Ajker Patrika

সরেজমিনে জামালপুর: তিন আসনে স্বতন্ত্রের ঢেউ বেসামাল নৌকা

উবায়দুল্লাহ বাদল ও জাহাঙ্গীর আলম, জামালপুর থেকে
সরেজমিনে জামালপুর: তিন আসনে স্বতন্ত্রের ঢেউ বেসামাল নৌকা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুরের পাঁচটি নির্বাচনী আসনের তিনটিতেই (জামালপুর-২, ৪ ও ৫) চরম বেকায়দায় পড়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোর কোন্দলের কারণে এসব আসনে দলের পদধারী অনেক নেতা প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। ফলে নির্বাচনের মাঠে সুবিধা করতে পারছে না নৌকা। অনেকে বলছেন, স্বতন্ত্রের ঢেউয়ে বেসামাল হয়ে পড়েছে নৌকা।

তবে নৌকার জয় অনেকটাই নিশ্চিত জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশীগঞ্জ) ও জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনে।
নৌকার প্রার্থী বেকায়দায় থাকা তিন আসনের একটি জামালপুর-৫ (সদর)। আসনটিতে আওয়ামী লীগের হয়ে এবার নির্বাচন করছেন রাজনীতিতে নতুন মুখ প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ।

অন্যদের মধ্যে জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি), বাংলাদেশ কংগ্রেস, এনপিপি, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) এবং স্বতন্ত্র সাত প্রার্থী থাকলেও আসনটিতে আবুল কালাম আজাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম রেজনু। ঈগল প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া রেজনু জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। জামালপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি এই ব্যবসায়ী নেতা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও মনোনয়ন চেয়ে পাননি।

তখন থেকেই তিনি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। শহরে তাঁর রয়েছে বিশাল কর্মী বাহিনী। এ ছাড়া এবার তাঁর সঙ্গে আছেন সদ্য বহিষ্কৃত জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবু, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ বিন জালাল (প্লাবন), পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নুর হোসেন আবহানী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মনু, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাসুদ রানা প্রমুখ।

এর বাইরেও নৌকার মনোনয়ন চেয়ে পাননি এমন অনেক প্রার্থীর ঈগলের প্রতি সমর্থন আছে বলে দাবি করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম রেজনু। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নৌকার মনোনয়ন চেয়ে পাননি এমন অনেকে আমাকে সমর্থন দিচ্ছেন। এর কারণ হলো, এত দিন সদর আসনের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করা হয়েছে। সদরের মানুষ সদরের লোকদের এমপি বানাতে চায়।

যে কারণে কোন্দল
জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির পুরো নাটাই আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জামালপুর-৩ আসনের এমপি মির্জা আজমের হাতে। এক বছর আগে জেলা আওয়ামী লীগের দেড় যুগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক চৌধুরীকে সহসভাপতি করা হয়। পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার চন্দ্রকে করা হয় জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক। মূলত এরপরই শুরু হয় জেলা আওয়ামী লীগে কোন্দল।

এবারের নির্বাচনে নৌকার মাঝি হতে চেয়েছিলেন বর্তমান এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোজাফ্ফর, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট বাকী বিল্লাহ, সহসভাপতি ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার চন্দ্র, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী মারুফা আক্তার পপি, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রেজাউল করিম রেজনু, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী ও জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য এ প্রযুক্তি সম্পাদক সালেহীন রেজা। কিন্তু কেন্দ্র থেকে নৌকা তুলে দেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদের হাতে, যাঁর জন্মস্থান জামালপুর শহর হলেও আদি নিবাস মেলান্দহে। নির্বাচনের প্রচারে এটিই ইস্যু বানিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজনু।

এদিকে নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় মঞ্চে ওঠাকে কেন্দ্র করে মির্জা আজমের সঙ্গে বিরোধে জড়ানো মারুফা আক্তার পপিকে বহিষ্কার করা এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমারকে নৌকার প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হন সদরের নেতা-কর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, প্রার্থী ও নৌকার প্রধান সমন্বয়ক—দুজনই মেলান্দহের লোক। জামালপুর সদরের নেতাদের সঠিক মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। তাই ভোটের মাধ্যমে এবার জবাব দেবে সদরবাসী।

