Ajker Patrika

দুই সন্তানের জনককে আদালতে শিশু দেখিয়ে জামিন

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

গাইবান্ধা আদালতে দুই সন্তানের জনককে শিশু পরিচয়ে ভুয়া জন্মসনদ দেখিয়ে জামিনে মুক্ত করার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আদালতের নথি জালিয়াতি, আসামির পরিচয় পরিবর্তন এবং শিশু আদালতকে ভুল পথে পরিচালিত করার অভিযোগ উঠেছে।

মামলার নথি ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১৫ জুলাই সেনাবাহিনীর অভিযানে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার তালুক কানুপুরে শ্বশুরবাড়ি থেকে পলাশ রানাসহ চারজনকে সরকারি ভাতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আটক করা হয়। পরে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠান। এজাহারে পলাশ রানার বয়স ২৫ বছর উল্লেখ করা হয়।

এদিকে ফৌজদারি মিস মামলা নম্বর ৯৩৫/২৫ গাইবান্ধা দায়রা জজ আদালতে জামিন শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ ছিল। ওই মামলায় নিম্ন আদালতের রেকর্ড (এলসিআর) সংযুক্ত ছিল। কিন্তু ৩ আগস্ট ২০২৫ তারিখে একই আইনজীবী ও ল-ক্লার্কের সহায়তায় পলাশ রানার নাম পরিবর্তন করে ‘পলাশ মিয়া’ বানিয়ে নতুন জন্মসনদ তৈরি করা হয় এবং তাঁকে শিশু দেখিয়ে গাইবান্ধা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এ জামিন আবেদন করা হয়।

অভিযোগ অনুযায়ী, শিশু আদালতে ওই মামলার এলসিআর না থাকলেও বিচারক মামলাটিকে ‘পেটি কেস’ (সাধারণত ছোটখাটো বা তুলনামূলকভাবে হালকা ধরনের অপরাধ) ভেবে এবং আইনজীবীর কথায় বিশ্বাস রেখে ‘গুড ফেইথে’ জামিন মঞ্জুর করেন। ১২ আগস্ট ধার্য তারিখে যখন পলাশ রানার হাজিরা দেওয়ার কথা, তখন আদালতে জানা যায়, তিনি শিশু আদালত থেকে জামিন নিয়ে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই আদালতপাড়ায় তোলপাড় শুরু হয়।

অভিযুক্ত আইনজীবী শেফাউল ইসলাম রিপন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এই প্রতারণার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। নিয়ম মেনেই তিনি জামিন আবেদন করেছেন।

এ ঘটনায় গাইবান্ধা সদর উপজেলার দক্ষিণ ধানঘড়া গ্রামের মো. রহমত আলী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে নারী ও শিশু আদালতের পিপি আবু বকর সিদ্দিক ছানা এবং অ্যাডভোকেট শেফাউল ইসলামের বিরুদ্ধে গুরুতর পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ এনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

আদালতপাড়ার আইনজীবীদের অভিযোগ, গাইবান্ধা আদালতের দায়িত্বরত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল হালিম প্রামাণিকের সঙ্গে শেফাউল ইসলাম রিপনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কারণে তিনি এ ধরনের জালিয়াতির সাহস পেয়েছেন। তাঁদের দাবি, শেফাউল ইসলাম রিপন পূর্বে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই তিনি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্যদের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচিতে উপস্থিত থেকে নিজেকে বিএনপিমনা হিসেবে দাবি করছেন।

গাইবান্ধা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি আব্দুল হালিম প্রামাণিক বলেন, ‘আমি স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের আইনজীবীদের অনৈতিক কাজে প্রশ্রয় না দেওয়ায় তাঁরা আদালতপাড়াসহ বিভিন্ন জায়গায় আমার বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছেন। শেফাউল ইসলাম রিপন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেউ নন, তাঁর সঙ্গে আমার বিশেষ সখ্য থাকার প্রশ্নই আসে না। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

আইনজীবী মহল মনে করছে, আদালতে এমন জালিয়াতি হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে। তাঁদের মতে, সুষ্ঠু তদন্ত হলে গাইবান্ধা আদালতের বহু অনিয়ম বেরিয়ে আসবে। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত