Ajker Patrika

ফরিদপুরের ভাঙ্গা: হাইকোর্টের রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত, তিন মামলা

ফরিদপুর প্রতিনিধি
আজ রোববার দুপুরে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে আলোচনায় অংশ নেন ভাঙ্গার সংসদীয় সীমানা পুনর্বহাল দাবিতে আন্দোলনকারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ রোববার দুপুরে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে আলোচনায় অংশ নেন ভাঙ্গার সংসদীয় সীমানা পুনর্বহাল দাবিতে আন্দোলনকারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের ভাঙ্গার সংসদীয় সীমানা পুনর্বহালের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিত করেছেন আন্দোলনকারীরা। হাইকোর্টে সীমানা-সংক্রান্ত রিট আবেদনের ওপর জারি করা রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা এই কর্মসূচি স্থগিত করেন।

আজ রোববার বেলা দেড়টা থেকে ৩টা পর্যন্ত জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে আলোচনা শেষে আন্দোলনকারীরা এ সিদ্ধান্ত নেন।

এ সময় পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল, সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সভায় অংশ নিতে ভাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় দুটি বাসে করে শতাধিক আন্দোলনকারী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসেন।

এদিকে দাবি আদায়কে কেন্দ্র করে ভাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনায় গত কয়েক দিনে দুই কোটি টাকার ক্ষতির অভিযোগে পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে।

৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন এক গেজেটে ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ আসনের অধীন ভাঙ্গার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন নগরকান্দা ও সালথা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-২ আসনে জুড়ে দেয়। এর প্রতিবাদে তিন দফায় পাঁচ দিন সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন ইউনিয়ন দুটির বাসিন্দারা। ১৫ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভ-অবরোধ সহিংসতায় রূপ নেয়। এদিন দুপুরে ভাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান নেওয়া পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে ভাঙ্গা থানা, উপজেলা পরিষদ কার্যালয়, ভাঙ্গা হাইওয়ে থানাসহ বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষুব্ধরা।

এ ছাড়া ভাঙ্গার আসন পুনর্বহালের জন্য ফরিদপুর-৪ আসনের বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহবুবুর রহমানসহ পাঁচজন হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। পরে গত মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের জারি করা আদেশ কেন অবৈধ হবে ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। হাইকোর্ট এই রুলের জবাব দেওয়ার জন্য ১০ দিন সময় বেঁধে দেন।

জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সভায় অংশ নেওয়া একাধিক ব্যক্তি জানান, গ্রেপ্তার ও হয়রানি না করার শর্তে ২০ ব্যক্তি গতকাল শনিবার প্রথম পর্যায়ে ভাঙ্গার ইউএনওর সঙ্গে আলোচনায় বসেন। পরে তাঁরা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বসতে রাজি হন।

জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা শেষে ভাঙ্গা উপজেলা মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক রবিন সোহেল বলেন, ‘জেলা প্রশাসক আমাদের বলেছেন, “আপনাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বাধা দিইনি। কিন্তু কিছু দুষ্কৃতকারী ঢুকে সহিংসতা ঘটিয়েছে। তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। তবে এ সহিসংতায় যারা জড়িত নন, তাঁদের কোনো হয়রানি করা হবে না। বিষয়টি হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। রায় আমাদের পক্ষে আসবে বলে আশা করছি। রায় না হওয়া পর্যন্ত আপনারা আন্দোলন স্থগিত করুন এবং নির্বিঘ্নে জীবন যাপন করুন।” পরে জেলা প্রশাসক ও ইউএনওর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা হাইকোর্টের শুনানি বা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চলমান কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেছি।’

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যা বলেন, ‘আমরা আন্দোলনকারীদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। আদালতের রায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন থেকে বিরত থাকবেন। তবে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যারা উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, ভাঙ্গা থানা ও ভাঙ্গা হাইওয়ে থানায় তাণ্ডব চালিয়েছে, তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।’

বিক্ষোভ-সহিংসতার ঘটনায় তিন মামলা:

এদিকে বিক্ষোভ-অবরোধ কর্মসূচি থেকে সহিংসতার ঘটনায় থানা-পুলিশ, হাইওয়ে থানা-পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন পৃথক তিনটি মামলা করেছে। এসব মামলায় অন্তত পক্ষে দুই কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া তিনটি মামলার প্রধান আসামি সাবেক সংসদ সদস্য ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীসহ মোট ৭৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।

সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে উপজেলা প্রশাসনের মামলায় অন্তত পক্ষে এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এতে ২৭ জনকে আসামি করা হয়। মামলার বাদী ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর সৌমেন্দ্র নাথ সরকার।

হাইওয়ে থানায় সহিংসতার ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে মামলা করা হয়। ওই মামলায় ৬৮ কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতি উল্লেখ করা হয়। এতে ২১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা একাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া থানায় সহিংসতার ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাতে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। ওই মামলায় ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করা হয়। এতে ২৯ জনকে আসামি করা হয়।

মামলার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, এ মামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের অভিযান শুরু হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত