Ajker Patrika

সংস্কার শব্দটি বর্তমানে ঘৃণিত শব্দে পরিণত হয়েছে: জিল্লুর রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২৫, ২০: ১৩
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ’ শীর্ষক সভায় বক্তব্য দেন সিজিএস সভাপতি জিল্লুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ’ শীর্ষক সভায় বক্তব্য দেন সিজিএস সভাপতি জিল্লুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

সংস্কার শব্দটি বর্তমানে ঘৃণিত শব্দে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) সভাপতি জিল্লুর রহমান। তিনি বলেছেন, জুলাই বিপ্লবের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, তা প্রতিফলিত হচ্ছে না। মানুষের প্রত্যাশা পূরণের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। দেশে নিরাপত্তার প্রধান সমস্যা হলো, সহমতের অভাব। পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য না থাকায় কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ’ শীর্ষক ধারাবাহিক সংলাপের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

আলোচনার শুরুতে সিজিএসের সভাপতি জিল্লুর রহমান বলেন, ‘সরকার কতখানি কর্মক্ষম ও কার্যক্ষম, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অনেকে মনে করেছিলেন, সরকারপ্রধান যেহেতু নোবেল লরিয়েট, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তি, তিনি হয়তো দেশের জন্য অনেক কিছু নিয়ে আসতে পারবেন। এই ১১-১২ মাসে তিনি কতটা পারলেন, আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কতটা ঘনিষ্ঠ হলো, সেটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনার বিষয়। সরকারের ম্যান্ডেটটা আসলে কী, সেই ম্যান্ডেট থেকে সরকার কতটুকু বিচ্যুত হয়েছে, সেটাও বিবেচনার দাবি রাখে।’

জিল্লুর রহমান বলেন, ‘বেশ কিছু কমিশন করা হয়েছে। শিক্ষা নিয়ে কোনো কমিশন হয়নি। শিক্ষা সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয় না। আবার অনেক কমিশন রিপোর্ট দিয়েছে। সেই রিপোর্ট টাচও করা হয়েছে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশের দমন-পীড়ন ও দুর্নীতির একটা দীর্ঘকালীন চাপ, সেটা আগেও ছিল, এখনো আছে। পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি। অর্থনীতির অবস্থা খুব একটা ভালো নয় ৷ বেকারত্ব বাড়ছে। আমরা তিন শূন্যের কথা শুনি, কিন্তু তিন শূন্যের কোনো প্রয়োগ বাংলাদেশে দেখি না। সংস্কার শব্দটি ঘৃণিত শব্দে পরিণত হয়েছে। প্রত্যাশা পূরণের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।’

পররাষ্ট্রনীতি প্রসঙ্গে সিজিএস সভাপতি বলেন, ‘পররাষ্ট্রনীতি আমাদের নিরাপত্তার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। গত ১৫ বছর আমাদের সঙ্গে পাকিস্তানের ভালো সম্পর্ক ছিল না। ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ এখন এমন হয়েছে যে, হয় আপনারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে থাকবেন, না হলে চীনের সঙ্গে থাকবেন। আমাদের অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয়। বেকারত্বের হার বেড়েছে এবং মানবাধিকার অবস্থাও অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এখনো টানাপোড়নে রয়েছে। চীন ও ভারতের সঙ্গে ব্যালেন্স করাটাও অনেক জরুরি।’

বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সভাপতি অ্যাম্বাসেডর হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বাংলাদেশের কূটনীতির সবচেয়ে বড় বাধা হলো ঢাকা। ঢাকা থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার শুরু এবং শেষ হয়। ঢাকা স্থিতিশীল না থাকলে মিশনকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমাদের নিরাপত্তার প্রধান সমস্যা হলো, সহমতের অভাব। অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কের কাঠামো কেমন হবে, তা নিয়ে সহমত থাকতে হবে। নেপালে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহমত ছিল। এখান থেকে আমাদের সহমত গঠন করা শিখতে হবে। আমরা আমাদের ডিফেন্স ও ডিপ্লোম্যাসিকে নজর দেই নাই। স্বাধীন দেশ হিসেবে টিকে থাকতে চাইলে এই দুটি জায়গায় যত্ন নিতে হবে। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নিয়ে কোনো সংস্কার হয় নাই। গত ৫৪ বছরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নিয়ে কেবল দুটি কমিশন হয়েছে। আমাদের বাইরে বন্ধু তৈরি করতে হবে। এর জন্য কূটনীতিতেও পরিবর্তন আনতে হবে।’

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল আ ন ম মুনীরুজ্জামান (অব.) বলেন, ‘বিপ্লবের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিফলিত হয় নাই। ফ্যাসিজম একটা ইকোসিস্টেম। পুনর্গঠন করতে হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফ্যাসিবাদের দোসরদের সরাতে হবে। ফরেন পলিসিতে প্রাইভেট সেক্টরকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কেবল আমলা দিয়ে হবে না। প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য দূতাবাসগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। সার্ককে আবার পুনর্জীবিত করতে হবে। হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার হতে হবে। আমাদের সামুদ্রিক নীতিমালা নতুন করে প্রণয়ন করতে হবে এবং এটি বাইরের দেশের কাছে জানাতে হবে। পানি ও নদী কূটনীতি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পানিবণ্টন নিয়ে আমরা নতুন সমস্যার মুখোমুখি হতে চলেছি।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমাদের এখন জাতীয় স্বার্থের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নেগোসিয়েশন এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করার জন্য। আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে যাওয়া যাবে না। নেগোসিয়েশন করার দক্ষতা থাকতে হবে। এর জন্য একটা রাজনৈতিক কাঠামো ঠিক করতে হবে।’

গণঅধিকার পরিষদের (জিওপি) সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘পররাষ্ট্রনীতির আগে আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি শক্ত করতে হবে। আমাদের কি ২৫টি বোয়িং কেনার ক্ষমতা আছে। এটি করা হয়েছে আমেরিকাকে খুশি করার জন্য। আমাদের বহুমুখী রপ্তানি নিয়ে চিন্তা করতে হবে। আমার মনে হয়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছোটখাটো একটা সংঘাত হবে, যেমনটি হচ্ছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়াতে।’

সার্ক ছাড়া আর বিকল্প নেই উল্লেখ করে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, আঞ্চলিক সম্পর্ক গভীর করার জন্য সার্ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘আমাদের মতো রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি অনেক জটিল। হাসিনা অনেক সময় ধরে ভারতের প্রতি ঝুঁকে ছিল, যার কারণে সে লম্বা সময় ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিল। ভারতের সঙ্গে আমাদের চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স করতে হবে। আমেরিকার ট্যারিফের জন্য আমাদের একটি বিপুলসংখ্যক মানুষ সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে। এর সমাধানের জন্য আমাদের কোনো এক দেশের প্রতি ঝুঁকে পড়তে হবে। না হলে আমাদের নীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ পথ অবলম্বন করতে হবে। অথবা আমাদের হিউম্যানিটেরিয়ান পথ অবলম্বন করতে হবে।’

সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘এই সরকার অনেক কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কোনো কমিশন গঠন করে নাই। চীনের সঙ্গে আমাদের সুদৃঢ় সম্পর্ক তৈরি করতে হবে।’

জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্যের ঘাটতি রয়েছে। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এখন ভালো নেই। ভারতের ওপর আমরা ডিপেনডেন্ট হয়ে গিয়েছিলাম। ভিসা বা পানি নিয়ে আমরা বিকল্প চিন্তা করতে পারি নাই। অন্তর্বর্তী সরকার শুরুতে অনেক প্রিভোকেটিভ কথা বলেছিল। কিন্তু কেউ এই কথায় পা দেয় নাই। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসে নাই। অন্য কোনো দেশের দালাল না হয়ে আমাদের হতে হবে বাংলাদেশের দালাল। ন্যাশনাল কনসেন্সাসের ওপরে কোনো সিদ্ধান্ত হতে পারে না। আমাদের প্রবাসীবান্ধব নীতি করতে হবে। আমাদের দেশের সব নীতি আমরা নির্ধারণ করব।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন বলেন, ‘আমাদের এখন মতামতের মাধ্যমে সিধান্ত নিতে হবে। সমুদ্র নিরাপত্তা শক্ত করতে হবে। রোহিঙ্গাদের ডিগ্নিফাইডভাবে রিপ্যাট্রিয়ট করতে হবে। পানিসংকট সমাধানের জন্য দর-কষাকষি করতে হবে।’

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাম্বাসেডর মুন্সি ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য থাকা দরকার। জনগণের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের নীতি ঠিক করতে হবে। এলডিসি উত্তরণ খারাপ কিছু না। কিন্তু এর সঙ্গে যে দায়িত্ব আসে, তা নিতে আমরা প্রস্তুত নই। বরং আমাদের এলডিসি উত্তরণকে কাজে লাগাতে হবে। ‘‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’’ এটি ভালোভাবে প্রয়োগ করতে হবে। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করলে আমেরিকার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ঠিক হয়ে যাবে, এমন না। পররাষ্ট্রনীতি নির্ভর করে আমাদের অভ্যন্তরীণ শক্তির ওপর। এর জন্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা ঠিক করতে হবে।’

মিয়ানমারের সাবেক কনস্যুলেটপ্রধান ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) মো. এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ রিপোর্ট অনুসারে আমাদের আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। আরাকান আর্মির সঙ্গে শিগগির রোহিঙ্গাদের একটা সংঘাত হবে, যা বাংলাদেশের জন্য জটিলতা সৃষ্টি করবে।’

কূটনীতিক শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের মধ্যে পররাষ্ট্রনীতি ও কূটনীতিকে এক করে দেখার একটা প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু এই দুটি এক নয়। গণতান্ত্রিক পররাষ্ট্রনীতির জন্য জনগণকে প্রাধান্য দিতে হবে। জুলাই বিপ্লবের পরে মানুষের মধ্যে দাবি উঠেছে যে, ভারত ও বাংলাদেশের সব ট্রিটি জনগণের সামনে আনতে হবে। এটি তাড়াতাড়ি করা উচিত।’

নৈতিক সমাজ বাংলাদেশের সংগঠক মেজর জেনারেল (অব.) আমসা আমিন বলেন, বাংলাদেশে কোনো ফরেন পলিসি ইন্টেলিজেন্স নেই। ভারত, আমেরিকা ও ইসরায়েল সবারই ফরেন পলিসি ইন্টেলিজেন্স রয়েছে।

অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের ট্রাক টু ডিপ্লোম্যাসি করতে হবে। ‘‘ফ্রেন্ডশিপ টু অল, ম্যালিস টু নান’’ হয়ে গিয়েছে ফ্রেন্ডশিপ টু ওয়ান। আমেরিকা আগে আমাদের বলেছিল, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক নরমাল করতে। এখন নন-ডিসক্লোজারের মধ্যে এটি চলে আসতে পারে। তখন আমাদের কিছু করার থাকবে না।’

ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘সরকার পতনের পরও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এখনো আগের লোকেরা বহাল রয়েছে। এটি ভালেো নয়। আগের সরকার দাসত্ব পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করত। অন্তর্বর্তী সরকারের জবাবদিহি থাকতে হবে। নন-ডিসক্লোজার নীতি করাটা ঠিক হয়নি। ভারতের সঙ্গে নদীর পানিবণ্টন কীভাবে হবে, তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। ভারত, আমেরিকা বা চীনের সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতির ব্যালেন্স করতে হবে। ভারত একটা রিয়েলিটি। ভারতের সঙ্গে আমাদের নতুন সম্পর্কটা কেমন হবে, তা নির্ধারণ করতে হবে।’

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) সিনিয়র গবেষণা ফেলো সাফকাত মুনির বলেন, ‘পররাষ্ট্রনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তানীতি নিয়ে কোনো কমিশন হয়নি। পররাষ্ট্রনীতি গতিশীল হবে না, যতক্ষণ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতিশীল হবে। গত ১৬ বছর আমাদের কোনো পররাষ্ট্রনীতি ছিল কি না, তা নিয়ে আমি সন্দিহান। কূটনীতিবিদদের বেতন অপেক্ষাকৃত অনেক কম অন্য দেশের তুলনায়। যোগ্য ব্যক্তিদের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।’

এবি পার্টির সহকারী সদস্যসচিব ও উইমেন উইংয়ের কো-অর্ডিনেটর ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি বলেন, ‘শেখ হাসিনার নীতি ‘‘সবার সঙ্গে বন্ধুত, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’’ হয়ে গিয়েছে ফ্রেন্ডশিপ টু ওয়ান। আমরা কোনো বেসিক পররাষ্ট্রনীতি দাঁড় করাতে পারি নাই। ভারত, চীন বা আমেরিকাকে উপেক্ষা করার মতো অবস্থা আমাদের নেই।’

সংলাপে আরও অংশ নেন সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক পারভেজ করিম আব্বাসী, সাবেক কূটনৈতিক এম শফিউল্লাহ, সেন্টার ফর নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশিজের চেয়ারম্যান এম এস সেকিল চৌধুরী প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ আগুন যেসব প্রশ্ন তুলল, সর্বশেষ যা জানা গেল

বিমানবন্দরের মতো কৌশলগত স্থাপনায় আগুন নিরাপত্তা ঘাটতির স্পষ্ট প্রমাণ: জামায়াত আমির

জামায়াত-এনসিপির পথে হঠাৎ যেন ভিন্ন বাঁক

রোববার শিক্ষা ভবন অভিমুখে থালা-বাটি নিয়ে শিক্ষকদের ‘ভুখা মিছিল’

হোয়াইট হাউস থেকে খালি হাতে ফিরলেন জেলেনস্কি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শাহজালালের কার্গো ভিলেজে এখনো ধোঁয়া উড়ছে

উত্তরা-বিমানবন্দর (ঢাকা) প্রতিনিধি 
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ৫০
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ থেকে এখনো বের হচ্ছে কালো ধোঁয়া। ছবি: আজকের পত্রিকা
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ থেকে এখনো বের হচ্ছে কালো ধোঁয়া। ছবি: আজকের পত্রিকা

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো ভিলেজে গতকাল শনিবার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। দীর্ঘ ৮ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনো সেখান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেট-সংলগ্ন আমদানি কার্গো ভিলেজে আজ রোববার সকালে এই দৃশ্য দেখা যায়।

গেটের সামনে ভিড় করছেন কার্গো ভিলেজের কর্মচারীরা। উদ্বেগ প্রকাশ করে তাঁরা বলছেন, এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। মনে হচ্ছে, আগুন পুরোপুরি নেভেনি। পুরো আমদানি কার্গো ভিলেজ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

আমদানি কার্গো ভিলেজের গেট দিয়ে ভেতরে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঘটনাস্থলে কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা আবদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আগুন পুরো নিভে গেছে। আমাদের শুধু র‍্যাম্পিং ডাউনের (অগ্নিনির্বাপণ তৎপরতা গুটিয়ে আনা) কাজ চলছে।’

আবদুর রহমান আরও বলেন, কার্গো ভিলেজে কোথাও কোনোভাবে আগুন ধরতে পারে এমন কিছু আছে কি না, সে জন্য ভেতরে সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে।

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে গতকাল শনিবার বেলা সোয়া ২টার দিকে আগুন লাগে। আগুনে কার্গো ভিলেজের আমদানি কমপ্লেক্সের পুরোটা পুড়ে গেছে। এই ঘটনায় বেলা সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দেশের প্রধান এই বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের সব উড়োজাহাজ ওঠানামা বন্ধ থাকে। যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়ে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট কাজ করে। রাত সোয়া ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ থেকে এখনো বের হচ্ছে কালো ধোঁয়া। ছবি: আজকের পত্রিকা
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ থেকে এখনো বের হচ্ছে কালো ধোঁয়া। ছবি: আজকের পত্রিকা

আগুন নেভাতে গিয়ে আহত হয়েছেন ২২ জন। ক্ষয়ক্ষতির বিষয় এখনো নিরূপণ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। আমদানিকারকেরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। বিমানবন্দরের ভেতরে নজিরবিহীন এই অগ্নিকাণ্ডকে অনেকে রহস্যজনক বলছেন। অনেকে বলছেন, বিমানবন্দরে সার্বক্ষণিক ফায়ার ইউনিট থাকার পরও আগুন এভাবে ছড়িয়ে পড়ায় প্রশ্ন উঠেছে।

অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নাশকতা বা অগ্নিসংযোগের কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে সরকার তাৎক্ষণিক ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে। ঘটনা তদন্তে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সাত সদস্যের ও কাস্টমস পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ আগুন যেসব প্রশ্ন তুলল, সর্বশেষ যা জানা গেল

বিমানবন্দরের মতো কৌশলগত স্থাপনায় আগুন নিরাপত্তা ঘাটতির স্পষ্ট প্রমাণ: জামায়াত আমির

জামায়াত-এনসিপির পথে হঠাৎ যেন ভিন্ন বাঁক

রোববার শিক্ষা ভবন অভিমুখে থালা-বাটি নিয়ে শিক্ষকদের ‘ভুখা মিছিল’

হোয়াইট হাউস থেকে খালি হাতে ফিরলেন জেলেনস্কি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কুষ্টিয়ায় নিজ বাড়ির বারান্দায় ভ্যানচালক খুন, পূর্বশত্রুতার অভিযোগ

কু‌ষ্টিয়া প্রতি‌নি‌ধি
খুনের খবর পেয়ে প্রতিবেশীরা নিহত ব্যক্তির বাড়িতে ভিড় জমায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
খুনের খবর পেয়ে প্রতিবেশীরা নিহত ব্যক্তির বাড়িতে ভিড় জমায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুষ্টিয়া সদর উপ‌জেলায় নিজের বসতঘরের বারান্দায় মোশারফ হোসেন মুসা (৫৫) নামের এক ভ্যানচালককে কুপিয়ে হত‌্যা ক‌রে‌ছে দুর্বৃত্তরা। রোববার (১৯ অক্টোবর) সকালে উপ‌জেলার হরিনারায়ণপুর ইউনিয়নের শান্তিডাঙ্গা গ্রাম থেকে পুলিশ নিহত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনা‌রেল হাসপাতা‌লের মর্গে পাঠিয়েছে।

নিহত মোশারফ হোসেন মুসা একই এলাকার মৃত আকবর মন্ডলের ছেলে। তিনি পেশায় ভ‌্যানচালক ছিলেন এবং প্রতিদিনের মতো শনিবার রাতে বসতঘ‌রের বারান্দায় ঘুমাচ্ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দিবাগত রা‌তের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ভোররা‌তে প‌রিবা‌রের লোকজন বাইরে বে‌র হ‌য়ে মুসার রক্তাক্ত লাশ দেখ‌তে পায়। নিহত ব‌্যক্তির বু‌কে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের একাধিক চিহ্ন পাওয়া গেছে।

ঘটনার কারণ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা ভ‌্যান চুরি করতে এসে মুসা‌কে হত্যা করা হ‌য়ে থাক‌তে পা‌রে বলে ধারণা করলেও প‌রিবা‌রের দা‌বি, পূর্বশত্রুতার জেরে পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।

নিহত ব্যক্তির মে‌য়ে শিখা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘ভ্যান চুরির জন্য আমার বাবাকে কখনো এমন নির্মমভাবে হত্যা করতে পারে না। পূর্বশত্রুতার জের ধরে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।’ তিনি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জ‌ড়িত‌দের স‌র্বোচ্চ শা‌স্তির দা‌বি জানান।

জান‌তে চাইলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ও‌সি) মেহেদি হাসান বলেন, ‌নিহত ব‌্যক্তির বু‌কে হাঁসুয়া-জাতীয় ধারা‌লো কিছু দি‌য়ে আঘাত করা হ‌য়ে‌ছে। শুধু ভ‌্যান চু‌রির জন‌্য এমন নির্মম হত্যাকাণ্ড না-ও হতে পারে। কারণ, তাহলে অপরাধীরা ভ‌্যান নি‌য়ে যেত।

ওসি আরও বলেন, বিষয়‌টি নি‌য়ে পু‌লিশ কাজ কর‌ছে। দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হ‌বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ আগুন যেসব প্রশ্ন তুলল, সর্বশেষ যা জানা গেল

বিমানবন্দরের মতো কৌশলগত স্থাপনায় আগুন নিরাপত্তা ঘাটতির স্পষ্ট প্রমাণ: জামায়াত আমির

জামায়াত-এনসিপির পথে হঠাৎ যেন ভিন্ন বাঁক

রোববার শিক্ষা ভবন অভিমুখে থালা-বাটি নিয়ে শিক্ষকদের ‘ভুখা মিছিল’

হোয়াইট হাউস থেকে খালি হাতে ফিরলেন জেলেনস্কি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফরিদপুরের কাদিরদি বাজারে ভয়াবহ আগুন, পুড়ে ছাই ২০ দোকান

ফরিদপুর প্রতিনিধি
বোয়ালমারী উপজেলার কাদিরদি বাজারে গতকাল রাত ১০টার দিকে বাচ্চু মোল্লার মার্কেটে আগুন লাগে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বোয়ালমারী উপজেলার কাদিরদি বাজারে গতকাল রাত ১০টার দিকে বাচ্চু মোল্লার মার্কেটে আগুন লাগে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার কাদিরদি বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (১৮ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১০টার দিকে বাচ্চু মোল্লার মার্কেটে এই আগুন লাগে। এতে মুদি, কাপড়, ওষুধ, জুতা, বীজসহ কমপক্ষে ২০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগুনে অন্তত কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন এবং মধুখালী ও বোয়ালমারী ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

এলাকাবাসী ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, রাত ১০টার দিকে বাজারের বাচ্চু মোল্লার মার্কেটে নাসিরের কাপড়ের দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত। দ্রুত সময়ে আগুন পার্শ্ববর্তী মুদি, ওষুধ, চা, বীজ, জুতার দোকানসহ অন্যান্য দোকানে ছড়িয়ে পড়ে।

স্থানীয় বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য মনির হোসেন বলেন, ‘বাজারের ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে চলে যাওয়ায় বাজারে পাহারাদার ছাড়া বেশি লোক ছিল না। আগুনের শোরগোল শুনে বাড়ি থেকে দৌড়ে গিয়ে দেখি কয়েকটা দোকানে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। পাশে আমারও কয়েকটি দোকান রয়েছে। তবে আমার দোকান আল্লাহ রক্ষা করেছেন।’

নিশিকান্ত দাশ নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, বাজারে বাচ্চু মোল্লার মার্কেটের নাসিরের কাপড়ের দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত। আগুনে কমপক্ষে ২০টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে অন্তত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বোয়ালমারী ফায়ার সার্ভিসের লিডার খালেক শেখ বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই মধুখালী ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছিলেন। আমরা আসার পরে একযোগে দুই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় এক ঘণ্টা চেষ্টার ফলে আগুন নেভাতে সক্ষম হই।’

মধুখালী ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ রাশেদুল আলম বলেন, আগুনে ১৩টি দোকান পুড়ে গেছে। এক ঘণ্টার আগেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়; তবে অভিযান সম্পন্ন করতে প্রায় দেড় ঘণ্টা লেগেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও পরে হয়তো জানা যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ আগুন যেসব প্রশ্ন তুলল, সর্বশেষ যা জানা গেল

বিমানবন্দরের মতো কৌশলগত স্থাপনায় আগুন নিরাপত্তা ঘাটতির স্পষ্ট প্রমাণ: জামায়াত আমির

জামায়াত-এনসিপির পথে হঠাৎ যেন ভিন্ন বাঁক

রোববার শিক্ষা ভবন অভিমুখে থালা-বাটি নিয়ে শিক্ষকদের ‘ভুখা মিছিল’

হোয়াইট হাউস থেকে খালি হাতে ফিরলেন জেলেনস্কি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাংনীতে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চার মাস ধরে জলাবদ্ধতা, পাঠদান ব্যাহত

মেহেরপুর প্রতিনিধি
বামন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ পানিতে তলিয়ে রয়েছে চার মাস ধরে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বামন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ পানিতে তলিয়ে রয়েছে চার মাস ধরে। ছবি: আজকের পত্রিকা

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বামন্দী ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বামন্দী নিশিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং বামন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ টানা চার মাস জলমগ্ন অবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘদিনের এই জলাবদ্ধতা নিরসনে কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় দুই প্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষার্থীর পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি খেলাধুলা বন্ধ থাকায় উঠতি বয়সের ছেলেরা মাদকাসক্তে জড়িয়ে পড়ার দুশ্চিন্তা করছেন অভিভাবকেরা।

দীর্ঘ চার মাস জলাবদ্ধতা থাকায় এই দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই মাঠে পানি জমে যায় এবং নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নেয়। জলাবদ্ধতার কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে উঠেছে। অভিভাবক এবং প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এই পানি থেকে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কায় চরম দুশ্চিন্তা করছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবক সোহেল রানা বাবু বলেন, বামন্দীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে অতিদ্রুত পানি নিষ্কাশন করা উচিত।

সোহেল রানা আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এই দুটি প্রতিষ্ঠানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। আমি আমার ছোট সন্তানকে এই প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে ভয় পাই কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে বলে। তা ছাড়া এই পানি এত নোংরা যে এখান থেকে বড় ধরনের কোনো রোগ ছড়াতে পারে।’

জলাবদ্ধতার কারণে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক লেখাপড়ার পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাজিম হোসেনের ভাষ্য, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই জলাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসছি। এতে আমাদের জামাকাপড় নোংরা হয়ে যায়। লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে। খেলাধুলা করতে পারছি না। দ্রুত পানি নিষ্কাশন করে লেখাপড়ার পরিবেশ ও খেলার মাঠের উপযোগী করে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিয়াম আহমেদ বলে, ‘স্কুলে এসে এই নোংরা পানিতে পড়ে গিয়ে অনেকের বই ও পোশাক ভিজে যায়। দীর্ঘদিন ধরে খেলাধুলা করতে না পারায় আমাদের খুব খারাপ লাগছে। কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, তারা যেন স্কুলমাঠের পানি বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে।’

দীর্ঘদিনের এই জলাবদ্ধতা নিরসনে কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় দুই প্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষার্থীর পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
দীর্ঘদিনের এই জলাবদ্ধতা নিরসনে কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় দুই প্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষার্থীর পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বামন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা চার মাস ধরে এই জলাবদ্ধতার মধ্যে রয়েছি। জলাবদ্ধতার কারণে আমাদের একটি ক্লাসরুম বন্ধ রয়েছে। এখানে বাচ্চাদের নিরাপত্তা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তবে এর কোনো সমাধান পাইনি। আদৌ এর সমাধান পাব কি না, জানি না। তবে আমাদের কষ্টের শেষ নেই।’

বামন্দী নিশিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাজ্জাদুল আলম বলেন, ‘বামন্দী নিশিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ আঙিনায় জলাবদ্ধতার কারণে আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়া অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। তাই গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসকের কাছে আকুল আবেদন, অতিদ্রুত পানি নিষ্কাশন করে লেখাপড়ার পরিবেশ করে দিন। আর জেলা পরিষদের যে ২ লাখ টাকার কাজ হওয়ার কথা, তা এখনো হয়নি। তাই এটা দেখার জন্য কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

বামন্দী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘বামন্দী নিশিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও বামন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যে মাঠ রয়েছে, তা এখন কেউ স্কুলের মাঠ বলবে না। ওটাকে এখন ডোবা বা পুকুর বলবে। ছোট শিশুরা স্কুলে আসে। তারা যদি কোনো দুর্ঘটনায় পড়ে তাহলে এর দায়িত্ব কে নেবে। আমরা আমাদের সন্তানদের নিয়ে অনেক চিন্তিত। তাই উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করব এই পানি নিষ্কাশন করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার। তা ছাড়া যুবসমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খেলাধুল। তারা খেলাধুলা করতে পারছে না। এ কারণে মাদকাসক্ত হওয়ার ভয়ও বেশি থাকে। ছেলেদের ভবিষ্যৎ যাতে নষ্ট না হয়, সেই কথা বিবেচনা করে অতিদ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। তাই প্রশাসনের নিকট জোরালো দাবি জানাচ্ছি দ্রুত ড্রেনেজের ব্যবস্থা করে এই পানি নিষ্কাশন করার।’

গাংনী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এস এম জয়নুল ইসলাম বলেন, বামন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ যেসব বিদ্যালয়ে জলাবদ্ধতার কারণে শিক্ষার্থীর পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে, তা দ্রুত নিরসনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘জলাবদ্ধতার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। আর জলাবদ্ধতা নিরসনের ব্যাপারে তারা যেভাবে নির্দেশনা দেবেন, সেভাবে কাজ করব।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বামন্দী নিশিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের নিজস্ব গভর্নিং বডি রয়েছে। তা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কিছু আয় রয়েছে। আমরা তাদের নির্দেশনা দিয়েছি জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে। তা ছাড়া কোনো সহযোগিতা লাগলে সে বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শসহ সহযোগিতা করা হবে। আর বামন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে, আমরা সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে কথা বলে কীভাবে জলাবদ্ধতা দূর করা যায়, সে বিষয়টিও দেখব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ আগুন যেসব প্রশ্ন তুলল, সর্বশেষ যা জানা গেল

বিমানবন্দরের মতো কৌশলগত স্থাপনায় আগুন নিরাপত্তা ঘাটতির স্পষ্ট প্রমাণ: জামায়াত আমির

জামায়াত-এনসিপির পথে হঠাৎ যেন ভিন্ন বাঁক

রোববার শিক্ষা ভবন অভিমুখে থালা-বাটি নিয়ে শিক্ষকদের ‘ভুখা মিছিল’

হোয়াইট হাউস থেকে খালি হাতে ফিরলেন জেলেনস্কি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত