Ajker Patrika

উপদেষ্টা ও বিশেষ সহকারী

এপিএসের বেতন ১ বছরে বেড়েছে ১৮ বছরের সমান

  • নবম গ্রেড থেকে পঞ্চম গ্রেডের বেতন কম!
  • ত্রাণ উপদেষ্টার পিএস পদে নজিরবিহীন নিয়োগ।
  • এটা আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি: জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ
শহীদুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২৫, ১০: ০৬
এপিএসের বেতন ১ বছরে বেড়েছে ১৮ বছরের সমান

অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ জন উপদেষ্টা ও বিশেষ সহকারীর সহকারী একান্ত সচিবদের (এপিএস) বেতন একলাফে ৩১ হাজার টাকার বেশি বেড়েছে। এটিকে আর্থিক অনিয়ম হিসেবেই দেখছেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা।

উপদেষ্টা ও বিশেষ সহকারীর এপিএসদের বেতন প্রথমে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ীই নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদের শেষের দিকে এসে তা একবারে ৩১ হাজার ৬০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। উপদেষ্টা ও বিশেষ সহকারীদের আধা সরকারি পত্র (ডিও লেটার) পাওয়ার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ ব্যবস্থা নিয়েছে।

বর্তমান বেতনকাঠামো অনুযায়ী, বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর একজন সরকারি কর্মকর্তা নবম গ্রেডের শুরুর ধাপে, অর্থাৎ ২২ হাজার টাকা মূল বেতনে চাকরি শুরু করেন। এরপর ১৮ বছরে ১৮টি ইনক্রিমেন্ট যোগ হলে নবম গ্রেডের কোনো কর্মকর্তার বেতন দাঁড়াবে ৫৩ হাজার ৬০ টাকা, এটিই এ গ্রেডের সর্বোচ্চ ধাপ। এপিএসদের বেতন ৩১ হাজার ৬০ টাকা বাড়িয়ে নবম গ্রেডের সর্বোচ্চ ধাপে নির্ধারণ করা হয়েছে।

শুরুর নিয়োগে বেতন ২২ হাজার

২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৪ আগস্ট থেকে গত ১০ এপ্রিল পর্যন্ত ১৪ জন উপদেষ্টা ও বিশেষ সহকারীর এপিএসদের ২২ হাজার টাকা বেতনে নিয়োগ দেওয়া হয়।

সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার এপিএস নাজমুস সাদাত, ক্রীড়া উপদেষ্টার এপিএস মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, শিল্প উপদেষ্টার এপিএস আমান সাদিক, পরিবেশ উপদেষ্টার এপিএস আশিকুর রহমান সমী, বস্ত্র উপদেষ্টার এপিএস সাজ্জাদ নাঈম, শিক্ষা উপদেষ্টার এপিএস কামরুন নাহার, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার এপিএস ফারহানুল হক, ধর্ম উপদেষ্টার এপিএস মো. আশিকুল ইসলাম, পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এপিএস মুনিম সিদ্দিকী, ত্রাণ উপদেষ্টার এপিএস মো. আমিরুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারীর এপিএস শিমসাদ নারমীন, প্রয়াত ভূমি উপদেষ্টার এপিএস মো. আবিদ চৌধুরী এবং গণশিক্ষা উপদেষ্টার এপিএস আবিদ সরকার সোহাগের নিয়োগ ২২ হাজার টাকা বেতনে হয়।

উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের দপ্তর বদলে নৌপরিবহন এবং শ্রম উপদেষ্টার এপিএস হিসেবে সাজ্জাদ নাঈমকে ২২ হাজার টাকা বেতনে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়-সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর এপিএস সিফাত মাহমুদ এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারীর এপিএস হিসেবে আশিক এলাহীর নিয়োগও ২২ হাজার বেতনে হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী নিজের এপিএস পদে তৎকালীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বর্তমান নাম বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. সাউফ উদ্দিন সরকারকে নিয়োগ দেন।

একলাফে বেতন বেড়ে ৫৩ হাজার

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রথমে একজন উপদেষ্টা তাঁর এপিএসের বেতন বাড়ানোর জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আধা সরকারি পত্র দেন। এরপর মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভা করে কীভাবে এপিএসের বেতন বাড়ানো যায়, সেই সিদ্ধান্তে আসেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘একজন উপদেষ্টার কাছ থেকে এমন চিঠি পাওয়ার পর আমরা দেখলাম, আগে এভাবে কারও বেতন বাড়ানো হয়নি। যেহেতু এপিএসদের মর্যাদা সহকারী সচিবদের সমান, আর সহকারী সচিবদের সর্বোচ্চ বেতন স্কেল ৫৩ হাজার ৬০ টাকা, সে কারণে উপদেষ্টা ও বিশেষ সহকারীদের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের এপিএসদের বেতন ৫৩ হাজার ৬০ টাকা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়। তবে সহকারী সচিব পদে চাকরি শুরু হয় ২২ হাজার টাকা বেতনে। এটি নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে পারে বলে আলোচনা হয়েছে।’

আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, উপদেষ্টা ও বিশেষ সহকারীরা যেভাবে চেয়েছেন, সেভাবেই তাঁদের এপিএসদের বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অনেক কিছুই এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। কর্মকর্তাদের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা রয়েছে।

গত ২৬ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার ‘হাই রিপ্রেজেন্টিটিভ’ ড. খলিলুর রহমানের ‘অভিপ্রায় অনুযায়ী’ মো. রেজাউল হককে নবম গ্রেডের সর্বোচ্চ ধাপ ৫৩ হাজার ৬০ টাকা মূল বেতনে তাঁর এপিএস নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৬ মার্চ তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার এপিএস পদে মো. আব্দুল আহাদ, ১২ মে প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়নবিষয়ক সহকারীর এপিএস পদে আমিরুল ইসলাম, গত ২ জুলাই মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টার এপিএস পদে মো. আব্দুর রহমান এবং ১৬ জুলাই স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার এপিএস পদে মো. আয়মন হাসান রাহাতকে ৫৩ হাজার ৬০ টাকা বেতনে নিয়োগ দেওয়া হয়।

১৯ মে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারীর এপিএস মো. সাইফ উদ্দিন সরকার, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার এপিএস মো. ফারহানুল হক ও পরিবেশ উপদেষ্টার এপিএস আশিকুর রহমান সমী; ২৭ মে শিল্প উপদেষ্টার এপিএস আমান সাদিক, ২৮ মে ধর্ম উপদেষ্টার এপিএস মো. আশিকুল ইসলাম, ৯ জুলাই পরিকল্পনা উপদেষ্টার এপিএস কামরুন নাহার, ২৮ জুলাই নৌপরিবহন উপদেষ্টার এপিএস সাজ্জাদ নাঈম এবং ১০ আগস্ট ত্রাণ উপদেষ্টার এপিএস মো. আমিরুল ইসলামের বেতন ২২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৩ হাজার ৬০ টাকা করা হয়। তবে নিয়োগের তারিখ থেকেই তাঁদের নতুন বেতন স্কেল কার্যকর ধরা হয়। গত ৬ মার্চ প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় নিয়োজিত পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যানের এপিএস হিসেবে উদ্ভাষন চাকমার বেতনও ৫৩ হাজার ৬০ টাকা করা হয়।

বেতন পঞ্চম গ্রেডের থেকেও বেশি!

উপদেষ্টা ও বিশেষ সহকারীদের এপিএসদের বেতন রাতারাতি বাড়ানোর ফলে পঞ্চম গ্রেডে নিয়োগ পাওয়া একজন পিএসের বেতন এখন তাঁদের থেকে কম। পঞ্চম গ্রেডের শুরুর বেতন ৪৩ হাজার টাকা। ১৫ জুন আপিল বিভাগের বিচারপতির পদমর্যাদায় নিয়োজিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের একান্ত সচিব পদে মুহাম্মদ শিহাব উদ্দীনকে পঞ্চম বেতন গ্রেডের শুরুর স্কেলে নিয়োগ দেওয়া হয়। ফলে তাঁর বর্তমান বেতন ৪৩ হাজার টাকা, যা নবম গ্রেডে নিযুক্ত এপিএসদের চেয়ে অনেকটাই কম।

যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মো. মোয়াজ্জেমকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে গত ২১ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ৯ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর এপিএস সিফাত মাহমুদকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, প্রয়াত ভূমি উপদেষ্টা হাসান আরিফের এপিএস আবিদ চৌধুরী তাঁর বেতন বাড়ানোর জন্য উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেন। তখন উপদেষ্টা তাঁর এপিএসকে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে বলেন। তবে আবিদ চৌধুরী নিজে সেই আবেদন করেননি।

বিগত সরকারের আমলে এপিএসদের মধ্যে কারও বেতন এভাবে বাড়ানো হয়েছিল কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট উইংয়ের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য দিতে পারেননি। তবে তাঁরা বলেছেন, জানামতে এর আগে এভাবে এপিএসদের বেতন বাড়ানো হয়নি। বিগত সরকারের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর চারজন এপিএসের সঙ্গে কথা বলেছে আজকের পত্রিকা। তাঁরা সবাই ২২ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করার কথা জানিয়েছেন।

ত্রাণ উপদেষ্টার নজিরবিহীন কাজ

কর্মরত সরকারি কর্মকর্তাদের বাইরে থেকে পিএস নিয়োগ দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজমের অভিপ্রায় অনুযায়ী, তাঁর পিএস পদে সাবেক লে. কর্নেল মো. আব্দুল গাফ্ফারকে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আব্দুল গাফ্ফারকে যুগ্ম সচিবের পদমর্যাদা দিয়েছে। এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, তাঁর পদমর্যাদা ভবিষ্যতে এ পদের জন্য নজির হবে না।

আইনে কী আছে

মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর (পারিশ্রমিক এবং সুযোগ-সুবিধা) আইন অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তা বা যে কাউকে এপিএস পদে নিয়োগ দেওয়া যায়। সরকারি চাকরিজীবীদের বাইরে থেকে এপিএস নিয়োগ দিলে তাঁকে প্রথম শ্রেণির চাকরি পাওয়ার মতো শিক্ষাগত যোগ্যতাধারী হতে হয়। সরকারি কর্মকর্তাদের বাইরে থেকে এপিএস নিয়োগ দিলে তাঁর মর্যাদা নির্ধারণ করে দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ ক্ষেত্রে এপিএসদের মর্যাদা ধরা হয় সহকারী সচিবের সমান। ফলে তাঁদের নবম বেতন গ্রেডের শুরুর ধাপে নিয়োগ হয়। আর সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে এপিএস নিয়োগ দিলে ওই কর্মকর্তা যে দপ্তরে যে বেতনে চাকরি করতেন, সেই বেতনেই এপিএসের দায়িত্ব পালন করবেন। শুধু তাঁকে প্রেষণে এপিএস নিয়োগ দেওয়া হবে।

অন্যদিকে একান্ত সচিব (পিএস) নিয়োগ দেওয়া হয় উপসচিবদের মধ্য থেকে। তবে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী চাইলে প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেও পিএস নিয়োগ দিতে পারেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি বিলুপ্ত হওয়ার পর উপদেষ্টা বা বিশেষ সহকারীর কোনো পদ নেই। ফলে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর (পারিশ্রমিক এবং সুযোগ-সুবিধা) আইন অনুযায়ী উপদেষ্টা ও বিশেষ সহকারীদের সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ করা হচ্ছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. এরফানুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এপিএসদের যে স্কেলে যোগদান করানো হয়, তার থেকে তাঁদের বেতন বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু এই সরকারের মেয়াদ খুব বেশি নেই। ফলে এখন অনেকেই আমাদের কাছে বেতন বাড়ানোর আবেদন করছেন, সেসব আবেদন ধরে অনেকের বেতন বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’

এটা আর্থিক অনিয়ম

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া বিষয়টি আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, ‘কোন কর্তৃত্ববলে সর্বোচ্চ ধাপে বেতন নির্ধারণ করল? সর্বোচ্চ ধাপে বেতন নির্ধারণ করতে হলে বিধি জারি করে করতে হবে। এসব কী হচ্ছে! সরকারি কর্মকর্তারা কি বিধিবিধান জানেন না? অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের কাছ থেকে তো মানুষ এসব আশা করে না। পিএস সরকারি কর্মকর্তাদের বাইরে থেকে নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম নেই। দেখবেন এগুলো নিয়ে ভবিষ্যতে মামলা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জুলাই সনদে সমঝোতা: হেলদোল নেই দলগুলোর

  • সমঝোতার জন্য সরকারের আহ্বানে সাড়া দিতে চাইছে না বিএনপি।
  • জামায়াত আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে, কিন্তু উদ্যোগ নেয়নি।
  • বল ঠেলে না দিয়ে সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে বলে মনে করে এনসিপি।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ নিয়ে নিজেদের অনৈক্য-বিভেদ দূর করে সমঝোতার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে আজ বুধবার কেটে যাচ্ছে দুই দিন। কিন্তু এ সংকট নিরসনে দলগুলোর মধ্যে কোনো হেলদোল আছে বলে মনে হচ্ছে না।

দলগুলোর পক্ষ থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত আলোচনার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সরকারের অনুরোধের এক দিন আগে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে অন্য দলগুলোর প্রতি আলোচনার আহ্বান জানানো হয়েছিল মুখে মুখে। কিন্তু এ আহ্বান বাস্তবায়নে গতকাল পর্যন্ত কার্যত কোনো উদ্যোগ নেয়নি দলটি।

জামায়াত তবু আহ্বান জানিয়েছে। বিএনপি নিজের দিক থেকে কোনো কথা বলেনি, উদ্যোগও নেয়নি। বরং সরকারের আহ্বানে দলটি সাড়া দিতে চাইছে না বলে দলটির সূত্র জানিয়েছে। আর সংকট সমাধানে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও গণতন্ত্র মঞ্চ।

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ নিয়ে সংকট কাটাতে গত সোমবার জরুরি বৈঠকে বসে উপদেষ্টা পরিষদ। সেই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয়, এ নিয়ে সরকারের দিক থেকে আর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে না। এখন রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সমঝোতায় আসুক। এ জন্য দলগুলোকে এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়। এর মধ্যে দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারলে সরকার নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত দেবে।

জুলাই সনদ ইস্যুতে গত মার্চ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আলোচনা করছে। সেখানে অনেক ইস্যুতে একমত হলেও গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে বিএনপিসহ বেশ কিছু দলের আপত্তি ছিল। ৩১ আগস্ট শেষ হওয়া দ্বিতীয় ধাপের সংলাপে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, নির্বাচনে বিজয়ী হলে আপত্তি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে দলগুলো। তবে সে সময় গণভোট নিয়ে আলোচনা হয়নি। বাস্তবায়ন প্রশ্নে তৃতীয় ধাপে পাঁচ দিন সংলাপ করে দলগুলো। সেখানে গণভোটের বিষয়ে একমত হয় তারা। তবে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে দলগুলো সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।

গত ৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সংলাপে জানানো হয়, দলগুলোর মত ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে সরকারের কাছে কমিশন বাস্তবায়নের উপায় জমা দেবে; যেখানে বিশেষজ্ঞরা গণভোটে আপত্তি না রাখার বিষয়ে মত দেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, জনগণ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, সেখানে আপত্তির বিধান রাখা যুক্তিযুক্ত না। ২৭ অক্টোবর সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দেয় কমিশন। এরপর শুরু হয় নতুন বিতর্ক। ছয় মাসে যেখানে দলগুলো একমত হতে পারেনি, সেখানে এক সপ্তাহে দলগুলো আলোচনা করে ঐক্যবদ্ধ হবে, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

আলোচনার উদ্যোগ নেবে না বিএনপি

আলোচনা করে সমঝোতায় আসতে সরকারের অনুরোধে বিএনপি কোনো উদ্যোগ নেবে না বলে দলটির একাধিক সূত্র গতকাল জানিয়েছে। দলটির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলছেন, বাস্তবায়ন আদেশে তাদের ওপর অনেক কিছু চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এখন আলোচনার নামে দায়ভার চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

সরকারের এমন অনুরোধে তাদের দল সাড়া দেবে না। এ জন্য আলোচনায় বসার জন্য কোনো দলকে ডাকবে না বিএনপি। কেউ আলোচনার জন্য দাওয়াত দিলে বিবেচনা করা হবে কি না, দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকে একসঙ্গে বসার বিষয়ে যে অনুরোধ করেছে, এ ব্যাপারে আমরা কোনো আলোচনা করতে পারিনি। সোমবার দলের প্রার্থী মনোনয়ন এবং প্রেস ব্রিফিং নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আলোচনার সুযোগ হয়নি। আলোচনা করে তারপর জানানো হবে।’

আহ্বান জানিয়েছে জামায়াত

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত জামায়াতে ইসলামী। যদিও সরকারের আহ্বানের আগেই আলোচনার জন্য অন্য দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা। তবে দলটির অনুরোধে গতকাল পর্যন্ত কোনো দল সাড়া দেয়নি বলে জানা গেছে।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ গতকাল বলেন, ‘সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছে একসঙ্গে বসার। সরকারের আগেই আমরা আহ্বান করেছি। এখনো কারও সাড়া পাইনি আমরা, হয়তো সামনে পাব।’

এর আগে গত রোববার রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী বিএনপির সঙ্গে কোনো ঝগড়ায় লিপ্ত হতে চায় না। যা-ই করছেন, এবার বন্ধ করুন। আসুন, আমরা একসঙ্গে বসি। দেশের এই পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করি।’

আর গতকাল মঙ্গলবার বিদেশ সফর শেষে ঢাকায় ফিরে বিমানবন্দরে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘সরকার অনুরোধ করেছে, এক সপ্তাহ সময়ের ভেতরে রাজনৈতিক দলগুলো বসে যদি একটা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে, সরকারের জন্য এটা ভালো। আমরাই সবার আগে আমাদের নায়েবে আমিরের মাধ্যমে আহ্বান জানিয়েছি যে আসুন, আমরা খোলামেলা আলোচনা করে একটা সমাধানে পৌঁছাই দেশ ও জাতির স্বার্থে। আমরা আশা করি, অন্যরা আমাদের এই আহ্বানে সাড়া দেবেন।’

সরকারের কোর্টে বল ঠেলছে এনসিপি

রাজনৈতিক দলগুলোর কোর্টে বল ঠেলে না দিয়ে সরকারকেই জুলাই সনদ আদেশ জারির উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করে এনসিপি। তবে প্রয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে আলোচনায় যেতে তাঁরা প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। যদিও এখন পর্যন্ত এনসিপি কোনো রাজনৈতিক দলকে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেয়নি বলে জানা গেছে। আবার এনসিপিকেও কেউ প্রস্তাব দেয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ নিয়ে সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলাপ চলছে। বাস্তবায়ন আদেশ জারির জন্য সরকারের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চাপ প্রয়োগ করছে এনসিপি।

এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘সংস্কার বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকার বা ঐকমত্য কমিশনকে রেফারি করেছে অনেকে। কিন্তু আমরা দেখি, সরকার ও ঐকমত্য কমিশন সংস্কার বাস্তবায়নের ব্যাপারে রেফারি না। তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী। তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে সংস্কারের পক্ষে। যদি তারা সংস্কারের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তারা তাদের ম্যান্ডেট থেকে বিচ্যুত হয়ে যাবে। সরকারের এখন দায়িত্ব হলো ঐকমত্য কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছে, সেই প্রস্তাবে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি করা।’

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘জুলাই সনদের বিষয়ে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। তবে প্রয়োজনে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত আছি।’

গণতন্ত্র মঞ্চের ভাবনা

জুলাই সনদকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অচলাবস্থার জন্য ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং অন্তর্বর্তী সরকারই দায়ী বলে জানিয়েছে ৬টি রাজনৈতিক দলের জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। মঞ্চের নেতারা বলেছেন, এই সংকট সমাধানের দায়িত্বও সরকারকেই নিতে হবে। একই সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চ দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরির চেষ্টায় ধারাবাহিক আলোচনা চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘এই সংকট সমাধানের জন্য সরকারের যে উদ্যোগ নেওয়া দরকার ছিল, তা না নিয়ে সরকার অনেকটা মান-অভিমানের মতো অবস্থান নিয়েছে। সরকারের এমন মনোভাব মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। সংস্কার কি হবে না? সংস্কার না হলে নির্বাচন কি হবে? যাদের আমরা পরাজিত করেছি, তারা আবার ফিরে আসবে?’

আর নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমদুর রহমান মান্না এক বিবৃতিতে বলেছেন, সরকার কোনোভাবেই দায়িত্ব এড়াতে পারে না। সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারকে রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা করে সমাধানের পথ তৈরি করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রাথমিকে সংগীত ও শরীরচর্চা শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের যে ব্যাখ্যা দিল সরকার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ৪৭
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শরীরচর্চা ও সংগীত শিক্ষক নিয়োগ প্রস্তাব বাতিলের ব্যাখ্যা দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। অল্পসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ে কার্যকর কোনো সুফল বয়ে আনবে না বিধায় এটি বাতিল করা হয়েছে মর্মে জানানো হয়।

আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া এক পোস্টে এমনটি জানানো হয়েছে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শরীরচর্চা ও সংগীত শিক্ষক নিয়োগ প্রস্তাব বাতিলের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের নজরে এসেছে।

সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ২ হাজার ৫০০ ক্লাস্টারে সমসংখ্যক শরীরচর্চা ও সংগীত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি সচিব কমিটির সুপারিশে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।

সচিব কমিটি মনে করে, প্রকল্পটির পরিকল্পনায় ত্রুটি ছিল। এত অল্পসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ে কার্যকর কোনো সুফল বয়ে আনবে না এবং এতে বৈষম্যের সৃষ্টি হবে। সারা দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের অধিকাংশেই প্রস্তাবিত নিয়োগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। ক্লাস্টারভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হলে একই শিক্ষককে ২০টির বেশি বিদ্যালয়ে যুগপৎভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এর ফলে তাঁর পক্ষে কর্মঘণ্টা ম্যানেজ করা সম্ভব হবে না বলে সচিব কমিটি মনে করে।

পরে অর্থের সংস্থান সাপেক্ষে সব স্কুলে এ রকম নতুন বিষয়ের শিক্ষকের পদ সৃজন ও সেসব পদে নিয়োগদানের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে বলে কমিটি অভিমত ব্যক্ত করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পদোন্নতির প্যানেলভুক্ত হাজারের বেশি বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ৪৯
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সারা দেশের অধস্তন আদালতের হাজারের বেশি বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা পদোন্নতির জন্য প্যানেলভুক্ত হয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের একটি সূত্র আজকের পত্রিকাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। আজ মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের সভাপতিত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের সব বিচারপতির অংশগ্রহণে ফুল কোর্ট সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সভায় তাঁদের পদোন্নতির জন্য প্যানেলভুক্ত করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদোন্নতির জন্য প্যানেলে ছিলেন– অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ থেকে জেলা ও দায়রা জজ পদের জন্য ৩৪৫ জন, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ থেকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পদে ২০৭ এবং সিনিয়র সহকারী জজ থেকে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ পদে ৫৫১ জন। সব মিলিয়ে পদোন্নতির প্যানেলে ১ হাজার ১০৩ জন বিচারিক কর্মকর্তার নাম থাকলেও নানা কারণে বেশ কয়েকজনের নাম অনুমোদন হয়নি।

২০২৬ সালের সুপ্রিম কোর্টের ক্যালেন্ডারও ফুল কোর্ট সভায় অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল। তবে সরকারি ক্যালেন্ডার এখনো প্রকাশিত না হওয়ায় তা অনুমোদিত হয়নি।

সম্প্রতি ১ হাজার ১০৩ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে পদোন্নতির প্যানেলভুক্ত করতে আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়। পদোন্নতির প্যানেলে ছিল কয়েকজন বিতর্কিত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার নাম, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অনুসন্ধান চলমান।

বিচারকদের পদোন্নতি যেভাবে হয়

সব মন্ত্রণালয়ে পদোন্নতির জন্য ডিপিসি (বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটি) থাকে। ওই কমিটি পদোন্নতির প্যানেল চূড়ান্ত করার পর তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে যায়। রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে এক দিনেই প্যানেলের সবার পদোন্নতির জিও জারি করা হয়।

তবে বিচারকদের ক্ষেত্রে প্যানেল চূড়ান্ত করার পর তা সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয়। বাছাই কমিটির মাধ্যমে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় ওঠে। সভায় অনুমোদন পাওয়ার পর তা আবার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় থেকে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে যায়। রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে ওই প্যানেল আইন মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত থাকে এবং পদ খালি হওয়ার পর সময়ে সময়ে জিও জারি করা হয়।

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বিধিমালা ২০০৭ অনুযায়ী, সিনিয়র সহকারী জজ পদে পদোন্নতির জন্য সহকারী জজদের এই পদে চার বছর দায়িত্ব পালনের শর্ত পূরণ করতে হয়। সিনিয়র সহকারী জজদের যুগ্ম জেলা জজ পদে পদোন্নতির জন্য দুই বছর, যুগ্ম জেলা জজ থেকে অতিরিক্ত জেলা জজ পদে পদোন্নতির জন্য দুই বছর এবং অতিরিক্ত জেলা জজ থেকে জেলা জজ পদে পদোন্নতির জন্য দুই বছরের শর্ত পূরণ করতে হয়। তবে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হয় না। অনেকেই বছরের পর বছর প্যানেলভুক্ত হয়ে থাকেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৪৫ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ: নিজাম হাজারীর স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ২১: ০২
ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা নিজাম উদ্দিন হাজারী এবং তাঁর স্ত্রী নুরজাহান বেগম। ছবি: সংগৃহীত
ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা নিজাম উদ্দিন হাজারী এবং তাঁর স্ত্রী নুরজাহান বেগম। ছবি: সংগৃহীত

ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা নিজাম উদ্দিন হাজারীর স্ত্রী নুরজাহান বেগমের বিরুদ্ধে ৪৫ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ ও ৪৩ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আজ মঙ্গলবার দুদকের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।

দুদক মহাপরিচালক বলেন, অভিযুক্ত নুরজাহান বেগমের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সন্দেহজনক লেনদেনের পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে। কমিশন তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমোদন দিয়েছে।

দুদকের অভিযোগে বলা হয়, নুরজাহান বেগম দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ৫৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকার সম্পদের ঘোষণা দেন। তবে যাচাই-বাছাইয়ে দেখা যায়, তাঁর আয় ও পারিবারিক ব্যয়ের তুলনায় ৪৫ কোটি ৩৪ লাখ ১৩ হাজার ৮৫১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ মেলে।

এ ছাড়া ২০১৯ সালের মে থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত নুরজাহান বেগমের ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের একটি হিসাবে ৪৩ কোটি ৩১ লাখ ৪৭ হাজার ৮০৩ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন শনাক্ত করেছে দুদক।

এ তথ্য আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যাচাই করা হয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধানসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, নিজাম উদ্দিন হাজারী ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে এর আগেও অবৈধ সম্পদ অর্জন, ফেনী ও ঢাকায় নামে-বেনামে জমি ও ভবন ক্রয় এবং বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে একাধিক তদন্ত চলছে।

সূত্রটি আরও জানায়, দুদকে পাঠানো সম্পদ বিবরণীতে ঘোষিত তথ্য ও বাস্তব সম্পদের মধ্যে বিশাল অমিল পাওয়া যায়। এর ধারাবাহিকতায় নুরজাহান বেগমের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ফেনী-২ আসন থেকে টানা তিনবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নিজাম উদ্দিন হাজারী। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দখলদারত্বের অভিযোগ রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত