Ajker Patrika

সংশোধন হচ্ছে সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ

  • চারটি ধারায় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ অন্তর্ভুক্তের কাজ করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
  • আজ কর্মচারী নেতাদের সঙ্গে পর্যালোচনা কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক।
শহীদুল ইসলাম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কর্মচারীরা বাতিলের দাবি জানালেও সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ সংশোধন করতে যাচ্ছে সরকার। এই অধ্যাদেশ সংশোধন করে যেসব ধারায় অপপ্রয়োগের সুযোগ রয়েছে, সেখানে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

অধ্যাদেশ সংশোধন করে সেখানে কোন কোন বিষয় যুক্ত করা হবে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তা চূড়ান্ত করবে সরকার। এরপর উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে অধ্যাদেশটি সংশোধন করা হবে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।

চার ধরনের শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে সরকারি কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করার বিধান রেখে গত ২৫ মে সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন কর্মচারীরা। তাঁদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যাদেশটি পর্যালোচনায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে প্রধান করে ৪ জুন একটি কমিটি করে সরকার। পর্যালোচনা কমিটির সদস্যরা ১৬ জুন সভা করেছেন।

পর্যালোচনা কমিটির বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা জানান, পর্যালোচনা কমিটির প্রথম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই অধ্যাদেশের যেসব ধারায় অপপ্রয়োগের সুযোগ রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে সেখানে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ অন্তর্ভুক্তের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কোন কোন ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ যোগ করা যেতে পারে, সে বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে কমিটি। অধ্যাদেশ বাতিল না করে কীভাবে সংশোধন করলে কর্মচারীদের আপত্তি থাকবে না, তা মাথায় রাখতে বলা হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘কোন বিষয়গুলো অনানুগত্যের মধ্যে পড়বে, তা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। এর ফলে কেউ চাইলেই অনানুগত্যের অভিযোগ তুলে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে না। অনানুগত্যের মধ্যে কোন কোন বিষয় রাখা হবে, সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি।’

যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। সূত্র জানায়, এ বিষয়ে অধ্যাদেশে নতুন করে একটি ব্যাখ্যা যোগ করা হবে। ওই ব্যাখ্যা অনুযায়ী কেউ যদি দাপ্তরিক কাজের বাইরে ব্যক্তিগত জরুরি কাজের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে না বলে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন, সে জন্য চাইলেই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।

অধ্যাদেশ অনুযায়ী কাউকে কাজে বিরত থাকতে উসকানি দিলে বা কাজ করতে বাধা দিলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এই ধারায় নতুন একটি ব্যাখ্যা যুক্ত করে বলা হবে, যে কর্মচারী কাজে বিরত থাকতে বা কাজে যোগ দিতে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন, শুধু তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে এই ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। তৃতীয় পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে এই ধারায় কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। নারী কর্মচারীরা যাতে অন্য সহকর্মীদের হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়েও নতুন করে একটি ধারা যোগ করার চিন্তা করা হচ্ছে। পাশাপাশি অভিযুক্ত কর্মচারী যাতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পান, আইন সংশোধন করে তা নিশ্চিতের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

চার ধরনের শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধের জন্য সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দিয়ে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি এখন অভিযোগ গঠন করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে অভিযোগ গঠনকারী এবং অভিযোগ নিষ্পত্তির এখতিয়ার একজনের হাতে না রেখে সেখানে একাধিক ব্যক্তিকে সম্পৃক্ত করার কথা ভাবছে সরকার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, পর্যালোচনা কমিটির সভায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি বলেছেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়ে সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ করেনি। সরকারের নির্দেশনায় তারা এই অধ্যাদেশ করেছে। ফলে এখন সরকার যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সেভাবেই কাজ করবে। সরকার অধ্যাদেশটি বাতিল করলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তাতে আপত্তি নেই।

সূত্র জানায়, পর্যালোচনা কমিটির সদস্য ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং এই কমিটিতে সহায়তাদানকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে ভূমিসচিব এখন বিদেশে আছেন। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এরপর পর্যালোচনা কমিটি সভা করে তাঁর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে। এ ক্ষেত্রে আন্দোলনরত কর্মচারী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক এবং পরে তাঁদের অবস্থানকে আমলে নেওয়া হবে।

সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান মো. নূরুল ইসলাম ও বাদিউল কবীর এবং কো-মহাসচিব মো. নজরুল ইসলামের সঙ্গে গত সোমবার বৈঠক করেছে পর্যালোচনা কমিটি। তাঁদের সঙ্গে আজ বুধবার আবার বৈঠকে বসবে এই কমিটি।

সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান বাদিউল কবীর গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের যেসব পয়েন্ট নিয়ে আমরা আপত্তি জানিয়েছি, সেগুলো তুলে দিলে এই আইন এমনিতেই বাতিল হয়ে যাবে, এর কার্যকারিতা আর থাকে না। আমরা চাই যেকোনোভাবেই হোক ওই পয়েন্টগুলো যেন না থাকে এবং এর পক্ষেই আমরা অনড় অবস্থানে থাকব।’

সরকার চাকরি অধ্যাদেশ সংশোধন করলে মেনে নেবেন কি না, এ প্রশ্নে বাদিউল বলেন, ‘আমাদের আরও দেখার বিষয় আছে, না জেনে কোনো মন্তব্য করব না। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের স্বার্থ শতভাগ সংরক্ষিত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা সংশোধনের পক্ষে মতপ্রকাশ বা এটি অনুমোদনের কোনো প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করব না।’

পর্যালোচনা কমিটির সঙ্গে গত সোমবারের বৈঠকে সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের সাতটি অপপ্রয়োগের শঙ্কার কথা জানিয়ে সে বিষয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছেন কর্মচারী নেতারা। অভিযুক্তের অপরাধ তদন্তের ব্যবস্থা রাখারও দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত