Ajker Patrika

উদ্বোধনের আগেই ধসে গেছে সেতু, পাঁচ বছর ধরে শুধুই পরিদর্শন 

আনিসুল হক জুয়েল, দিনাজপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২২, ১৪: ৪৪
উদ্বোধনের আগেই ধসে গেছে সেতু, পাঁচ বছর ধরে শুধুই পরিদর্শন 

দিনাজপুর সদর উপজেলার গর্ভেশ্বরী নদীর ওপারে কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দার ভোগান্তি ছিল অনেক দিনের। নদীর ওপারে বেগুনপাড়া, সনকাহাট, কাচারীবাজার, পরেশ ডাক্তারপাড়া এমনকি কান্তনগর, কাহারোলের বাসিন্দাদের রামডুবিহাট, ভুসিরবন্দর অথবা রাণীরবন্দর এলাকায় সহজ পথে যাতায়াতের একমাত্র সড়কটি ছিল এই গর্ভেশ্বরী নদীর ওপর দিয়ে। শীতকালে পানির প্রবাহ না থাকায় নদীর ওপর দিয়ে চলাচল করা গেলেও বর্ষাকালে ভোগান্তিতে পড়তে হয় এই এলাকার বাসিন্দাদের। বর্ষা মৌসুমে আত্রাই নদীর ওপর নির্মিত বাঁধ ঘুরে যাতায়াত করতে হয় কয়েক কিলোমিটার এলাকা। তাই গর্ভেশ্বরী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ ছিল এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি।

২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে এই সেতু নির্মাণের বাজেট পাস হয়। দীর্ঘদিনের ভোগান্তি এবার ঘুচবে ভেবে আনন্দিত হয় এলাকাবাসী। সেতু নির্মাণও করা হয়, বাকি ছিল আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। কিন্তু এর মধ্যে ২০১৭ সালের বন্যায় পার্শ্ববর্তী আত্রাই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যায়। আর ওই বন্যার পানির স্রোতে মাঝখান থেকে ধসে যায় নবনির্মিত সেই সেতু! এরপর থেকে গত পাঁচ বছর ধরে ওভাবেই পড়ে আছে সেতুটি। ফলে নির্মাণ হিসেবে একটি সেতু পাওয়া গেলেও ভোগান্তি কমেনি এই এলাকার বাসিন্দাদের। এ ঘটনায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি করা হয়। এ কারণে প্রায়ই পরিদর্শনে এসে ঘুরে যান তদন্ত কমিটির সদস্যরা। তবে সেতুতে আর কোনো কাজ হয়নি। 

সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ধরধরিয়া হাড়গাঁও বাবুর বাজার থেকে ঝাড়ুয়াপাড়ায় যাওয়ার রাস্তায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা ছিলেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার। 

স্থানীয় রামডুবিহাট হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফরমাল আলী বলেন, ‘২০১৭ সালে বন্যার সময় উদ্বোধনের আগেই ব্রিজটি ধসে যায়। নদীর ওপারে বেশ কয়েকটি গ্রাম রয়েছে। বর্ষায় তাদের অনেক দূর ঘুরে যাতায়াত করতে হয়।’

গর্ভেশ্বরী নদীর ওপর নির্মিত উদবোধনের আগেই ভেঙ্গে পড়া সেবেগুনতাড়াপাড়া নিবাসী ভ্যানচালক আজগার আলী বলেন, ‘এই ব্রিজ উদ্ধোধন হওয়ার আগের দিন রাতে বন্যার পানিতে ভেঙে গেছে। ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার পাঁচ বছর হয়ে গেল, কিন্তু নতুন করে আর ব্রিজটি হলো না। নদীর দুই পাড়ের মানুষের কী পরিমাণ কষ্ট তা বলে বোঝানো যাবে না। ব্রিজের জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বাদের সঙ্গে এই গ্রামের মানুষের ঝগড়া-বিবাদ হয়ে গেছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘এখন তো নদীতে পানি নেই, পার হওয়া যাচ্ছে। বর্ষার সময় নদীতে পানি থাকলে অনেক দূর দিয়ে ঘুরে রামুডুবি হাটে যেতে হয়। কয়েক বছর ধরে নতুন ব্রিজটি ভাঙা অবস্থায় আছে, কারও খেয়াল নেই।’ 

পরেশ ডাক্তারপাড়ার প্রমীলা রানী (৩৭) বলেন, ‘ব্রিজের জন্য হামার কষ্ট কেউ দেখে না। বর্ষার সময় মহিলা, অসুস্থ মানুষ নিয়া হামার বিপদের শেষ থাকে না। হামার একটাই দাবি ব্রিজটা তাড়াতাড়ি ঠিক করি দেউক।’

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অশোক কুমার রায়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁকে পাওয়া যায়নি।

দিনাজপুর সদরের বর্তমান প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দীন বলেন, ‘সেতুটি ২০১৭ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় সারা দেশে শত শত ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি একাধিকবার ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজটি পরিদর্শন করেছে। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই-অগাস্টে বাংলাদেশে কোনো গণহত্যা হয়নি: চিফ প্রসিকিউটর

তোরা যারা রাজাকার, সময় থাকতে বাংলা ছাড়: ফেসবুকে বাকের মজুমদার

যুক্তরাষ্ট্র-চীন সমঝোতায় এক দিনে ১০০ ডলার কমল সোনার দাম

যুদ্ধ বলিউডের সিনেমা নয়: ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান

কঠোর হচ্ছে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতি, স্থায়ী বসবাসের আবেদনে অপেক্ষা ১০ বছর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত