Ajker Patrika

সুপ্রিম কোর্ট বার: ব্যারিস্টার খোকনসহ বিএনপি সমর্থকদের দায়িত্ব না নিতে চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৪, ১৮: ১৪
সুপ্রিম কোর্ট বার: ব্যারিস্টার খোকনসহ বিএনপি সমর্থকদের দায়িত্ব না নিতে চিঠি

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (২০২৪-২৫) নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ বিএনপি সমর্থক চারজনকে দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

আজ বুধবার জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী ও মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল স্বাক্ষরিত চিঠিতে তাঁদের দায়িত্ব না নিতে বলা হয়েছে। অপর তিনজন হলেন বারের নির্বাচিত সদস্য শফিকুল ইসলাম, ফাতিমা আক্তার ও সৈয়দ ফজলে এলাহি অভি।

চিঠিতে বলা হয়, ৬ ও ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে আপনারা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম মনোনীত প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বিগত দুই বছরের মতো এবারের নির্বাচনেও ক্ষমতাসীনরা নজিরবিহীনভাবে ভোট জালিয়াতি, কারচুপি ও মনগড়া ফলাফল ঘোষণা করেছে।

এমনকি সম্পাদক পদে আওয়ামী লীগদলীয় দুজন প্রার্থী, প্রথমে নাহিদ সুলতানা যুথী ও পরে শাহ মঞ্জুরুল হককে তথাকথিত বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ক্ষমতাসীন দলের বহিরাগত সন্ত্রাসীরা নির্বাচনের পর ৮ মার্চ ভোরে সমিতির অডিটরিয়ামে হামলা চালিয়ে আইনজীবীদের মারধর ও ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নিয়ে যায়। ওই ঘটনা আওয়ামী লীগের দুজন সম্পাদক পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘটিত হলেও সরকারের একজন বেতনভুক্ত আইন কর্মকর্তা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ও আরও তিনজন আইনজীবী ফোরাম নেতাকে আসামি করে ৯ মার্চ শাহবাগ থানায় একটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক ফৌজদারি মামলা দায়ের করে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, নির্বাচন কমিশনে দায়িত্ব পালনকারী ব্যারিস্টার ওসমান চৌধুরী এবং ওই নির্বাচনে সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজলকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় গ্রেপ্তার করে তাঁদের ডিবি অফিসে রিমান্ডে নেওয়া হয়। তাঁরা উভয়েই দুই সপ্তাহ কারাভোগ করেছেন। তাঁদের কারাগারে রেখে লুট হয়ে যাওয়া ব্যালট পেপার গণনার নাটক সাজিয়ে তথাকথিত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। যে নির্বাচনে আমাদের পুরো প্যানেলেরই বিজয় সুনিশ্চিত ছিল, সেখানে ক্ষমাতাসীন আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতি জায়েজ করতে আপনাদের নামকাওয়াস্তে বিজয়ী দেখানো হয়েছে। বিজ্ঞ আইনজীবী সমাজ ও দেশের আপামর জনগণ নির্বাচনের এই ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করেছে।

চিঠিতে বলা হয়, সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে ২৪ মার্চ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র কেন্দ্রীয় নেতা, উপদেষ্টামণ্ডলী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি/সম্পাদকদের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ১০ মার্চ ঘোষিত ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে ন্যায়সংগত যৌক্তিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে, আপনাদের জানানো যাচ্ছে যে আপনারা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫-এর মেয়াদকালের দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন।

এবারের নির্বাচনের পর ৯ মার্চ দিবাগত রাতে ফলাফল ঘোষণা করেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। তাতে ১৪টি পদের বিপরীতে সভাপতিসহ চারটি পদে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের প্রার্থীদের। অপর দিকে সম্পাদকসহ ১০টি পদে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় সরকার-সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রার্থীদের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর: চেয়ারম্যান নেই, সেবা গোপনে

মো. খলিলুর রহমান, বাজিতপুর (কিশোরগঞ্জ)
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর: চেয়ারম্যান নেই, সেবা গোপনে

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার কৈলাগ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কায়ছার-এ-হাবীব তিন মাস ধরে কার্যালয়ে আসছেন না। নিয়োগ দেওয়া হয়নি প্যানেল চেয়ারম্যানও। ফলে ওই ইউনিয়নের হাজারো মানুষ সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জন্ম-মৃত্যু, নাগরিক ও ওয়ারিশান সনদসহ বিভিন্ন জরুরি কাজ বন্ধ হয়ে আছে। এ ছাড়া উন্নয়নমূলক কাজও থমকে গেছে। চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতির কারণে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

ইউনিয়ন পরিষদ ম্যানুয়াল অনুযায়ী, চেয়ারম্যান কোনো কারণে অনুপস্থিত থাকলে তা অবগত করতে হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। তিনি সেটিও করেননি বলে জানা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে পূর্বনির্ধারিত প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার কথা থাকলেও চেয়ারম্যানের অসহযোগিতার কারণে ১ নম্বর প্যানেল চেয়ারম্যান মো. সোহেল রানা দায়িত্ব নিতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার ১১ ইউনিয়ন পরিষদের অধিকাংশ চেয়ারম্যান আত্মগোপনে চলে যান। তাঁদের একজন হলেন কৈলাগ ইউপির মো. কায়ছার-এ-হাবীব। তিনি সাবেক এমপি আফজাল হোসেনের সমর্থনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হন।

অভিযোগ রয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক মামলায় তিনি আসামি হন। সে সময় কিছুদিন অফিসে না এলেও পরবর্তী সময়ে হাইকোর্ট থেকে দুই মাসের জামিন নিয়ে স্বল্প সময়ের জন্য পরিষদে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলন তীব্র হলে তিনি আবার অফিসে আসা বন্ধ করেন দেন। গত ১০ আগস্ট রাকিব নামের এক যুবককে হত্যার পর তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করা হয়। এরপর থেকে তিনি আর পরিষদে আসেননি। এমনকি উপজেলা মাসিক সভায়ও তাঁর উপস্থিতি দেখা যায়নি।

সরেজমিনে কৈলাগ ইউপিতে গিয়ে দেখা যায়, চেয়ারম্যানের কক্ষ তালাবদ্ধ। প্রশাসনিক কর্মকর্তা নয়ন চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমি গত ১২ আগস্ট দায়িত্ব নিয়েছি। যোগদানের পর থেকে চেয়ারম্যানকে কখনো অফিসে দেখিনি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা নিয়মিত কাজ করি; কিন্তু চেয়ারম্যান কীভাবে স্বাক্ষর দেন বা অনুমোদন দেন, তা জানি না।’

জন্মসনদ, ওয়ারিশান ও পরিচয়পত্র সংশোধনের কাজে আসা কয়েকজন সেবাপ্রার্থী জানান, চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতির কারণে তাঁরা সেবা পাচ্ছেন না। ফলে সাধারণ মানুষ হতাশ হয়ে পড়েছেন।

ইউপি সদস্য মো. সোহেল রানা বলেন, এত মামলা থাকার পরও তিনি কীভাবে এখনো চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান মো. কায়ছার-এ-হাবীব বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলায় আমি হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে অফিস করেছি। রাকিব হত্যা মামলায় আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আসামি করা হয়েছে। আত্মগোপনে থাকলেও আমি অফিসের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।’

স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ অনুযায়ী যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া পরপর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকলে চেয়ারম্যান বা সদস্যের পদ শূন্য ঘোষণা করা যেতে পারে। অযৌক্তিক বা দায়িত্বে অবহেলা হিসেবে প্রমাণিত হয়, তবে তাঁর পদ বাতিল বা সাময়িক বরখাস্ত করা যায়। চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকলে প্যানেল চেয়ারম্যান তাঁর দায়িত্ব পালন করেন, আর অযৌক্তিকভাবে দীর্ঘ সময় অনুপস্থিত থাকলে তাঁর পদ শূন্য ঘোষণা হতে পারে।

বাজিতপুরের ইউএনও ফারশিদ বিন এনাম বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকলে প্রশাসনিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনগণের সেবায় যেন ব্যাঘাত না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।’

কিশোরগঞ্জের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (ডিএলজি) জেবুন্নাহার শাম্মীর সঙ্গে কয়েকবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পাঠানো খুদে বার্তারও কোনো উত্তর দেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালের ১০ স্থানে অবৈধ বাঁধ

আবুল কাশেম, সাঁথিয়া (পাবনা)
বাঁশ, পলিথিন ও চাটাই দিয়ে অবৈধভাবে নির্মিত বাঁধ। সম্প্রতি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা ইউনিয়নের বড়গ্রামের দত্তপাড়া খালে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাঁশ, পলিথিন ও চাটাই দিয়ে অবৈধভাবে নির্মিত বাঁধ। সম্প্রতি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা ইউনিয়নের বড়গ্রামের দত্তপাড়া খালে। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাবনার সাঁথিয়া ও বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাগেশ্বরী-ডি-২ ক্যানালের (কৈটলা পাম্প হাউস থেকে মুক্তার ধর পর্যন্ত খাল) প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকায় অন্তত ১০টি স্থানে অবৈধভাবে সুতি জালের বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। এতে পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়ে ক্যানাল পাড়ের জমিতে পানি জমে রয়েছে। ফলে পাকা ও আধা পাকা আমন ধান পানির নিচে ডুবে আছে।

এ ছাড়া চলতি রবি মৌসুমে হাজার হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন ও সরিষার আবাদ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এমনটি হচ্ছে অভিযোগ করে বাঁধ অপসারণের দাবিতে ইউএনও ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কৃষকেরা।

লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, কৈটলা পাম্প হাউস থেকে মুক্তার ধর পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ক্যানাল দিয়ে বর্ষা শেষে সাঁথিয়ার প্রায় ১৫টি বিলের পানি নিষ্কাশন হয়। কিন্তু মাছ ধরার জন্য প্রায় ১০টি স্থানে সুতি জালের বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫টি স্থানে ইতিমধ্যে জাল টানানো হয়েছে। ফলে মুক্তার ধর, সোনাই বিল, ঘুঘুদহ বিল, জামাইদহ, বড়গ্রাম বিল, খোলসা খালি বিল, কাটিয়াদহ বিল, গাঙভাঙা বিল ও টেংরাগাড়ী বিলের পানি বের হতে না পারায় হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।

অন্যদিকে পানি না নামায় কৃষকেরা পেঁয়াজের বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না। প্রতিবছর কাদামাটির ওপর বীজতলা তৈরি হলেও এবার জমিতে পানি থাকায় কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। বিলপাড়ে কৃষকেরা বীজতলার জন্য হাজার হাজার বস্তা ছাই মজুত করে রেখেছেন, পানি নামলেই বীজতলা তৈরি করবেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ ক্যানালের বিভিন্ন অংশে সুফলভোগী মৎস্যজীবীরা লিজ নিয়ে মাছের অভয়ারণ্য গড়ে তুলেছেন। কিন্তু মৎস্য অফিস ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তদারকির অভাবে লিজকে পুঁজি করে প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় এসব সুফলভোগী সুতি জালের অবৈধ বাঁধ নির্মাণ করেন। প্রতিবছর যা কৃষকদের জন্য বড় বিপদ হয়ে দেখা দেয়।

কাশিনাথপুর ইউনিয়নের দোয়ারগাড়ী বিলে দেখা গেছে, কোমরসমান পানিতে আধা পাকা ধান পড়ে আছে। কোথাও কোথাও কৃষকেরা হাঁটুপানিতে জমি পরিষ্কার করে পেঁয়াজের বীজতলা তৈরির ব্যর্থ চেষ্টা করছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, শামুকজানী বাজারের দক্ষিণে, দত্তপাড়া গ্রামের পশ্চিমে, বড়গ্রাম, তালপট্টি নামক স্থানের ব্রিজের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে, সৈয়দপুর মৌজা এবং পুন্ডুরিয়া ব্রিজের পাশে অন্তত ৫টি স্থানে সুতি জালের বাঁধ দেওয়া হয়েছে। তালাই, পলিথিন ও বাঁশ দিয়ে তৈরি এসব বাঁধে কচুরিপানা জমে পানিপ্রবাহ সম্পূর্ণভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

জানতে চাইলে সৈয়দপুর গ্রামের মোস্তফা প্রামাণিক বলেন, ‘মাছের অভয়ারণ্যের জন্য লিজ নিয়ে মাছ শিকার করি। তবে সুতি জালের জন্য লিজ নেওয়া হয়নি।’

অনেক চেষ্টার পরেও অবৈধভাবে সুতি জালের বাঁধ দেওয়া ব্যক্তিদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বাঁধে মাছ শিকার করা ব্যক্তিরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর থেকে লিজ নিয়ে মাছ শিকার করছি।’

এ বিষয়ে বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ বলেন, ‘পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে সুতি জালের বাঁধ দিয়ে মাছশিকারের জন্য কাউকে কোনো লিজ দেওয়া হয়নি।’ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সামসুল রহমান বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অভিযান চালাই। সুতি জাল কেটে দিয়ে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করি। তাঁরা তিন দিনের মধ্যে বাঁশ অপসারণের আশ্বাস দিয়েছেন। তা না করলে আবারও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সাঁথিয়া ইউএনও রিজু তামান্না বলেন, ‘বিষয়টি আমরা জানি। এসি ল্যান্ডকে পাঠানো হয়েছিল। তাঁরা সময় চেয়েছেন। দ্রুত অপসারণ না হলে মৎস্য অফিস, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসন একসঙ্গে অভিযান চালিয়ে বাঁধ উচ্ছেদ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজশাহীতে খেজুর রসের মৌসুম

২০০ কোটি টাকার গুড়ের বাজার

 রিমন রহমান, রাজশাহী
রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুত করছেন গাছি সাইফুল ইসলাম মিলু। বুধবার ভোরে রাজশাহীর পুঠিয়ার জরমডাঙ্গা গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা
রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুত করছেন গাছি সাইফুল ইসলাম মিলু। বুধবার ভোরে রাজশাহীর পুঠিয়ার জরমডাঙ্গা গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভোরের কুয়াশা কাটেনি তখনো। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার চকগোচর গ্রামের সরু পথে হাঁটলে দূর থেকে দেখা যায়—সারি সারি খেজুরগাছে ঝুলছে মাটির হাঁড়ি। গাছের মাথা থেকে ঝরছে রস। একটার পর একটা গাছে উঠে গাছিরা নামিয়ে আনছেন রসের হাঁড়ি।

প্রতিবছর অক্টোবরের শেষ দিকে রাজশাহীর বাঘা, চারঘাট ও পুঠিয়া উপজেলায় শুরু হয় খেজুরের রস আহরণ ও গুড় তৈরির মৌসুম। রস সংগ্রহের জন্য গাছ প্রস্তুত করে পাতা হয় মাটির হাঁড়ি। সারা রাত ধরে ফোঁটা ফোঁটা রস জমে হাঁড়িতে। সকালে সেই রস নিয়ে শুরু হয় গুড় তৈরির ব্যস্ততা। বড় চুলায় ফুটন্ত রসের ঘ্রাণে তখন মিষ্টি হয়ে ওঠে পুরো গ্রাম।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় খেজুরগাছের সংখ্যা ১১ লাখ ৮ হাজার ১৮টি। প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ২৫ লিটার রস পাওয়া যায়, যা থেকে প্রায় ১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে রস সংগ্রহ মৌসুম। গত বছর রাজশাহীতে প্রায় ১০ হাজার টন গুড় উৎপাদিত হয়েছে। এতে প্রায় ৫০ হাজার গাছির আয় হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। চলতি মৌসুমে আরও বেশি গুড় উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

চারঘাট উপজেলার চকগোচর গ্রামের গাছি মো. ওবায়দুল বলেন, গ্রামের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। চিনির দাম কম হওয়ায় অনেকে আবার রসের সঙ্গে চিনিও মিশিয়ে দিচ্ছেন। এতে লাভ বেশি হচ্ছে। তবে যাঁরা চিনি দিয়ে গুড় তৈরি করেন না, তাঁদের গুড়ের দাম কিছুটা বেশি। এখন অনলাইনে খাঁটি গুড়ের ভালো চাহিদা আছে।

গত বুধবার ভোরে পুঠিয়ার ভুবননগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গাছ থেকে রস নামাচ্ছেন মো. রানা। তাঁর বাইসাইকেলে দুটি বড় বড় জার বাঁধা। গাছ থেকে নামানো রস নেওয়া হচ্ছে ওই জারে। রানা বলেন, ‘আমার ইজারা নেওয়া ৫২টি গাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় ৬০ লিটার রস পাই। এতে ১০-১১ কেজি গুড় হয়।’ একই গ্রামের জালাল উদ্দিনের বাড়িতে দেখা গেল, তাঁর স্ত্রী রওশন আরা রস জ্বাল দিচ্ছেন। রওশন বলেন, এবার মৌসুমের শুরুতেই ১৬০ টাকা কেজি দরে গুড় বিক্রি হচ্ছে।

পুঠিয়ার জরমডাঙ্গা গ্রামের গাছি সাইফুল ইসলাম মিলু বলেন, যাঁদের গাছ আছে তাঁদের বেশির ভাগই রস নামাতে পারেন না। তাই তাঁরা এক মৌসুমের জন্য গাছ ইজারা দিয়ে দেন। গাছ দেখে ইজারার দাম হয়। কোনো গাছের জন্য দিতে হয় ৫০০ টাকা, কোনোটির ইজারামূল্য ১ হাজার। একজন গাছি সাধারণত ৩০ থেকে ১০০টি গাছ ইজারা নেন।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, ‘রাজশাহীর খেজুর গুড়ের সুনাম সারা দেশে। গেল মৌসুমে প্রায় ২০০ কোটি টাকার গুড় বিক্রি হয়েছে। এবার আরও বেশি উৎপাদন হবে বলে আশা করছি। তবে কিছু অসাধু গাছি গুড়ের সঙ্গে চিনি মেশাচ্ছেন, যা রাজশাহীর খাঁটি গুড়ের সুনামের জন্য হুমকি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জয়দেবপুর রেলক্রসিং দখলমুক্ত: স্বস্তির নিশ্বাস গাজীপুরবাসীর

গাজীপুর প্রতিনিধি
উচ্ছেদ অভিযান। ছবি: আজকের পত্রিকা
উচ্ছেদ অভিযান। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুর মহানগরের জয়দেবপুর রেলক্রসিং এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা শতাধিক দোকান, অস্থায়ী স্থাপনা ও হকারদের উচ্ছেদ করেছে প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সকালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক), জেলা প্রশাসন, মহানগর পুলিশ ও রেলওয়ের সমন্বয়ে উচ্ছেদ চালানো হয়।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন গাসিকের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজ আল মামুন, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারিয়া তাসনিম, জয়দেবপুর রেল জংশনের স্টেশনমাস্টার মাহমুদুল হাসান এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বিভাগের ইমরান হোসেন।

গাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহেল হাসান বলেন, ইতিমধ্যে রেলক্রসিং ও আশপাশের এলাকা আধুনিকায়নের লক্ষ্যে জয়দেবপুর মোবিলিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় ফ্লাইওভার নির্মাণ, বিকল্প সড়ক সম্প্রসারণ, ট্রাফিক সিগন্যাল অটোমেশন ও ফুটপাত সংস্কার করা হবে। ফলে গাজীপুর হবে দখলমুক্ত, পরিচ্ছন্ন ও স্মার্ট নগর।

উচ্ছেদের পর ভাসমান হকার ও ফল ব্যবসায়ীরা জানান, তাঁরা বছরের পর বছর সেখানে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। এখন তাঁরা কোথায় দাঁড়াবেন। তাই তাঁরা প্রশাসনের কাছে পুনর্বাসনের দাবি জানান।

এ প্রসঙ্গে সোহেল হাসান বলেন, ‘আমরা যেমন নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে দখল উচ্ছেদ করছি, তেমনি যারা ভাসমান ব্যবসায়ী তাদের বিষয়টিও মানবিকভাবে বিবেচনা করা হবে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আইনানুগভাবে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।’

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার সরফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গাজীপুরের উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি। নাগরিকদের চলাচল সহজ করা, রাস্তাঘাট ও ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার। আজকের এই সমন্বিত উদ্যোগ শহর পুনরুদ্ধারের একটি দৃষ্টান্ত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত