Ajker Patrika

গাইবান্ধায় বস্তা-মাচায় সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের

আনোয়ার হোসেন শামীম, গাইবান্ধা
উঁচু মাচা তৈরি করে তার ওপর সারবদ্ধভাবে বস্তায় মাটি ভরে ফসল উৎপাদন করছেন। সুন্দরগঞ্জের নখিয়ার পাড়া গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
উঁচু মাচা তৈরি করে তার ওপর সারবদ্ধভাবে বস্তায় মাটি ভরে ফসল উৎপাদন করছেন। সুন্দরগঞ্জের নখিয়ার পাড়া গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

অতিবৃষ্টি ও বন্যার ব্যাপক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গাইবান্ধার চরাঞ্চলের কৃষকেরা এবার অভিনব পন্থা নিয়েছেন। তাঁরা আগাম জাতের সবজি ও মসলা চাষে নেমেছেন; তবে এবার পদ্ধতিটি ভিন্ন। বন্যার সর্বোচ্চ জলস্তর বিবেচনা করে উঁচু মাচা তৈরি করে তার ওপর সারবদ্ধভাবে বস্তায় মাটি ভরে ফসল উৎপাদন করছেন তাঁরা।

জেলার সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি এবং সাঘাটা উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে এই পদ্ধতিতে আদা, হলুদ, লাউ, কুমড়া, বেগুনসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি ও মসলা ফলানো হচ্ছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কৃষকেরা সবজি চাষের জন্য জমি তৈরি, বীজ ও চারা রোপণ এবং পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। বন্যার প্রভাব মোকাবিলায় এই নতুন পন্থায় চাষাবাদে কৃষকদের পাশাপাশি উৎসাহিত হচ্ছেন পরিবারের গৃহিণীরাও।

প্রতিবছর অতিরিক্ত বন্যায় পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলের জমি ও বসতভিটার নিত্যপ্রয়োজনীয় শাকসবজি নষ্ট হয়ে যায়। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) উদ্যোগে বস্তায় মাটি ভরে মাচায় বা উঁচু স্থানে শাকসবজি ও মসলা চাষের পদ্ধতি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

গাইবান্ধার প্রায় ১৬৫টি চর ও নদীতীরবর্তী ১৮ ইউনিয়নে প্রতিবছর কমবেশি বন্যায় কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়। এই বিকল্প চাষাবাদে কৃষক ও গৃহিণীদের উৎসাহিত করতে জেলার কৃষি বিভাগ এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন এসকেএস ফাউন্ডেশন যৌথ পরিকল্পনায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ ও চর্চা অব্যাহত রেখেছে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের নখিয়ার পাড়া গ্রামের কৃষক মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘চরের প্রায় ৭০ ভাগ গ্রাম প্রতিবছর বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। যখন বন্যা হয়, তখন ঘরের মধ্যেও পানি ওঠে। মাঠের আবাদ তো ডুবেই যায়। বসতভিটায় বউঝিরা কষ্ট করে সবজি লাগালেও সেটিও পচে যায়। তাই মাচায় সবজি চাষ করে এখন নিজের চাহিদা মিটিয়ে কিছু টাকা রোজগারও করতে পারছি।’

একই ইউনিয়নের চরিতা বাড়ী গ্রামের আসমা বেগম ৫০টি বস্তায় আদা চাষ করে মাসে ৭-৮ হাজার টাকা আয় করছেন, যা দিয়ে তিনি তাঁর সংসার চালান।

সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের গৃহিণী মনি বেগম জানান, প্রথমে প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি বস্তায় সবজি চাষ শুরু করেন। এখন তার বাড়িতে ফলন ভালো হওয়ায় পাশের গ্রামের আরও প্রায় ১২ জন এভাবে বস্তায় হলুদ, আদা, বেগুনসহ বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজি চাষ শুরু করেছেন।

উঁচু মাচা তৈরি করে তার ওপর সারবদ্ধভাবে বস্তায় মাটি ভরে ফসল উৎপাদন করছেন। সুন্দরগঞ্জের নখিয়ার পাড়া গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
উঁচু মাচা তৈরি করে তার ওপর সারবদ্ধভাবে বস্তায় মাটি ভরে ফসল উৎপাদন করছেন। সুন্দরগঞ্জের নখিয়ার পাড়া গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নুরুল হুদা বলেন, বস্তায় আদা, হলুদসহ বিভিন্ন সবজি ও মসলা চাষে স্থানীয় কৃষক এবং নারীদের মধ্যে বেশ উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। এই পদ্ধতি হরিপুর ইউনিয়নে কৃষি উৎপাদনব্যবস্থায় কৃষকের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছে। এটি আগামী দিনে এই অঞ্চলের পরিবারভিত্তিক সবজির চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে। অনেকে বাণিজ্যিকভাবেও উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে, যা এলাকার অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সরকারিভাবে ডিএই-এর তত্ত্বাবধানে হরিপুর ইউনিয়নে শতাধিক পরিবার বস্তায় সবজি চাষ করছে।

দিন দিন এই পদ্ধতি গাইবান্ধার মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ডিএই মনে করছে, ভবিষ্যতে গাইবান্ধার চরাঞ্চলে বস্তায় চাষ পদ্ধতি সম্ভাবনার দ্বার খুলে বন্যাসহনশীল পদ্ধতি হিসেবে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে সহায়ক হবে।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, চরাঞ্চলের কৃষকেরা মাচা পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করতে পারছেন। এতে তাঁদের আয় হচ্ছে। পাশাপাশি পুষ্টির অভাবও পূরণ হচ্ছে। যাঁরা এভাবে সবজি চাষে আগ্রহী, তাঁদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিগত সরকারের সমর্থকদের পক্ষে নিতে উঠেপড়ে লেগেছে প্রায় সব দল: ডিআইজি হাবীব

চীনের বেলুন সহ্য হয়নি, এখন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে কাতারকে বিমানঘাঁটি দিচ্ছেন ট্রাম্প

চট্টগ্রামে কনসার্টে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের জেরে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ৩

ট্রাইব্যুনালের পরোয়ানার পর লাপাত্তা মেজর জেনারেল কবীর, সন্ধানে তৎপরতা জানাল সেনাসদর

জুলাই জাতীয় সনদ: গণভোটের সময়ে অনড় জামায়াত-এনসিপি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত