Ajker Patrika

আগের ব্যর্থতার জন্য করোনাকে দায়ী করে কর্মসংস্থানে জোর দিয়ে ইশতেহার লিটনের

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আগের ব্যর্থতার জন্য করোনাকে দায়ী করে কর্মসংস্থানে জোর দিয়ে ইশতেহার লিটনের

কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে জোর দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের মেয়রপ্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। আওয়ামী লীগ মনোনীত এই প্রার্থী ও সদ্য সাবেক মেয়র লিটন এবার তাঁর ইশতেহারে ১০৫টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আগের অনেক কাজ করতে না পারার জন্য করোনাকে দায়ী করেন তিনি। তবে এবার মেয়র নির্বাচিত হতে পারলে পাঁচ বছরে এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছেন তিনি। 

আজ শনিবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ডা. কাইছার রহমান মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন লিটন। গত পাঁচ বছরে মেয়র হিসেবে রাজশাহীর জন্য কী কী করেছেন তার বিবরণও তিনি তুলে ধরেন এ সময়। পরে এবারের ইশতেহারের প্রতিশ্রুতিগুলো পড়ে শোনান তিনি। এ সময় দলীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। 

লিটনের ইশতেহারের প্রথমেই রয়েছে ব্যাপক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেকারত্ব হ্রাস ও উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা; রাজশাহী মহানগরীকে সমগ্র বরেন্দ্র অঞ্চলভিত্তিক আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা; শিক্ষা ও সংস্কৃতি সমৃদ্ধ মহানগরীর বিশেষত্ব অর্জন করা; সিটি করপোরেশনের ভৌগোলিক আয়তন ৯৬ বর্গকিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৩৫০ বর্গকিলোমিটার করা এবং রাজশাহী শহরের পাশে জেগে ওঠা পদ্মার চরে রিভার সিটি নির্মাণ করা। 

এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে লিটন রাজশাহীতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে চেয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়নি। এবারও নির্বাচনী ইশতেহারে একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন লিটন। এবার উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার জন্য একটি গার্লস ক্যাডেট কলেজ, রাজশাহীতে সংগীত, নাট্য ও নৃত্যকলার সমন্বয়ে একটি ললিতকলা একাডেমি এবং একটি আর্কাইভ, আর্ট গ্যালারি ও সিটি মিউজিয়াম স্থাপন করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন লিটন। 

এবার ইশতেহারে নগরবাসীর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে অনলাইনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। রাজশাহীর হার্ট ফাউন্ডেশনকে একটি পূর্ণাঙ্গ হৃদ্‌রোগ হাসপাতালে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া এবং সাধারণ রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়া সদর হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে উন্নীত করে পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। লিটন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, রাজশাহী থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত ট্রেন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে। ডুয়েল গেজে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে রাজশাহী-আব্দুলপুর রেলপথ। 

রাজশাহী-খুলনা-মোংলা-পোর্ট সংযোগ গড়ে তুলতে আরও একটি আন্তমহানগর যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন চালু করা হবে। ফলে বহির্দেশীয় বাণিজ্যে আমদানি-রপ্তানি সহজ হবে। রাজশাহী থেকে গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ ঘাট হয়ে ভারতের ধুলিয়ান ও মায়া পর্যন্ত নৌবন্দর চালু করে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য এবং নতুন যোগাযোগ স্থাপন করা হবে। রাজশাহী থেকে কলকাতা পর্যন্ত ট্রেন, বাস ও বিমান চলাচল শুরু করা হবে। 

লিটন বলেন, এ ছাড়া রাজশাহী থেকে রহনপুর হয়ে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল দিয়ে নেপাল পর্যন্ত ট্রেন যোগাযোগের উদ্যোগ নেওয়া হবে। রাজশাহী বিমানবন্দর থেকে কার্গো বিমান চালুর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য দেশে রাজশাহী অঞ্চলের কৃষিজাতপণ্য ও শিল্পজাত পণ্য রপ্তানির ব্যবস্থা করা হবে। এর জন্য কনটেইনার অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। রাত্রিকালীন বিমান ওঠানামার জন্য বিমানবন্দরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ ও আলোকায়নের ব্যবস্থা করা হবে। সিটি অ্যাপস চালু করে নগর পরিষেবা সংক্রান্ত বিষয়ে নগরবাসীর পরামর্শ ও মতামত গ্রহণ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। 

সরকারি সহায়তায় স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন সমস্যা নিরসনের জন্য ৫০০ থেকে ৬০০ বর্গফুটের বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। রাজশাহীর পর্যটন মোটেলকে স্টার মানে উন্নীত করা হবে। নতুন নতুন স্টার মানের হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সমন্বয়ের মাধ্যমে স্থাপন করা হবে। নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে বহুমুখী সুবিধাসম্পন্ন নাগরিক কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। এখানে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের স্থায়ী কার্যালয় থাকবে। পাশাপাশি অডিটোরিয়াম ও কমিউনিটি সেন্টারের ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া আরও নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য। 

সংবাদ সম্মেলনে লিটন বলেন, ‘২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় শামিল হয়ে রাজশাহী মহানগরীকে যোগ্য অংশীদার হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সেই লক্ষ্যে আমার নির্বাচনী ইশতেহারে উন্নয়ন প্রকল্পের রূপরেখার প্রতি সবার সমর্থন ও অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করি। এই অঙ্গীকার সামনে নিয়ে আমি মেয়র পদপ্রার্থী। নিজেকে এই অঙ্গীকারের বিশ্বাসযোগ্য ও আস্থাভাজন বলে মনে করি। রাজশাহীর মহানগরীর সর্বাত্মক উন্নয়ন, পরিবেশ এবং সৌন্দর্য তার সাক্ষী।’ 

এর আগে ২০১৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে ৮২টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন লিটন। তিনি মেয়র নির্বাচিত হলেও অনেক কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। সে বিষয়ে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে লিটন বলেন, ‘করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর কোনো উন্নয়নমূলক কাজ করা যায়নি। তা ছাড়া ডলার ও নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বই একটা অস্থির সময় পার করেছে। সে জন্য সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তবে এবার হবে।’ 

সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন, এবার নির্বাচনী ইশতেহারে লিটন যেসব বিষয় এনেছেন তার অনেক কিছুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। এগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে তিনি করবেন। জবাবে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মেয়র হিসেবে তাঁর কাজ করার সুযোগ আছে। যেখানে যেভাবে তদবির করে কাজ করা লাগবে, সেটি তিনি করবেন রাজশাহীর উন্নয়নের স্বার্থে। এ জন্যই সিটি করপোরেশনের বাইরের বিষয় নিয়েও তিনি কাজ করতে চেয়েছেন। এসব অঙ্গীকার পূরণ করা কঠিন মনে করেন না তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুমিল্লায় শিশুখাদ্যে নিষিদ্ধ রং ব্যবহার, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

কুমিল্লা প্রতিনিধি
কুমিল্লায় শিশুখাদ্যে নিষিদ্ধ রং ব্যবহার, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

কুমিল্লা নগরীর পাথুরিয়া এলাকায় বেকারি পণ্য ও শিশুখাদ্য প্রস্তুতকারী একটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত পরিচালিত অভিযানে ওজনে কম দেওয়া, শিশুখাদ্যে নিষিদ্ধ রং ব্যবহার, পোড়া তেল দিয়ে শিশুখাদ্য ভাজা এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য সংরক্ষণ ও প্রস্তুতের অভিযোগে ‘আরব বেকারি’কে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯-এর বিভিন্ন ধারায় এ জরিমানা করা হয়।

অভিযানকালে দেখা গেছে, পার্টি কেকের ক্ষেত্রে প্রতি দুই পাউন্ডে প্রায় ৭০ গ্রাম কম দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া শিশুখাদ্য প্রস্তুতে নিষিদ্ধ রং ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের একাধিক প্রমাণ পাওয়া যায়।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কুমিল্লার সহকারী পরিচালক মো. কাউছার মিয়া। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নমুনা সংগ্রহকারী মো. সাকিব। অভিযানে কুমিল্লা জেলা পুলিশের একটি দল সহযোগিতা করে।

ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কুমিল্লার সহকারী পরিচালক মো. কাউছার মিয়া বলেন, অভিযানে জরিমানার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিকে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করা হয়। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাড্ডায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাসে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। ছবি: সংগৃহীত
বাসে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর বাড্ডায় একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট কাজ করছে।

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত ৮টা ৩৫ মিনিটের দিকে অছিম পরিবহনের মিরপুরগামী একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়ার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।

ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার মো. শাজাহান শিকদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।

প্রত্যক্ষদর্শী শামীম জানান, উত্তর বাড্ডার এএমজেড হাসপাতালের সামনের সড়কে বাসটিতে আগুন দেওয়া হয়।

বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিরুল ইসলাম বলেন, কারা বাসে আগুন দিয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে যাচ্ছে এবং বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

এর আগে, গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ৮টার দিকে বাড্ডার গুদারাঘাট এলাকায় একটি চলন্ত যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। সে সময় ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘চিকিৎসা না পেয়ে’ গর্ভের সন্তানের মৃত্যু: চট্টগ্রামে ৪ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৫৭
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের । ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের । ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা অবহেলায় এক নারীর গর্ভের সন্তানের মৃত্যুর অভিযোগে চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা সাত্তারের আদালতে ভুক্তভোগী নারী নাসরিন আক্তার মামলার আরজি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সিরাজুন নূর, হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) মো. নুরুল হক, পরিচালক (মেডিকেল অ্যাফেয়ার্স) এ এফ এম আশরাফুল করিম এবং ডেপুটি ডিরেক্টর (অ্যাডমিন-আইসিইউ) মো. আবু সাইদ চৌধুরী।

বাদীপক্ষের আইনজীবী রিগ্যান আচার্য্য জানান, মামলার আবেদনের পর আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন এবং মামলাটি তদন্তের জন্য ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) আদেশ দেন। আদালত আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন।

মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সকালে প্রসবব্যথা নিয়ে নাসরিন আক্তারকে চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন তাঁর গর্ভকাল ছিল ৩৭ সপ্তাহ। আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট অনুযায়ী গর্ভস্থ সন্তান সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। ভর্তির পর রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলেও কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা তাৎক্ষণিক জরুরি চিকিৎসা দেননি বলে অভিযোগ করা হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোগীকে চিকিৎসা না দিয়ে রেখে দেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা। রোগীর স্বজনদের ভাষ্য অনুযায়ী, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হলেও আলট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়, এমন অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করা হয়।

অভিযোগে আরও বলা হয়, দীর্ঘ সময় লেবার রুমে ফেলে রাখার কারণে রোগীর রক্তক্ষরণ বেড়ে যায় এবং অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে। পরে একজন সিনিয়র কনসালট্যান্ট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে জরুরি অস্ত্রোপচারের নির্দেশ দেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ওই নারী মৃত সন্তান প্রসব করেন। পরে রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে মায়ের প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব হয়।

বাদীপক্ষের দাবি, সময়মতো সঠিক ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হলে গর্ভস্থ শিশুটিকে বাঁচানো যেত। ঘটনার পর দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জানানো হলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি; বরং বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয় এবং ভুক্তভোগী পরিবারকে দীর্ঘদিন অপেক্ষায় রাখা হয়।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মো. নুরুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মামলার বিষয়টি জানলাম। তবে ওই রোগীর কাগজপত্র না দেখে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, এটা রীতিমতো অবান্তর: চবির উপ-উপাচার্য

চবি প্রতিনিধি 
চবিতে বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা
চবিতে বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, এটি অবান্তর বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আজ রোববার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য দপ্তরে ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের দিন নির্ধারিত ছিল। পাকিস্তানি বাহিনী দেশ থেকে পালানোর জন্য চেষ্টা করছিল, সে সময় তারা জীবিত থাকবে—না মৃত থাকবে, সে বিষয়ে কোনো ফয়সালা হয়নি, সে সময় পাকিস্তানি যোদ্ধারা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, এটি আমি মনে করি রীতিমতো অবান্তর।’

এ সময় তিনি ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর কী হয়েছিল, তা জানতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে স্বাধীন নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করার অনুরোধ করেন।

মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এ দেশকে আরেকটা দেশের করদরাজ্যে পরিণত করার জন্য বুদ্ধিজীবীদের ষড়যন্ত্রমূলক হত্যা করা হয়েছে। আমরা আজ পর্যন্ত জহির রায়হানকে খুঁজে পাইনি। যদি জহির রায়হানকে খুঁজে পাওয়া যেত, সত্যিকার ইতিহাস আমরা পেতাম।’

মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান আরও বলেন, ‘গতকাল টিভিতে দেখলাম, মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান (সদ্য জামায়াতে যোগ দেওয়া সাবেক এমপি মেজর অব. আখতারুজ্জামান) বক্তব্য দিচ্ছেন। তাঁকে যখন প্রশ্ন করা হলো যে আপনি তো বলতেন, ১৯৭১ সালে লাখ লাখ লোক শাহাদাত বরণ করেছে। এখন আপনি এর বিপরীত রাজনীতিতে যুক্ত হলেন, এটি কেন?

মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান বললেন, ‘এগুলো হচ্ছে রেটরিক (আলংকারিক) বক্তব্য। এগুলো তো সত্য নয়। রেটরিক বক্তব্য আমরা জাতির সামনে শুনতে চাই না। আমরা রিয়েলিটি চাই। আমরা সত্যিকারভাবে বাংলাদেশে কী ঘটেছিল ১৯৭১ সালে, সেই ঘটনায় কারা কারা শহীদ হয়েছে, সেই তথ্য আমরা জানতে চাই। কারা কারা হত্যা করেছে, সেই তথ্য এখন পর্যন্ত আমাদের জানা হয়নি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার। সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও চবি জাদুঘরের পরিচালক ড. মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান।

বক্তব্য দেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ছাত্র উপদেষ্টা, বিভিন্ন হলের প্রভোস্ট, চাকসুর সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন প্রক্টর অধ্যাপক হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী।

এর আগে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে একটি র‍্যালি শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।

এ দিকে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে উপ-উপাচার্যের (একাডেমিক) মন্তব্য নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এ বিষয়ে কথা বলতে অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে সাড়া না পাওয়ায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত