Ajker Patrika

ডাকসু নির্বাচনে ৩৬ দফার ইশতেহার দিল শিবির প্যানেল, যা আছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮: ২২
আজ সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বেলা ৩টা ৪৫ মিনিটে ডাকসু কার্যালয়ের সামনে ইশতেহার পাঠ করেন শিবির প্যানেলের এজিএস প্রার্থী মহিউদ্দিন খান।
আজ সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বেলা ৩টা ৪৫ মিনিটে ডাকসু কার্যালয়ের সামনে ইশতেহার পাঠ করেন শিবির প্যানেলের এজিএস প্রার্থী মহিউদ্দিন খান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফ্যাসিবাদের চিহ্ন, ফ্যাসিবাদী কাঠামো, সংস্কৃতি ও চর্চার পুনরুৎপাদন রোধ করাসহ ৩৬ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে শিবির-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট।

আজ সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বেলা ৩টা ৪৫ মিনিটে ডাকসু কার্যালয়ের সামনে ইশতেহার পাঠ করেন প্যানেলের সহসাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী (এজিএস) প্রার্থী মহিউদ্দিন খান।

ছয়টি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে ইশতেহার বাস্তবায়ন করবে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট। প্রথম যে ছয়টি বিষয় অগ্রাধিকার দেবে, তা হলো— নিরাপদ ক্যাম্পাস, আবাসন সংকট সমাধান, নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, চিকিৎসা সুবিধা ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার, উন্নত পরিবহন, ক্যারিয়ার গঠনে পর্যান্ত তথ্য ও সেবা। এ ছাড়া অন্য ছয়টি বিষয়ে তারা না-বোধক বিষয় উল্লেখ করে বলে, কর্তৃত্ববাদী রাজনীতি, নির্যাতন ও সহিংসতা, গণরুম-গেস্টরুম কালচার, বৈষম্যমূলক নীতি ও আচরণ, মাদক, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, লাঞ্চের পরে আসেন কালচার, ইসলামোফোবিয়া ও সাইবার বুলিং বন্ধ করবে বলে ইশতেহারে ঘোষণা করে তারা।

এজিএস প্রার্থী মহিউদ্দিন মোট ৩৬টি ইশতেহার ঘোষণা করেন। এসবের মধ্যে রয়েছে ডাকসু নির্বাচনকে একাডেমিক ক্যালেন্ডারের অন্তর্ভুক্ত করে প্রতিবছর নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন বাস্তবায়ন করা। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কর্তৃক নৃশংস হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীদের একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আইনি শাস্তি নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে সামা, মোফাজ্জল ও আবু বকর হত্যাসহ ফ্যাসিবাদী আমলে সংঘটিত সব নিপীড়নের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা।

প্রথম বর্ষ থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর বৈধ সিট নিশ্চিত করা। আবাসন সংকটের অস্থায়ী সমাধান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে অস্থায়ী হোস্টেল বা মাসিক আবাসন ভাতার ব্যবস্থা করা এবং স্থায়ী সমাধান হিসেবে হল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া।

নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিতকরণে হল ও অন্যান্য ক্যানটিন-ক্যাফেটেরিয়াতে পুষ্টিবিদের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে পুষ্টিকর খাবারের মেনু প্রণয়ন এবং তিন মাস অন্তর খাবারের মান পরীক্ষা করা। প্রতি ফ্যাকাল্টিতে মানসম্মত ক্যাফেটেরিয়া ও ক্যানটিনের ব্যবস্থা করা। আর্থিক সংকটে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ ‘মিল ভাউচার’ চালু করা।

নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ পরিবহন নিশ্চিত করা। ছাত্রী হলে পুরুষ কর্মচারী যথাসম্ভব কমিয়ে আনা এবং প্রক্টরিয়াল টিমে প্রয়োজনীয়সংখ্যক নারী সদস্য নিয়োগ দেওয়া। কমনরুমে নারী কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া। মা শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং রুম ও চাইল্ড কেয়ার কর্নার স্থাপন করা।

ছাত্রীদের জন্য ছাত্রী হলে প্রবেশের বিধিনিষেধ শিথিল করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের হলে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া। ছাত্রী হলে অভিভাবকদের জন্য ‘গার্ডিয়ান লাউঞ্জ’ স্থাপন করা।

ছাত্রীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটির বিধান কার্যকর করা। মাতৃত্বকালীন সময় পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ক্লাসে উপস্থিতির বাধ্যবাধকতা শিথিল করা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সেবাকেন্দ্রিক লাল ফিতার দৌরাত্ম্য নিরসন করে ‘পেপারলেস রেজিস্ট্রার বিল্ডিং’ গড়ে তোলা। উচ্চশিক্ষায় বিদেশে গমনেচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ চালু করা।

ডাকসু ওয়েবসাইট উন্নতকরণ এবং অ্যাপের মাধ্যমে ‘অ্যাকসেস টু রিসোর্সেস’ নিশ্চিত করা ও স্বচ্ছতা বাড়ানো। শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতিকে আরও কার্যকর করা এবং প্রতিটি বিভাগে উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আদলে ‘মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম’ চালু করা। প্রতি ফ্যাকাল্টিতে ই-লাইব্রেরি ও কম্পিউটার সেন্টার স্থাপন করা। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও কাউন্সেলিং সেবার পরিসর বাড়ানো। বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার মেরামত ও আধুনিকীকরণের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়ানো এবং ডিইউএমসি চালুর মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবাকে আরও বেশি সহজলভ্য করা। মেডিকেল সেন্টারে চুক্তিভিত্তিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়োগ দেওয়া। বিশেষ করে, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ নারী চিকিৎসকের ব্যবস্থা করা। শিক্ষার্থীদের নিয়ে রিসার্চবিষয়ক কর্মশালা করা। আন্তবিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা ফেস্ট আয়োজন করা। স্মল রিসার্চ গ্র্যান্ট ও রিসার্চ ট্রাডেল গ্র্যান্ট চালু করা। গবেষণার পরিবেশ নিশ্চিত করা ও গবেষণা সহজলভ্য করা। নিয়মিত সেমিনার ও কনফারেন্স আয়োজন করা এবং উচ্চমানের প্রকাশনা নিশ্চিত করা।

মহিউদ্দিন খান আরও বলেন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, বিজ্ঞান লাইব্রেরি, হল লাইব্রেরি ও পাঠকক্ষে এবং ডিপার্টমেন্টের সেমিনার কক্ষ সম্প্রসারণ করা। এগুলোর আধুনিকায়ন নিশ্চিত করে রিসোর্সগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য আরও সহজলভ্য করা। লাইব্রেরিসমূহ ডিজিটালাইজেশনের আওতায় নিয়ে আসা। সারা দেশে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে স্মারকচুক্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করা। স্বাস্থ্যবিমাকেন্দ্রিক ভোগান্তি নিরসনে প্রশাসনের বিমা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্মারকচুক্তি করা। হলভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা চালু করা। ক্যাম্পাসের বিপণীকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় ফার্মেসি স্থাপন করা। ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জেড শিক্ষার্থীদের জন্য ‘অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি’ চালু করা। আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটকে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উন্নীত করা। প্রতিটি বিভাগে অন্তত একজন বিদেশি শিক্ষক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া। ল্যাঙ্গুয়েজ রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা।

ইশতেহারে মহিউদ্দিন আরও উল্লেখ করে বলেন, সফট স্কিল ডেভেলপমেন্টের ওপর ওয়ার্কশপ আয়োজন করা। উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ারবিষয়ক সেমিনার, কর্মশালার পাশাপাশি ক্যাম্পাসে জব ফেয়ার আয়োজন করা। তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে স্টার্টআপ সামিট আয়োজন করা। অ্যালামনাই নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়নে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে লাইব্রেরিগুলোতে উন্নত ও আধুনিক যন্ত্রপাতি নিশ্চিত করা। সায়েনা ওয়ার্কশপ, CARS ও CARASS-এর আধুনিকায়ন নিশ্চিত করা। গবেষণা সহায়ক সফটওয়্যার ও টুলসমূহের সহজলভাতা নিশ্চিত করা। বিশেষত, ইনিস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনলোজির (আইএলইটি) ল্যাবে আধুনিক মেশিনারিজ ক্রয় করার মাধ্যমে ল্যাবের কার্যকারিতা বৃদ্ধি ও ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে সমন্বয় করার মাধ্যমে চামড়াশিল্পে অবদান রাখার সুযোগের ক্ষেত্র বাড়ানো।

কেন্দ্রীয় মসজিদ, হল মসজিদ, মন্দির ও অন্য উপাসনালয়সমূহের অবকাঠামোগত সংস্কার ও উন্নয়ন করা। ছাত্রীদের ইবাদতের জন্য একাডেমিক এরিয়া বিশেষ করে কার্জন হল এলাকায় উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতকরণ।

ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে বহিরাগত যান নিয়ন্ত্রণ, ভাসমান চক্র ও ভবঘুরেদের উচ্ছেদ করা। ক্যাম্পাস এরিয়ায় রেজিস্ট্রার্ড রিকশা প্রবর্তন ও ভাড়ার তালিকা প্রণয়ন করা।

ইশতেহার পাঠের শেষে সমাপনী বক্তব্য দেন ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম। তিনি বলেন, ‘আমাদের জোট হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জোট। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা যেটিকে নো বলেছি, সেটি থেকে মুক্তি পেয়েছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত