Ajker Patrika

টিসিবির পচা পেঁয়াজের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ ক্রেতারা

রাজশাহী প্রতিনিধি
আপডেট : ০২ আগস্ট ২০২২, ১৯: ২২
টিসিবির পচা পেঁয়াজের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ ক্রেতারা

লম্বা লাইনে মুখে কাপড় দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন নারীরা। কারণ জিজ্ঞেস করতেই সমেজান বিবি বললেন, ‘নাক নাই? দেখতে পাচ্ছেন না পেঁয়াজের কী গন্ধ!’ সমেজানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন জোসনা বেগম। বললেন, ‘এই পেঁয়াজ তো খাওয়া যাবে না। সব পচা! আবার পেঁয়াজ না নিলে তেল, ডাল, চিনি দেবে না। তাই বাধ্য হয়ে এই পেঁয়াজও নিতে হচ্ছে।’ 

আজ মঙ্গলবার সকালে এই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল রাজশাহী নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা মোড়ে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পরিবেশক ফ্যামিলি কার্ডধারীদের মাঝে এই পেঁয়াজ বিক্রি করছিলেন। ভর্তুকি মূল্যে পেঁয়াজ ছাড়াও তেল, ডাল ও চিনি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ক্রেতাকে একসঙ্গে সব পণ্যই কিনতে হচ্ছে। ফলে পচা পেঁয়াজ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। 

সরেজমিনে দেখা যায়, আগের মতো এখন আর ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে না। পরিবেশকের দোকান কিংবা নির্দিষ্ট স্থান থেকে পণ্যগুলো বিক্রি করা হচ্ছে। নিজের ফ্যামিলি কার্ড নিয়ে গিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষেরা সেখান থেকে পণ্যগুলো কিনতে পারছেন। এবার সোমবার থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু পচা পেঁয়াজ নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে রাজশাহীর ক্রেতাদের। 

রাজশাহীতে বাধ্য হয়ে টিসিবির পচা পেঁয়াজ সংগ্রহ করছেন কার্ডধারীরানগরীর ১ নম্বর কাশিয়াডাঙ্গা মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, পচা পেঁয়াজ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পেঁয়াজ এতটাই পচা যে পরিবেশকের কর্মচারী মো. নাঈম তা হাতেও স্পর্শ করছেন না। হাতে-পায়ে জড়িয়ে রেখেছেন পলিথিন। এভাবে তিনি পেঁয়াজ ওজন করছেন। 

পলিথিনের ভেতর হাত-পা ঢুকিয়ে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে নাঈম বলেন, ‘পচা পেঁয়াজ যেন না ঠেকে।’ নাঈম বলেন, ‘অন্য জায়গায় পেঁয়াজ আরও খারাপ। আমরা ফ্যানের বাতাস দিয়ে বাতাস লাগাচ্ছি। সে কারণে ভেজা ভাবটা দূর হচ্ছে। তাও গন্ধ বেরোচ্ছে।’ 

কাশিয়াডাঙ্গায় পেঁয়াজ বিক্রি করছিল টিসিবির পরিবেশক সাদিয়া এন্টারপ্রাইজ। এ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী হামিদুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘আমাদের কিছু করার নাই। আমরাকে যা দিচ্ছে আমরাও তা দিচ্ছি।’ তিনি জানান, প্যাকেজ হিসেবে চাল, চিনি, তেল ও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। একটি রেখে অন্যটি কেনার সুযোগ নেই। ক্রেতাকে একসঙ্গে সবই কিনতে হচ্ছে। 

নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ডে পণ্য বিক্রি করছিল মেসার্স গোলাপ স্টোর। সেখানে গিয়ে পেঁয়াজের মান আরও খারাপ দেখা যায়। এখানেও পরিবেশকের কর্মচারী আনসার আলী বিক্রি করার সময় হাতে পেঁয়াজ স্পর্শ করছিলেন না। বোমা (পেঁয়াজ তোলার পাত্র) দিয়ে পেঁয়াজ তুলে ব্যাগে ঢোকাচ্ছিলেন। আয়নাল বলেন, ‘পচা পেঁয়াজ শরীরে ঠেকলেই চুলকাবে।’ 

এদিকে পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে হড়গ্রাম নতুনপাড়ার বাসিন্দা জাহানারা বলেন, ‘বাজারে ২২ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে ভালো মানের পেঁয়াজ পাওয়া যায়। এখানে ২০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে এই পচা-দুর্গন্ধযুক্ত পেঁয়াজ। এটা গরিবের সাথে তামাশা। এই পেঁয়াজ না কিনলে আবার তেল, চিনি, ডাল দেবে না। তাই বাধ্য হয়ে পচা পেঁয়াজও কিনতে হচ্ছে।’ 

মেসার্স গোলাপ স্টোরের স্বত্বাধিকারী গোলাম রসুল বলেন, ‘ফ্যামিলি কার্ড করার আগে প্যাকেজ ছাড়া পণ্য বিক্রি করা যেত। ফ্যামিলি কার্ডের পর আর সেটা সম্ভব না। তাই সবাইকে সব পণ্যই কিনতে হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে ক্রেতারা পচা পেঁয়াজ কিনছেন। টিসিবি আমরাকে এই পেঁয়াজ দিয়েছে, আমরাও দিতে বাধ্য হচ্ছি।’ 

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষকে ফ্যামিলি কার্ড করে দিয়েছি। এখন এই কার্ড নিয়ে এসে মানুষ পচা পেঁয়াজ কিনছে। এখন আমাদেরই তো বদনাম হচ্ছে। আমি টিসিবিকে বলেছি, পচা পেঁয়াজ দিয়েন না। কিন্তু তাঁরা দেবে। এই পেঁয়াজ মানুষ খেতে পারবে না। ফেলে দিতে হবে।’ 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে প্রায় দুই লাখ পরিবারকে ফ্যামিলি কার্ড করে দেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রত্যেকে ১১০ টাকা দরে দুই লিটার সয়াবিন তেল, ২০ টাকা দরে দুই কেজি পেঁয়াজ, ৬৫ টাকা দরে দুই কেজি মসুর ডাল এবং ৫৫ টাকায় এক কেজি চিনি কিনতে পারছেন। মঙ্গলবার রাজশাহী নগরীর ১০টি ওয়ার্ডে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে শহরের ৩০টি ওয়ার্ড এবং প্রত্যেক উপজেলা পর্যায়েও ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করা হবে। 

পচা পেঁয়াজ সরবরাহ করার বিষয়ে কথা বলার জন্য টিসিবির রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী কার্যনির্বাহী (অফিসপ্রধান) মো. শাহিদুল ইসলামকে কয়েক দফা ফোন করা হয়। তবে তিনি ধরেননি। অফিসে গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। 

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত