Ajker Patrika

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী: ‘জীবদ্দশায় বোধ হয় আর অবসর ভাতা পাব না’

  • অবসরের পরপরই ভাতা ও কল্যাণ তহবিলের টাকা পাওয়ার প্রত্যাশা
  • অবসর সুবিধা বোর্ডে ধরনা দিয়ে যাচ্ছেন; কিন্তু ভাতার টাকা পাচ্ছেন না
  • এসব সুবিধা পেতে এখন চার থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়
অরূপ রায়, সাভার
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

‘শিক্ষকতা করে যে বেতন পেতাম তাতে আমার সংসার কোনো রকমে চলে যেত। প্রায় পাঁচ বছর আগে অবসর নেওয়ার পর এখন আর চলতে পারছি না। বেকার জীবনে নানা রোগ দেহে বাসা বেঁধেছে। টাকার অভাবে উপযুক্ত চিকিৎসা করতে না পারায় বিছানায় পড়ে গেছি। এ অবস্থায় অবসর ভাতার টাকাটা পেলে অন্তত চিকিৎসাটা করতে পারতাম। কিন্তু এখানকার (অবসর সুবিধা বোর্ড) যে অবস্থা দেখছি, তাতে বোধ হয় বেঁচে থাকতে আর অবসর ভাতার টাকা পাব না।’

গত মঙ্গলবার রাজধানীর পলাশীর জহির রায়হান রোডে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধা বোর্ডের সামনে হুইলচেয়ারে বসে কথাগুলো বলছিলেন ঢাকার সাভার পৌরসভার ইমান্দিপুরের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত মাদ্রাসাশিক্ষক রফিকুল ইসলাম। কথাগুলো বলতে বলতে অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।

কথা বলে জানা যায়, রফিকুল ইসলাম শিক্ষকতা করেছেন বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার খন্তাখালী রাজাপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায়। শিক্ষকতা পেশা থেকে ২০২০ সালে তিনি অবসরগ্রহণ করেন। ২০২১ সালের অক্টোবরে অবসর ভাতার জন্য আবেদন করেন। এরপর থেকে তিনি ও তাঁর স্বজনেরা অবসর সুবিধা বোর্ডে ধরনা দিয়ে যাচ্ছেন; কিন্তু ভাতার টাকা পাচ্ছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু রফিকুল ইসলামই নন, সারা দেশে তাঁর মতো আরও কয়েক হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর আবেদন অনিষ্পন্ন অবস্থায় জমা পড়ে আছে। অবসরের পরপরই অবসর ভাতা ও কল্যাণ তহবিলের টাকা পাওয়ার প্রত্যাশা থাকলেও বাস্তবে বেসরকারি শিক্ষপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের এসব সুবিধা পেতে এখন চার থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।

এদিকে সুবিধা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, দক্ষ লোকবলের অভাব আর সার্ভারে সমস্যার কারণে শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধা দিতে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে। তাঁরা জানান, সার্ভারে সমস্যার কারণে কয়েক মাস ধরে অনেকে আবেদনই করতে পারছেন না। আবেদন করতে না পেরে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা ঢাকায় এসে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। কিন্তু তাঁরা কোনো সমাধান দিতে পারছেন না।

অবসর সুবিধা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে এ পর্যন্ত ৫১ হাজার ৫৫৬ জন স্কুলশিক্ষক ও ২৫ হাজার ৭৭৮ জন কর্মচারী, ২০ হাজার ৬৪৩ জন কলেজশিক্ষক ও ১০ হাজার ৩২১ জন কর্মচারী, ৩৫ হাজার ৭৩০ জন মাদ্রাসাশিক্ষক ও ১৭ হাজার ৮৬৫ জন কর্মচারী, ২৮ জন এইচএসসি ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা শিক্ষক ও ৯ জন কর্মচারী, ৭১ জন কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষক ও ২৩ জন কর্মচারী, ১০৮ জন এসএসসি ভোকেশনাল শিক্ষক ও ৫৪ জন কর্মচারী এবং ১০৩ জন মাদ্রাসা ভোকেশনাল ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষক ও ৪৮ জন কর্মচারী অবসর সুবিধা পেয়েছেন।

তথ্য অনুযায়ী, অনিষ্পন্ন হয়ে ৪৪ হাজার ৭৯৫টি আবেদন জমা পড়ে রয়েছে। এর মধ্যে স্কুল পর্যায়ে ২০ হাজার ৯১৫, কলেজের ৮ হাজার ৯৫০, মাদ্রাসার ১৪ হাজার ৫৮৫, এইচএসসি ব্যবসায় ব্যবস্থাপনার ৩৮, কৃষি ডিপ্লোমার ৬৫, এসএসসি ভোকেশনালের ১২৯ এবং মাদ্রাসা ভোকেশনাল ও ব্যবস্থাপনার ১১০টি আবেদন রয়েছে।

কথা হয় সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার হাজী আহাম্মদ আলী কামেল মাদ্রাসার প্রাক্তন অধ্যক্ষ সামসুল আলমের সঙ্গে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। জানালেন, ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি অবসর ভাতার জন্য আবেদন করেন। এখনো তিনি ভাতার টাকা পাননি।

অধ্যক্ষ সামসুল আলম গত মঙ্গলবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আবেদন করার এক বছর পর থেকেই অবসর সুবিধা বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। কবে টাকা পাব, সে বিষয়ে তাঁরা সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারেন না। নানা অজুহাত দেখান।’

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার সেলিমাবাদ ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক তারিকুল ইসলাম মল্লিক বলেন, ‘অবসর ভাতা পাওয়ার জন্য ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে আবেদন করেছিলাম। ওই টাকার আশায় কয়েক লাখ টাকা ধার করে ফেলেছি। এখন আর কোনোভাবেই চলতে পারছি না।’

এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য অবসর সুবিধা বোর্ডের পরিচালক অধ্যাপক মো. জাফর আহম্মদের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। পরে উপপরিচালক (প্রশাসন ও মূল্যায়ন) নাহিদা চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ২১ সালের আবেদন নিষ্পত্তির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবাই সুবিধা পাবেন। দক্ষ লোকবলের অভাব আর সার্ভারে সমস্যার কারণে শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধা দিতে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত