Ajker Patrika

সাংবাদিক তুহিন হত্যা

আরও দুটি ভিডিও নতুন নতুন প্রশ্ন

গাজীপুর প্রতিনিধি
আসাদুজ্জামান তুহিন। ছবি: সংগৃহীত
আসাদুজ্জামান তুহিন। ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুর মহানগরীর ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার ঘটনা নিয়ে আরও দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ভিডিও নতুন নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ফলে পুলিশ শুরু থেকে ঘটনার পেছনে ‘হানি ট্র্যাপে’র যে কথা বলছে, তার বাইরে আরও কারণ থাকতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

এদিকে তুহিন হত্যা মামলাটির তদন্তকাজে সহযোগিতার জন্য গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) একজন উপকমিশনারকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

শনিবার রাতে ছড়িয়ে পড়া দুটি ভিডিওর একটিতে দেখা যায়, একটি ওষুধের দোকানের ভেতরে হানি ট্র্যাপের শিকার বাদশা মিয়াকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হচ্ছে। বাদশা মিয়া ‘আল্লাহ গো, আল্লাহ গো’ বলে চিৎকার করছেন। দোকানের লোকজন তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। পরে হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর বাদশা দোকানদারের সহায়তায় বের হয়ে চলে যান।

এটি পুলিশের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা সিসিটিভি ফুটেজের ঘটনাস্থলের পাশের একটি ওষুধের দোকানের। এটি গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তার পশ্চিম পাশে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের দক্ষিণে শাপলা ম্যানশনে। প্রথম দিনে পুলিশ যে ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে, সেই ফুটেজে দেখা যায়, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৮ মিনিটের সময় শাপলা ম্যানশনে এক নারীর সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে বাদশা মিয়া ওই নারীকে ঘুষি মারছেন। তারপর কয়েক সন্ত্রাসী বাদশা মিয়াকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে এবং তাঁকে তাড়া করে।

শনিবার রাতে প্রকাশ হওয়া ভিডিওটি তাড়া করার পরের ঘটনা।

পুলিশ জানায়, সাংবাদিক তুহিন তখন বাদশা মিয়ার ওপর হামলা ও তাড়া করার ঘটনার ভিডিও ধারণ করেন। ভিডিও ধারণের বিষয়টি সন্ত্রাসীরা দেখে ফেললে তারা তুহিনকেও তাড়া করে। একপর্যায়ে তুহিন চান্দনা এলাকায় মসজিদ মার্কেটে তাঁর অফিসের নিচে একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নিলে সন্ত্রাসীরা তাঁকে সেখান থেকে টেনে বাইরে এনে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

কিন্তু তুহিনের হত্যার স্থান আর শনিবারের ভিডিওতে বাদশা মিয়াকে কোপানোর ঘটনাস্থল এক নয়। বাদশাকে কোপানো হয়েছে চান্দনা চৌরাস্তার পশ্চিমে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে শাপলা ম্যানশনে। আর তুহিন খুন হয়েছেন শাপলা ম্যানশন থেকে প্রায় ৩০০ মিটার পূর্বে চান্দনা চৌরাস্তার পূর্ব পাশে জয়দেবপুর-শিববাড়ী সড়কের দক্ষিণ পাশে মসজিদ মার্কেটের ভেতরে।

এ কারণে শুধু ভিডিও করার কারণে ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তার যানজট পেরিয়ে ৩০০ মিটারের মধ্যে বিপুল মানুষের ভিড়ে একজন সাংবাদিককে তাড়া করে হত্যা করার বিষয়টি রহস্যজনক মনে করছেন কেউ কেউ। তাঁদের দাবি, তুহিন হত্যার পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে। অপর দিকে তুহিন হত্যা মামলায় ঘটনার সময় দেখানো হয়েছে সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিট। ফলে বাদশা মিয়াকে আগে হামলা করার পর তুহিনের ওপর হামলার ঘটনার সময় মেলানো যাচ্ছে না। তবে ফুটেজ দেখে গ্রেপ্তার আসামিরাই তুহিনের হত্যাকারী, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই কারও।

স্থানীয় দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাতে প্রথমে চান্দনা চৌরাস্তায় শাপলা ম্যানশনে সন্ত্রাসীরা বাদশার ওপর হামলা করে। ওই ঘটনার ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর ঘটনাস্থলের ঠিক বিপরীত পাশে মসজিদ মার্কেটের সামনে চায়ের দোকানে তুহিনের ওপর হামলা চালানো হয়। এ সময় সন্ত্রাসীদের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শোডাউন (মহড়া) দিতেও দেখা গেছে।

শনিবারের দ্বিতীয় ভিডিওতে দেখা যায়, তুহিন হত্যা মামলার গ্রেপ্তার ৭ আসামি পুলিশের প্রিজন ভ্যানের ভেতরে রয়েছে। বাইরে থেকে তাদের সঙ্গে অন্যরা কথা বলছে। এসব কথোপকথনে গ্রেপ্তার আসামি আল আমিন নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। এ সময় প্রশ্ন করা হয়, তাহলে কারা ঘটিয়েছে এ ঘটনা, এর উত্তরে আল আমিন বলেন, ‘স্থানীয় আরিফ, মমতাজ ও ব্ল্যাক শাহীন সাংবাদিক তুহিন ভাইকে মারার জন্য আমাদের ৭ হাজার টাকা দিয়েছিল। কিন্তু আমরা মারি নাই। বিভিন্ন সময় তুহিন ভাই বড় ভাইদের প্রশাসনের লোক দিয়া ডিস্টার্ব করত। এ কারণে তারা মারতে আমাদের টাকা দিয়েছিল। ঘটনার সময় আমি ছিলাম, কিন্তু মারি নাই।’

এ সময় অন্য আসামিদেরও কথা বলতে শোনা যায়।

আল আমিন যে ব্ল্যাক শাহীনের কথা বলেছে, তার বিরুদ্ধে ১৯টি মামলা রয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানায়। আরেকটি সূত্র জানায়, ব্ল্যাক শাহীন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের একজন সাবেক মেয়রের আশীর্বাদপুষ্ট ছিল। ফলে আল আমিনের দাবি যদি সত্যি হয়, তাহলে সাংবাদিক তুহিন হত্যা একটি বড় ধরনের ষড়যন্ত্রের অংশ হবে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন।

এদিকে নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের মোবাইল ফোন গতকাল পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তুহিনের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা গেলে ঘটনা আরও বেশি স্পষ্ট হতো। তুহিন দুটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন। তিনি চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার ভিডিও ধারণ করতেন। স্পর্শকাতর না হলে তিনি ভিডিওগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিতেন।

প্রসঙ্গত, গাজীপুর মহানগরীর ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে একটি মার্কেটের ভেতর প্রকাশ্যে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। নিহত সাংবাদিক তুহিন (৩৮) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন।

জিএমপির বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন খান জানান, সাংবাদিক তুহিন হত্যার ঘটনায় বাসন থানায় দুটি মামলা হয়েছে। এর একটি মামলার বাদী হয়েছেন নিহত সাংবাদিক তুহিনের বড় ভাই মো. সেলিম। অপর মামলার বাদী তুহিন হত্যার আগে সংঘটিত আরেকটি হামলার ঘটনায় আহত বাদশা মিয়ার ভাই। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।

এসব বিষয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন) মো. জাহিদুল হাসান বলেন, ‘হত্যা মামলাটি আমাদের কাছে অগ্রাধিকার তালিকায় আছে। এ মামলায় গ্রেপ্তার ৭ আসামির প্রত্যেকের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। আশা করছি, রিমান্ড শেষ দিনে তিন-চারজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশসহ ৫ প্রতিবেশীকেই নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করছে ভারত

পাসপোর্ট ছাড়াই ফ্লাইটে ক্যাপ্টেন মুনতাসির, জেদ্দায় আটক

হইচই ফেলেছে ন্যানো ব্যানানা, চ্যাটজিপিটিকে টপকাল জেমিনি

বিজিবির একজন আর্মি অফিসারকে এখনো গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না: নাহিদ

জুলাই সনদ কার্যকরে সংবিধান আদেশ জারি ও বৈধতায় গণভোটের সুপারিশ আইন বিশেষজ্ঞদের

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত