ইয়াহ্ইয়া মারুফ, সিলেট
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে সিলেট বিভাগের চার জেলায় পরিবেশ ধ্বংস করে ব্যাপকভাবে বালু-পাথর লুটপাট শুরু হয়। ২ ডিসেম্বর সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে যোগ দেন অতিরিক্ত সচিব খান মো. রেজা-উন-নবী। গত ৯ মাসে পরিবেশ ও খনিজ সম্পদ রক্ষায় তিনি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেননি। উল্টো তাঁর বক্তব্যে উৎসাহিত হয় লুটপাটকারীরা। পাথর লুট শেষ পর্যন্ত হরিলুটে রূপ নেয়। বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর, জাফলং, রাংপানি, বিছনাকান্দি, লালাখাল, উৎমাছড়াসহ বিভাগের অধিকাংশ পাথর কোয়ারি ও বালুমহাল প্রায় পাথর-বালু শূন্য হয়।
ইতিমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক অনুসন্ধানেও বিষয়টি উঠে এসেছে। পাথর লুটপাটে কার কতটা দায়, তা স্পষ্ট হয়েছে দুদকের পেশ করা প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, মূলত স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে পাথর নিঃশেষ হয়।
সিলেটের পরিবেশ আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আব্দুল করিম কিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, দুই উপদেষ্টার সিলেট সফরের পর জেলা প্রশাসন ক্রাশার মিলের (পাথর ভাঙার কল) বৈদ্যুতিক সংযোগবিচ্ছিন্ন শুরু করে। সেই অভিযান থেমে যায় রাজনৈতিক নেতাদের অংশগ্রহণে সিলেটে আয়োজিত বিভিন্ন সভা-সমাবেশে। কিন্তু পাথর উত্তোলন, বিপণন ও লুটতরাজের সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষকে নিয়ে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার যে সভা করেন, সে সভায় বিভাগীয় কমিশনারের দেওয়া দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যে পাথরখেকোরা মূলত প্রশ্রয় পায়। পাথর লুট বন্ধে প্রশাসন যে নিষ্ক্রিয় থাকবে, সে বার্তাতেই লুটপাট লাগামহীনভাবে শুরু হয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সিলেটের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা আখতার বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে যে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন শুরু হয়েছে, তা বন্ধ করার জন্য কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বেলার পক্ষ থেকে বারবার বলার পরও কর্তৃপক্ষ আমলে নেয়নি; বরং পাথর উত্তোলনকারীদের সাহস জোগানো হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনারের এ ধরনের বক্তব্য আদালত অবমাননার মতো অপরাধ।
খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো-বিএমডি: দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, খনি ও খনিজ সম্পদ বিধিমালা, ২০১২-এর বিধি ৯১ ও ৯৩ অনুযায়ী, অবৈধ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা ও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা বিএমডির ওপর ন্যস্ত। কিন্তু সাদাপাথর লুটপাটের ঘটনা প্রতিরোধে বিএমডি থেকে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বিভাগীয় কমিশনার, সিলেট: প্রতিবেদনে বলা হয়, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী ৮ জুলাই তাঁর কার্যালয়ে পাথরসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, পরিবহনশ্রমিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘সারা দেশে পাথর উত্তোলন করা গেলে সিলেটে যাবে না কেন? এর সঙ্গে মানুষের জীবন ও জীবিকা জড়িত।’ তাঁর এ বক্তব্য সাদাপাথর লুটপাটে ব্যাপক উৎসাহ জুগিয়েছে।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারকে মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। রাত ৯টার দিকে তাঁর পিএস ফজলে রাব্বানী ফোন রিসিভ করে প্রশ্ন শুনে বলেন, ‘স্যারের মিটিং শেষ হলে আমি আলাপ করব।’
জেলা প্রশাসক, সিলেট: প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাথর, বালু লুটপাট ও পর্যটন স্থানগুলোর নান্দনিক সৌন্দর্য বজায় রাখাসহ পরিবেশ সংরক্ষণে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণে সিলেটের তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও সদ্য ওএসডি হওয়া মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের সদিচ্ছার অভাব, অবহেলা, ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা স্পষ্ট। তিনি তাঁর অধীন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনকে সাদাপাথর পর্যটন স্থান রক্ষায় সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। জানতে চাইলে মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘দুদক যা লিখেছে, লিখুক।’
পুলিশ সুপার, সিলেট: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ২৭ এপ্রিল অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধের জন্য পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিলেও সিলেট জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান সাদাপাথর লুটপাটের বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেননি।
বক্তব্য জানতে পুলিশ সুপারকে মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।
ইউএনও: প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক বছরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বিশেষ করে সাদাপাথর পর্যটন এলাকায় দৃশ্যমানভাবে দিনদুপুরে উপজেলা প্রশাসনের গোচরেই পাথর লুটপাট হয়েছে। ওই সময় কোম্পানীগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে আজিজুন্নাহার, মোহাম্মদ আবুল হাছনাত, ঊর্মি রায় ও আবিদা সুলতানা কর্মরত ছিলেন। ইউএনওরা নামমাত্র ও লোকদেখানো কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া পাথর লুট বন্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেননি।
ওসি, কোম্পানীগঞ্জ থানা: প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনানসহ সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ সদস্যরা অবৈধ পাথর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের কমিশন নিয়ে সাদাপাথর লুটপাটে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছেন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অবৈধভাবে উত্তোলিত পাথর প্রতি ট্রাকে প্রায় ৫০০ ঘনফুট করে লোড (ভরা) করা হয়। পরিবহনের ভাড়া ছাড়া প্রতি ট্রাকের পাথরের দাম ধরা হয় ৯১ হাজার টাকা। এর মধ্যে প্রতি ট্রাক থেকে ১০ হাজার টাকা পুলিশ ও প্রশাসনের জন্য আলাদা করা হয়। তাঁরা তা সমান ভাগ করে নিতেন। বাকি ৮১ হাজার টাকা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকারীরা নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নেন। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত প্রতিটি বারকি নৌকা থেকে ১ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। যার মধ্যে পুলিশ বিভাগ পায় ৫০০ এবং প্রশাসন (ডিসি ও ইউএনও) পান ৫০০ টাকা। পুলিশ নির্দিষ্ট সোর্সের মাধ্যমে প্রতিটি ট্রাক ও নৌকা থেকে এসব চাঁদা বা অবৈধ অর্থ সংগ্রহ করে।
প্রতিবেদনে সাদাপাথর লুটে বর্ডার গার্ড বিজিবিকেও দায়ী করা হয়েছে। এতে বলা হয়, সাদাপাথর এলাকায় ৩টি বিজিবি পোস্ট রয়েছে। এগুলো থেকে লুটের ঘটনাস্থলের দূরত্ব ৫০০ মিটারেরও কম। এত কম দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও কোম্পানি কমান্ডার ইকবাল হোসেনসহ বিজিবি সদস্যদের আর্থিক সুবিধা গ্রহণ ও নিষ্ক্রিয়তার কারণে লুটেরারা খুব সহজেই পাথর লুটপাট করতে পেরেছে। বিজিবির সদস্যরা নৌকাপ্রতি ৫০০ টাকা নিয়ে এলাকায় ঢোকার অনুমতি দেন এবং পাথর উত্তোলনে বাধা দেননি।
আরএনবির চিঠি
চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি ‘কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাধীন ভোলাগঞ্জে অবস্থিত রেলওয়ের ট্রেসেলসহ পাথর কোয়ারি সরকারি সম্পদ রক্ষা প্রসঙ্গে’ জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেয় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি)। চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয় সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ সুপার, ইউএনও, ওসি ও বিজিবিসহ সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু কোনো পক্ষই তাতে সাড়া দেয়নি। বারবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কাজ হয়নি।
এ ব্যাপারে সদ্য ওএসডি হওয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘চিঠি দিয়ে অবগত করলে করতে পারে। এ মুহূর্তে আমার মনে নেই।’
‘লুট নয়, হরিলুট হয়েছে’
সিলেট প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোখলেস উর রহমান সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, ‘সাদাপাথরের কাছেই বিজিবির সুন্দর একটি ক্যাম্প দেখতে পাচ্ছি, এই ক্যাম্পের সামনে এত বড় একটা ঘটনা ঘটল এবং এক দিনে না, কয়েক দিনে। আমরা পত্রিকায় দেখেছি যে লুট হয়েছে। আর আজকে এসে মনে হলো, মোর দ্যান লুট, হরিলুট। দেশের সম্পদ, রাষ্ট্রীয় সম্পদ দু-চারজন, কে বা কারা লুট করেছে, এটা আমরা তদন্ত করে তো নাম পাচ্ছি; সে যে-ই হোক আমাদের দেশের, যত বড় অফিসার হোক, এখানে কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং নেওয়া হবে।’
এ সময় সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার আলম বলেন, ‘পুরো এলাকা আমরা ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসব এবং ২৪ ঘণ্টা নিয়ন্ত্রণে থাকবে আমাদের। আমরা কয়েক ঘণ্টা সময় দেব, যার কাছে যত পাথর আছে, এটা ফেরত দিতে হবে। যার কাছে পাথর পাওয়া যাবে এবং স্ট্রেইট বলে দিই, তাকে কারাদণ্ড বরণ করতে হবে।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব সাইফুল ইসলাম, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে সিলেট বিভাগের চার জেলায় পরিবেশ ধ্বংস করে ব্যাপকভাবে বালু-পাথর লুটপাট শুরু হয়। ২ ডিসেম্বর সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে যোগ দেন অতিরিক্ত সচিব খান মো. রেজা-উন-নবী। গত ৯ মাসে পরিবেশ ও খনিজ সম্পদ রক্ষায় তিনি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেননি। উল্টো তাঁর বক্তব্যে উৎসাহিত হয় লুটপাটকারীরা। পাথর লুট শেষ পর্যন্ত হরিলুটে রূপ নেয়। বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর, জাফলং, রাংপানি, বিছনাকান্দি, লালাখাল, উৎমাছড়াসহ বিভাগের অধিকাংশ পাথর কোয়ারি ও বালুমহাল প্রায় পাথর-বালু শূন্য হয়।
ইতিমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক অনুসন্ধানেও বিষয়টি উঠে এসেছে। পাথর লুটপাটে কার কতটা দায়, তা স্পষ্ট হয়েছে দুদকের পেশ করা প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, মূলত স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে পাথর নিঃশেষ হয়।
সিলেটের পরিবেশ আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আব্দুল করিম কিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, দুই উপদেষ্টার সিলেট সফরের পর জেলা প্রশাসন ক্রাশার মিলের (পাথর ভাঙার কল) বৈদ্যুতিক সংযোগবিচ্ছিন্ন শুরু করে। সেই অভিযান থেমে যায় রাজনৈতিক নেতাদের অংশগ্রহণে সিলেটে আয়োজিত বিভিন্ন সভা-সমাবেশে। কিন্তু পাথর উত্তোলন, বিপণন ও লুটতরাজের সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষকে নিয়ে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার যে সভা করেন, সে সভায় বিভাগীয় কমিশনারের দেওয়া দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যে পাথরখেকোরা মূলত প্রশ্রয় পায়। পাথর লুট বন্ধে প্রশাসন যে নিষ্ক্রিয় থাকবে, সে বার্তাতেই লুটপাট লাগামহীনভাবে শুরু হয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সিলেটের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা আখতার বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে যে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন শুরু হয়েছে, তা বন্ধ করার জন্য কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বেলার পক্ষ থেকে বারবার বলার পরও কর্তৃপক্ষ আমলে নেয়নি; বরং পাথর উত্তোলনকারীদের সাহস জোগানো হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনারের এ ধরনের বক্তব্য আদালত অবমাননার মতো অপরাধ।
খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো-বিএমডি: দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, খনি ও খনিজ সম্পদ বিধিমালা, ২০১২-এর বিধি ৯১ ও ৯৩ অনুযায়ী, অবৈধ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা ও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা বিএমডির ওপর ন্যস্ত। কিন্তু সাদাপাথর লুটপাটের ঘটনা প্রতিরোধে বিএমডি থেকে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বিভাগীয় কমিশনার, সিলেট: প্রতিবেদনে বলা হয়, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী ৮ জুলাই তাঁর কার্যালয়ে পাথরসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, পরিবহনশ্রমিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘সারা দেশে পাথর উত্তোলন করা গেলে সিলেটে যাবে না কেন? এর সঙ্গে মানুষের জীবন ও জীবিকা জড়িত।’ তাঁর এ বক্তব্য সাদাপাথর লুটপাটে ব্যাপক উৎসাহ জুগিয়েছে।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারকে মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। রাত ৯টার দিকে তাঁর পিএস ফজলে রাব্বানী ফোন রিসিভ করে প্রশ্ন শুনে বলেন, ‘স্যারের মিটিং শেষ হলে আমি আলাপ করব।’
জেলা প্রশাসক, সিলেট: প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাথর, বালু লুটপাট ও পর্যটন স্থানগুলোর নান্দনিক সৌন্দর্য বজায় রাখাসহ পরিবেশ সংরক্ষণে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণে সিলেটের তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও সদ্য ওএসডি হওয়া মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের সদিচ্ছার অভাব, অবহেলা, ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা স্পষ্ট। তিনি তাঁর অধীন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনকে সাদাপাথর পর্যটন স্থান রক্ষায় সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। জানতে চাইলে মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘দুদক যা লিখেছে, লিখুক।’
পুলিশ সুপার, সিলেট: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ২৭ এপ্রিল অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধের জন্য পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিলেও সিলেট জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান সাদাপাথর লুটপাটের বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেননি।
বক্তব্য জানতে পুলিশ সুপারকে মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।
ইউএনও: প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক বছরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বিশেষ করে সাদাপাথর পর্যটন এলাকায় দৃশ্যমানভাবে দিনদুপুরে উপজেলা প্রশাসনের গোচরেই পাথর লুটপাট হয়েছে। ওই সময় কোম্পানীগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে আজিজুন্নাহার, মোহাম্মদ আবুল হাছনাত, ঊর্মি রায় ও আবিদা সুলতানা কর্মরত ছিলেন। ইউএনওরা নামমাত্র ও লোকদেখানো কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া পাথর লুট বন্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেননি।
ওসি, কোম্পানীগঞ্জ থানা: প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনানসহ সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ সদস্যরা অবৈধ পাথর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের কমিশন নিয়ে সাদাপাথর লুটপাটে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছেন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অবৈধভাবে উত্তোলিত পাথর প্রতি ট্রাকে প্রায় ৫০০ ঘনফুট করে লোড (ভরা) করা হয়। পরিবহনের ভাড়া ছাড়া প্রতি ট্রাকের পাথরের দাম ধরা হয় ৯১ হাজার টাকা। এর মধ্যে প্রতি ট্রাক থেকে ১০ হাজার টাকা পুলিশ ও প্রশাসনের জন্য আলাদা করা হয়। তাঁরা তা সমান ভাগ করে নিতেন। বাকি ৮১ হাজার টাকা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকারীরা নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নেন। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত প্রতিটি বারকি নৌকা থেকে ১ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। যার মধ্যে পুলিশ বিভাগ পায় ৫০০ এবং প্রশাসন (ডিসি ও ইউএনও) পান ৫০০ টাকা। পুলিশ নির্দিষ্ট সোর্সের মাধ্যমে প্রতিটি ট্রাক ও নৌকা থেকে এসব চাঁদা বা অবৈধ অর্থ সংগ্রহ করে।
প্রতিবেদনে সাদাপাথর লুটে বর্ডার গার্ড বিজিবিকেও দায়ী করা হয়েছে। এতে বলা হয়, সাদাপাথর এলাকায় ৩টি বিজিবি পোস্ট রয়েছে। এগুলো থেকে লুটের ঘটনাস্থলের দূরত্ব ৫০০ মিটারেরও কম। এত কম দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও কোম্পানি কমান্ডার ইকবাল হোসেনসহ বিজিবি সদস্যদের আর্থিক সুবিধা গ্রহণ ও নিষ্ক্রিয়তার কারণে লুটেরারা খুব সহজেই পাথর লুটপাট করতে পেরেছে। বিজিবির সদস্যরা নৌকাপ্রতি ৫০০ টাকা নিয়ে এলাকায় ঢোকার অনুমতি দেন এবং পাথর উত্তোলনে বাধা দেননি।
আরএনবির চিঠি
চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি ‘কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাধীন ভোলাগঞ্জে অবস্থিত রেলওয়ের ট্রেসেলসহ পাথর কোয়ারি সরকারি সম্পদ রক্ষা প্রসঙ্গে’ জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেয় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি)। চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয় সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ সুপার, ইউএনও, ওসি ও বিজিবিসহ সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু কোনো পক্ষই তাতে সাড়া দেয়নি। বারবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কাজ হয়নি।
এ ব্যাপারে সদ্য ওএসডি হওয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘চিঠি দিয়ে অবগত করলে করতে পারে। এ মুহূর্তে আমার মনে নেই।’
‘লুট নয়, হরিলুট হয়েছে’
সিলেট প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোখলেস উর রহমান সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, ‘সাদাপাথরের কাছেই বিজিবির সুন্দর একটি ক্যাম্প দেখতে পাচ্ছি, এই ক্যাম্পের সামনে এত বড় একটা ঘটনা ঘটল এবং এক দিনে না, কয়েক দিনে। আমরা পত্রিকায় দেখেছি যে লুট হয়েছে। আর আজকে এসে মনে হলো, মোর দ্যান লুট, হরিলুট। দেশের সম্পদ, রাষ্ট্রীয় সম্পদ দু-চারজন, কে বা কারা লুট করেছে, এটা আমরা তদন্ত করে তো নাম পাচ্ছি; সে যে-ই হোক আমাদের দেশের, যত বড় অফিসার হোক, এখানে কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং নেওয়া হবে।’
এ সময় সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার আলম বলেন, ‘পুরো এলাকা আমরা ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসব এবং ২৪ ঘণ্টা নিয়ন্ত্রণে থাকবে আমাদের। আমরা কয়েক ঘণ্টা সময় দেব, যার কাছে যত পাথর আছে, এটা ফেরত দিতে হবে। যার কাছে পাথর পাওয়া যাবে এবং স্ট্রেইট বলে দিই, তাকে কারাদণ্ড বরণ করতে হবে।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব সাইফুল ইসলাম, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
অপরাধবিষয়ক পেশাদার সাংবাদিকদের সংগঠন ক্র্যাব ৪৩ বছরে পদার্পণ করেছে। গতকাল শুক্রবার নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে সংগঠনটির ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়।
২ ঘণ্টা আগেগুরুত্বপূর্ণ তিন বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগরে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঘোষণা করা হয়েছে তফসিলও। ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আন্দোলনের পর এখনো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন গঠনতন্ত্রের ভেতরেই...
২ ঘণ্টা আগেকিশোরগঞ্জে যুবদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় জেলা যুবদলের দুই নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কার হওয়া দুই নেতা হলেন জেলা যুবদলের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আলী আব্বাস রাজন এবং সদর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এমদাদুল হক এমদাদ। আজ শুক্রবার (২২ আগস্ট) রাতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের...
৪ ঘণ্টা আগেযশোরের প্রবীণ সাংবাদিক দৈনিক সংবাদের বিশেষ প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা রুকুনউদ্দৌলাহ্ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ শুক্রবার (২২ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে তিনি মারা যান। ‘গ্রাম-গ্রামান্তরে’র...
৪ ঘণ্টা আগে