Ajker Patrika

সামান্য অর্থের লোভে সাংবাদিক আফতাবকে হত্যা করা হয়: হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
সামান্য অর্থের লোভে সাংবাদিক আফতাবকে হত্যা করা হয়: হাইকোর্ট

একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ সাংবাদিক আফতাব আহমেদকে সামান্য অর্থের লোভে নৃশংস ও নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাঁচ আসামির ফাঁসি বহাল রেখে দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে এমন পর্যবেক্ষণ দেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহ’র বেঞ্চ। 

২০২২ সালের ১২ অক্টোবর রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। বাংলায় লেখা ৫৫ পৃষ্ঠার ওই রায় আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। 

হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার প্রবীণ ফটোসাংবাদিক ছিলেন আফতাব আহমেদ। যিনি মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন ও পরবর্তীতে অসংখ্য দুর্লভ ছবি ধারণ করে বিরল সম্মান ‘একুশে পদক’ পেয়ে বিরাট মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। ৭৯ বছর বয়সী সেই আফতাব উদ্দিন আহমেদকে সামান্য অর্থের লোভে নৃশংস ও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। 

হাইকোর্ট বলেন, এই অবৈধ হত্যাকাণ্ডটি আসামি মো. হুমায়ূন কবির মোল্লা, মো. রাজু মুনশি, মো. হাবিব হাওলাদার, মো. বিল্লাল হোসেন কিসলু ও মো. রাসেল কর্তৃক সংঘটিত হয়েছে মর্মে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ফলে এই অপরাধীরা কোনো ক্রমেই কোনো প্রকার অনুকম্পা ও কৃপা পেতে পারেন না। এই অপরাধীরা সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হওয়া অত্যাবশ্যক। অমানবিক, বর্বরোচিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচারের ক্ষেত্রে মো. মহিউদ্দিন এবং অন্যান্য বনাম রাষ্ট্র মামলার সিদ্ধান্ত অনুসরণ করা সমীচীন। 

২০১৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর পশ্চিম রামপুরার ওয়াবদা রোডের বাসা থেকে আফতাব আহমেদকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় আফতাব আহমেদের ছেলে মনোয়ার আহমদ সাগর মামলা দায়ের করেন। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ ওই মামলার রায় দেন। রায়ে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং একজনকে সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হয় হাইকোর্টে। আর আসামিরাও পৃথকভাবে আপিল ও জেল আপিল করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিএইচসিপি কারাগারে: ৫ দিন ধরে কমিউনিটি ক্লিনিক তালাবদ্ধ, স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী

মো. বেল্লাল হোসেন, দশমিনা (পটুয়াখালী)
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪০
তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে আউলিয়াপুর কমিউনিটি ক্লিনিক। গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে আউলিয়াপুর কমিউনিটি ক্লিনিক। গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার রনগোপালদী ইউনিয়নের আউলিয়াপুর কমিউনিটি ক্লিনিকটি গত রোববার থেকে তালাবদ্ধ থাকায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকাবাসী। কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারের (সিএইচসিপি) অনুপস্থিতির কারণে এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) হিসেবে দায়িত্বে আছেন বাহাউদ্দিন লাবু। তিনি আওয়ামী লীগের দশমিনা উপজেলা শাখার সদস্য। গত রোববার মধ্যরাতে দশমিনা থানা পুলিশ ‘ডেভিল হান্ট’ অভিযানে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে তিনি জেলহাজতে আছেন। তাঁর অনুপস্থিতির কারণে ক্লিনিকের সেবাদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

সরেজমিনে গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) দেখা যায়, সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ক্লিনিকটি তালাবদ্ধ। সেবা নিতে আসা রোগীরা দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা পাঁচ দিন ক্লিনিকটি এভাবেই বন্ধ রয়েছে।

আউলিয়াপুর ইউপি সদস্য অসি সমাদ্দার বলেন, ‘ক্লিনিকটি বন্ধ থাকায় মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লোকজন এসে তালাবদ্ধ দেখে ফিরে যাচ্ছে। আমি লোকমুখে শুনেছি, কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্বে যিনি আছেন, তিনি জেলে। আমি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের কাছে দ্রুত সময়ের মধ্যে এলাকার লোকজনের স্বাস্থ্যসেবার জন্য ক্লিনিকটি চালু করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

আউলিয়াপুর গ্রামের সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্যসেবার প্রধান ভরসা এই কমিউনিটি ক্লিনিক। কিন্তু পাঁচ দিন ধরে এটি বন্ধ থাকায় এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমার কয়েক দিন ধরে ঠান্ডা-জ্বর ও মাথাব্যথা। দুই দিন (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) ক্লিনিকে এসে তালা পেয়েছি, তাই চলে যেতে হচ্ছে।’

অপর সেবাগ্রহীতা গাজী হাসান বলেন, ‘এর আগে এভাবে ক্লিনিক কখনো বন্ধ ছিল না। আমার কয়েক দিন ধরে জ্বর, গলাব্যথা ও মাথা ঘোরায়। এখানে এসে ক্লিনিক তালাবদ্ধ পেলাম। আমার মতো অনেকেই প্রতিদিন এসে সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে।’

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্লিনিক বন্ধ থাকার বিষয়টি দেখেছি। ক্লিনিকের দায়িত্বে যিনি আছেন, তিনি জেলে আছেন, এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য দশমিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর চিঠি দিয়েছি।’

মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সেটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে, আমি সেটা বাস্তবায়ন করব। আমার একার কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খাদ্য-সংকটে লোকালয়ে বানরের অবাধ বিচরণ: ফসলের ক্ষতি, ঘরের ভাত-তরকারিও সাবাড়

মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি
গত বুধবার মানিকছড়ি উপজেলার কুমারী এলাকা থেকে ধরে বাজারে বিক্রি করতে আনা বানরটি গহিন অরণ্যে অবমুক্ত করে বন বিভাগ। ছবি: আজকের পত্রিকা
গত বুধবার মানিকছড়ি উপজেলার কুমারী এলাকা থেকে ধরে বাজারে বিক্রি করতে আনা বানরটি গহিন অরণ্যে অবমুক্ত করে বন বিভাগ। ছবি: আজকের পত্রিকা

খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলায় বনভূমি ক্রমাগত ধ্বংস হওয়ায় বন্য প্রাণীর খাদ্য-সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এর ফলে রেসাস প্রজাতির বানর ও হনুমানের দল লোকালয়ে প্রবেশ করছে। জনপদে উৎপাদিত ফল-ফলাদি এবং মানুষের রান্না করা ভাত-তরকারিও এখন তাদের আক্রমণে নিরাপদ নয়। বানরের অবাধ বিচরণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে উপজেলার সাধারণ মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের তথ্যমতে, প্রতিটি দলে ৫০ থেকে ১০০টি বানর লোকালয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং অস্বাভাবিক হারে ফসলের ক্ষতি করছে। বিরক্ত হয়ে কেউ কেউ বানর ধরলেও বন বিভাগ বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনের আওতায় সেগুলোকে উদ্ধার করে গভীর অরণ্যে অবমুক্ত করছে। গত বুধবারও রেসাস প্রজাতির একটি বানরশাবক উদ্ধার করে অবমুক্ত করা হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলায় বিশাল বনবৃক্ষ এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না। ইটভাটা ও কয়লার চুলার জন্য আশঙ্কাজনক হারে গাছ কমছে। কিন্তু সে তুলনায় নতুন করে গাছ লাগানো হচ্ছে না। এর ফলে বনভূমি কমছে এবং বন্য প্রাণীর জন্য প্রয়োজনীয় বুনোফুল ও ফলের গাছ বিলুপ্ত হচ্ছে। খাবারের সংকটের কারণে বানর ও হনুমানের দল লোকালয়ে এসে ধান, শিম, লাউ ও পেঁপেগাছ থেকে ফল ও শাক ছিঁড়ে খাচ্ছে এবং নষ্ট করছে।

উপজেলা সদর বটতলার গৃহিণী জয়া কর্মকার জানান, বানরের অত্যাচারে তাঁদের ঘরে ঘুমানোও দায়। তিনি বলেন, ‘সূর্যোদয়ের আগেই ঘরে বা ছাদে বসে মৌসুমি ফল, সবজি খেয়ে সাবাড় করে। দু-তিন দশক আগে যখন অঘোর জঙ্গল ছিল, তখন লোকালয়ে বানর বা হনুমানের দেখা মিলত না। অবাধে গাছ কেটে বসতি গড়ায় খাদ্য-সংকটে এখন বানর লোকালয়ে।’

রহমান নগরের বাসিন্দা সাব্বির হোসেন বলেন, ‘বানরের অত্যাচারে আমরা এক দশকের বেশি সময় ধরে জ্বলছি। ঘরে ভাত-তরকারি রান্না করে নিরাপদে রাখা যায় না। বিশেষ করে তারা নারী ও শিশুদের মোটেও ভয় পায় না। বানরের উপদ্রব থেকে পরিত্রাণে আমরা উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের সহযোগিতা চাই।’

খাদ্য-সংকটের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কেউ কেউ বানর ধরে বিক্রি করার চেষ্টা করছে। গত বুধবার কুমারী এলাকা থেকে রেসাস প্রজাতির একটি বানরশাবক ৫০০ টাকায় বিক্রির খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। পরে তাঁরা বানরটি উদ্ধার করে গহিন অরণ্যে অবমুক্ত করেন।

অবমুক্ত করার পর বানরের অবস্থা। ছবি: আজকের পত্রিকা
অবমুক্ত করার পর বানরের অবস্থা। ছবি: আজকের পত্রিকা

উপজেলার গাড়িটানা বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী রেসাস প্রজাতিসহ বন্য প্রাণী ধরা, মারা বেআইনি। বিলুপ্ত প্রাণী রক্ষায় বন বিভাগ সব সময় প্রস্তুত। গত দুই মাসে বেশ কয়েকটি বানর মানুষের হাত থেকে উদ্ধার করে গহিন জঙ্গলে অবমুক্ত করা হয়েছে।’

আবদুল হামিদ আরও বলেন, ‘উপজেলায় কোনো রিজার্ভ বন নেই। জীববৈচিত্র্য ও বন্য প্রাণীকে বাঁচাতে হলে আগে বনভূমিকে বাঁচাতে হবে। নিজস্ব বাগানের একটা গাছ কাটলে দুটি লাগাতে হবে। বন্য প্রাণী বনে খাবার না পেলে লোকালয়ে আসবেই।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আফরোজ ভূঁইয়া বলেন, ‘লোকালয়ে বানরের উপদ্রবের কারণ নিশ্চয়ই বনে খাদ্য-সংকট। আগে জঙ্গলে বন্য প্রাণীর খাবার উপযোগী চাপালিশ, ঢেঁউয়াসহ নানা প্রজাতির গাছের ফল খেয়ে তারা বেঁচে থাকত। এখন মানুষ এসব গাছ না লাগিয়ে শুধু নিজের প্রয়োজনে ফলদ গাছ লাগায়। ফলে খাদ্য-সংকটে প্রাণিকুল দিশেহারা।’

ইউএনও জানান, এক বছর আগে মানিকছড়ি ডিসি পার্কে বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য গড়ার লক্ষ্যে ফলদ, বনজ, ঔষধি এবং বিলুপ্তপ্রায় ১০০ প্রজাতির বৃক্ষের চারা রোপণ করা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে দুই বছর পর এই গাছগুলোতে ফল এলে বন্য প্রাণীর খাদ্য-সংকট কিছুটা লাঘব হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি: খুনে খুনে অস্থির চট্টগ্রাম, পেছনে গ্যাংস্টাররা

  • চট্টগ্রাম নগরী ও রাউজানে একে একে ১৬টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা।
  • খুনের ধরন একই। প্রথমে হুমকি, পরে প্রকাশ্যে গুলি।
  • বেশির ভাগ ঘটনায় জড়িত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীরা।
সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম 
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৬
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম নগরের তিন থানা এলাকা ও রাউজানে কদিন পরপর প্রকাশ্যে গুলি করে মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটছে। আন্ডারওয়ার্ল্ডে পুরোনো গ্যাংস্টাররা সক্রিয় হওয়া এবং দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীরা জনসমাগমপূর্ণ এলাকাতে প্রকাশ্যে এভাবে খুনোখুনিতে জড়িয়ে পড়ায় চট্টগ্রাম যেন ভয়ের জনপদে পরিণত হচ্ছে।

গত এক বছরে চট্টগ্রাম নগরী ও রাউজানে প্রকাশ্যে গুলি করে ১৬টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তদন্তে দেখা যাচ্ছে, এসব খুনের ঘটনার অধিকাংশতেই পেছন থেকে আন্ডারওয়ার্ল্ডে পুরোনো গ্যাংস্টাররা পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে। ওই গ্যাংস্টারদের সহযোগীরাই একের পর এক এসব হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। এসব হত্যার ঘটনায় কিছু রাজনৈতিক নেতাদেরও ইন্ধনের অভিযোগ উঠেছে।

একের পর এক এমন ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কারণ, খুনের সঙ্গে জড়িতরা গ্রেপ্তার হচ্ছে না। আবার হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রগুলোও উদ্ধার করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

বাকলিয়ায় জোড়া খুনের ঘটনায় ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইখতিয়ার উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যারা গ্রেপ্তার আছে, তারা মূলত পেশাদার সন্ত্রাসী। কোনো কিছুর বিনিময়ে তারা কিলিং মিশন পরিচালনা করছে। তাদের রাজনৈতিক কোনো পরিচয় নেই।

পুরোনো গ্যাংস্টারদের হাত

গত বছরের ২৯ আগস্ট অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে আওয়ামী লীগ নেতাসহ জোড়া খুন, একই বছরের ২১ অক্টোবর চান্দগাঁওতে ছাত্রলীগ কর্মী তাহসিন খুন; চলতি বছর ২৯ মার্চ বাকলিয়াতে প্রাইভেট কারে গুলি করে শিবিরের সাবেক ক্যাডার সরোয়ারের দুই সহযোগী বখতিয়ার হোসেন মানিক ও আবদুল্লাহ আল রিফাতকে হত্যা এবং গত ২৩ মে পতেঙ্গা সি বিচ এলাকায় নগর পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ঢাকাইয়া আকবরকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটে।

সর্বশেষ গত বুধবার সন্ধ্যায় বায়েজিদ থানাধীন চালিতাতলী এলাকায় বিএনপির ঘোষিত এমপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর নির্বাচনী প্রচারে সন্ত্রাসীদের হামলায় এরশাদউল্লাহসহ পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ সরোয়ার হোসেন বাবলা নামে শিবিরের সাবেক এক ক্যাডার মারা যান। মূলত সরোয়ার হোসেন বাবলাকে টার্গেট করেই সন্ত্রাসীরা গুলি চালায় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

জানা গেছে, নগরের চাঞ্চল্যকর এসব হত্যাকাণ্ডে নিহতদের অনেকে বাবলার অনুসারী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসী ঢাকাইয়া আকবর ও সরোয়ার হোসেন বাবলা কয়েক বছর আগে চট্টগ্রামের আন্ডারওয়ার্ল্ডে শীর্ষ সন্ত্রাসী দুবাইয়ে পলাতক সাজ্জাদ আলী খানের অনুসারী ছিলেন। সেখান থেকে বেরিয়ে দুজন পরস্পরের প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হন। এর পর থেকে এলাকার আধিপত্য নিয়ে তাঁদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়।

চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক অনেকগুলো খুনের ঘটনায় এইট মার্ডারে আলোচিত পুরোনো গ্যাংস্টার সাজ্জাদ আলী খান ও হাবিব খানের অনুগত সহযোগীরা জড়িত রয়েছে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। এসব ঘটনায় তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। তাদের মধ্যে উঠতি শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদসহ অনেকেই গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। আবার অনেকেই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে একের পর এক হত্যায় অংশ নিচ্ছে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের তথ্যে, চট্টগ্রামে রাউজানে গুলি করে ১৬টি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ১২টিই রাজনৈতিক। ওই ১২টি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে অধিকাংশতেই বর্তমানে বাইরে দাপিয়ে বেড়ানো শীর্ষ সন্ত্রাসী রায়হানের নাম উঠে আসার কথা জানায় রাউজান থানা-পুলিশ।

বিভিন্ন সূত্রের তথ্যে, শীর্ষ সন্ত্রাসী রায়হান এইট মার্ডারে আলোচিত সাজ্জাদ আলী খানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত এবং কারাগারে থাকা ছোট সাজ্জাদ ওরফে বুড়ির নাতির সহযোগী। ছোট সাজ্জাদ ও রায়হান মিলে একাধিক কিলিং মিশনে অংশ নিয়েছিল। ছোট সাজ্জাদ গ্রেপ্তারের পর জেলে গেলে এই গ্যাংয়ের অস্ত্রভান্ডার এখন নিয়ন্ত্রণ করছে রায়হান।

বেশির ভাগ খুনের একই ধরন

চট্টগ্রাম নগর এবং রাউজান ও হাটহাজারীতে সংঘটিত সবগুলো হত্যাকাণ্ডেই সন্ত্রাসীদের অভিন্ন ধরন ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের আগে সন্ত্রাসীরা ভুক্তভোগীকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে একটা সময় বেঁধে দিচ্ছে। এরপর সুযোগ বুঝে হত্যা করছে। অনেকগুলো হত্যার ঘটনা ঘটেছে প্রকাশ্যে। সর্বশেষ সরোয়ার হোসেন বাবলা হত্যার ঘটনাও ঘটেছে একইভাবে।

গত ২৫ অক্টোবর উপজেলা রাউজানের চারাবটতল এলাকায় গুলি করে যুবদল কর্মীকে আলমগীর হোসেনকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর আলমগীরের একটি পুরোনো ভিডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়, যেখানে আলমগীর নিজেই একটি সভায় বলছেন, ‘আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’

বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, বুধবারের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন।

রাউজান-রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা ১৫টি এলজি, ২টি রিভলবার, ২টি রাইফেল, বিদেশি পিস্তল ৩টি, একনলা বন্দুক ১টি ও ২টি দোনলা বন্দুক উদ্ধার করেছি। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কোনটি কোন হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়েছে, তা তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলা মুশকিল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর: চেয়ারম্যান নেই, সেবা গোপনে

মো. খলিলুর রহমান, বাজিতপুর (কিশোরগঞ্জ)
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫২
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর: চেয়ারম্যান নেই, সেবা গোপনে

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার কৈলাগ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কায়ছার-এ-হাবীব তিন মাস ধরে কার্যালয়ে আসছেন না। নিয়োগ দেওয়া হয়নি প্যানেল চেয়ারম্যানও। ফলে ওই ইউনিয়নের হাজারো মানুষ সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জন্ম-মৃত্যু, নাগরিক ও ওয়ারিশান সনদসহ বিভিন্ন জরুরি কাজ বন্ধ হয়ে আছে। এ ছাড়া উন্নয়নমূলক কাজও থমকে গেছে। চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতির কারণে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

ইউনিয়ন পরিষদ ম্যানুয়াল অনুযায়ী, চেয়ারম্যান কোনো কারণে অনুপস্থিত থাকলে তা অবগত করতে হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। তিনি সেটিও করেননি বলে জানা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে পূর্বনির্ধারিত প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার কথা থাকলেও চেয়ারম্যানের অসহযোগিতার কারণে ১ নম্বর প্যানেল চেয়ারম্যান মো. সোহেল রানা দায়িত্ব নিতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার ১১ ইউনিয়ন পরিষদের অধিকাংশ চেয়ারম্যান আত্মগোপনে চলে যান। তাঁদের একজন হলেন কৈলাগ ইউপির মো. কায়ছার-এ-হাবীব। তিনি সাবেক এমপি আফজাল হোসেনের সমর্থনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হন।

অভিযোগ রয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক মামলায় তিনি আসামি হন। সে সময় কিছুদিন অফিসে না এলেও পরবর্তী সময়ে হাইকোর্ট থেকে দুই মাসের জামিন নিয়ে স্বল্প সময়ের জন্য পরিষদে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলন তীব্র হলে তিনি আবার অফিসে আসা বন্ধ করেন দেন। গত ১০ আগস্ট রাকিব নামের এক যুবককে হত্যার পর তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করা হয়। এরপর থেকে তিনি আর পরিষদে আসেননি। এমনকি উপজেলা মাসিক সভায়ও তাঁর উপস্থিতি দেখা যায়নি।

সরেজমিনে কৈলাগ ইউপিতে গিয়ে দেখা যায়, চেয়ারম্যানের কক্ষ তালাবদ্ধ। প্রশাসনিক কর্মকর্তা নয়ন চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমি গত ১২ আগস্ট দায়িত্ব নিয়েছি। যোগদানের পর থেকে চেয়ারম্যানকে কখনো অফিসে দেখিনি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা নিয়মিত কাজ করি; কিন্তু চেয়ারম্যান কীভাবে স্বাক্ষর দেন বা অনুমোদন দেন, তা জানি না।’

জন্মসনদ, ওয়ারিশান ও পরিচয়পত্র সংশোধনের কাজে আসা কয়েকজন সেবাপ্রার্থী জানান, চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতির কারণে তাঁরা সেবা পাচ্ছেন না। ফলে সাধারণ মানুষ হতাশ হয়ে পড়েছেন।

ইউপি সদস্য মো. সোহেল রানা বলেন, এত মামলা থাকার পরও তিনি কীভাবে এখনো চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান মো. কায়ছার-এ-হাবীব বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলায় আমি হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে অফিস করেছি। রাকিব হত্যা মামলায় আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আসামি করা হয়েছে। আত্মগোপনে থাকলেও আমি অফিসের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।’

স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ অনুযায়ী যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া পরপর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকলে চেয়ারম্যান বা সদস্যের পদ শূন্য ঘোষণা করা যেতে পারে। অযৌক্তিক বা দায়িত্বে অবহেলা হিসেবে প্রমাণিত হয়, তবে তাঁর পদ বাতিল বা সাময়িক বরখাস্ত করা যায়। চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকলে প্যানেল চেয়ারম্যান তাঁর দায়িত্ব পালন করেন, আর অযৌক্তিকভাবে দীর্ঘ সময় অনুপস্থিত থাকলে তাঁর পদ শূন্য ঘোষণা হতে পারে।

বাজিতপুরের ইউএনও ফারশিদ বিন এনাম বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকলে প্রশাসনিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনগণের সেবায় যেন ব্যাঘাত না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।’

কিশোরগঞ্জের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (ডিএলজি) জেবুন্নাহার শাম্মীর সঙ্গে কয়েকবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পাঠানো খুদে বার্তারও কোনো উত্তর দেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত