Ajker Patrika

গঠনতন্ত্রেই আটকে আছে চবির ছাত্র সংসদ নির্বাচন

  • সিন্ডিকেট গঠনতন্ত্র অনুমোদন দিয়েছে। এ নিয়ে আপত্তি সংগঠনগুলোর।
  • এখনো বিভাগগুলোর কাছ থেকে ভোটার তালিকা পায়নি প্রশাসন।
সুমন বাইজিদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০২৫, ০১: ২৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

গুরুত্বপূর্ণ তিন বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগরে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঘোষণা করা হয়েছে তফসিলও। ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আন্দোলনের পর এখনো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন গঠনতন্ত্রের ভেতরেই আটকে আছে। এ ছাড়া কয়েকটি ছাত্রসংগঠন অভিযোগ করেছে, বড় দুটি ছাত্রসংগঠনকে সুবিধা দিতে নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর ৬ বার অনুষ্ঠিত হয় চাকসু নির্বাচন। সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। দীর্ঘ ৩৫ বছর নির্বাচন না হওয়ায় ছাত্র সংসদের ভবন এখন ভাতের হোটেলে পরিণত হয়েছে। এমনকি গত ১ জুলাই শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে চাকসু নামফলকের ওপর ‘জোবরা ভাতের হোটেল ও কমিউনিটি সেন্টার’ লেখা ব্যানার টাঙিয়েছেন। পরে ১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫৯তম সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত করা হয় চাকসুর গঠনতন্ত্র। এতে প্রার্থিতার বয়স ৩০ এবং দপ্তর সম্পাদক পদ ছেলে শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়।

এই গঠনতন্ত্র নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন সংকট। ১৩ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রদল। তারা বলেছে, একটি পদ পুরুষের জন্য সংরক্ষিত রেখে প্রশাসনের নারীবিদ্বেষী মনোভাব স্পষ্ট করেছে। এর সংশোধন দাবি করেছে তারা। এ ছাড়া ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীসহ বিভিন্ন সংগঠনও এর প্রতিবাদ জানিয়েছে।

এদিকে ভোটারের বয়স নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে ছাত্রদল। তারা বলেছে, বয়সসীমা যদি ৩০ বছর হয়, তাহলে এমফিল বা পিএইচডি পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা কীভাবে ভোটার হবে। আবার তাঁরা যদি ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পান, তবে বয়স সীমা তুলে দেওয়া হোক।

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দীন মহসিন বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে চাকসু নির্বাচনের অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এ প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতিতে এগোচ্ছে। প্রশাসন গঠনতন্ত্রে প্রার্থিতার বয়স ও নারীদের প্রতি বৈষম্য করেছে, যা সংস্কার হওয়া প্রয়োজন। এরপরই শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া অত্যন্ত জরুরি।’

এদিকে গণতন্ত্রের বেশ কিছু বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে ছাত্রসংগঠনগুলো। তবে অধিকাংশ সংগঠনই চাইছে, গঠনতন্ত্র সংশোধন করে দ্রুত চাকসু নির্বাচন দেওয়া হোক।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ছাত্রশিবির শুরু থেকে চাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। প্রশাসনের প্রতি দাবি, কোনোরকম টালবাহানা কিংবা সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত চাকসু নির্বাচন আয়োজন করা হোক।

ছাত্র অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব রোমান রহমান বলেন, চাকসু নিয়ে শুরু থেকেই বিভিন্ন আন্দোলন করে আসছি। সংবাদ সম্মেলন করে চাকসুর গণতন্ত্রে প্রতিবন্ধীদের জন্য নতুন পদ সৃষ্টি এবং প্রার্থিতার বয়সসীমা নিয়ে আমাদের কনসার্ন জানিয়েছি। কিন্তু আমরা মূল ফোকাস রেখেছিলাম, দ্রুত তফসিল ঘোষণা করা হোক। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলেও চবি প্রশাসন তফসিল দিতে পারছে না। আমরা মনে করি, বড় দুটি ছাত্রসংগঠনের ইশারাতেই তফসিল ঘোষণা করছে না প্রশাসন।

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি জশদ জাকির বলেন, আমরা গঠনতন্ত্রের কিছু সংস্কার প্রস্তাবনা দিয়েছি। এগুলো শেষ করে দ্রুতই নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।

তবে চাকসুর নির্বাচন কমিশনার রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মনির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রতিটি বিভাগে ভোটার তালিকা ছেয়েছি। আশা করি, খুব দ্রুতই পেয়ে যাব। পাশাপাশি আচরণবিধি নিয়ে কাজ চলছে। এই দুটি বিষয় প্রস্তুত হলে আমরা তফসিল ঘোষণা করব। আমরা এখনই তারিখ বলতে ছাচ্ছি না। তবে আগামী সপ্তাহের মধ্যে কাজ শেষ হবে, এরপর তফসিল ঘোষণা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত