Ajker Patrika

অপুষ্টি নিয়ে শিশুর জন্ম, ঝুঁকিতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম

  • গর্ভবতী মায়েরা পুষ্টিহীন খাবারে নির্ভর করেই গর্ভকাল পার করেন।
  • অল্প আয়ের কারণে বেশি অপুষ্টিতে চর এলাকার মায়েরা।
  • অপুষ্টিতে জন্ম নেওয়া শিশুদের শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম।
আব্দুল বাশির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০২৫, ০৭: ৩২
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

‘জুন মাসের ৬ তারিখ আমার ছেলের জন্মের সময় ওজন ছিল মাত্র ১ কেজি ৭০০ গ্রাম। ডাক্তাররা বলেছিল, মায়ের শরীর ঠিকমতো শক্তি পায়নি বলেই শিশুটি দুর্বল হয়েছে। এখন সামান্য ঠান্ডা লাগলেই বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়ে।’—কথাগুলো বলছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বেগপুর গ্রামের ইতি খাতুন (২২)।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সন্তান প্রসব করেন তিনি। কিন্তু নবজাতকের ওজন কম হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র স্থানান্তরের পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। এদিকে গত ৭ জুন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই সন্তান প্রসব করেন উম্মে তোহরা (৩০) নামের আরেক প্রসূতি। জন্মের সময় তাঁর সন্তানের ওজন ছিল ২ কেজি।

গৃহবধূ ইতি ও উম্মে তোহরার ভাষ্য, শুধু তাঁদের পরিবারের নয়, জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিনই এমন দুর্বল শিশু জন্ম নিচ্ছে। সরকারি হিসাব বলছে, প্রতিবছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে কয়েক হাজার শিশু জন্ম নেয়। তাদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জন্ম নিচ্ছে অপুষ্ট অবস্থায়, যাদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম।

২০২৪ সালের সরকারি তথ্যমতে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে ৪ হাজার ৫০১টি শিশু জন্ম নেয়। তাদের মধ্যে ৭৫টি শিশুর ওজন আড়াই কেজির কম। এ ছাড়া শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ হাজার ৯২৩টি শিশু জন্ম নিয়েছে। তাদের মধ্যে ৩০ জনের ওজন কম।

অন্যদিকে, নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩৫৬টি শিশু জন্মগ্রহণ করে। তাদের মধ্যে ২০টির ওজন কম। এ ছাড়া ভোলাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জন্ম নেওয়া ৪৩৮ শিশুর মধ্যে ১৮টির শিশুর ওজন কম। আর গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫১৮ শিশু জন্মগ্রহণ করে। তাদের মধ্যে ৩১ শিশুর ওজন ছিল আড়াই কেজির নিচে।

দারিদ্র্য ও অজ্ঞতার ফাঁদে শিশু

চাঁপাইনবাবগঞ্জ মূলত কৃষিনির্ভর এলাকা। আম, ধান আর গম চাষের জন্য বিখ্যাত হলেও এখানকার অনেক পরিবার দারিদ্র্যের শিকার। কৃষকেরা নিজেরা মাঠে পরিশ্রম করলেও তাদের পরিবারের খাবার তালিকায় থাকে মূলত ভাত, ডাল আর সবজি। মাছ, মাংস বা দুধ তাদের নাগালের বাইরে। ফলে গর্ভবতী মায়েরা পুষ্টিহীন খাবারের ওপর নির্ভর করেই গর্ভকাল পার করেন।

শিক্ষক রুহুল আমীন বলেন, ‘খাদ্যের অভাবই একমাত্র সমস্যা নয়, সচেতনতারও বড় ঘাটতি আছে। অনেক মা জানেন না গর্ভাবস্থায় কেমন খাবার খেতে হয় কিংবা নিয়মিত ডাক্তার দেখানো কতটা জরুরি।’

চিকিৎসকদের শঙ্কা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালের শিশুবিশেষজ্ঞ মাহফুজ রায়হান বলেন, অপুষ্টিতে জন্ম নেওয়া শিশুদের শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকে। তারা সহজে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, হাইপোথার্মিয়া, রক্তে ইনফেকশন, জন্ডিসের মতো রোগে আক্রান্ত হয়। দীর্ঘ মেয়াদে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হয়। কানে কম শুনতে পায়। চোখে রেটিনার সমস্যা হয়।

ডা. মাহফুজ রায়হানের মতে, সমস্যার মূল কারণ তিনটি—গর্ভবতী মায়েদের সুষম খাদ্যের অভাব, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সেবা না পাওয়া, সামাজিক কুসংস্কার ও সচেতনতার অভাব।

সরকারি উদ্যোগ ও সীমাবদ্ধতা

জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয় জানিয়েছে, কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে গর্ভবতী মায়েদের জন্য বিনা মূল্যে চিকিৎসা ও ভিটামিন দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক মা সময়মতো এসব সেবা নেন না।

সিভিল সার্জন এ কে এম শাহাব উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি প্রত্যেক মাকে মাতৃত্বকালীন কমপক্ষে চারবার চেকআপের আওতায় আনতে। কিন্তু অনেকে সামাজিক এবং আর্থিক কারণে হাসপাতালে আসেন না।’

জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় মত

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদরের পার্বতীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ একা কিছু করতে পারবে না। সমাজের মানুষকে সচেতন হতে হবে।

চরাঞ্চলের বাসিন্দা ও সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুল বারী বলেন,‘শিশু বয়সেই সন্তান প্রসব করছে অনেক মা। সচেতনতার অভাব, অল্প আয়ের কারণে চর এলাকার মায়েরা বেশি অপুষ্টিতে ভুগছেন। এসব এলাকার গর্ভবতী মায়েদের প্রসব করা সন্তানের অনেকে অপুষ্টিতে ভোগে।’

বিশেষজ্ঞের দৃষ্টিতে সমাধান

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন বলেন, গর্ভবতী মায়েদের জন্য প্রোটিন, আয়রন ও ক্যালসিয়াম অত্যন্ত জরুরি। এ ছাড়া দৈনিক খাদ্যতালিকায় দুধ, ডিম, ডাল থাকতে হবে। তার সঙ্গে সবজি, মাছ ও মাংস থাকবে। এ ছাড়া ফলমূল ও আয়োডিনযুক্ত লবণ খেতে হবে। এসব খাদ্য তালিকায় থাকলে মায়ের পুষ্টির ঘাটতি হবে না। মায়ের পুষ্টি নিশ্চিত হলেই শিশুর পুষ্টি সম্পন্ন হবে। শিশুদের সুস্থ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হলে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।

মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা ওয়ার্ল্ড ভিশনের চাঁপাইনবাবগঞ্জের এরিয়া প্রোগ্রাম ম্যানেজার জেমস বিশ্বাস বলেন, সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দরিদ্র পরিবারগুলোকে সরাসরি পুষ্টি সহায়তা দিতে হবে। নইলে পরিবর্তন আসবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গ্রেপ্তার হয়ে অবাক ডন, বললেন—‘স্যার আমাকে কীভাবে গ্রেপ্তার করলেন’

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ফরিদপুরের আলোচিত ডন শরিফ খ্যাত শরীফুল ইসলামকে (ডানে) সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফরিদপুরের আলোচিত ডন শরিফ খ্যাত শরীফুল ইসলামকে (ডানে) সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘স্যার, আমাকে কীভাবে গ্রেপ্তার করলেন? আমাকে তো গ্রেপ্তার করার কথা না।’ র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) সদস্যদের হাতে গ্রেপ্তারের সময় অবাক হয়ে এমন প্রশ্ন করেন ফরিদপুরের আলোচিত ডন শরিফ খ্যাত শরীফুল ইসলাম (৩৮)। তাঁর মতে, ‘ছোট একটা ভুলের’ কারণে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন।

র‍্যাব কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ডন শরিফ বলেন, ‘আমার ছোট একটা ভুল হয়েছে। আরওয়ানফাইভ মোটরসাইকেল থাকলে আমাকে গ্রেপ্তার করতে পারতেন না, আপনাদের ওপর দিয়ে চালিয়ে চলে যেতাম।’

ফরিদপুরের আলোচিত ডন শরিফ খ্যাত শরীফুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের পর আজ শনিবার র‍্যাবের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফরিদপুরের আলোচিত ডন শরিফ খ্যাত শরীফুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের পর আজ শনিবার র‍্যাবের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

আজ শনিবার দুপুরে ফরিদপুর র‍্যাব ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনে শরীফুলকে গ্রেপ্তারের বর্ণনা দেন র‍্যাব-১০-এর অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, অপরাধ জগতে ডন শরিফ খ্যাত শরীফুল ইসলামের এতটাই দক্ষতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁকে কখনো গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবে, এটা তিনি ভাবতেও পারেননি। এ জন্য গ্রেপ্তারের সময় তিনি নিজেই অবাক হয়ে যান।

এর আগে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ফরিদপুরের সালথা উপজেলা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেন র‍্যাবের সদস্যরা। শরীফুল ফরিদপুর জেলা শহরের কবিরপুর এলাকার মৃত ফারুক শেখের ছেলে।

র‍্যাব জানিয়েছে, শরীফুলের সঙ্গে রায়হান মোল্যা (২৫) নামের তাঁর এক সহযোগীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় দেড় কেজি গাঁজা ও ছিনতাইয় কাজে ব্যবহৃত একটি খেলনা পিস্তল, সুইচ গিয়ার চাকু, ক্ষুর, কাঁচি ও একটি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ছিনতাইয় কাজে ব্যবহৃত আরওয়ানফাইভ ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। মোটরসাইকেলটি সম্প্রতি পাবনা থেকে ক্রয়ের নামে ট্রায়াল দেওয়ার সময় নিয়ে পালিয়ে আসেন শরীফুল।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব কর্মকর্তা জানান, গত ২১ অক্টোবর শহরের উত্তর শোভারামপুরে এক গৃহবধূকে পিস্তল ঠেকিয়ে কানের দুল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। সে ঘটনার একটি সিসি ক্যামেরার দৃশ্য ব্যাপক আলোচিত হয়। ওই ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা করা হলে ছায়াতদন্ত শুরু করে র‍্যাব। তাতে শরীফুলের সম্পৃক্ততা পাওয়ার যায়। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হলে তিনি বারবার অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকেন।

ডন শরীফুলের উত্থান যেভাবে:

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ছোটবেলা থেকেই শরীফুল অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ২০০৮ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি মামলার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো পুলিশের খাতায় নাম আসে তাঁর। এরপর থেকে তিনি অপরাধ জগতে ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়েন। মাদক কারবার, খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, চুরির মতো অপরাধ কর্মকাণ্ডে বারবার নাম আসে তাঁর। এসব ঘটনায় ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানায় আটটি মামলাসহ ১০টি মামলা রয়েছে তাঁর নামে। তিনি এ পর্যন্ত চারবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন।

র‍্যাবসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি শহরের ঝিলটুলী এলাকায় ভোরে ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত হন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টাফ নার্স অরুণিমা ভৌমিক। ওই দিন ভোরে ডিউটি শেষে রিকশায় বাসায় ফিরছিলেন অরুণিমা। তখন শরীফুলসহ দুজন ছিনতাইকারী তাঁর হাতে থাকা ব্যাগ ছিনিয়ে নেন। এ সময় অরুণিমা রিকশা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় সিসি ক্যামেরা ফুটেজের দৃশ্যে শরীফুলের উপস্থিতি দেখা যায়। পরে তিনি আলোচনায় আসেন। ছিনতাই ও হত্যার ঘটনায় মামলা করা হলে ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি শরীফুলসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব জানায়, অরুণিমা হত্যা মামলায় দুই বছরের মধ্যেই জামিনে বের হয়ে আসেন শরীফুল। সর্বশেষ ২০২৩ সালে তিনি আরেকবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরে তিনি আবার জামিনে বেরিয়ে দুই বছর ধরে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। শরীফুলের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তাঁকে থানায় হস্তান্তর করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসির কোনো নীতিমালা নেই: হাসনাত আবদুল্লাহ

বরগুনা প্রতিনিধি
হাসনাত আবদুল্লাহ। ফাইল ছবি
হাসনাত আবদুল্লাহ। ফাইল ছবি

নির্বাচন কমিশনের প্রতীকের তালিকায় শাপলাকলি প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপির) দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনে ব্যক্তিসর্বস্ব স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত আমরা দেখেছি। আমরা শুরু থেকে বলেছি, এই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কোনো নীতিমালা নেই। তারা কোন নীতিমালার আন্ডারে শাপলাকলি প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করেছে? কোন নীতিমালার কারণে তারা শাপলাকে অন্তর্ভুক্ত করবে না? এটা কি তারা স্পস্ট করেছে? করেনি। অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে কোন নীতিমালার কারণে তাদের প্রতীক দিয়েছে, সেটা কি স্পষ্ট করেছে? সেটাও করেনি। তার মানে এ নির্বাচন কমিশনের মার্কা সংযুক্তিকরণ বা না করণের যে বিষয়টি...মধ্যযুগীয়ভাবে এ বিষয়গুলো ডিল করছে নির্বাচন কমিশন।’

আজ শনিবার (১ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে বরগুনা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে আয়োজিত সমন্বয় সভায় সাংবাদিকদের সামনে এসব কথা বলেন হাসনাত আবদুল্লাহ।

এনসিপির এ নেতা বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, নির্বাচন কমিশনে অনেকগুলো পক্ষের শক্তি জড়িত।’ তিনি বলেন, যারা বিএনপিপন্থী কমিশনার আছেন, তাঁরা বিএনপির পারপাস সার্ভ করেন, যাঁরা জামায়াতপন্থী আছেন, তাঁরা জামায়াতের পারপাস সার্ভ করেন। আর যাঁরা আর্মিপন্থী নির্বাচন কমিশনার আছেন, তাঁরা আর্মিদের পারপাস সার্ভ করেন। এই কমিশনে আবার অসংখ্য আওয়ামী লীগপন্থী চাকরিজীবী রয়েছেন। তাঁদের বিষয়ে কি নির্বাচন কমিশনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে? নেয়নি।

হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘আমরা এনসিপি—আমাদের অবস্থান পরিবর্তন করিনি। নির্বাচন কমিশন তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে স্বেচ্ছাচারীভাবে। সংস্কার নিয়ে আর আমাদের মার্কা নিয়ে আমরা সব সময় একটা অবস্থানে ছিলাম।’

এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘যদি আমাদের শাপলা বরাদ্দ না দেন, তার ব্যাখ্যা দিতে হবে। আইনগত জায়গা থেকে ব্যাখ্যা দিতে হবে। নির্বাচন কমিশন বলেছে, “আমরা কেন শাপলা দিব না তার ব্যাখ্যা দিব না।” এটা কি কোনোভাবে সম্ভব?’

হাসনাত বলেন, ‘ব্যাখ্যাবিহীন রাষ্ট্র ৫ আগস্টের আগে ছিল। হাসিনা যখন চালাইত, তখন ব্যাখ্যাবিহীন চালাইত, জবাবদিহিবিহীন চালাইত। কিন্তু ৫ আগস্টের পরে এই নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে থাকে তারা জবাবদিহিবিহীন কোনো একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিবে, আর আমরা সেটা মেনে নিব, সেটা সম্ভব না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে নারীর মৃত্যু

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে অজ্ঞাতনামা এক নারী মারা গেছেন। শনিবার (১ নভেম্বর) দুপুরে সদর উপজেলার চিনাইর এলাকায় রেললাইনের পাশ থেকে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। আখাউড়া রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম শফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ওসি বলেন, সদর উপজেলার চিনাইর এলাকায় রেললাইনের পাশে এক নারীর লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন খবর দেন। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাতভর বৃষ্টিতে জলমগ্ন চাঁপাইনবাবগঞ্জ, শহরবাসী ও কৃষকের দুর্ভোগ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
রাতভর বৃষ্টিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাতভর বৃষ্টিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাতভর ভারী বৃষ্টিতে হাঁটুপানির নিচে ডুবেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর। শহরের অনেক বাসাবাড়ি, সরকারি অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে শহরবাসী চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। একই সঙ্গে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ধান ও শীতকালীন সবজির খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে অনেক পুকুরের মাছ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে ২৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জেলার অন্যান্য উপজেলায়ও ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে শিবগঞ্জে ১৭৫ মিলিমিটার, গোমস্তাপুরে ১৮০, নাচোলে ১৭৫ এবং ভোলাহাটে ১৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রগুলো জানিয়েছে, জেলার পাঁচটি উপজেলায় রোপা আমন ২ হাজার ও ২৩৫ হেক্টর আর রবিশস্য ২ হাজার ১৪০ হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যা ৭টা থেকে আজ সকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে শহরের ক্লাব সুপার মার্কেট, নিউমার্কেট, পুরাতন বাজার, নিমতলা, বালুবাগান, আরামবাগ, শান্তিমোড়, স্বরূপনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় হাঁটুপানি জমে যায়। স্বরূপনগর ও রেহাইচর এলাকার বহু বাড়িতে পানি ঢুকে আসবাব নষ্ট হয়েছে।

ভুক্তভোগী বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, পৌরসভার অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে অল্প বৃষ্টিতেই শহর প্লাবিত হয়। কিন্তু সমস্যার স্থায়ী সমাধানে পৌর কর্তৃপক্ষ তেমন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।

পৌর এলাকার বাসিন্দা কলি খাতুন বলেন, ‘বাসার ভেতরে পানি ঢুকে আছে। ঘরের জিনিসপত্র ও চুলা ভিজে গেছে। তাই কোনো রান্নাবান্না করতে পারিনি। বাচ্চাকাচ্চা না খেয়ে আছে। আমরা রাত থেকেই ঘরবন্দী হয়ে পড়েছি।’

গোমস্তাপুর উপজেলার নয়াদিয়াড়ী গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টিতে আমার ধান পানিতে ডুবে আছে। ধান পড়ে গেছে। এ ছাড়া শাকসবজিও ডুবে গেছে। বড় ক্ষতির মুখে পড়লাম ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলেন, চর এলাকার সরিষা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে অনেক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এ ক্ষেত্রে মাছ ব্যবসায়ীরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ ছাড়া ধানেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শহরের পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য কয়েকটি নতুন ড্রেন নির্মাণকাজ চলছে। কাজ শেষ হলে হঠাৎ বৃষ্টিতেও আর এমন জলাবদ্ধতা হবে না।

এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ইয়াছিন আলী আজকের পত্রিকাকে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় গড়ে ১৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে শিষফোটা রোপা আমন, সরিষা, মুড়িকাটা পেঁয়াজ ও শীতকালীন শাকসবজি পানিতে তলিয়ে গেছে।

তিনি আরও জানান, দু-এক দিনের মধ্যে যদি পানি নেমে যায়, তাহলে ফসলের ক্ষতি সীমিত থাকবে। তবে পানি বেশি দিন স্থায়ী হলে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত