Ajker Patrika

হাসপাতালের পার্কিংয়ে গাড়িতে দুই মরদেহ: ‘হত্যা’ বলছে পরিবার

ঢামেক প্রতিবেদক
আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২৫, ১৭: ১৫
মোহাম্মদ মিজান ও জাকির হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
মোহাম্মদ মিজান ও জাকির হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর মৌচাকে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পার্কিংয়ে থাকা একটি গাড়ি থেকে জাকির হোসেন ও মোহাম্মদ মিজান নামে যে দুজনের মরদেহ পাওয়া গেছে, তাঁদের হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্বজনদের।

মিজানুরের ভাগিনা মো. রিয়াদ বলছেন, তাঁর মামাকে যে হত্যা করা হয়েছে, এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত। তবে কারা, কী উদ্দেশ্যে তাঁকে হত্যা করেছে, তা তিনি জানেন না।

অন্যদিকে জাকিরের বাবা মো. আবু তাহেরের দাবি, তাঁর ছেলেকে দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাবে বলে স্থানীয় এক দালাল ও ঢাকায় ট্রাভেল এজেন্সি তাঁর কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা নেয়। তবে তারা তাঁর ছেলেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে পারেনি। তিনি ও তাঁর ছেলে পরে ওই ২৫ লাখ টাকা ফেরত চাইলে অনেক টালবাহানা শেষে টাকা ফেরত দিতে রাজি হয় তারা। যদিও তার আগে তাঁর ছেলেকে তারা মারধর করে। গত রোববার ঢাকায় সেই টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। ওই দালাল ও ট্রাভেল এজেন্সির লোকজন তাঁর ছেলেকে হত্যা করেছে বলে ধারণা আবু তাহেরের।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে মিজানুরের ভাগিনা ও জাকিরের বাবা আজকের পত্রিকাকে এসব কথা বলেন।

এদিকে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আওলাদ হোসেন বলেছেন, জাকির ও মিজানের শরীরের বিভিন্ন জায়গা ফোলা এবং ফোসকা পড়া। এ ছাড়া তাঁদের মুখ লালচে ফোলা ও রক্তমাখা ছিল। তবে প্রাথমিকভাবে তাঁদের মৃত্যুর কারণ উল্লেখ ছিল না প্রতিবেদনটিতে।

গতকাল সোমবার ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পার্কিংয়ে থাকা একটি গাড়ি থেকে জাকির ও মিজানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

জাকিরের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার লটপটিয়া গ্রামে, আর মিজানের বাড়ি একই উপজেলার দক্ষিণ গোমাতলী গ্রামে।

আজ মর্গে নিহত মিজানের ভাগিনা মো. রিয়াদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার মামা আগে গ্রামে বালু ব্যবসা করতেন। তবে সেই ব্যবসা বাদ দিয়ে তিনি মাছের খামার করছিলেন। তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। জাকির তাঁর বন্ধু। জাকির প্রাইভেট কার চালাতেন। প্রায়ই মামাকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন। মামাকে গাড়ি চালানো শেখাতেন। গত শনিবার রাতে তাঁরা দুজন, গাড়ির মালিক ও মালিকের সম্বন্ধী গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। ওই দিন রাতে মালিকের সম্বন্ধীর দেশের বাইরে যাওয়ার ফ্লাইট ছিল। বিমানবন্দর থেকে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেলে আসেন। একজন রোগীকে নিয়ে পরদিন গ্রামে ফেরার কথা ছিল তাঁদের। এরপর কী হয়েছে, আমরা জানি না। তবে তাঁকে মেরে ফেলা হয়েছে, এটা বুঝতে পারছি।’

নিহত জাকিরের বাবা কৃষক মো. আবু তাহের বলেন, ‘আমার ছেলের কারও সঙ্গে কোনো ঝগড়াঝাঁটি নাই। কোনো রাজনীতির সঙ্গে সে জড়িত না। কারা তাকে মেরেছে, তা-ও জানি না। তবে দুই বছর আগে আমেরিকা যাওয়ার জন্য এলাকার এক দালালকে টাকা দিয়েছিলাম। সেই দালাল তাদের নিয়ে এসেছিল ঢাকায় পল্টনে এক ট্রাভেল এজেন্সির ফজলু নামে এক ব্যক্তির কাছে। সব মিলিয়ে তখন প্রায় ২৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল। এরপর জাকিরকে শ্রীলঙ্কা নিয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে অবৈধ পথে আমেরিকা পাঠানোর কথা ছিল। তবে তখন সেটি পারেনি। এরপর আরও কিছু টাকা দিয়ে জাকিরকে আমরাই দেশে ফেরত আনি।

‘এর পর থেকে ফজলুর কাছে সেই টাকা ফেরত চাইতে গেলে সে কিছুদিন পর টাকা ফেরত দেবে বলে জানায়। এরপর বহুবার তার পেছনে ঘুরেও টাকা ফেরত পাচ্ছিলাম না। এই টাকা চাওয়ার কারণে তারা আমার ছেলেকে একবার মারধরও করেছিল। সবশেষ কিছুদিন আগে এলাকাতে দালালের সঙ্গে কথা হয় এবং সে স্ট্যাম্পে সই করে যে চলতি মাসের ১০ তারিখে সেই টাকা ঢাকায় এজেন্সিতে এসে ফেরত দেবে। কিন্তু ওই ১০ তারিখেই জাকিরকে মেরে ফেলা হয়েছে। এই ঘটনা তারাই ঘটিয়েছে বলে আমাদের ধারণা। তারা ছাড়া আর কেউ এটি করতে পারে না।’

হাসপাতালের পার্কিংয়ে থাকা যে গাড়িতে জাকির ও মিজানের মরদেহ পাওয়া যায়, তার মালিক জোবায়েদ আল মাহমুদ সৌরভ জানান, মৃত দুজন ও তাঁর বাড়ি একই উপজেলায়। ১১ বছর ধরে গাড়ির ব্যবসা করেন তিনি। তিন মাস ধরে তাঁর প্রাইভেট কার ভাড়ায় চালান জাকির। শনিবার তাঁর সম্বন্ধী ইতালি যাবে, সে জন্য রাতে গাড়িতে করে সম্বন্ধীসহ চারজন ঢাকায় আসেন। তাঁকে বিমানবন্দর নামিয়ে দিয়ে তিনজন মৌচাকে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেলে যান। সেখানে তাঁদের গ্রামের এক রোগী ভর্তি আছে। তাঁকে রোববার বেলা ১১টায় ছুটি দেওয়ার কথা ছিল।

শনিবার ভোরে হাসপাতালে পৌঁছানোর পর সৌরভ সিদ্ধান্ত নেন, তিনি বাসে করে গ্রামে চলে যাবেন। আর জাকির ও মিজান সকালে রোগীসহ গ্রামে ফিরবেন। সেই কথামতো তিনি বাসে করে চলে আসেন। সেই বাসের টিকিট কেটে দেন জাকির। এরপর রোববার বিকেলে তিনি জাকিরকে ফোন দেন, গাড়ি নিয়ে ফিরেছে কি না জানার জন্য। কিন্তু তাঁর ফোন কেউ ধরছিল না। এরপর অনেকবার চেষ্টা করেও জাকিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। পরদিন অর্থাৎ গতকাল সোমবারও যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। গতকাল বিকেলে তিনি ঢাকায় আসার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু তার আগে বেলা ৩টার দিকে রমনা থানা-পুলিশ তাঁকে ফোন দিয়ে জানায়, হাসপাতালের পার্কিংয়ে তাঁর গাড়িতে দুজনের লাশ পাওয়া গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মৌচাকে গাড়িতে লাশ: ২৫ লাখ টাকায় যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলে জাকিরকে শ্রীলঙ্কায় নিয়েছিল দালাল

যেভাবে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর পরিকল্পনা চলছিল, স্বীকারোক্তিতে জানালেন মেজর সাদিকের স্ত্রী জাফরিন

পুলিশের এডিসিকে ছুরি মেরে পালিয়ে গেল ছিনতাইকারী

টেলিটক এখন গলার কাঁটা পর্যায়ে চলে এসেছে: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

সিন্ধু পানিবণ্টন নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের রায় পাকিস্তানের বড় জয়: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত