Ajker Patrika

নদী নাব্যতা হারানোয় ইশ্বরগঞ্জের পাটনিদের পেশা বদল

মহিউদ্দিন রানা
নদী নাব্যতা হারানোয় ইশ্বরগঞ্জের পাটনিদের পেশা বদল

ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ): এক সময় খরস্রোতা নদীতে নৌকা চালানোই ছিল পাটনি সম্প্রদায়ের একমাত্র পেশা। কালের বিবর্তনে মরে যাচ্ছে নদী। তাই জীবিকার তাগিদে পেশা পাল্টাতে বাধ্য হচ্ছেন পাটনি সম্প্রদায়ের লোকেরা। যে পাটনিদের রক্তের স্রোতে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার নামকরণ হয়েছে, সেই মানুষদের দিন কাটে নানা বৈষম্যে। নদী ও নৌকার পরিবর্তে বর্তমানে পাটনিদের জীবিকা নির্বাহ হয় বাঁশ-বেতের কাজ করে।

বংশপরম্পরায় পাটনি সম্প্রদায়ের লোকজন এখন বাস করে ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার শিমরাইল এলাকায়। সেখানে রয়েছে প্রায় ২০০ পাটনি পরিবার। কিন্তু সেখানে তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। নানাভাবেই তারা এখন অবহেলিত। কারও থাকার জায়গা নেই, বসবাস করে অন্যের জমিতে। আবার কারও সংসার চলেনি এই বাঁশ-বেতের কাজ করে। পাটনিরা যে স্থানে ঘাঁটি গেড়েছিল তার পাশ দিয়েই বয়ে গেছে কটিয়াদী থেকে কাঁচামাটিয়া মাইজগা নদী। বর্তমানে নদীটির কোনো অস্তিত্ব নেই। আগে এই নদী ও নৌকার সঙ্গে মিতালি করেই চলতেন পাটনিপাড়ার পাটনিরা। কিন্তু এখন তাদের জীবন চলে বাঁশ-বেতের কাজ করে। নদী ও নৌকার ব্যবহার না থাকায় বংশানুক্রমিক পেশা পাল্টাতেও বাধ্য হয়েছেন পাটনি সম্প্রদায়ের লোকেরা।

পাটনিপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, দলবদ্ধ হয়ে নারী-পুরুষ বাঁশ-বেতের কাজে ব্যস্ত। শুক্র ও সোমবার হাটবারের দিন এই ব্যস্ততা থাকে আরও বেশি। কুলা, খুরি, ঢাকি, ডালি, ডুলি, চালনি, মোড়া, হাতপাখাসহ বাঁশ ও বেতে তৈরি নানা পণ্য হাটবারের দিন বাজারে নিয়ে যান পাটনিরা।

বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে স্বপন পাটনি বলেন, ‘আমার নিজের বলতে এক টুকরো জমিও নেই। থাকি অন্যের জমিতে। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বাঁশ-বেতের কাজ করে খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছি।’

স্বপন পাটনির মতো পাটনিপাড়ার একাধিক বাসিন্দা জানান, কয়েক কাঠা জমিতে ঘনবসতি করে পাটনিরা অভাব-অনটনে জীবনযাপন করছেন। পূজা-অর্চনার জন্য মন্দির নির্মাণের চেষ্টা করলেও অর্থাভাবে কাজ সম্পন্ন করতে পারছেন না। ভোটের সময় অনেকে পাটনিদের মন্দির ও জীবনমান উন্নয়নে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে কেউ তাদের খোঁজ নেয় না।

এদিকে পেশা বদল করেও আর্থিক সংকট কাটছে না। অধিকাংশই বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার (এনজিও) কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বাঁশ–বেতের কাজ করেন। এই ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে নতুন এই পেশা থেকে হওয়া আয়ের বড় অংশ চলে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। চান মোহন পাটনি বলেন, ‘এনজিওর ঋণ ও দাদনের টাকা দিয়ে বেত বুনে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করি। এতে লাভের টাকা তাদের হাতে চলে যায়। আমরা যদি সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণ পেতাম, তাহলে লাভবান হতে পারতাম।’

তারপরও যতটা যা হতো, তাও এখন হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ দিনদিন বাঁশ-বেতের ব্যবহার কমে আসছে। এর জায়গা দখল করছে প্লাস্টিকের বিভিন্ন পণ্য। ফলে আগের মতো আর বিক্রি হচ্ছে না। ফলে যত দিন যাচ্ছে, আর্থিক সংকট ক্রমেই বাড়ছে।

এ বিষয়ে লক্ষ্মণ চন্দ্র পাটনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পূর্বপুরুষের পেশা পাল্টে নতুন পেশায় যুক্ত হয়েছিলাম জীবন ও জীবিকার তাগিদে। কিন্তু বর্তমানে বাঁশ-বেতের চাহিদা কমে আসায় কোনোমতে টেনেটুনে সংসার চলে। এভাবে চলতে থাকলে খুব বেশি দিন এই পেশাতেও টিকে থাকা যাবে না।’

ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুস ছাত্তার বলেন, ‘ঈশ্বরগঞ্জের নামকরণ হয়েছে যে ঈশ্বর পাটনির নাম অনুসারে, সেই ঈশ্বর পাটনির বংশ হচ্ছে পাটনিপাড়ার পাটনিরা। আমি মেয়র হওয়ার পর অসংখ্যবার পাটনিপাড়া গিয়েছি এবং তাদের খোঁজখবর নিয়ে বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতাসহ আমার সাধ্যমতো সব ধরনের সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। পৌরসভায় প্রায় ২০০ পাটনি পরিবার রয়েছে, যাদের বেশির ভাগই খুব গরিব। সবাইকে তো আমার একার পক্ষে সহযোগিতা করা সম্ভব হয় না। তবে আমার কাছে কেউ সমস্যা নিয়ে এলে তা সমাধানের সাধ্যমতো চেষ্টা করি।’

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন আজকের পত্রিকাকে জানান, ‘পাটনি সম্প্রদায়ের পাটনিদের সম্পর্কে অবগত না থাকলেও ঈশ্বর পাটনির নাম শুনেছি অসংখ্যবার। পাটনিপাড়া পরিদর্শন করে তাদের দুর্ভোগ লাঘবে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে।’

উল্লেখ্য, এই এলাকার নাম আগে ছিল পিতলগঞ্জ। পরে এর ঈশ্বরগঞ্জ নামকরণ হওয়ার পেছনে রয়েছে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। কথিত আছে, ঈশ্বর পাটনি নামে এ অঞ্চলে এক খেয়া মাঝি ছিলেন। তার কাজ ছিল ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী খরস্রোতা কাঁচামাটিয়া নদীর বুক বেয়ে পিতলগঞ্জ বাজারের ঘাটে খেয়া পারাপার করা। ইংরেজদের স্থাপিত পিতলগঞ্জ বাজারটি ছিল গৌরীপুরের জমিদারদের পরগণা। ইংরেজ নীলকরদের অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে গিয়ে পীতলগঞ্জের হাটে নির্মমভাবে নিহত হন ঈশ্বর পাটনি। তারপর থেকেই এই এলাকার নামের সঙ্গে ঈশ্বর পাটনির নাম জুড়ে যায়। পরে তাঁর নাম অনুসারেই ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার নামকরণ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অফিস দখল নিয়ে জুলাই রেভেলসের দুজনকে জখম

উত্তরা-বিমানবন্দর (ঢাকা) প্রতিনিধি 
জুলাই রেভেলস সংগঠনের সদস্যের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার মো. মাসুম ও মো. ফাহিম খান। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
জুলাই রেভেলস সংগঠনের সদস্যের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার মো. মাসুম ও মো. ফাহিম খান। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

রাজধানীর উত্তরায় ‘অফিস দখল’কে কেন্দ্র করে জুলাই রেভেলসের দুই সদস্যকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। এ ঘটনায় মো. মাসুম ও ফাহিম খান নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দক্ষিণখান ফায়দাবাদ এলাকা থেকে রোববার (১৪ ডিসেম্বর) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

এর আগে শনিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যার পর উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের পাবলিক কলেজ-সংলগ্ন জুলাই রেভেলসের অফিসে সংগঠনটির প্রস্তাবিত সহসংগঠক ইউসুফ আলী রেদওয়ান ও সদস্য মো. ইয়াসিনকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শনিবার রাতেই ইউসুফ আলী রেদওয়ান বাদী হয়ে উত্তরা পূর্ব থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেন।

এ বিষয়ে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, জুলাই রেভেলসের সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনায় দক্ষিণখান থেকে মাসুম ও ফাহিম নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, মামলার সুষ্ঠু তদন্ত এবং এজাহারের অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জুলাই রেভেলসের সদস্যদের ওপর হামলার ‘মূল হোতা’ উত্তরা পূর্ব থানা শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও শীর্ষ সন্ত্রাসী আলতাফ হোসেন ওরফে ঠোঁটকাটা আলতাফ। নেপথ্যে রয়েছে, জুলাই রেভেলস অফিসটি দখল। জানা গেছে, উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের জুলাই রেভেলসের বর্তমান অফিসটি ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে উত্তরা পূর্ব থানা শ্রমিক লীগের অফিস ছিল। সেটি নিয়ন্ত্রণ করত সন্ত্রাসী আলতাফ ওরফে ঠোঁটকাটা আলতাফ। তিনি দক্ষিণখানের ফায়দাবাদ এলাকার বাসিন্দা। তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগসহ অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে।

৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আলতাফ ও তাঁর নেতা-কর্মীরা পালিয়ে যান। এই সুযোগে শ্রমিক লীগের অফিসটি দখল করে ইউসুফ আলী রেদওয়ান ও তাঁর সংগঠনের লোকজন। পরে ওই অফিসে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি টাঙিয়ে জুলাই রেভেলস নামের একটি সংগঠন করা হয়।

জানা যায়, সম্প্রতি আলতাফ ওরফে ঠোঁটকাটা আলতাফ উত্তরা বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আঁতাত করে প্রকাশ্যে আসেন। সেই সঙ্গে শ্রমিক লীগের অফিসটি দখল করে গড়া জুলাই রেভেলসের অফিসটি খালি করে দিতে বলেন। কিন্তু রেদওয়ান ও তাঁর সংগঠনের লোকজন এতে নারাজ ছিল; যা নিয়ে আলতাফ ও রেদওয়ানের মধ্যে বেশ কিছু দিন ধরে উত্তেজনা চলছিল। এর জের ধরেই আলতাফ ও তাঁর সহযোগীরা রেদওয়ানকে কুপিয়ে জখম করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোর্শেদ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্টের আগে এক কক্ষের অফিসটি ছিল শ্রমিক লীগের। শ্রমিক লীগের সেই অফিস দখল করে জুলাই রেভেলসের কার্যালয় করা হয়েছে। এদিকে শ্রমিক লীগের আলতাফ বিএনপির লোকজনের সঙ্গে মিল দিয়ে প্রকাশ্যে এসে ওই অফিস ফেরত চেয়েছিল। কিন্তু জুলাই রেভেলসের সদস্যরা সেটি না দেওয়ায় হামলার ঘটনা ঘটেছে।’

ওসি আরও জানান, আহত রেদওয়ান বাদী হয়ে আলতাফকে প্রধান আসামি করে ১১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। হামলার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া মাসুম ও ফাহিমও এজাহারভুক্ত আসামি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সরকারি সার অবৈধভাবে বিক্রি, চুয়াডাঙ্গায় ডিলারকে জরিমানা

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি­
জব্দ করা সার। ছবি: আজকের পত্রিকা
জব্দ করা সার। ছবি: আজকের পত্রিকা

সরকারি সার অবৈধভাবে বিক্রির অপরাধে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় এক ডিলারকে ৫০ হাজার টাকা ও ক্রেতাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিনুল ইসলাম।

জানা গেছে, সদর উপজেলার পাঁচমাইল এলাকার এক বিএডিসির সারের ডিলার অবৈধ উপায়ে আলমডাঙ্গার বলেশ্বরপুর এলাকার তাওহীদ হোসেন নামের এক ব্যক্তির কাছে ডিএপি ১১ বস্তা ও এমওপি ৯ বস্তা সার বিক্রি করেন।

বিষয়টি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পেরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিনুল ইসলাম দ্রুত অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাঁদের জরিমানা করেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় বিএডিসি সার ডিলার মডার্ন অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী ইকবাল বিশ্বাসকে নগদ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে অবৈধ উপায়ে সার কেনার অপরাধে ক্রেতা তাওহীদ হোসেনকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় সহযোগিতা করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিছুর রহমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরিশালে বিএনপির ২ শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বিএনপি নেত্রী নাসরিনের ওপর সরোয়ার অনুসারীদের হামলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিএনপি নেত্রী নাসরিনের ওপর সরোয়ার অনুসারীদের হামলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশালে শহীদ বেদিতে ফুল দেওয়া নিয়ে হামলার ঘটনায় ২ শতাধিক বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে তিনি কোতোয়ালি মডেল থানায় অভিযোগ দেন। এর আগে দুপুরে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে হামলার শিকার হন নাসরিন।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন উল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ফুল দেওয়া নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। সেই ইস্যুতে বিএনপির নেত্রী নাসরিন থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

জানা গেছে, অভিযোগে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০০ জনের কথা বলা হয়েছে। এদের অধিকাংশই ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপির নেতা-কর্মী।

জানতে চাইলে বিএনপির নেত্রী আফরোজা খানম নাসরিন জানান, তাঁর ওপর যারা হামলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তিনি রোববার রাত ৯টার দিকে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে তাদের নাম তিনি প্রকাশও করেছেন।

নাসরিনের অভিযোগ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বরিশাল-৫ (মহানগর-সদর) আসনের মনোনীত প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের অনুসারীরা তাঁর ওপর হামলা করেছে।

এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক জানান, রোববার দুপুরে ফুল দিয়ে তাঁরা যখন যাচ্ছেন, তখন বাইরে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নাসরিনের ঝামেলা হয়েছে। তবে কী হয়েছে জানেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৩২
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের শ্যালক শিপু, স্ত্রী সামিয়া ও বান্ধবী মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের শ্যালক শিপু, স্ত্রী সামিয়া ও বান্ধবী মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রীসহ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে এক বার্তায় জানিয়েছে পুলিশের বিশেষ এই ইউনিট।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ফয়সালের স্ত্রী সামিয়া, তাঁর শ্যালক শিপু ও বান্ধবী মারিয়া।

র‍্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, সামিয়া ও শিপুকে নারায়ণগঞ্জ থেকে এবং মারিয়াকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত শুক্রবার হাদিকে গুলির ঘটনার আগে ও পরে ফয়সালের সঙ্গে তাঁদের ফোনে ঘন ঘন যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে।

এ নিয়ে এ ঘটনায় র‍্যাব মোট চারজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে। এর আগে গুলির সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ তিন দিনের রিমান্ডে নেয়।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকার বিজয়নগর এলাকায় চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে করা গুলিতে গুরুতর আহত হন রিকশায় থাকা ওসমান হাদি। তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে। আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে।

আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর, ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ সিদ্ধান্ত নেন। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত দুদিন ধরে ওসমান হাদির চিকিৎসার জন্য সরকার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেছে। আজ এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের পরামর্শে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, বর্তমানে ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে।

আগামীকাল দুপুরে ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল ও ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাকসিডেন্ট ইমার্জেন্সি বিভাগে তাঁর চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ওসমান হাদির চিকিৎসাসংক্রান্ত সব ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে। তাঁর চিকিৎসাপ্রক্রিয়া সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন ড. ইউনূস।

ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত