Ajker Patrika

অবৈধ যানে কুষ্টিয়ায় বাড়ছে দুর্ঘটনা, সাত দিনে ১২ জনের মৃত্যু

মিলন উল্লাহ, কুষ্টিয়া
আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২২, ২০: ৫৩
অবৈধ যানে কুষ্টিয়ায় বাড়ছে দুর্ঘটনা, সাত দিনে ১২ জনের মৃত্যু

কুষ্টিয়ায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ১০ চাকার ডাম্প ট্রাক। সেই সঙ্গে আছে নছিমন, করিমন, পটাংসহ বিভিন্ন স্থানীয় নামের অবৈধ যানবাহন। এসব অবৈধ গাড়ির বেপরোয়া গতির কারণে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। সড়কে প্রায়ই ঝরছে প্রাণ। শুধু ৯ থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭ দিনে ছয়টি পৃথক দুর্ঘটনায় ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা গেছেন নারী, শিশুসহ ১২ জন। 

জানা যায়, অবৈধ যান তো আছেই, সেই সঙ্গে জেলার অধিকাংশ সড়ক-মহাসড়ক বেহাল। আর এসব বেহাল সড়কে দ্রুতগতির অবৈধ যানের কারণেও নিয়মিত ঘটছে দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানির পাশাপাশি পঙ্গুত্ববরণ করছেন শত শত মানুষ। দিনের পর দিন এসব অবৈধ যানের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও এগুলো বন্ধের জন্য নেই কোনো উদ্যোগ। তেমনি জেলার বেহাল সড়ক সংস্কারের ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেই তেমন কোনো মাথাব্যথা। 

জেলার বিভিন্ন খানাখন্দে ভরা সড়কে বালুবাহী অবৈধ ডাম্প ট্রাকের বেপরোয়া গতিতে চলাচল সাধারণ মানুষকে চিন্তায় ফেলেছে। ১০ চাকার দানবাকৃতির ডাম্প ট্রাকে বালু বহন করার সময় দেওয়া হয় অতিরিক্ত লোড। আবার বালু না ঢেকে নেওয়ায় এসব ট্রাক চলার সময় বালু উড়ে পথচারীদের চোখমুখে যায়। অধিকাংশ ডাম্প ট্রাক চালকের নেই কোনো বৈধ কাগজপত্র। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব গাড়ি চালানো হয় হেলপার দিয়ে। এসব বালুবাহী ট্রাকসহ নছিমন, করিমন, পটাংসহ সব গাড়ি দিনের বেলার শহরের মধ্য দিয়ে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে দিয়েই দিনদুপুরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। 
 
জেলার বিভিন্ন এলাকায় দাপিয়ে বেড়ানো ৫ শতাধিক ডাম্প ট্রাকের মালিকেরা বালুর ব্যবসায়ী এবং প্রভাবশালী ক্ষমতাসীন দলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকার কারণে এসব ট্রাকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা। 

অভিযোগ রয়েছে, বালুর ঘাটের মালিকেরা টাকার বিনিময়ে সবাইকে ম্যানেজ করে এই অপকর্ম করে চলেছে। আর সেই সুযোগে ট্রাকের চালকেরা নিজে এই গাড়ি না চালিয়ে তাঁদের হেলপারদের হাতে ছেড়ে দেন। এতে মাঝেমধ্যেই ঘটে দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানি। 

জেলা পুলিশ ও জেলা হাইওয়ে পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, শুধু কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কের কুষ্টিয়া-ভেড়ামারা অংশে গত এক বছরে সড়কে ৪৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষের প্রাণ গেছে ট্রাকচাপায়। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর কারণে ওই সব দুর্ঘটনা ঘটেছে। 

এদিকে গত সাত দিনে কুষ্টিয়ায় সড়কে ট্রাকের চাপায় প্রাণ গেছে ১২ জনের। ৯ জানুয়ারি কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে কৈপাল এলাকায় একটি মোটরসাইকেলকে পেছন থেকে চাপা দেয় একটি বেপরোয়া গতির ডাম্প ট্রাক। এতে  ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দুই মোটরসাইকেল আরোহীর। ওই ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা ট্রাকটি আটক করে জ্বালিয়ে দেয়। ট্রাকমালিকের টাকা এবং ক্ষমতার প্রভাবে কোনো মামলা ছাড়াই ঘটনাটা দুই দিনের মধ্যে মীমাংসা হয়ে যায়। অভিযোগ আছে চালক বাদে হেলপার দিয়ে চালানো হচ্ছিল ওই ট্রাক। এ ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

এর পরদিন ১০ জানুয়ারি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ভাদালিয়ায় কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ সড়কে আরেকটি বালুবাহী ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে তিন নারীসহ ৪ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় চালক পালিয়ে গেলেও ট্রাকটি আটক করে হাইওয়ে পুলিশ। 

গত শুক্রবার বিকেলে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের লাহিনী বটতলা শাহপাড়া এলাকায় ডাম্প ট্রাকের ধাক্কায় অনিক (৭) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। এর আগে কুষ্টিয়ার মিরপুরে পৃথক দুটি স্থানে ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে মারা যান আরও দুই মোটরসাইকেল আরোহী। এ ছাড়া গতকাল শনিবার কুষ্টিয়ার উজানগ্রামে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত হন দুই ভ্যানচালক। 

৮ জানুয়ারি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে মিরপুরে সংবাদ সংগ্রহ করতে আসেন মাছরাঙা টেলিভিশনের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি তাশরিক সঞ্জয়। এ সময় ধাক্কা দেয় শ্যালো ইঞ্জিনচালিত একটি অবৈধ নছিমন গাড়ি। এতে তাশরিক গুরুতর আহত হন। তাঁর কলারবোন ভেঙে গিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। 
 
তাশরিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই গাড়ির চালকের সম্পূর্ণ অজ্ঞতার কারণে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাকে চাপা দেয়। এসব যানবাহন সড়কে যত্রতত্র চলাচল করলেও কারও চোখে পড়ে না।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সচেতন নাগরিক সমাজ কুষ্টিয়ার সভাপতি রফিকুল ইসলাম টুকু বলেন, এসব অবৈধ গাড়ির কারণে সড়কে মৃত্যুর মিছিল চলছে। বিশেষ করে ডাম্প টাকের কারণে। এই গাড়ি যখন বালু বোঝাই করে সড়কে চলাচল করে, তখন এর পাশ দিয়ে চলাচল করা বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। এগুলো বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। 

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কারশেদ আলম বলেন, গত কয়েক দিনে সড়কে যে প্রাণগুলো ঝরে গেল, তা শুধু অবৈধ গাড়ি এবং অদক্ষ চালকের কারণে ঘটেছে। তাই এখনই এসব গাড়ি চলাচল বন্ধে প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। 

কুষ্টিয়া হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক ইদ্রিস আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে এসব ডাম্প ট্রাকের মালিক এবং চালকদের নিয়ে কয়েক দফায় বৈঠক করা হয়। তাঁদের ট্রাকের গতি এবং লোডের বিষয়ে সাবধান করে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরপরও আমরা নিয়মিত নজরদারি করি। অতিরিক্ত বোঝাই এবং বেপরোয়া গতিতে ট্রাক চালালে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত