Ajker Patrika

নির্ধারিত দামে মিলছে না সার, বিপাকে কৃষক

আজিনুর রহমান আজিম, পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) 
নির্ধারিত দামে মিলছে না সার, বিপাকে কৃষক

লালমনিরহাটের পাটগ্রামে সারের সংকটের অজুহাতে বাজারে দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। কোথাও সরকার নির্ধারিত দামে সার পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত দামে কিনতে হচ্ছে কৃষকদের। এতে ক্ষোভ ও হতাশায় পড়েছেন উপজেলার হাজারো কৃষক। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ডিলার ও পরিবহন সিন্ডিকেট মজুত করে সারের বিক্রয় নিয়ন্ত্রণ করছে। অথচ সারের কৃত্রিম সংকট ও মূল্যবৃদ্ধি রোধে কৃষি অধিদপ্তর থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না

জানা গেছে, রবি মৌসুমের শুরুতে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি, এমওপি সারসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় ২০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দরে সার কিনতে হচ্ছে। এতে চাষাবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা।

উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকেরা বলেন, ইউরিয়া, ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি), মিউরেট অব পটাশ (এমওপি)—সব ধরনের সার বেশি টাকা না দিলে পাওয়া যায় না। ডিলাররা বলেন, সার নেই। তাই বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত দামে কিনতে হচ্ছে। কেউ কেউ আবাদ কমানোর কথাও ভাবছেন।

কৃষকেরা জানান, সরকার নির্ধারিত ৫০ কেজি টিএসপি সারের দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা হলেও বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯৬০ থেকে ২ হাজার ১০০ টাকায়। ডিএপি সারের দাম ১ হাজার ৫০ টাকা হলেও বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। ইউরিয়া সারের দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকার জায়গায় ১ হাজার ৪৫০ টাকা, আর পটাশ সারের দাম ১ হাজার টাকার পরিবর্তে ১ হাজার ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

জানতে চাইলে জগতবেড় ইউনিয়নের পশ্চিম জগতবেড় গ্রামের কৃষক মফির উদ্দিন বলেন, ‘সারের বাজারে আগুন। আমি ১৯ বস্তা টিএসপি সার কিনেছি সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ৬০০ টাকা বেশি দিয়ে। ইউরিয়াও ১০০ টাকা বেশি দিতে হয়েছে। এখন কীভাবে আবাদ করব?’ জোংড়া ইউনিয়নের ইসলামনগর এলাকার কৃষক আবু সাঈদ বলেন, ‘এক একর জমিতে ফুলকপি লাগিয়েছি। টিএসপি সার প্রতি বস্তায় ৬০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। সামনে ভুট্টার আবাদে কী করব ভেবে পাচ্ছি না।’

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার ৮ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভায় চাষাবাদযোগ্য জমি রয়েছে ২৬ হাজার ১৫১ হেক্টর। এই অঞ্চলের প্রায় ৪১ হাজার ৫০০ পরিবার সরাসরি কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত। রবি মৌসুমে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ইউরিয়া সারের চাহিদা ৬ হাজার ৫৫০ টন, বরাদ্দ এসেছে মাত্র ২ হাজার ৩৬৪ টন। টিএসপি, ডিএপি ও পটাশ সারের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা—চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ প্রায় অর্ধেক।

তবে সারের দোকানদারদের দাবি, চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ না পাওয়ায় বাইরের জেলা থেকে বেশি দামে সার কিনে আনতে হচ্ছে। এ জন্য কৃষকদের কাছ থেকে বেশি দাম নেওয়া হয়। পাটগ্রাম বাজারের ডিলার হরিপদ দে বলেন, এখন কৃষকদের মধ্যে ভয় কাজ করছে, সার পাওয়া যাবে না—এই আশঙ্কায় সবাই একসঙ্গে সার কিনতে ছুটছেন। ফলে চাহিদা বেড়েছে। সরকার যে বরাদ্দ দিয়েছে, তা কৃষকের চাহিদার তুলনায় অনেক কম।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে বাজার মনিটরিং চলছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যে কৃষক যেন সার পান, সে ব্যাপারে কাজ করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কেউ সারের কৃত্রিম সংকট বা কালোবাজারি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, সারের ঘাটতি ধীরে ধীরে পূরণ করা হচ্ছে। তবে যদি কেউ বেশি দামে বিক্রি করে, কৃষকেরা লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