আবুল কালাম আজাদের প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী। জেলা আওয়ামী লীগ, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী  সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নৌকার পক্ষে মাঠে নেমেছেন বলে তাঁর দাবি। ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, নৌকার মনোনয়ন চেয়ে পাননি এমন চারজন প্রার্থী ছাড়া অধিকাংশ নেতা-কর্মী আমাদের সঙ্গে আছেন। এ ছাড়া সদরের বাইরের প্রার্থী—এমন ইস্যু সৃষ্টি করে আমাদের কিছুটা বেকায়দায় ফেলেছে। তারপরও নৌকাই জিতবে ইনশা আল্লাহ। 

জামালপুর-২ আসনে তিনবারের সংসদ সদস্য ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান দুলাল এবারও নৌকার প্রার্থী। ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দুলাল ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এস এম শাহীনুজ্জামান (কাঁচি প্রতীক), জেলা আওয়ামী লীগের দুই উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মো. জিয়াউল হক (ঈগল প্রতীক) ও মো. শাহাজাহান আলী মণ্ডল (ট্রাক প্রতীক)। তবে মো. জিয়াউল হক শাহিনুজ্জামানকে প্রকাশ্য সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। শাহজাহান আলী মণ্ডলও অজ্ঞাত কারণে নিষ্ক্রিয়। ফলে এই আসনে মূল লড়াই হবে নৌকার সঙ্গে কাঁচির। 

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ শীর্ষ নেতাই স্বতন্ত্র প্রার্থী কাঁচির হয়ে কাজ করছেন। ফলে এই আসনে এমপি পদে নতুন মুখ এলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এখানে জাতীয় পার্টির হেভিওয়েট প্রার্থী মোস্তফা আল মাহমুদের অবস্থানও শক্ত বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনে আওয়ামী লীগের ২ জন স্বতন্ত্রসহ মোট ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই আসনের সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসানকে মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। প্রার্থী পরিবর্তন করে নতুন মুখ প্রকৌশলী মাহাবুবুর রহমান হেলালকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সাবেক এমপি মরহুম আব্দুল মালেকের ছেলে তিনি। এদিকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুর রশীদ। এই আসনে নৌকার সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে ডা. মুরাদ হাসানের ঈগল ও অধ্যক্ষ আব্দুর রশীদের ট্রাক প্রতীকের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মেট্রো স্টেশনের নিচে ট্রাফিক পুলিশ চায় ডিএমটিসিএল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মেট্রো স্টেশনের নিচতলায় ট্রাফিক পুলিশ চেয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। স্টেশনের নিচতলায় ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েনের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে (ডিএমপি) কাছে চিঠি দিয়েছে কোম্পানিটি।

গতকাল বুধবার (৫ নভেম্বর) ডিএমটিসিএলের পরিচালক (প্রশাসন) এ কে এম খায়রুল আলম স্বাক্ষরিত চিঠিটি ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের (ট্রাফিক) কাছে পাঠানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ডিএমটিসিএল একটি ‘ক’ শ্রেণির কেপিআই তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান। ২০২৫ সালের ১ জুলাই অনুষ্ঠিত সংস্থার মাসিক নিরাপত্তা সমন্বয় সভায় মেট্রোরেল স্টেশনগুলোর নিচতলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

চিঠিতে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েনের উদ্দেশ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে—স্টেশনের নিচতলায় যাত্রীদের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করা। যানজট নিয়ন্ত্রণ ও সুষ্ঠু পার্কিং ব্যবস্থা বজায় রাখা। নিরাপত্তা মান বৃদ্ধি ও অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি প্রতিরোধ করা। যাত্রীদের নিরাপদে ওঠানামা ও জরুরি অবস্থায় দ্রুত পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। অবৈধ দখল রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

এমতাবস্থায় ডিএমটিসিএলের আওতাধীন মেট্রোরেল লাইন-৬-এর ১৬টি স্টেশনের নিচে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েনের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কেরানীগঞ্জে ছিনতাইকারী রাজু গ্রেপ্তার

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) সংবাদদাতা
রাজু হাওলাদার। ছবি: সংগৃহীত
রাজু হাওলাদার। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকারী রাজু হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) ভোর ৬টার দিকে নিজ বাড়ি হতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ছিনতাইকৃত একটি মোটরসাইকেল, আইফোন, নগদ টাকা ও মালামাল উদ্ধার করা হয়।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আক্তার হোসেন জানান, গ্রেপ্তার রাজু দীর্ঘদিন ধরে চুনকুটিয়া, খেজুরবাগ, ঝিলমিল আবাসন প্রকল্প, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক ও এর আশপাশের এলাকায় ছিনতাই করে আসছিলেন। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁর সহযোগীদেরও শনাক্তের চেষ্টা চলছে। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। নতুন ঘটনায়ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।

জানা গেছে, ৫ নভেম্বর ভোরে রাজু হাওলাদার তাঁর সহযোগীদের নিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার কেরানীগঞ্জ চুনকুটিয়া এলাকায় এক পথচারীকে লক্ষ্য করে রামদা দিয়ে আঘাত করে মোটরসাইকেল, মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেন। পরে আহত অবস্থায় ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ তৎপরতা শুরু করে।

গ্রেপ্তার রাজু হাওলাদার (২৬) পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার খেয়ারবাগ গ্রামের ফিরোজ হাওলাদারের ছেলে। বর্তমানে তিনি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের খেজুরবাগ এলাকায় বসবাস করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাস উৎসবে সুন্দরবন থেকে আটক ৩২ জন কারাগারে

বাগেরহাট প্রতিনিধি
রাস উৎসবে সুন্দরবন থেকে আটক ৩২ জন কারাগারে। ছবি: সংগৃহীত
রাস উৎসবে সুন্দরবন থেকে আটক ৩২ জন কারাগারে। ছবি: সংগৃহীত

রাস উৎসবে পুণ্যার্থী সেজে সুন্দরবনে হরিণ শিকারের চেষ্টার অভিযোগে আটক ৩২ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁদের বাগেরহাট বন আদালতে সোপর্দ করা হলে বিচারক বিলাশ মন্ডল আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এর আগে গত সোমবার দুপুর থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করা হয়।

বন বিভাগ জানায়, রাস পূজা চলাকালে সুন্দরবনে হরিণ শিকারিরা বেপরোয়া হয়ে ‍ওঠে। এ জন্য কয়েক বছর ধরে পুণ্যার্থী ছাড়া বাইরের লোক বনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। আর এবারই প্রথমবারের মতো কড়া নিরাপত্তাপ্রহরায় পুণ্যার্থীদের বনে নেওয়া হয়েছে। এরপরও অনেকে পরিচয় গোপন করে পুণ্যার্থী সেজে বনে প্রবেশ করেছেন।

পূজার প্রথম দিন (সোমবার) দুপুরে হরিণ শিকারের চেষ্টার সময় এক যুবককে আটক করে বন বিভাগ। তখন ওই চক্রের অন্য সদস্যরা সহকারী বন সংরক্ষক রানা দেবের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় আটক তিনজনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

পরে হরিণ শিকারের যুক্ত থাকার অভিযোগে আরও ৩২ জনকে আটক করে বন বিভাগ। এ সময়ে ১২০০টি হরিণ শিকারের ফাঁদ ও দুটি ট্রলার জব্দ করা হয়েছে। এ নিয়ে রাস পূজা চলাকালে মোট ৩৫ হরিণশিকারিকে আটক করতে সক্ষম হয় বন বিভাগ।

এ বিষয়ে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের দুবলার চর-আলোরকোলের স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তানভীর হাসান বলেন, বন্য প্রাণী শিকার রোধে এবার তাঁরা খুবই তৎপর ছিলেন। তারপরও শিকারিরা নানাভাবে চেষ্টা করেছেন। বনরক্ষীরা তল্লাশি চালিয়ে ৩৫ জনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে। দুপুরে তাঁদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

বাগেরহাট আদালতের সরকারি কৌঁসুলি এস এম মাহাবুব মোর্শেদ লালন বলেন, আসামিদের আদালতে সোপর্দ করলে বিচারক তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তবে সুন্দরবন রক্ষা ও হরিণ শিকার রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন এই রাষ্ট্রীয় আইন কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ছাত্রীদের শরীরে আবারও হাত দেওয়ার অভিযোগ সেই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে

বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

রংপুরের বদরগঞ্জে চম্পাতলী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে আবারও ছাত্রীদের কুপ্রস্তাব ও শরীরে হাত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর অভিভাবকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিদ্যালয়টিতে দিনভর বিক্ষোভ করেছেন অভিভাবকেরা। বিকেলে থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।

অভিযোগ রয়েছে, ঘটনাটি ধাপাচাপা দিতে গতকাল বুধবার রাতে দু-একজন অভিভাবককে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন প্রধান শিক্ষক।

অষ্টম ও নবম শ্রেণির দুই ছাত্রী বলে, ‘হেড স্যারের নজর ভালো নয়, সব সময়ে আমাদের বুকের দিকে তাকিয়ে থাকেন এবং সুযোগ পেলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দেন। এত দিন লজ্জায় কাউকে বলতে পারিনি। ভেবেছিলাম, হেড স্যার ভালো হবেন, কিন্তু আজও তাঁর চরিত্র ভালো হয়নি।’

অভিভাবক আফজাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষকের চরিত্র ভালো নয়। বিদ্যালয়ে মেয়েরা নিরাপদ নয়। এবার তাঁকে বিদ্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সহকারী শিক্ষক বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দেন। তিন দিন আগে দুই ছাত্রী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করলে আমাদের এক সহকারী শিক্ষক তা মোবাইলে ভিডিও আকারে ধারণ করেন। এ কারণে প্রধান শিক্ষকের ভাড়া করা কয়েকজন এসে সেই শিক্ষককে হুমকি দেন।’

ওই সহকারী শিক্ষক আরও বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক বারবার ছাত্রীদের সঙ্গে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানোর কারণে আমাদের ও স্কুলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তাঁকে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা দরকার।’

আরও এক শিক্ষক বলেন, এর আগেও প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের কুপ্রস্তাব ও শরীরে হাত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল।

এর আগে ২০২৩ সালের ১১ জুন নিজ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির সনাতন ধর্মের এক ছাত্রীকে মোবাইল ফোনে কুপ্রস্তাব দেন প্রধান শিক্ষক। ১৪ জুন কুপ্রস্তাব দেওয়া কলরেকর্ডটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে পরদিন ১৫ জুন অভিভাবকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে প্রধান শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

পরে তৎকালীন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাশপিয়া তাসরিনের আশ্বাসে শান্ত হন অভিভাবকেরা। ওই দিন রাতে ছাত্রীর বাবা বদরগঞ্জ থানায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করলে পুলিশ রাতেই তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ১৬ জুন বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত করে।

এ নিয়ে আজকের পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে ‘স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্তের ঘটনায় প্রধান শিক্ষক গ্রেপ্তার’ এবং ১৭ জুন ‘স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্তের ঘটনায় গ্রেপ্তার সেই প্রধান শিক্ষককে বহিষ্কার’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

বিদ্যালয়ের আরও এক সহকারী শিক্ষক জানান, প্রধান শিক্ষক গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক দিন পর আদালত থেকে জামিনে বের হন। তিনি ওই সময়কার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মমতাজ হোসেনের ভাগনি জামাই হওয়ার কারণে তাঁর বরখাস্ত আদেশ বেশি দিন থাকেনি। মামলাটি এখনো চলমান রয়েছে বলে ওই শিক্ষক জানান।

দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. আরিফ মাহফুজ বলেন, ‘আমি আজ গঙ্গাচড়া উপজেলায় অফিস করেছি। এ কারণে সেখানকার বিষয়টি আমার জানা নেই।’

বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আতিকুর রহমান বলেন, অভিভাবকেরা ওই বিদ্যালয়ে ঘেরাও করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এ ঘটনায় থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত