Ajker Patrika

মুক্তির হাতে জিম্মি বিএডিসি

  • উপপরিচালক মুক্তির বিরুদ্ধে বিএডিসির চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ।
  • রেস্টহাউসে বসবাস করে ভাড়ার টাকা ও শ্রমিকদের বিল তুলে আত্মসাৎ।
  • ভুয়া দরদাতা বানিয়ে নিজেই বোরো বীজ পরিবহন করে টাকা হাতিয়ে নেন।
সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ 
আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৫, ০৭: ২৬
এ কে এম মনিরুজ্জামান মুক্তি
এ কে এম মনিরুজ্জামান মুক্তি

কিশোরগঞ্জ বিএডিসির (বীউ) উপপরিচালক এ কে এম মনিরুজ্জামান মুক্তির বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। তাঁর বিরুদ্ধে ঠিকাদার সেজে বীজ পরিবহন, রেস্টহাউসে বসবাস করে ভাড়ার টাকা আত্মসাৎ ও শ্রমিকদের নামে বিল তুলে আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব বিষয়ে জসিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি ১৫ মার্চ উপপরিচালক মনিরুজ্জামান মুক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমিন খানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। নিরাপত্তার স্বার্থে জসিম উদ্দিন তাঁর পূর্ণ পরিচয় গোপন রেখেছেন।

কিশোরগঞ্জ বিএডিসি (বীউ) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপপরিচালক মুক্তি ২০২৪-২৫ বিতরণ বর্ষে ১৯ লাখ ১৪ হাজার ৮৭০ টাকার ভুয়া বীজ পরিবহন কোটেশন প্রস্তুত করে মেসার্স খান এন্টারপ্রাইজকে সর্বনিম্ন দরদাতা দেখান। বাস্তবে কেজিপ্রতি বেশি দর দেখিয়ে ভুয়া দরদাতা বানিয়ে নিজেই বোরো বীজ পরিবহন করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেন। কারণ খান এন্টারপ্রাইজের কাউকে কোনো দিন বিএডিসি অফিসে কেউ আসতে দেখেননি বলেও সূত্র জানায়।

ঠিকাদার জাহাঙ্গীর আলম সুরুজ সম্প্রতি উপপরিচালক মুক্তির সঙ্গে ভুয়া পরিবহনের বিষয়ে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ালে বিষয়টি প্রকাশ পায়।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের জুন মাস থেকে শ্রমিকদের নামে ব্যাংকে বেতন বিল দেওয়ার নির্দেশ হয়। জুন থেকে চলতি মাস পর্যন্ত ১৫ জন শ্রমিকের নামে ভুয়া বিল মাস্টাররোল তৈরি করেন মুক্তি। গত ৯ মাসে প্রতি শ্রমিকের ১৫ হাজার করে ১৫ জন শ্রমিকের ব্যাংক হিসাব থেকে প্রায় ২১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। ওই ১৫ জন শ্রমিক হলেন আজিজুল হক, মো. সোহাগ, আব্দুল্লাহ নোমান, শাহীন, জাকারিয়া আলমগীর রবিন, মোখলেছুর রহমান, আজহারুল ইসলাম, মাজাহারুল হক হান্নান, আব্দুল হক, নূরে আলম সিদ্দিকী, মুখলেছুর রহমান, ওমর ফয়সাল, হারুনুর রশিদ, কাইয়ুম ও মো. কাশেম। বাস্তবে এই ১৫ জন কোনো দিন বিএডিসি গুদামে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেননি বলে সূত্র জানায়। উপপরিচালক তাঁদের সঙ্গে চুক্তি করে টাকা আত্মসাৎ করেন।

এদিকে উপপরিচালক বীজ বিপণনের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকাকালে এ কে এম মনিরুজ্জামান মুক্তির বিরুদ্ধে চলতি বোরো বীজ বরাদ্দে ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। ডিলারদের দাবি ছিল, মোটা অঙ্কের ঘুষ ছাড়া কোনো ডিলারকে বীজ বরাদ্দ দিতেন না মুক্তি। চাহিদামতো ঘুষ পাওয়ার পর বিশেষ টোকেনের মাধ্যমে তিনি বীজের বরাদ্দ দিতেন। যেসব ডিলার বেশি ঘুষ দিতেন, তাঁরা বীজের বরাদ্দও পেতেন বেশি। এতে বীজ বরাদ্দে বৈষম্যের শিকার হচ্ছিলেন ডিলাররা। সে সময় ঘুষ দিয়েও বেশ কয়েকজন ডিলার বীজ না পাওয়ায় উপপরিচালক মুক্তির ঘুষ-বাণিজ্যের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এ ঘটনায় গত ২০ নভেম্বর বিএডিসির মহাব্যবস্থাপকের (বীজ) কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছিলেন ভুক্তভোগী ডিলার অলিউল ইসলাম।

পরে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে উপপরিচালক মুক্তির ঘুষ-দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হলে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিএডিসির প্রধান কার্যালয় থেকে অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (বীজ) মো. আব্দুস সামাদের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। অন্যদিকে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান ১২ ডিসেম্বর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদকে প্রধান করে এক সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এই দুই কমিটি তদন্ত করলেও রহস্যজনক কারণে গতকাল সোমবার পর্যন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি।

বিএডিসির ঢাকার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে এবং হাওরের মাছ পাঠিয়ে ম্যানেজ করেছেন—বলে বেড়াচ্ছেন মুক্তি। ফলে বর্তমানে তাঁকে আর কেউ কিছু করতে পারবে না।

জানা গেছে, মুক্তি জামালপুর জেলায় কর্মরত থাকাকালে দুদকের মামলার আসামি হন এবং বিএডিসি কর্তৃপক্ষ তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলা করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কার্যালয়টির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানান, যোগদান করার পর থেকেই মুক্তি রেস্টহাউসে বসবাস করেন। এখন পর্যন্ত তিনি বাইরে কোনো বাসা ভাড়া নেননি। স্ত্রী ও সন্তানেরা এখানে মাঝেমধ্যে এলে তিনি তাদের নিয়ে রেস্টহাউসেই থাকেন। কোনো টাকাপয়সা ছাড়াই নিজ ক্ষমতাবলে রেস্টহাউসে বসবাস করছেন। রেস্টহাউসে থেকে তিনি মাদক সেবন করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। মাতাল অবস্থায় অফিসের কর্মী ও কৃষকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। কেউ কিছু বললেই তাঁকে হয়রানি করেন এবং বদলি করে দেওয়ার হুমকি দেন মুক্তি।

সরকারি নিয়মে ৩৫ শতাংশ বাড়িভাড়া নিয়মিতই নিচ্ছেন মনিরুজ্জামান মুক্তি। তাঁর মূল বেতন ৬৯ হাজার ৮৫০ টাকা। সে হিসাবে প্রতি মাসে বাড়িভাড়া বাবদ প্রায় ২৫ হাজার টাকা পান। সরকার তাঁকে প্রায় ২৫ হাজার টাকা বাসাভাড়া প্রদান করলেও তিনি বাসাভাড়া না নিয়ে রেস্টহাউসে থাকেন। এ হিসাবে ভাড়া বাবদ গত ৩ বছরে মোট ৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। এ ছাড়া এখানে বিদ্যুৎ, এসি, ফ্যান, লাইট ব্যবহার করেন। চলতি মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল বাবদ সংস্থার ক্ষতি হয় ৬ লাখ ৫১ হাজার টাকা।

কার্যালয়টির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আরও জানান, মুক্তি ৫ আগস্টের আগে অফিসে বলে বেড়াতেন তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ক্যাডার ছিলেন। তাঁর একটা আঙুল গুলিতে নষ্ট হয়ে গেছে, বলতেন আর ভয় দেখাতেন। ৫ আগস্টের পর প্রায় ১০ দিন আত্মগোপনে ছিলেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তিনি আবার বেরিয়ে আসেন।

অভিযোগের বিষয়ে কিশোরগঞ্জ বিএডিসির (বীউ) উপপরিচালক এ কে এম মনিরুজ্জামান মুক্তির সঙ্গে মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘রেস্টহাউসে আমি ভাড়া দিয়ে থাকি। ভাড়া দিয়ে থাকার নিয়ম আছে।’ ভুয়া বীজ পরিবহন কোটেশন করার বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো মিথ্যা। কর্মকর্তা কখনো এভাবে করতে পারে না। বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

শ্রমিকদের নামে টাকা তুলে আত্মসাতের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনি শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারেন। আমি কোনো শ্রমিকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি কি না বা কোনো শ্রমিকের টাকা উঠাই কি না?’ কার্যালয়ে মাদক সেবনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হায়, সর্বনাশ! আমি এখানে আছি তিন বছর হয়ে গেছে। আর এসব কথা এখন উঠছে।’

এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য বিএডিসির চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমিন খানকে কয়েকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সরকারি সার অবৈধভাবে বিক্রি, চুয়াডাঙ্গায় ডিলারকে জরিমানা

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি­
জব্দ করা সার। ছবি: আজকের পত্রিকা
জব্দ করা সার। ছবি: আজকের পত্রিকা

সরকারি সার অবৈধভাবে বিক্রির অপরাধে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় এক ডিলারকে ৫০ হাজার টাকা ও ক্রেতাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিনুল ইসলাম।

জানা গেছে, সদর উপজেলার পাঁচমাইল এলাকার এক বিএডিসির সারের ডিলার অবৈধ উপায়ে আলমডাঙ্গার বলেশ্বরপুর এলাকার তাওহীদ হোসেন নামের এক ব্যক্তির কাছে ডিএপি ১১ বস্তা ও এমওপি ৯ বস্তা সার বিক্রি করেন।

বিষয়টি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পেরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিনুল ইসলাম দ্রুত অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাঁদের জরিমানা করেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় বিএডিসি সার ডিলার মডার্ন অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী ইকবাল বিশ্বাসকে নগদ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে অবৈধ উপায়ে সার কেনার অপরাধে ক্রেতা তাওহীদ হোসেনকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় সহযোগিতা করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিছুর রহমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরিশালে বিএনপির ২ শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বিএনপি নেত্রী নাসরিনের ওপর সরোয়ার অনুসারীদের হামলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিএনপি নেত্রী নাসরিনের ওপর সরোয়ার অনুসারীদের হামলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশালে শহীদ বেদিতে ফুল দেওয়া নিয়ে হামলার ঘটনায় ২ শতাধিক বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে তিনি কোতোয়ালি মডেল থানায় অভিযোগ দেন। এর আগে দুপুরে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে হামলার শিকার হন নাসরিন।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন উল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ফুল দেওয়া নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। সেই ইস্যুতে বিএনপির নেত্রী নাসরিন থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

জানা গেছে, অভিযোগে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০০ জনের কথা বলা হয়েছে। এদের অধিকাংশই ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপির নেতা-কর্মী।

জানতে চাইলে বিএনপির নেত্রী আফরোজা খানম নাসরিন জানান, তাঁর ওপর যারা হামলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তিনি রোববার রাত ৯টার দিকে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে তাদের নাম তিনি প্রকাশও করেছেন।

নাসরিনের অভিযোগ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বরিশাল-৫ (মহানগর-সদর) আসনের মনোনীত প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের অনুসারীরা তাঁর ওপর হামলা করেছে।

এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক জানান, রোববার দুপুরে ফুল দিয়ে তাঁরা যখন যাচ্ছেন, তখন বাইরে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নাসরিনের ঝামেলা হয়েছে। তবে কী হয়েছে জানেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৩২
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের শ্যালক শিপু, স্ত্রী সামিয়া ও বান্ধবী মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের শ্যালক শিপু, স্ত্রী সামিয়া ও বান্ধবী মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রীসহ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে এক বার্তায় জানিয়েছে পুলিশের বিশেষ এই ইউনিট।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ফয়সালের স্ত্রী সামিয়া, তাঁর শ্যালক শিপু ও বান্ধবী মারিয়া।

র‍্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, সামিয়া ও শিপুকে নারায়ণগঞ্জ থেকে এবং মারিয়াকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত শুক্রবার হাদিকে গুলির ঘটনার আগে ও পরে ফয়সালের সঙ্গে তাঁদের ফোনে ঘন ঘন যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে।

এ নিয়ে এ ঘটনায় র‍্যাব মোট চারজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে। এর আগে গুলির সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ তিন দিনের রিমান্ডে নেয়।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকার বিজয়নগর এলাকায় চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে করা গুলিতে গুরুতর আহত হন রিকশায় থাকা ওসমান হাদি। তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে। আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে।

আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর, ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ সিদ্ধান্ত নেন। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত দুদিন ধরে ওসমান হাদির চিকিৎসার জন্য সরকার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেছে। আজ এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের পরামর্শে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, বর্তমানে ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে।

আগামীকাল দুপুরে ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল ও ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাকসিডেন্ট ইমার্জেন্সি বিভাগে তাঁর চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ওসমান হাদির চিকিৎসাসংক্রান্ত সব ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে। তাঁর চিকিৎসাপ্রক্রিয়া সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন ড. ইউনূস।

ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৪
ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। তাঁর সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে তাঁর মস্তিষ্কের ফোলা (সেরিব্রাল ইডেমা) আগের তুলনায় বেড়েছে।

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি ওসমান হাদির চিকিৎসায় গঠিত মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল বোর্ড আজ রোববার বিকেলে বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ওই হাসপাতালের আইসিইউ ও এইচডিইউ সমন্বয়ক এবং জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট মো. জাফর ইকবাল।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন ওসমান হাদির সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে, তাঁর মস্তিষ্কের ফোলা আগের তুলনায় বেড়েছে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ক্লিনিক্যাল পরিস্থিতি। ১২ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আজ আবার তাঁর শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করা হলে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ ও ফোলাজনিত ঝুঁকি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, ব্রেন স্টেমে আঘাত ও বাড়তি সেরিব্রাল ইডেমার কারণে রোগীর রক্তচাপে ওঠানামা হচ্ছে। এদিন তাঁর হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি লক্ষ করা গেছে। তবে রক্তচাপ ও হৃদ্‌যন্ত্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় মেডিকেল সাপোর্ট অব্যাহত রয়েছে। ফুসফুসের কার্যকারিতা ও ভেন্টিলেটর সাপোর্ট বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি বা অবনতি হয়নি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ওসমান হাদির কিডনির কার্যক্ষমতা আপাতত বজায় আছে এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কিছুটা কমেছে। তবে মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে শরীরের হরমোনগত ভারসাম্যহীনতা দেখা দেওয়ায় প্রতি ঘণ্টায় ইউরিন উৎপাদনে তারতম্য হচ্ছে। এ কারণে অ্যাসিড-বেস ব্যালেন্স, ফ্লুইড ও ইলেকট্রোলাইট নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্লাড সুগার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে, যা এ ধরনের সংকটাপন্ন রোগীর ক্ষেত্রে একটি বড় ক্লিনিক্যাল চ্যালেঞ্জ।

মেডিকেল বোর্ড আরও বলেছে, ওসমান হাদির সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তবে সর্বোচ্চ পেশাদারত্ব ও সমন্বয়ের মাধ্যমে তাঁকে সর্বোত্তম চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। পরিবার অথবা পরিবারের মাধ্যমে সরকার চাইলে তাঁকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মেডিকেল বোর্ড সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

ওসমান হাদির প্রথম অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া ঢামেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. আব্দুল আহাদ আজ এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গণমাধ্যমকে বলেন, গতকাল শনিবারের মতো আজও মেডিকেল বোর্ডের সব সদস্যের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়েছে। রোগীর কেস সামারি প্রস্তুত করে ইতিমধ্যে বিদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, হাদিকে আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে। আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর ও ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

গত শুক্রবার বেলা সোয়া ২টার দিকে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেলে আসা দুই দুর্বৃত্ত চলন্ত রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত