Ajker Patrika

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে পটুয়াখালীর ২৪ গ্রাম প্লাবিত 

পটুয়াখালী প্রতিনিধি
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে পটুয়াখালীর ২৪ গ্রাম প্লাবিত 

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং নদী বন্দরকে ৪ নম্বর নৌ-মহাবিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পটুয়াখালীতে রিমালের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিকেল ৪টার পর থেকে প্রবলবেগে বাতাস বইছে। কখনো কখনো তীব্রবেগে ঝড় বাতাস হচ্ছে। এতে উত্তাল হয়ে উঠেছে নদ-নদী ও বঙ্গোপসাগর। বাতাসের সঙ্গে কখনো কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। পটুয়াখালী-ঢাকা নৌরুটসহ সকল রুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। 
 
এদিকে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সাগর তীরের রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ও চরমোন্তাজ ইউনিয়ন এবং কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে। তলিয়ে গেছে শতাধিক ঘরবাড়ি। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অন্তত ২০ হাজার মানুষ। 

বিশেষ করে রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের দক্ষিণ চরমোন্তাজ, চর আন্ডা, নয়ার চর, বৌ-বাজার, মোল্লার গ্রাম ও উত্তর চরমোন্তাজসহ ১০টি গ্রাম, একই উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের উত্তর চালিতাবুনিয়া, গরুভাঙ্গা, চিনাবুনিয়া, মরাজঙ্গিসহ ৫টি গ্রাম এবং কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া, মঞ্জুপাড়া, চর চান্দুপাড়া, হাসনাপাড়া, চন্দপাড়া, পশুরিবুনিয়া, ছোট পাঁচ নম্বর, বড় পাঁচ নম্বর ও বানাতিসহ ৯টি গ্রামের ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে ২৪টি গ্রামের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। 

এ ছাড়া দুপুরের দিকে কুয়াকাটার অনন্তপাড়া এলাকার বেড়িবাঁধের বাইরের বাসিন্দা মো. শরীফুল ইসলাম শরীফ (২৪) নামে এক জেলে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার সময় জোয়ারের পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। পরে এক ঘণ্টা পর লাশ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। এর ফলে চরম আতঙ্কে ও ঝুঁকিতে রয়েছে চালিতাবুনিয়া, চরমোন্তাজ ও লালুয়া এই তিনটি ইউনিয়নের অর্ধ লাখ মানুষ। তারা এখন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। 

রাঙ্গাবালীর চালিতাবুনিয়া এলাকার কৃষক মো. কবির সরদার (৫৫) বলেন, ‘ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে এই এলাকার অনেক মানুষের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। এখনো ঘরের চার পাশে পানি। অথচ রাতের জোয়ারও ঘনিয়ে আসছে। তাই কি হয় শেষপর্যন্ত বুঝতে পারি না। আমরা এখন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি।’ 

এ ব্যাপারে কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে আমার ইউনিয়নের এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অরক্ষিত রয়েছে। মূলত ওই জায়গা দিয়ে প্রবলবেগে জোয়ারের পানি ঢুকে অন্তত ৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। ওই এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ মেরামত করা জরুরি।’ 

পটুয়াখালীতে বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা স্থানীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবা সুখী জানান, ঘূর্ণিঝড়ের রিমালের অগ্রভাগ ইতিমধ্যে আঘাত হানা শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসন উপকূলের লোকজনকে নিরাপদে চলে আসার জন্য মাইকিং করছে এবং রেডক্রিসেন্ট ও সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এ জন্য ৭০৩টি আশ্রয় কেন্দ্র, ৩৫টি মুজিবকেল্লা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ৭৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। আপত্কালীন সময়ের জন্য নগদ ২৪ লাখ ৭ হাজার ৫০০ টাকা, ৭৩০ মেট্রিক টন জিআর এর চাল বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ১০ লাখ টাকা শিশু খাদ্য’র জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।’

জেলা প্রশাসক মো. নূর কুতুবুল আলম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে এবং উপকূল থেকে লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে আনার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রেডক্রিসেন্ট ও সিপিপির স্বেচ্ছাসেবক টিম, মেডিকেল টিমসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু প্রস্তুত রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লক্ষ্মীপুরে আগুনে পুড়ল ২০ দোকান

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
আজ ভোরে রামগতির আলেকজান্ডার বাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ ভোরে রামগতির আলেকজান্ডার বাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ছবি: আজকের পত্রিকা

লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়ে গেছে। এতে কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা। শুক্রবার ভোরের দিকে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, শুক্রবার ভোরে বাজারের ব্যবসায়ী রাসেল হোসেনের মুদিদোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত। মুহূর্তের মধ্যে আগুন আশপাশের দোকানগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এতে মুদি, গার্মেন্টস, মোবাইল, ক্রোকারিজ, কসমেটিকসের দোকানসহ অন্তত ২০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়ে যায়। এই অগ্নিকাণ্ডে কোটি টাকার ক্ষতি হয় বলে দাবি করেন ক্ষতিগ্রস্ত দোকানের মালিকেরা।

রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ২০টি দোকান পুড়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকার বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রামগতি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার খোকন মজুমদার জানান, শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। দুটি ইউনিট দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে।

রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, অগ্নিকাণ্ডে বেশ কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এরপর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পড়াশোনার পাশাপাশি কোয়েল পাখির খামার গড়ে কলেজছাত্রের মাসিক আয় ৬০ হাজার টাকা

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
কোয়েলের বাচ্চা ফোটার পর বাচ্চা বের করছেন সাগর ও তাঁর বন্ধু্। ছবি: আজকের পত্রিকা
কোয়েলের বাচ্চা ফোটার পর বাচ্চা বের করছেন সাগর ও তাঁর বন্ধু্। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইচ্ছাশক্তি, শ্রম ও মনোবলকে পুঁজি করে নিজের ভাগ্য বদলেছেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোড়াদাইড় গ্রামের কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী বি এম সাগর ভূঁইয়া। মাত্র ৫০০ কোয়েল পাখি নিয়ে ব্যবসা শুরু করে দুই বছরের মধ্যে তিনি এখন প্রতি মাসে প্রায় ১৫ হাজার পাখি বিক্রি করছেন।

খামারে কোয়েল পাখি। ছবি: আজকের পত্রিকা
খামারে কোয়েল পাখি। ছবি: আজকের পত্রিকা

কর্মচারী ও অন্যান্য খরচ বাদে তাঁর ফার্ম থেকে মাসে আয় হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। সাগরের এই সাফল্য দেখে এলাকার অনেক যুবক এখন কোয়েল পালনে আগ্রহী হচ্ছেন।

উদ্যোক্তা বি এম সাগর ভূঁইয়া জানান, তিনি কখনো চাকরির বাঁধাধরা নিয়মের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে চাননি। নিজে কিছু করার স্বপ্ন দেখতেন। পরিবারের সদস্যরা অনেকেই চাকরি বা বিদেশে থেকে ভালো আয় করেন। তাঁর বাবা বেলায়েত ভূঁইয়া যখন তাঁকে উন্নত জীবনের জন্য বিদেশে পাঠাতে চাইলেন, তখন তিনি রাজি হননি। পরিবারের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তিনি নিজ গ্রামে থেকে যান। পড়াশোনার পাশাপাশি শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং।

ফ্রিল্যান্সিং করে জমানো ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে দুই বছর আগে নিজেদের একটি পরিত্যক্ত টিনের ঘরে মাত্র ৫০০ মুরগির বাচ্চা কিনে খামার ব্যবসা শুরু করেন সাগর। কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের অভাবে প্রথম উদ্যোগেই তাঁর প্রায় অর্ধেক টাকা লোকসান হয়।

তবে অদম্য এই যুবক হাল ছাড়েননি। লোকসানের কথা পরিবারকে না জানিয়ে নতুন উদ্যমে শুরু করেন কোয়েল পাখির খামার, যার নাম দেন ‘ভূঁইয়া অ্যাগ্রো ফার্ম’।

সাগর ভূঁইয়া জানান, শুরুতে ৫০০ কোয়েল পাখি নিয়ে খামার শুরু করলেও এখন তাঁর খামারে প্রায় দেড় হাজার কোয়েল পাখি রয়েছে। প্রতিদিন এসব পাখি থেকে প্রায় ৯০০ ডিম সংগ্রহ করা হয়। এই ডিম ফোটানোর জন্য তিনি একটি ইনকিউবেটর মেশিন কিনেছেন, যা দিয়ে প্রতি মাসে ২০ হাজার বাচ্চা ফোটানো হয়।

বর্তমানে সাগর প্রতি মাসে প্রায় ১৫ হাজার কোয়েল পাখি বিক্রি করেন। প্রতিটি পাখিতে খরচ বাদে তাঁর ৭ থেকে ১০ টাকা লাভ থাকে। তিনি জেলাসহ বিভিন্ন স্থানে পাখি বিক্রি করেন।

সাগরের সহপাঠী আহম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘সাগর ছোটবেলা থেকেই সৃজনশীল মনের ছিল। সে সব সময় বলত, নিজে কিছু করবে। আমিও পড়াশোনার পাশাপাশি তাকে খামারের বিভিন্ন কাজে সহায়তা করি। সাগরের সফলতা দেখে আমি কোয়েল পালন শিখে নিজেই একটি খামার করার ইচ্ছা পোষণ করেছি।’

একই গ্রামের নূর আলম কোয়েল পাখির খামার করার জন্য সাগরের কাছ থেকে ২০০ স্ত্রী কোয়েল পাখির বাচ্চা কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘ভূঁইয়া অ্যাগ্রো ফার্মের কোয়েলের মান অনেক ভালো। শীতের দিনে কোয়েলের ডিম বেশি বিক্রি হয় এবং লাভও ভালো হয়। কোনো সমস্যা হলে সাগরের কাছ থেকে পরামর্শ নিই।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোবিন্দ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘কোয়েল পাখি পালন একটি লাভজনক ব্যবসা। একটি কোয়েল পাখি জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে ডিম দিতে শুরু করে এবং বছরে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০টি ডিম দেয়। কোয়েলের মাংস ও ডিম অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ।’

গোবিন্দ চন্দ্র সরকার জানান, এই কোয়েল পাখির খামারিকে খামার সম্পর্কে কোনো পরামর্শের প্রয়োজন হলে গোপালগঞ্জ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সব সময় সহযোগিতা করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুষ্টিয়ায় আর্থিক সংকটে অসুস্থ শিশুকে হত্যা করে মায়ের আত্মহত্যা

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ইনসাফনগর গ্রামে রেশমা খাতুন (২৫) নামের এক গৃহবধূ নিজের আড়াই বছরের অসুস্থ সন্তান লামিয়া খাতুনকে শ্বাসরোধে হত্যার পর গলায় ফাঁস দিয়ে নিজেও আত্মহত্যা করেছেন। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে নিজ বাড়িতে এই ঘটনা ঘটান। নিহত রেশমা খাতুন সৌদিপ্রবাসী রহিদুল ইসলামের স্ত্রী। লামিয়া ছিল তাঁদের একমাত্র সন্তান। খবর পেয়ে দৌলতপুর থানা-পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মা-মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করে।

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শিশু লামিয়া শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিল। অর্থাভাবে তার সঠিক চিকিৎসা করাতে পারেননি মা রেশমা। প্রবাসী স্বামী রহিদুল ইসলাম নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন না বলে অভিযোগ রয়েছে এবং সংসারের খরচ দিতেন না বলে পারিবারিক কলহ চলছিল। ধারণা করা হচ্ছে, আর্থিক সংকট ও অশান্তিতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে রেশমা এই ভয়াবহ সিদ্ধান্ত নেন।

রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল বলেন, শিশুসন্তানকে হত্যার পর মা আত্মহত্যা করেছেন, এটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। সন্ধ্যায় বিষয়টি জানার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করেছে।

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলাইমান শেখ বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আর্থিক সংকট, শিশুর অসুস্থতা ও পারিবারিক অশান্তি থেকে হতাশ হয়ে রেশমা খাতুন তাঁর শিশুকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেছেন। মরদেহ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। শুক্রবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিএইচসিপি কারাগারে: ৫ দিন ধরে কমিউনিটি ক্লিনিক তালাবদ্ধ, স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী

মো. বেল্লাল হোসেন, দশমিনা (পটুয়াখালী)
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪০
তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে আউলিয়াপুর কমিউনিটি ক্লিনিক। গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে আউলিয়াপুর কমিউনিটি ক্লিনিক। গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার রনগোপালদী ইউনিয়নের আউলিয়াপুর কমিউনিটি ক্লিনিকটি গত রোববার থেকে তালাবদ্ধ থাকায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকাবাসী। কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারের (সিএইচসিপি) অনুপস্থিতির কারণে এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) হিসেবে দায়িত্বে আছেন বাহাউদ্দিন লাবু। তিনি আওয়ামী লীগের দশমিনা উপজেলা শাখার সদস্য। গত রোববার মধ্যরাতে দশমিনা থানা পুলিশ ‘ডেভিল হান্ট’ অভিযানে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে তিনি জেলহাজতে আছেন। তাঁর অনুপস্থিতির কারণে ক্লিনিকের সেবাদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

সরেজমিনে গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) দেখা যায়, সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ক্লিনিকটি তালাবদ্ধ। সেবা নিতে আসা রোগীরা দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা পাঁচ দিন ক্লিনিকটি এভাবেই বন্ধ রয়েছে।

আউলিয়াপুর ইউপি সদস্য অসি সমাদ্দার বলেন, ‘ক্লিনিকটি বন্ধ থাকায় মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লোকজন এসে তালাবদ্ধ দেখে ফিরে যাচ্ছে। আমি লোকমুখে শুনেছি, কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্বে যিনি আছেন, তিনি জেলে। আমি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের কাছে দ্রুত সময়ের মধ্যে এলাকার লোকজনের স্বাস্থ্যসেবার জন্য ক্লিনিকটি চালু করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

আউলিয়াপুর গ্রামের সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্যসেবার প্রধান ভরসা এই কমিউনিটি ক্লিনিক। কিন্তু পাঁচ দিন ধরে এটি বন্ধ থাকায় এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমার কয়েক দিন ধরে ঠান্ডা-জ্বর ও মাথাব্যথা। দুই দিন (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) ক্লিনিকে এসে তালা পেয়েছি, তাই চলে যেতে হচ্ছে।’

অপর সেবাগ্রহীতা গাজী হাসান বলেন, ‘এর আগে এভাবে ক্লিনিক কখনো বন্ধ ছিল না। আমার কয়েক দিন ধরে জ্বর, গলাব্যথা ও মাথা ঘোরায়। এখানে এসে ক্লিনিক তালাবদ্ধ পেলাম। আমার মতো অনেকেই প্রতিদিন এসে সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে।’

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্লিনিক বন্ধ থাকার বিষয়টি দেখেছি। ক্লিনিকের দায়িত্বে যিনি আছেন, তিনি জেলে আছেন, এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য দশমিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর চিঠি দিয়েছি।’

মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সেটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে, আমি সেটা বাস্তবায়ন করব। আমার একার কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত