাঙড়ির ব্যবসা করে। সৈয়দপুরোত ভাঙড়ি বেচে বাড়ি আইসার সময় গন্ডগোল শুনে ওটে গেইছে। লোক দুইটাক মারাডাংগা করে নাই। হামার দুষমোনেরা মোর ছেলেটার দোষ দেওছে।’
শরীফুল ইসলামকেও বাড়িতে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর তিনি পালিয়েছেন। তাঁর খালা সালমা বেগম বলেন, ‘শরীফুলের বাবা মোফাজ্জল হোসেন অনেক দিন আগোত মারা গেইছে। তখন থাকি বুড়িরহাট স্কুলের পেছনে থাকে। খুব ভালো ছেলে ওয়। অন্য মানুষ ওক ফাঁসার চেষ্টা করোছে।’ আলামিন হোসেন ও রফিকুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘরে তালা ঝুলছে। আখতারুলের ছেলে ওমর সানি বলেন, ‘আমার বাবা নির্দোষ। ঘটনা সময় বাড়িতে ছিল। পুলিশ কী কারণে বাবাকে ধরে নিয়ে গেছে, বুঝতে পারছি না।’
রুপলালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, অনেক লোকের জটলা। উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে রুপলালের পরিবারকে সাহায্য করতে নেতা-কর্মীরা এসেছেন। এ সময় কথা হয় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান শিপুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মব সৃষ্টি করে চোর আখ্যায়িত দিয়ে রুপলাল ও প্রদীপকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীর পরিচয় এখন পানির মতো পরিষ্কার। আমরা হত্যাকারীদের বিচার চাই।’
মেঝেতে বসে আছেন রূপলালের স্ত্রী ভারতী দাস। এখনো চোখ লাল, গলা ভাঙা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘বুড়িরহাটের মানুষ আমার নির্দোষ স্বামীক মারি ফেলাল। মেয়েটার বিয়ে পিছাইলো। স্বামী ছাড়া সংসার চালানোর কেউ ছিল না। আমি স্বপ্নেও ভাবি নাই আমার এই রকম হবে। কখনো ভাবি নাই ছেলেমেয়েকে নিয়া এই পর্যায় আসতে হবে।’
রুপলালের মা লালিচা দাস বলেন, ‘বাবা আমার ছেলেটা এনা পানি খাবার চাইলো, তাও দেয় নাই। সবাই মিলি মারি ডাঙ্গে চাওয়াটাক মারি ফেলাইছে। বুড়িরহাটের মানুষ আমার ব্যাটাটাক মারি ফেলাইছে। ভিডিওতে তো তাক স্পষ্ট দেখা যাওছে। তাও পুলিশ ধরোছে না।’
তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ ফারুক বলেন, ‘আসামিদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান করা হচ্ছে। যাদের শনাক্ত করা হয়েছে, তারা এলাকার বাইরে পালিয়ে যাওয়ায় গ্রেপ্তার করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, ৯ আগস্ট রাত ৯টার দিকে সায়ার ইউনিয়নের বটতলা বুড়িরহাট এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত হন উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর গ্রামের রূপলাল দাস (৪০) একই ঘটনায় নিহত হন তাঁর ভাগনি জামাই মিঠাপুকুরের ছড়ান বালুয়া গ্রামের প্রদীপ লাল (৩৫)। রূপলাল স্থানীয় বাজারে জুতা সেলাই করতেন ও প্রদীপ লাল ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ছোট্ট একটি টিনের ঘরে রুপলাল, মা, স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে থাকতেন।
পূর্ব সুন্দরবনের কচিখালী অভয়ারণ্যে আজ মঙ্গলবার সকালে দুই শিকারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বিকেলে তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাঁদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) রানা দেব এ কথা নিশ্চিত করেন।
৯ মিনিট আগেকিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলা বিএনপির বহুল প্রতীক্ষিত সম্মেলন শেষ পর্যন্ত বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে থেমে গেছে। ফলে ২২ বছর পর আয়োজিত এই সম্মেলনে করা যায়নি কোনো কমিটি। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি স্লোগান, হুংকার ও উত্তেজনায় অস্থির হয়ে ওঠে পরিবেশ। সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন কোনোরকমে শেষ হলেও দ্বিতীয় অধিবেশন স্থগিত
১৪ মিনিট আগেমেহেরপুরের গাংনী সীমান্তে ৩৯ বাংলাদেশিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে হস্তান্তর করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। আজ মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার কাজীপুর সীমান্তের ১৪৭ পিলার গণকবরের কাছে তাঁদের হস্তান্তর করা হয়।
১৯ মিনিট আগেখুলনায় ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে দুই নারী সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার রাতে নগরীর হরিণটানা থানার শিকদার মার্কেট এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
২৪ মিনিট আগে