Ajker Patrika

নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য লোভনীয় অফার দিত চক্রটি 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য লোভনীয় অফার দিত চক্রটি 

স্বল্প সময়ে, কম খরচে যাওয়া যাবে মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো দেশে। থাকছে ইউরোপ যাওয়ার সুযোগ। তারপরেও ব্যাংক লোনের মাধ্যমে। সুযোগ সবার ক্ষেত্রে থাকলেও অগ্রাধিকার স্বল্প আয়ের মানুষের। এ ছাড়া থাকছে দুই থেকে তিনগুণ বেতন। এমন সব লোভনীয় সুযোগ নিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক, কারখানা শ্রমিক, ড্রাইভার, সিএনজি চালক, গৃহকর্মীসহ নিম্ন আয়ের মানুষকে টার্গেট করে কাজ করত। 

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডর খন্দকার আল মঈন এমনটাই জানিয়েছেন। 

এর আগে, গতকাল (বুধবার) রাত ৮টার দিকে রাজধানীর বারিধারা থেকে ভুয়া রিক্রুটিং এজেন্সি অফিস খুলে প্রতারণা মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সুজন শেখ (৩৯) ও আমিনুল ইসলাম রনিকে (৪৮) গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-১। 

কমান্ডর খন্দকার আল মঈন বলেন, সুজন গত ১৫ বছর গুলশান, বনানী, মালিবাগ, কাকরাইলে বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সিতে চাকরি ও দালালি করেছে। পূর্বের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে প্রতারণার অভিনব এই কৌশল রপ্ত করে। আর আমিনুল ইসলাম ১৬ বছর মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে ছিলেন। প্রবাসে চলাচল ও জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা রয়েছে। এতে করে সহজেই গ্রাহকেরা আকৃষ্ট হতো। 

জানা গেছে, ভুয়া রিক্রুটিং এজেন্সি নামে তাঁরা রাজধানী, নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া, ময়মনসিংহ, মাগুরাসহ বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয় ছিল। এ ছাড়া বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর নামে এ পর্যন্ত প্রায় তিন শতাধিক ব্যক্তিকে প্রতারিত করেছেন বলে জানান র‍্যাবের কর্মকর্তা। তিনি জানান, তাঁদের কাছ থেকে ১৩৮টি পাসপোর্ট,৩টি মোবাইল ফোন, নগদ ৫০ হাজার টাকা ও বিভিন্ন ধরনের নথিপত্র উদ্ধার করা হয়। 

র‍্যাবের কাছে গ্রেপ্তার হওয়া দুজনর‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এই চক্রে ১২ থেকে ১৫ জন সদস্য। সুজন শেখ সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের মূল হোতা। আর আমিনুল ইসলাম তাঁর অন্যতম সহযোগী। তাঁরা বিগত ২ বছর ধরে প্রতারণার সঙ্গে জড়িত আছে। স্বল্প আয়ের মানুষদের টার্গেট করে আগ্রহীদের ২ থেকে ৩ গুণ বেশি বেতনের আশ্বাস দিত। এ ছাড়া কম খরচে ব্যাংক লোনের মাধ্যমে ১৫ দিনের মধ্যে বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখাত ভুয়া রিক্রুটিং এজেন্সিটি। চক্রটি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আড়াই লাখ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ হবে বলে জানিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে আগ্রহীদের কাছ থেকে এক লাখ টাকা নেওয়া হতো। আর বাকি টাকা ব্যাংক লোনের মাধ্যমে ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিত। পরে তাঁরা টাকা আত্মসাৎ করত। ব্যাংকের লোনের ব্যবস্থা পুরোটাই মিথ্যা বানোয়াট ও ভুয়া। 

র‍্যাবের মুখপাত্র বলেন, চক্রটি নিরীহ সাধারণ মানুষ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই স্বল্প আয়ের মানুষেরা প্রাথমিকভাবে দুই-এক লাখ টাকা কষ্ট করে জোগাড় করে জমা দিতেন। তবে চক্রটি সাবলেটে বিভিন্ন জায়গায় অফিস ভাড়া নিয়ে তাঁদের কাজ করত। এতে অফিস ভাড়া ও সহজেই অফিস পরিবর্তন করতে পারত। এ ছাড়া তাঁরা প্রবাসী কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও বায়ারের ওয়েব সাইট দেখে বিভিন্ন অনুমোদিত রিক্রুটিং কোম্পানির নাম ব্যবহার করে। 

তিনি বলেন, প্রতারণার কৌশল হিসেবে তারা ভুয়া বিমান টিকিট, ভিসা, ভ্যাকসিন কার্ড, বিএমইটি কার্ড তৈরি করে গ্রাহকদের প্রতারিত করে আসছিল। গ্রাহকদের তাঁরা বোঝাত অটো সিস্টেম পদ্ধতিতে পাসপোর্ট, এনআইডি থেকে অটো ফিংগার প্রিন্টের মাধ্যমে ভ্যাকসিনসহ অন্যান্য কার্ড তৈরি করা হয়। ফলে বিদেশ যেতে কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না। 

র‍্যাব জানায়, ১৫ দিন বিদেশে প্রেরণের প্রলোভনে আকৃষ্ট করে পরে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখিয়ে ঘুরাত। পরে তাঁদের বলত ব্যাংক লোন নেওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। পূর্বে গ্রাহকেরা লক্ষাধিক টাকা দিয়ে বাকি টাকা আস্তে আস্তে দিত। পরে চক্রটি গ্রাহকদের চাপের মুখে পড়লে অবশিষ্ট অর্থ পরিশোধের জন্য বলত। এ ছাড়া ভয়ভীতি দেখাত। আর যারা পূর্ণ টাকা পরিশোধ করে তাদের ভুয়া ভিসা, টিকিটসহ এয়ারপোর্ট এলাকায় নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হতো। সঙ্গে সঙ্গে অফিস পরিবর্তন করে ফেলত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত