Ajker Patrika

‘রুটি চুরির’ অপবাদে কিশোরীকে মারধর, পুকুরে মিলল বিবস্ত্র লাশ

মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি
কিশোরীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত
কিশোরীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

যশোরের মনিরামপুরে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের পুকুর থেকে এক কিশোরীর বিবস্ত্র লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার রোহিতা বাজারসংলগ্ন ওই পুকুর থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশে খবর দেন স্থানীয়রা।

এর আগে গতকাল সোমবার দুপুরে বাড়ির পাশের এক দোকান থেকে পাউরুটি চুরির অভিযোগ দিয়ে মেয়েটিকে মারধর করা হয়েছিল। পরে খবর পেয়ে মেয়েটির মাও তাকে জুতাপেটা করেছিলেন। এরপর থেকে সে নিখোঁজ ছিল।

ওই কিশোরী রোহিতা বাজার এলাকার আইনুল হকের মেয়ে। মেয়েটি স্থানীয় একটি মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত। তার বাবা রোহিতা এলাকার একটি মসজিদের ইমাম।

পুলিশ বলছে, মেয়েটি পুকুরে গোসল করতে নেমেছিল। এরপর হয়তো উঠতে পারেনি। লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হচ্ছে।

পুকুরের মালিক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, আজ (মঙ্গলবার) বেলা সাড়ে ১০টার দিকে পুকুরের মাঝখানে চুল ভাসতে দেখেন আমার এক আত্মীয়। তারপর আমরা দৌড়ে পুকুরপাড়ে এসে লাঠি দিয়ে ঘাটে টেনে এনে দেখি একটি মেয়ের লাশ। মেয়েটির পরনে পায়জামা ছিল না। পরে খবর পেয়ে মেয়েটির মা-বাবা পুকুরপাড়ে আসেন।

সাবেক চেয়ারম্যান আরও বলেন, মেয়েটির পরিবার এখানকার স্থানীয় নয়। কয়েক বছর আগে তারা এখানে এসে জমি কিনে বাড়ি করেছে। মেয়েটির বাবা ভান্ডারিমোড়ে একটি মসজিদে ইমামতি করেন। মেয়েটিকে একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করেছিলেন।

সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, ওর মা-বাবা বলছে গতকাল সকালে না খেয়ে মেয়েটি মাদ্রাসায় গেছে। ফেরার পথে বাড়ির পাশে এক দোকান থেকে সে রুটি নেয়। তখন দোকানে মালিক ছিল না। পাশের এক নারী বিষয়টি দেখে দোকানদারকে জানায়। তখন দোকানের মালিক এসে চুরির অভিযোগে মেয়েটির বইপত্র কেড়ে নেয়। পরে বাড়িতে খবর দিলে মেয়েটির মা গিয়ে সবার সামনে ওকে মারধর করেন। এরপর বাড়ি এনে শাসন করলে মেয়েটি আর বাড়িতে ঢোকেনি। রাতে মেয়ে বাড়ি না আসায় তার পরিবার গোপনে খোঁজাখুঁজি করে পায়নি।

মিজানুর রহমান বলেন, এর আগে গতকাল সোমবার বিকেলে মেয়েটিকে পুকুরে নেমে গোসল করতে পাড়ার লোকজন দেখেছিলেন। আজ পুলিশ এসে পুকুরে লোক নামিয়ে মেয়েটির পরনের পায়জামা ও গায়ের ওড়না উদ্ধার করেছে। 

কিশোরীর মা বলেন, ‘সোমবার দুপুরে এক লোক এসে ওর বাবার কাছে মেয়ে দোকান থেকে রুটি চুরি করার কথা জানায়। আগেও একদিন না বলে রুটি নেওয়ার কথা বলে লোকটি। তখন ওর বাবা মসজিদে নামাজ পড়াতে চলে যান। আমি দোকানে গিয়ে সব শুনে ওকে জুতা দিয়ে মারি। পরে মেয়ে আমার সঙ্গে চলে আসে। এরপর কি বুঝে ও বাড়িতে ঢোকেনি। রাতে মেয়েকে খুঁজে পাইনি। আজ সকালে আবার আমরা স্বামী-স্ত্রী খোঁজ করতে বের হই। পরে শুনি পুকুরে মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে।’

মনিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবলুর রহমান খান বলেন, ‘বিবস্ত্র ওইভাবে বলা যাচ্ছে না। মেয়েটি গোসল করতে পুকুরে নেমেছিল। হয়তো সাঁতার জানত না। আমরা লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছি। ভিন্ন কিছু থাকলে ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত