Ajker Patrika

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাকে শুভেচ্ছা জানাতে বিমানবন্দরে পলাতক আসামি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২৫, ১৫: ৩১
বিমানবন্দরে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাকে শুভেচ্ছা। ছবি: সংগৃহীত
বিমানবন্দরে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাকে শুভেচ্ছা। ছবি: সংগৃহীত

পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু লুট ও গুলিবর্ষণের অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শামীম সরকারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ১১ জুলাই কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থানায় মামলা করেন কামরুল গাইন (৫৮) নামের এক ব্যক্তি। তাঁর বাড়ি ওই উপজেলার ফয়জুল্লাহপুর গ্রামে।

এর আগে ৫ জুলাই পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু লুটের সময় বাধা দিলে গ্রামবাসীর ওপর গুলিবর্ষণের এই ঘটনা ঘটে।

এদিকে মামলার প্রধান আসামি হয়েও প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা শামীম সরকার। তিনি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার সবেরহাট বামনডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। আজ বুধবার পর্যন্ত তিনি আদালত থেকে কোনো ধরনের জামিন নেননি বলে জানা গেছে।

পুলিশ বলছে, আসামিদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে শামীম সরকার আজ সকালেই ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

এই দিন রাজশাহী এলে বিমানবন্দরে নেতা-কর্মীদের নিয়ে নাছিরকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে অভর্থ্যনা জানান শামীম। সেই ছবি তিনি নিজের ফেসবুক আইডিতেও পোস্ট দিয়েছেন।

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) রেজাউল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছিল, ঘটনা সত্য। আমি মামলাটির প্রাথমিক তদন্ত পর্যায়ে আছি। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। তবে এ পর্যন্ত কাউকে ধরতে পারিনি। তারা পলাতক।’

মামলার অন্য আসামিরা হলেন বাঘা উপজেলার চাঁনপুর গ্রামের মো. বেল্লাল, মুন্তাজ মণ্ডল, টুটুল মণ্ডল, মো. লাভলু ও কিশোরপুর গ্রামের সামিউল ইসলাম, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গ্রামের মো. চঞ্চল এবং নাটোরের লালপুর উপজেলার পলাশী গ্রামের সোহেল কারি।

তাঁদের মধ্যে লাভলু ও বেল্লাল আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের ঘনিষ্ঠ। তাঁদের বিরুদ্ধে মাদক চোরাচালান ও ইমো হ্যাক করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অন্য আসামিরা তাঁদের সহযোগী।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা বাঘা উপজেলার চর আলাইপুর এলাকায় বালুমহাল ইজারা নিয়েছেন। কিন্তু সেখান থেকে বালু উত্তোলন না করে তাঁরা পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের বালুবাহী নৌকার ঢেউয়ের কারণে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার জুনিয়াদহ ফয়জুল্লাহপুর গ্রামের অনেক জায়গায় ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।

এ কারণে এলাকাবাসী বারবার নৌকার মাঝিদের ওই এলাকা থেকে বালু না তোলার জন্য বলে আসছিলেন। কিন্তু তাঁরা কোনো পদক্ষেপ নেননি। তাঁরা জোরপূর্বক ওই এলাকা থেকেই বালু তুলে আসছিলেন।

আরও বলা হয়, এর জেরে ৫ জুলাই আসামি শামীম সরকারের যোগসাজশ, পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় তিনিসহ অন্য আসামিরা স্পিডবোট নিয়ে জুনিয়াদহ ফয়জুল্লাহপুর যান। তাঁদের হাতে ছিল পিস্তল, শটগান, বন্দুকসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র। তাঁরা এলাকাবাসীকে ভয় দেখাতে অতর্কিতভাবে প্রকাশ্যে এলোপাতাড়িভাবে গুলিবর্ষণ শুরু করেন। আসামি বেল্লাল পিস্তল, চঞ্চল শটগান ও মুন্তাজ বন্দুক দিয়ে গুলি ছুড়তে থাকেন। এতে এলাকাবাসী ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।

তবে মামলার বাদী কামরুল গাইনের ভাই আমিরুল গাইন (৪৮) পিঠে গুলিবিদ্ধ হন। এ ছাড়া আমিরুলের পেটে ও বাঁ হাতের আঙুলে গুলি লেগে বের হয়ে যায়। আসামিদের ছোড়া গুলি এলাকার অনেক মানুষের বাড়িঘরের সামনে পড়ে থাকে। এভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি করে সন্ত্রাসী বাহিনী। বালু তুলতে আর বাধা দেওয়া হলে খুন-জখমের হুমকি দিয়ে তাঁরা চলে আসেন।

বাদী কামরুল গাইন আজকের পত্রিকা'কে বলেন, ‘শামীম সরকারের নির্দেশনায় গ্রামবাসীর ওপর প্রকাশ্যেই গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। কিন্তু মামলা করার পরও এখন পর্যন্ত আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়া দুঃখজনক। তারা গ্রেপ্তার না হওয়ায় আমরা আতঙ্কে আছি। যেকোনো সময় তারা আবার আসতে পারে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা শামীম সরকার বলেন, ‘আমি আজকালের মধ্যেই মামলার বিষয়টা জেনেছি। আমি ঘটনার সম্পর্কে কিছুই জানি না। মামলার বাদীকেও চিনি না। আমার মনে হয়, এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যারা রাজনীতি করে, তারা এভাবে প্রকাশ্যে গোলাগুলি করতে পারে না। মামলা হলে জামিন নিতে হবে।’

বালুমহাল নিয়ন্ত্রণের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার নিজের নামে কোনো লাইসেন্স নেই। আমি বালুর ব্যবসা করি না। আমার কিছু ছেলেপিলে আছে। তারা করে।’

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীনকে কয়েক দফা যোগাযোগের জন্য ফোন করা হলেও তাঁরা ধরেননি।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত